অব্যবহিত উপাদান গঠন

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-অব্যবহিত উপাদান গঠন

অব্যবহিত উপাদান গঠন (Immediate Constitution Structure)

সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুযায়ী বাক্য বিশ্লেষণের জন্য ‘অব্যবহিত উপাদান’ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। বাক্য সংগঠনের যেসব উপাদান অব্যবহিতরূপে একত্রিত হয়ে বৃহত্তর অর্থপূর্ণ একক গঠন করে সেসব উপাদানই হল অব্যবহিত উপাদান।

এ উপাদান হচ্ছে দুটো বা তার বেশি উপাদান যা থেকে প্রত্যক্ষভাবে কোন গঠন নির্মাণ সম্ভব। বাক্যের গঠন বিভিন্ন উপস্তরে ভেঙে, ব্যাকরণগতভাবে প্রাসঙ্গিক দিকগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া হয় অব্যবহিত উপাদান গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বাক্য সংগঠন বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া হল :

১।অব্যবহিত উপাদান.

২।অব্যবহিত গঠনসমূহের ক্রমস্তর বের করা

৩. অব্যবহিত উপাদানগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ

8.অব্যবহিত উপাদানের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ অতিরিক্ত সম্পর্কসমূহ বর্ণনা করা

উদাহরণস্বরূপ :

পোলাডা বাজানরে একটা তফন দিছে। (ছেলেটা বাবাকে একটা লুঙ্গি দিয়েছে।) পোলা (বিশেষ্য) ডা (বিশেষ্য উত্তর পদ) বাজান (বিশেষ্য) রে (বিশেষ্য উত্তর পদ) একটা (বিশেষ্য পূর্বপদ) তফন (বিশেষ্য) দিছে (ক্রিয়া)।

 

অব্যবহিত উপাদান গঠন

 

গঠনগত দিক থেকে বাক্য বিশ্লেষণ

বাক্যটিকে তিনটি স্তরে বিশ্লেষণ করা যায় :

1.(পোলাডা বাজানরে) (একটা তফন দিছে)
3. ((পোলাডা বাজানরে) (একটা তফন দিছে)}
2. [[(পোলাডা) (বাজানরে)} {(একটা তফন) (দিছে)}] [[ (পোলা) (ডা)) { (বাজান (রে)) { (একটা) (তফন)} {(দিছে)}]
বাক্য বিবা বি-বি | বিউপ-বিউপ বিবা | বিবা বিউপ বিবা | বিবা বিপূপ-বিপ্‌প | বি বি বিবা | ক্ৰিবা ক্রি-
কি কিবা বাক্য।

প্রথম স্তরে বাক্যটিকে দুটি অব্যবহিত উপাদানে ভাঙা হয়েছে।
[বিবা : বিশেষ্য বাক্যাংশ, বি বিশেষ্য, বিপুপ : বিশেষ্য-পূর্ব পদ,

বিউপ : বিশেষ্য উত্তর পদ, ক্রিবা: ক্রিয়া বাক্যাংশ, ক্রি: ক্রিয়া]
প্রথম স্তরে বাক্যটিকে দুটি অব্যবহিত উপাদানে ভাঙা হয়েছে ‘পোলাডা বাজানরে’ উদ্দেশ্যের অব্যবহিত উপাদান এবং ‘একটা তফন দিছে বিধেয়-এর অব্যবহিত উপাদান। উপাদান দুটি প্রত্যক্ষভাবে বাক্য গঠনে অংশগ্রহণ করেছে।

দ্বিতীয় স্তরে অব্যবহিত উপাদান দ্বয়ের প্রত্যেকটিকে আবার দুটি করে বাক্যাংশে বিভক্ত করা হয়েছে। এই প্রত্যেক বাক্যাংশযুগল অব্যবহিতরূপে একত্রিত হয়ে গঠন করেছে প্রথম স্তরের

প্রতিটি উপাদান। তৃতীয় স্তরের উপাদানের বিশ্লেষণ ক্ষুদ্রতম গঠন, শব্দ এমনকি রূপমূলের সীমানা পর্যন্ত। গিয়েছে। ক্ষুদ্রতম পর্যায়ে বিশ্লেষিত উপাদান শব্দ ও রূপমূলসমূহ পরস্পর সম্পৃক্ত হয়ে গঠন করেছে দ্বিতীয়স্তরের উপাদানসমূহ। আবার দ্বিতীয়স্তরের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে প্রথমস্তরের উপাদানদ্বয়।

 

অব্যবহিত উপাদান গঠন

 

উক্ত উপাদান দুটিই আলোচ্য পূর্ণাঙ্গ বাক্যের রূপ নির্মাণ করেছে। বাক্যটি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ভাষাতাত্ত্বিক ক্ষুদ্রতম গঠন, পারস্পরিক সম্পর্কে বিন্যস্ত হয়ে ক্ষুদ্রতম উপাদান থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে বৃহত্তর উপাদান গঠন করে। শব্দ বা রূপমূল সমন্বয়ে বাক্যাংশ, বাক্যাংশ থেকে বাক্য এভাবেই ক্রিয়াশীল থাকে অব্যবহিত উপাদান প্রক্রিয়া। এ কারণেই বাক্য-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অব্যবহিত উপাদান গুরুত্বপূর্ণ।

এ পদ্ধতিতেই বাক্যের বিভিন্ন গঠন অব্যবহিতরূপে ভাগ করে দেখানো যায়। অব্যবহিত উপাদানের সাহায্যে বাক্য বিশ্লেষণ দুটো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে।
প্রথমত, জটিলতর গঠনরূপের ক্ষেত্রে বাক্যের বিভিন্ন উপাদানগত সম্পর্ক রেখাচিত্রের সাহায্যে স্পষ্টরূপে প্রদর্শন করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বাক্যের মধ্যে রূপমূলের পারস্পরিক ঐক্যগত দিক লক্ষ্য করে বিশ্লেষণ করা উচিত। যেমন-

 

অব্যবহিত উপাদান গঠন

 

১।আমগোর মায় রইদে বইয়া সাদিরে বাত খাওয়াইতাছে।
(আমাদের যা রোদে বসে সাদিকে ভাত খাওয়াচ্ছে।)

আমাগোর | মায় |
রইদে বইয়া

| সাদিকে | বাত | খাওয়াইতাছে |

| আমগোর মায় | রইদে বইয়া | সাদিরে বাত খাওয়াইতাছে |

| আমগোর মায় রইদে বইয়া | সাদিরে বাত খাওয়াইতাছে |

মায় রইদে বইয়া | সাদিরে বাত খাওয়াইতাছে |

আমগোর যায় | সাদিরে বাত খাওয়াইতাছে |

আমগোর মায় | রইদে বইয়া

মায় রইদে বইয়া

আমগোর মায় রইদে বইয়া সাদিরে ভাত খাওয়াইতাছে |

२. মাছ লইয়া মাছওয়ালা হেমুরা যাইতাছে। মাছয়ালা মাছ লইয়া হেমুরা যাইতাছে।

১ নম্বর বাক্যে প্রমিত রীতির জটিল বাক্যের গঠনের ন্যায় ডেমরার ভাষায় জটিল বাক্যের গঠনরূপের উপাদানগত সম্পর্ক নির্দেশ করা হয়েছে।

২ নম্বর বাক্যে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে ‘মাছ লইয়া’ এবং ‘মাছয়ালা’ রূপমূলের পরম্পরা। এই

উপাদানগত বিন্যাস রদবদল করেও বাক্যের অর্থের কোন পরিবর্তন হয়নি।
অব্যবহিত উপাদান প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকটি বাক্যকে প্রথমে প্রধান বা বৃহত্তর অংশে উদ্দেশ্য ও বিধেয় উপাদানে ভেঙে নেয়া হয়। এরপর এই গঠনগত অব্যবহিত উপাদান আবার বিভিন্ন উপস্তরে ভাগ করে

প্রান্তীয় বা শেষ গঠনগত না পৌঁছানো পর্যন্ত বাক্যের বিভিন্ন গঠনের অংশকে অব্যবহিত উপাদানে বিভক্ত করা হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্রতর অংশে ভাঙতে ভাঙতে প্রান্তিক উপাদানে পৌঁছানো যায়।

আরও দেখুন:

Leave a Comment