আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি শিক্ষণে মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই (MBA) – যা অগ্রগতি ও পারদর্শিতার মূল্যায়ন এর অন্তর্ভুক্ত।
আরবি শিক্ষণে মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই (MBA)
মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই: Madrasah Based Assessment
গাঠনিক মূল্যায়নের অন্যতম প্রধান প্রক্রিয়াই হল মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই বা Madrasah Based Assessment (MBA)। MBA-এর ব্যবহারিক সুবিধা অনেক। বর্তমানে অনেক সংশোধন এবং সংস্করণের মাধ্যমে প্রধানত ৬টি বিবেচ্য দিক নিয়ে মাদরাসা পর্যায়ে কার্যক্রম প্রবর্তিত। এর প্রয়োগে নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন মাদরাসা বিষয় শিক্ষক। সাধারণত মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই বলতে বিষয় শিক্ষকের একান্ত তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের অর্জন অগ্রগতির পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকেই বোঝানো হয়।
অর্থাৎ বছরে একবার দু’বার কিংবা তিনবার লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে শ্রেণি শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য বিষয় শিক্ষক কর্তৃক সারা বছর ব্যাপী গাঠনিক মূল্যায়নের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক, আবেগিক, আচরণিক এবং মনোপেশী দক্ষতার পরিমাপকরণের সার্বিক ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকেই মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই বা Madrasah Based Assessment (MBA) বলে। MBA মূলত শিক্ষাক্রমে বর্ণিত শিক্ষণ-শিখন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য মাদরাসা বিষয় শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের উপর প্রবর্তিত ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী জড়িত।
মাদরাসাভিত্তিক মূল্যযাচাই-এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য: Goals- Objectives of MBA
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার উন্নয়নের তাগিদে শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যযাচাই করার ক্ষেত্রে অনেকগুলো লক্ষ্য উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে।
নিচে মাদরাসা পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্য উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করা হল-
- শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ মূল্যায়ন করা যায়;
- শিক্ষার্থীদেরকে পাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলা;
- শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া প্রবণতা হ্রাস করা;
- মানবীয় মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর জন্য;
- ব্যবহারিক ও মৌখিক উপস্থাপন দক্ষতা বৃদ্ধি করা;
- শিক্ষককে অধিক দায়িত্ব সচেতন করে তোলা;
- প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্রের ত্রুটি দূর করার জন্য।
MBA-এর ক্ষেত্রসমূহ: Fields of MBA
আধুনিক শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন ধরনের যাচাই-বাছাই সংশোধন এবং পরিমার্জন শেষে শিক্ষার্থীর শিক্ষণ-শিখন অগ্রগতি যাচাই-এর ক্ষেত্রে MBA-এর মূলত ৬টি বিবেচ্য দিক নির্ধারণ করেছেন যার উপরভিত্তি করে শ্রেণি শিক্ষক শিক্ষার্থীর মূল্যযাচাই করতে পারবেন। নিচে নম্বরসহ দিকগুলো উল্লেখ করা হল-
ক. শ্রেণি অভীক্ষা (অনিয়মিত) ০৫ নম্বর
খ. শ্রেণির কাজ (অংশগ্রহণমূলক) ০৫ নম্বর
গ. বাড়িরকাজ/নির্দেশিতকাজ ০৫ নম্বর
ঘ. এ্যাসাইনমেন্ট/নির্ধারিত কাজ ০৫ নম্বর
ঙ. মৌখিক পরীক্ষা ০৫ নম্বর
চ. দলগত কাজ ০৫ নম্বর
…………………………………………………………………………………..
=৩০ নম্বর
বুদ্ধিবৃত্তীয় ও মনোপেশীজ ক্ষেত্রের ধারাবাহিক মূল্যায়ন-
১. শ্রেণির কাজ;
২. বাড়ির কাজ ও অনুসন্ধানমূলক কাজ;
৩. শ্রেণি অভীক্ষা ।
শ্রেণির কাজ মূল্যায়ন
শ্রেণির কাজ হচ্ছে শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলাকালীন সম্পাদিত সকল কাজ। এর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর চিন্তন দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশ এবং ব্যক্তিক আচরণ ও মূল্যবোধ ঘটানো ।
শ্রেণির কাজসমূহ হতে পারে-
- কোনো প্রশ্নের উত্তর বলা বা লেখা;
- কোনো কিছু অংকন যেমন- চিত্র / ছবি, সারণি, মানচিত্র, লেখচিত্র ইত্যাদি;
- আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা;
- বিতর্কে আংশগ্রহণ;
- চরিত্রাভিনয়।
শ্রেণির কাজে নম্বর সংরক্ষণ
শিক্ষক প্রতিটি পাঠ মূল্যায়ন করবেন। তবে রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য শিক্ষক প্রতিটি বিষয়ের জন্য প্রতি সাময়িকে সর্বচ্চো নম্বরপ্রাপ্ত তিনটি শ্রেণির কাজ বিবেচনা করবেন।
- বাংলা, ইংরেজি ও আরবি বিষয়ের বলা, শোনা ও পড়া দক্ষতা ১টি করে মোট ৩টি শ্রেণি মূল্যায়ন রেকর্ড সংরক্ষণ রাখতে হবে।
- বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, উচ্চতর গণিত, আইসিটি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা, ক্যারিয়র শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা, কৃষি শিক্ষা এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ে ২টি শ্রেণির কাজ ও ১টি ব্যবহারিক কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- চারু বা কারুকলা বিষয়ে ১টি কাজ ও ২টি ব্যবহারিক কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে। বাড়ির কাজ-
- শ্রেণির বাইরে শিক্ষার্থী বাড়িতে শিক্ষাক্রমভিত্তিক যে কাজগুলো সম্পন্ন করে তাই বাড়ির কাজ।
- শিক্ষক শিখন ফলের চাহিদা উপরভিত্তি করে বাড়ির কাজ দিবেন।
- বাড়ির কাজ এমন হতে হবে যা শিক্ষার্থীর চিন্তন দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা বিকাশের সাহায্য করে।
- প্রতি বিষয়ের বাড়ির কাজ এমন হবে যা শিক্ষার্থী ২০-২৫ মিনিটে শেষ করতে পারে।
- ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, আইসিটি, কর্ম ও জীবন মুখী শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে ২টি বাড়ির কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির অন্যান্য বিষয়ে ৩টি বাড়ির কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে। নবম ও দশম শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত, উচ্চতর গণিত এবং ঐচ্ছিক বিষয়ে ৩টি ও অন্যান্য বিষয়ে ২টি বাড়ির কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- প্রতিটি মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর হবে ৫।
অনুসন্ধানমূলক কাজ
- নির্ধারিত ধাপ অনুসরণ করে অনুসন্ধানমূলক কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
- ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্যা চিহ্নিত করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তথ্য সংগ্রহের টুলস/সিডিউল/প্রশ্নমালা প্রণয়ন শিক্ষক নির্ধারণ করে দিবেন।
- নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নূন্যতম সাহায্য নিয়ে কাজটি করবে।
- শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা বিবেচনা করে, তথ্য সংগ্রহে যতদুর সম্ভব শিক্ষার্থীর পরিবার, প্রতিবেশী এবং নিকট এলাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
- ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, আইসিটি, কর্ম ও জীবন মুখী শিক্ষা এবং ক্যারিয়র শিক্ষা বিষয়ে ১টি অনুসন্ধানমূলক কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- নবম ও দশম শ্রেণির জন্য বাংলা, ইংরেজি, গণিত, উচ্চতর গণিত এবং ঐচ্ছিক বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ১টি অনুসন্ধানমূলক কাজের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- গণিত ও উচ্চতর গণিত বিষয়ে ১টি করে অনুসন্ধানমূলক কাজে উৎসাহিত করা।
- প্রতিটি মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর হবে ৫।
শ্রেণি অভীক্ষা
- ইহা শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত স্বল্প সময়ের জন্য পরীক্ষা।
- বিষয়ের চাহিদা অনুযায়ী অভীক্ষা লিখিত ও ব্যবহারিক হবে।
- লিখিত অভীক্ষা সর্বোচ্চ এক পিরিয়ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তারিখ ও সময় শিক্ষক পূর্বে শ্রেণিতে জানিয়ে দিবেন।
- প্রতিটি মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর হবে ১০। সৃজনশীল প্রশ্নের মাধ্যমে অভীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
- বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, উচ্চতর গণিত, আইসিটি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক ও স্বাস্থ্য শিক্ষা, ক্যারিয়ার শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা, কৃষি শিক্ষা এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ে ২টি লিখিত অভীক্ষা ও ১টি ব্যবহারিক অভীক্ষার মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- চারু ও কারুকলা বিষয়ে ১টি লিখিত অভীক্ষা ও ২টি ব্যবহারিক অভীক্ষার মূল্যায়ন রেকর্ড রাখতে হবে।
- বাংলা, ইংরেজি ও আরবি বিষয়ে ২টি লিখিত অভীক্ষা এবং ১টি বলা/শোনা/পড়ার দক্ষতা ১টি করে মোট ৩টি শ্রেণি মূল্যায়ন রেকর্ড সংরক্ষণ রাখতে হবে।
আবেগিক ক্ষেত্রের ধারাবাহিক মূল্যায়ন
- আবেগিক ক্ষেত্রের (আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ইত্যাদি) লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় তবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হয়।
- প্রতি সাময়িকে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিক আচরণ ও মূল্যবোধ মূল্যায়নের জন্য মানদণ্ড ছক ব্যবহার করতে হয়।
- শিক্ষার্থীর ব্যক্তিক আচরণ ও মূল্যবোধ মূল্যায়নের জন্য মানদণ্ড ।
আরও দেখুনঃ