আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র শিক্ষণ-শিখনে মূল্যযাচাই-এর ভূমিকা: আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক এবং গঠনকালীন ও প্রান্তিক মূল্যযাচাই – যা অগ্রগতি ও পারদর্শিতার মূল্যায়ন এর অন্তর্ভুক্ত।
আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র শিক্ষণ-শিখনে মূল্যযাচাই-এর ভূমিকা: আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক এবং গঠনকালীন ও প্রান্তিক মূল্যযাচাই
ইংরেজি: Assessment
ইংরেজি-এর বাংলা প্রতি শব্দ মূল্যযাচাই। শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যযাচাই হল শিখনের পূর্ব নির্ধারিত ও অর্জিতব্য উদ্দেশ্য অর্জনের পরিমাণ বা মানযাচাই। অন্যভাবে বলা যায় মূল্যযাচাই হলো শিক্ষার্থী, শিক্ষাক্রম, প্ৰশিক্ষণ, শিক্ষা কর্মসূচি ও শিক্ষানীতি সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মূল্যযাচাই বলতে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের গুণগত ও পরিমাণ গত পরিমাপের জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয়, তাকে বোঝায়। শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব পরিমাপের জন্য মূল্যযাচাই করা হয়। তাই মূল্যযাচাই শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব পরিমাপক শ্রেণিকক্ষে মূল্যযাচাই একটি নিত্য নৈমিত্তিক কাজ।
বিভিন্ন ভিত্তি ও দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে মূল্যযাচাই কাজকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন, প্রাথমিকভাবে মূল্যযাচাইকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মূল্যাযাচাই— এ দু’প্রকারে ভাগ করা যায়। এছাড়া মূল্যযাচাইকে আবার গঠনকালীন ও প্রান্তিক-এ দু’শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এ অধিবেশনে আমরা আরবি ভাষা ও সাহিত্য ও ফিকহ শিক্ষণ-শিখনে মূল্যযাচাইয়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক এবং গঠনকালীন ও প্রান্তিক মুল্যযাচাই সম্পর্কে আলোচানা করবো।
মূলযাচাই কোন বিষয়ের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীরা কতটুকু আয়ত্ত করতে পেরেছে, তা নিরূপণের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, বিচার বিশ্লেষণ ও প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া হল মূল্যায়ন। আর মূল্যযাচাই হচ্ছে পরিমাপের পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন হচ্ছে তার ফলাফল বা সিদ্ধান্ত । সুতরাং বলা যেতে পারে শিক্ষণ ও শিখনের গুণগত ও পরিমাণগত পরিমাপের জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা হয়, তা হচ্ছে মূল্যযাচাই। অভীক্ষা, নির্ধারিত কাজ, প্রজেক্ট প্রদান, ধারাবাহিক গাঠনিক মূল্যযাচাই এবং প্রান্তিক মূল্যযাচাই ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষণ-শিখনের অগ্রগতি মূল্যযাচাই করা হয় ।
আনুষ্ঠানিক মূল্যযাচাই
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মুল্যযাচাই হল মূল্যযাচাইয়ের এমন বিশেষ দুটি প্রক্রিয়া যা শিক্ষকগণ তাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে এবং গ্রেড প্রদানে ব্যবহার করেন। আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক উভয় প্রকারের গঠনকালীন মূল্যাচাইয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ, উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং তদানুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
আনুষ্ঠানিক মূল্যাযাচাই হ’ল পদ্ধতিগত, উপাত্ত-ভিত্তিক অভিক্ষা যা শিক্ষার্থীরা কী শিখেছে এবং কতটুকু ভালভাবে শিখেছে, তা পরিমাপ করে। আনুষ্ঠানিক মূল্যাযাচাই বিষয়স্তু উপর শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নির্ধারণ করে। নির্দিষ্ট মানের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক অবস্থানের তুলনা করার জন্য এ মূল্যযাচাই ব্যবহার করা যেতে পারে। বলা হয়েছে: “Formal assessments are standardized exams used by a state to reflect on particular grade level to measure a student’s academic abilities”.
অনানুষ্ঠানিক মূল্যযাচাই
অনানুষ্ঠানিক মূল্যযাচাই হল শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য প্রাপ্তির এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় আদর্শায়িত অভীক্ষার ব্যবহার ব্যতিত অন্যান্য বিভিন্ন উপায়ে তাদের অগ্রগতি নির্ণয় করা হয়। যেমন বলা হয়েছে— Informal assessments are exams or activities designed to specially review or test student’s knowledge on a certain academic subject taught by their teacher. অনানুষ্ঠানিক মূল্যযাচাই হচ্ছে ঐ সব পরীক্ষা অথবা কার্যক্রম যা বিশেষত শিক্ষক কর্তৃক পাঠদানকৃত কোন নির্দিষ্ট একাডেমিক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান যাচাই বা পর্যালোচনার জন্য পরিকল্পিত।
মোটকথা, অনানুষ্ঠানিক মূল্যযাচাই হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকৃতির ঐ সব মূল্যযাচাই যা সহজে নিত্য নৈমিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং যা শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা এবং অগ্রগতির পরিমাপ করে। অনানুষ্ঠানিক মূল্যযাচাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তুর জ্ঞানের সাথে সাথে কর্মদক্ষতা বা নৈপূণ্য যাচাই করা হয়।
চেকলিস্ট, পর্যবেক্ষণ, পোর্টফলিও, রেটিংস্কেল, সময় নমুনা, ইভেন্ট নমুনা অ্যানেকডোটাল রেকর্ডই ত্যাদির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক মূল্যযাচাই করা হয়। এ মূল্যায়নের সুবিধা হলো- ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছাড়াই এ মূল্যায়ন সম্পন্ন করা যায়। এ মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের জন্য কম চাপ সাপেক্ষ; এ মূল্যায়ন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে; অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের দক্ষতা সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারে।
আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র শিক্ষণ-শিখনে মূল্যযাচাই: আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক
লিখিত পরীক্ষা:
আরবী প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র-এর শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান পরিমাপের জন্য সারা বছরে শ্রেণিতে সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হবে। এসব পরীক্ষা হবে রচনাধর্মী ও নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার সংমিশ্রণ। এতে রচনামূলক প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত রচনামূলক প্রশ্ন, টীকা-টিপ্পনী ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন হবে।
মৌখিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা, ভাষার দখল, উচ্চারণ ক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধি, স্মৃতি শক্তি, আত্মপ্রত্যয়, কর্মদক্ষতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হবে ।
ব্যবহারিক পরীক্ষা:
আরবি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র-এর শিক্ষার্থীদের বিষয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কর্মদক্ষতা, বাস্তব জ্ঞান, নীতিজ্ঞান বোধ ও প্রয়োগ কৌশল পরিমাপ করার জন্য ব্যবহারিক পরীক্ষা নিতে হবে।
পর্যবেক্ষণ:
মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সময় শিক্ষকদের পর্যবেক্ষণে থাকে। তারা শিক্ষকগণের সামনে পড়াশুনা, কাজকর্ম, খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে। তাই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ের নৈপুণ্য ও দক্ষতা পরিমাপ করা সম্ভব। এ পরিমাপকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এ পর্যবেক্ষণ হবে সকল শিক্ষকের। তা না হলে পক্ষপাতদুষ্টতায় দুষ্ট হবে। পর্যবেক্ষণের সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে বিশ্লেষণ করে রেকর্ড রাখতে হবে। এ সমস্ত তথ্যকে বার্ষিক পরীক্ষার সময় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। গৃহ পরিদর্শন গৃহ পরিদর্শনের মাধ্যমে সম্পর্ক, স্বাভাবিক প্রবণতা, কর্মদক্ষতা, আচার-আচরণ, প্রবণতা প্রভৃতি পরিমাপ করা যায়।
অর্পিত দায়িত্বের পরিমাপ:
বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাড়ির কাজ দিয়ে তার থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের বিশেষজ্ঞ বোর্ডের সামনে উপস্থিত করে বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তরদানের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, মানসিক ও ব্যক্তিত্বের পরিমাপ করা যেতে পারে।
সহ-শিক্ষা ক্রমিক কার্যাবলী
সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে। সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এগুলোর প্রভাব অনেক। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সহ-পাঠ ক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করে তাদের পারদর্শিতা কতখানি দেখাতে পেরেছে, তা রেকর্ড রাখতে হবে।
বিভিন্ন কর্মকাণ্ড
শিক্ষামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিক্ষার্থীর মানসিক প্রতিফলন ঘটে। কাজেই মূল্যায়নে এগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন— কক্ষ সাজানো, প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, শিক্ষা ভ্রমণ, সমাজ সেবা, বিভিন্ন প্রজেক্ট’, প্রভৃতির মধ্যে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, মানসিক প্রবণতা, আগ্রহ, চিন্তাশক্তি, অভিরুচি প্রভৃতির প্রতিফলন ঘটে। আবৃত্তি, অভিনয়, ইসলামি সংগীত, খেলাধুলা, প্রকৃতি ও বিভিন্ন বস্তুর ছবি আঁকা প্রভৃতিকে ও মূল্যায়নের সময় গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে।
বিভিন্ন মনস্তাত্বিক অভীক্ষা
সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তি, আগ্রহ, দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতির পরিমাপ করা যায়। বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিকতার বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন করা যায়। এ ব্যাপারে Intelligence Test, Interest Test, personality Test, Aptitude Test, Attitude Test মাধ্যমে এ জাতীয় মূল্যায়ন করতে হবে।
গঠনকালীন মূল্যযাচাই
গাঠনিক বা গঠনকালীন মূল্যযাচাই-এর নামের সাথে-এর পরিচয়ের পূর্বাভাষ নিহিত। গঠনকালীন মূল্যযাচাইকে ইংরেজিতে Formative Assessment বলা হয়। ‘Formative’ শব্দটির উৎপত্তি ‘Form’ থেকে- যার অর্থ গঠন করা বা তৈরি করা। আক্ষরিক অর্থের নিরিখে বলা যায় শিক্ষার্থীর দুর্বলতা বা সবলতা সনাক্ত করে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে তৈরি বা গঠন করে নেয়ার জন্য যে মূল্যযাচাই তা-ই গঠনমূলক বা গাঠনিক মূল্যযাচাই।
অন্যভাবে বলা যায় শিক্ষার্থীর শিখনে সবলতা ও দুর্বলতা সনাক্ত করে তা নিরাময়ের জন্য যে কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের গঠন করা হয়, তাকে গঠনকালীন মূল্যযাচাই বলে। গঠনকালীন মূল্যযাচাই হলো প্রাক ও ধারাবাহিক মূল্যযাচাই যা শিক্ষার্থীকে যথোপযুক্তভাবে গড়ে তোলা তথা শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে উন্নয়ন ও সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত মূল্যায়নের পূর্বে করা হয়।
গঠনকালীন মূল্যযাচাই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কোর্স চলাকালীন সময়ে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নকালে কার্যক্রমের অগ্রগতির তদারকি করা ও মানযাচাই করা যায়। সর্বোপরি, কোনো পাঠ বা কোর্স চলাকালীন শিক্ষার্থীদের যে মূল্যায়ন করা হয় তা-ই গঠনকালীন মূল্যযাচাই ।
গঠনকালীন মূল্যযাচাইয়ের গুরুত্ব
১. শিক্ষক: শিক্ষার্থীর পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীর শিখন সম্পর্কিত অগ্রগতি বা পারদর্শিতা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গঠনমূলক মূল্যায়ন সাহায্য করে।
২. এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের সাহায্যে শিক্ষকতার শিক্ষণ পদ্ধতি, উপকরণ নির্বাচন ও তার ব্যবহারের ধরন প্রয়োজনবোধে পরিবর্তন করতে পারেন।
৩. এটি শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করে তোলে। গঠনমূলক মূল্যায়ন ব্যতীত শিক্ষক কার্যকরভাবে তার শিক্ষণ কর্মপরিচালনা করতে পারেন না।
গঠনকালীন মূল্যযাচাইয়ের বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের প্রদত্ত সংজ্ঞার আলোকে গঠনকালীন মূল্যযাচাইয়ের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করা যায়। যেমন-
১. এটি একটি চলমান বা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া- যে প্রক্রিয়ায় কোনো শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে কিনা, তা মনিটর করা হয়।
২. গাঠনিক মূল্যযাচাই হতে পারে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক অথবা যে কোনো পিরিওডিক মূল্যায়ন। এর মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষাদানের পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে তা ঠিক করে থাকেন।
৩. আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক দু’ভাবেই এটি সম্পন্ন করা যায়।
৪. এটি শিক্ষার্থীর শিখন উদ্দেশ্যকে পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
৫. এটি শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নকালে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে ।
৬. শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানে এটি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে সহায়তা করে।
৭. কখনো কখনো-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও উপকরণের ধরন ও ব্যবহার পরিবর্তন করা হয়।
প্রান্তিক মূল্যযাচাই
প্রান্তিক মূল্যযাচাইকে সামষ্টিক মূল্যযাচাই, চূড়ান্ত মূল্যযাচাইও বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম শেষে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতির যাচাইয়ের অনুসৃত পদ্ধতির নামই হল সামগ্রিক বা চূড়ান্ত বা প্রান্তিক বা সামষ্টিক মূল্যায়ন। এতে শিক্ষার্থীদের সার্বিক অগ্রগতি পরিমাপ করা হয়। তাছাড়া কৃতকার্য ও অকৃতকার্য নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সনদপত্র প্রদান করা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সমষ্টি থেকে সামষ্টিক। সমগ্রের উপর মূল্যায়নই হল সামষ্টিক মূল্যায়ন।
একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের কোর্স সমাপনান্তে যে মূল্যায়ন হয়, তা হল প্রান্তিক মূল্যায়ন। আর এই প্রান্তিক মূল্যায়নের সাথে সমগ্র মেয়াদের ধারাবাহিক বা গঠনমূলক মূল্যায়নের মান সংযোগ করা হলে তা হল সামষ্টিক মূল্যায়ন। সামষ্টিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর শ্রেণি বা স্তর উত্তরণ ঘটে। অতএব বলা যায় কোন নির্দ্দিষ্ট মেয়াদের শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম শেষে, শিক্ষার্থীর উত্তরণের লক্ষ্যে, সমগ্র পাঠ্যসূচীর উপর শিখন অগ্রগতির যাচাইয়ের অনুসৃত পদ্ধতির নামই হল সামষ্টিক মূল্যায়ন।
এতে শিক্ষার্থীর সার্বিক অগ্রগতি পরিমাপ করা হয়। বিদ্যালয়ে প্রচলিত ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা, দাখিল/এসএসসি ও আলিম/এইচএসসি পরীক্ষা সামষ্টিক মূল্যায়নের উদাহরণ। এক কথায়, কোনো কোর্স সমাপ্তির পর শিক্ষার্থীদের যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে প্রান্তিক/চূড়ান্ত মূল্যায়ন বলে ।
প্রান্তিক মূল্যায়নের গুরুত্ব
১. কোনো বিষয়বস্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য পরিমাপ করার জন্য প্রান্তিক মূল্যায়ন একান্ত আবশ্যক ।
২. এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী কর্তৃক কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের চূড়ান্ত অবস্থা নির্ণয় করা যায়।
৩. ফলাবর্তন-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জন্য পরবর্তী কার্যক্রম কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যায়। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় কার্যকর পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে এটি সহায়ক।
আরও দেখুনঃ