আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় দাখিল শিক্ষাক্রমে আরবি শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যপুস্তক – যা দাখিল স্তরের শিক্ষাক্রমে আরবি এর অন্তর্ভুক্ত।
দাখিল শিক্ষাক্রমে আরবি শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যপুস্তক
বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দাখিল স্তরের অন্তর্ভূক্ত। এই স্তরের শিক্ষার্থীদের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছর। এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা বাল্যকাল ও কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত হয়। এদের দেহ ও মন পরিবর্তনশীলতা ও অনুসন্ধিৎসায় পরিপূর্ণ। এই স্তরের শিক্ষার্থীরা সবকিছু নিজের মত করে জানতে চায় এবং পছন্দ করতে শিখে।
তাদের জন্য দরকার একটি অর্জনোপযোগী ভারমুক্ত আরবি পাঠ্যসূচী ও সুন্দর সুশোভন দৃষ্টিনন্দন পাঠ্যপুস্তক, যার মাধ্যমে তারা এবতেদায়ী স্তরে অর্জিত আরবি ভাষার দক্ষতাকে আরো বৃদ্ধি করতে পারে। সাথে সাথে আরবি সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে জীবন ও জগতের বিচিত্র বিষয়ে কৌতুহলী হয়ে মানবিক মূল্যবোধগুলো অর্জন করতে পারে এবং কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারে।
পাঠ্যসূচী
পাঠ্যসূচীর ইংরেজি প্রতিশব্দ Syllabus, যার বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো পাঠ্য তালিকা বা পাঠ্য বিষয়বস্তুর সূচী বা তালিকা। শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভূক্ত নির্দিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠোপযোগী নির্দিষ্ট বিষয়ের সূচীবদ্ধ সংক্ষিপ্ত তালিকাকেই পাঠ্যসূচী বলা হয়। এটি শিক্ষাক্রমেরই একটি অংশবিশেষ। পাঠ্যসূচী শ্রেণিভিত্তিক হয়ে থাকে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বা শ্রেণি শিক্ষক শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করেন। আমাদের দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সহায়তায় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড দাখিল ও আলিম স্তরের পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে থাকে।
পাঠ্যপুস্তক
শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রমে পাঠ্যপুস্তক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। সব পুস্তককেই আমরা পাঠ্যপুস্তক বলে গণ্য করি না। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাক্রমে নির্দেশিত ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে সুপরিকল্পিত ও সহজতর করার জন্য নির্ধারিত পাঠ্যসূচীর ভিত্তিতে প্রণীত সুবিন্যস্ত ও সংক্ষিপ্ত পুস্তককে পাঠ্যপুস্তক বলে।
পাঠ্যপুস্তককে নীরব শিক্ষক (Silent Teacher) বলা হয়। ইহা শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্যের প্রাথমিক ও প্রধান উৎস। মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তকের উপরভিত্তি করেই মানসম্পন্ন শিখন-শেখানো কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারে। আরবি যেহেতু বিদেশি ভাষা সেহেতু আরবির পাঠ্যপুস্তক আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য হতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মনে ইতিবাচক সাড়া জাগাতে পারে।
পাঠ্যপুস্তকের বৈশিষ্ট্য
একটি পাঠ্যপুস্তকের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে আমরা তাকে মানসম্মত ও ভালো পাঠ্যপুস্তক বলতে পারি ।
- আকার আকৃতি ও পৃষ্ঠাসংখ্যা শ্রেণি উপযোগী হবে।
- মলাট ও ভিতরের কাগজের মান ভালো হবে। প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় হবে।
- সূচীপত্র সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হবে।
- বিষয়বস্তুতে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতিফলন থাকবে।
- বিষয়বস্তুর পরিকল্পনা ও সংগঠন যথাযথ হবে।
- বিষয়বস্তুর উপস্থাপন প্রাসঙ্গিক ও শ্রেণি উপযোগী হবে।
- বিষয়বস্তুতে হালনাগাদ তথ্য সংযোজিত হবে।
- ভাষা সহজ সরল ও সহজবোধ্য হবে।
- প্রয়োজনীয় চিত্র, ছবি, মানচিত্র ব্যবহার করা হবে। অনুশীলনীতে সংযোজিত প্রশ্নের পরিকল্পনা ও সংগঠন উপযুক্ত হবে।
- অনুশীলনীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বৈচিত্র্যময় প্রশ্নের অবতারণা করা হবে ।
- প্রশ্নসমূহ শিখনফল-এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
- আরবি পাঠ্যপুস্তকে আরবি ভাষার চার দক্ষতার অনুশীলনের সুযোগ থাকবে।
দাখিল স্তরের আরবি পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা
দাখিল শিক্ষাক্রমে আরবি বিষয়টি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে প্রচলিত দাখিল ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি আরবি পাঠ্যপুস্তক জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন কমিটি’র নীতিমালা অনুসরণে করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকগুলোর বিষয়বস্তু পরিকল্পনা ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে শিক্ষাক্র
মে প্রদত্ত লেখক নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক চারটির প্রচ্ছদ, আকার, পৃষ্ঠাসংখ্যা, অঙ্গসজ্জা, বানানরীতি সবই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী কমিটির প্রদত্ত নিয়মনীতি অনুযায়ী করা হয়েছে। আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজন অনুসারে-এর প্রয়োগ করতে যেন সক্ষম হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আরবি পাঠ্যপুস্তকে বিষয়বস্তু সংযোজন করা হয়েছে। আরবি পাঠ্যপুস্তকগুলো কমিউনিকেটিভ এপ্রোচে প্রণয়ন করা হয়েছে।
তাই যৌক্তিকভাবেই চারটি বই-এর নামকরণ করা হয়েছে।তাদরীবাত বা অনুশীলনীগুলোতে প্রশ্ন, শব্দার্থ, শূন্যস্থান, সত্য মিথ্যা, কাওয়ায়েদের প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক অনুশীলনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে ভাষার চার দক্ষতার অনুশীলনের সুযোগ রয়েছে।
বইগুলোর প্রচ্ছদে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক ব্যবহার এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিমাই সাইজের কাগজে ছাপানো বই চারটিতে প্রয়োজনীয় ছবি ব্যবহার করে অঙ্গসজ্জা করা হয়েছে। সাবলীল সহজ আরবি ভাষায় লিখিত বইগুলোতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত ও হাদিসের অংশ বিশেষ সংযোজন করা হয়েছে। বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে চলিতরীতি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে। বইগুলোর প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং মানসম্মত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় আরবি পাঠ্যপুস্তকগুলোতে শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
মূল্যায়ন
১. পাঠ্যসূচী কী?
২. পাঠ্যপুস্তক কাকে বলে?
৩. উত্তম আরবি পাঠ্যপুস্তকের তিনটি বৈশিষ্ট্য লিখুন ।
৪. পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা পাঠ্যপুস্তকের মান নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- ব্যাখ্যা কর।
৫. দাখিল শিক্ষাক্রমের যে কোনো একটি আরবি পাঠ্যপুস্তকের গঠনমূলক পর্যালোচনা করুন।
আরও দেখুনঃ