আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় কারক বিভক্তি
কারক বিভক্তি
কারক বিভক্তি
কারক
অহং পঠামি (আমি পড়ি) । কৃষ্ণা রামায়ণং পঠতি (কৃষ্ণা রামায়ণ পড়ছে)। প্রথম উদাহরণে ‘পঠামি’ ক্রিয়াটি সম্পন্ন করছে ‘অহং’ (পদ) শব্দটি। সুতরাং ‘পঠামি’ ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘অহং (অহম্)’ পদের সম্বন্ধ আছে। দ্বিতীয় উদাহরণে ‘পঠতি’ ক্রিয়ার সম্পাদিকা ‘কৃষ্ণা। আবার ‘রামায়ণং (রামায়ণম্)’ পদটি ‘পঠতি ক্রিয়াপদের অবলম্বন। সুতরাং দেখা যায় ‘পঠতি’ ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘কৃষ্ণা’ এবং ‘রামায়ণং’ পদের সম্বন্ধ আছে।
এরূপভাবে- ক্রিয়ার সাথে বাক্যের অন্যান্য যে-সব পদের অন্বয় বা সম্বন্ধ আছে তাকে কারক বলে। এজন্য বলা হয়, “ক্রিয়ান্বয়ি কারকম্” ।
কারক ছয় প্রকার— কর্তৃ, কর্ম, করণ, সম্প্রদান, অপাদান ও অধিকরণ।
কর্তৃকারক
যে কোন কার্য সম্পাদন করে, তাকে কর্তৃকারক বলে। যেমন— মহেশঃ পঠতি (মহেশ পড়ছে)। বৃষ্টিঃ ভবতি (বৃষ্টি হচ্ছে)।
কর্মকারক
যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে বলা হয় কর্মকারক। সাধারণত ক্রিয়াপদকে ‘কি’ বা ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করে যে-উত্তর পাওয়া যায়, তাকে কর্মকারক বলা হয়। যেমন—
গোপালঃ চন্দ্ৰং পশ্যতি (গোপাল চাঁদ দেখছে)।
পুত্রঃ মাতারম্ অপশ্যৎ (পুত্র মাতাকে দেখেছিল)।
করণকারক
কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে করণকারক বলা হয়। যেমন-
রখেন সঞ্চরতে রাজা (রাজা রথে বিচরণ করছেন)।
বালিকা হস্তেন গৃহাতি (বালিকাটি হাত দ্বারা গ্রহণ করছে)।
সম্প্রদান কারক
যাকে স্বত্ব অর্থাৎ অধিকার ত্যাগ করে কোন কিছু দান করা হয়, তাকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমন- নিরন্নায় অন্নং দেহি (অন্নহীনকে অন্ন দাও)।
অন্ধজনায় আলোকং দেহি (অন্ধজনকে আলো দাও)
অপাদান কারক
একটি বস্তু থেকে অন্য একটি বস্তু পৃথক হওয়ার পর যে-বস্তুটি স্থির থাকে, তাকে অপাদান কারক বলা হয় । যেমন— বৃক্ষাৎ পত্রাণি পতন্তি (গাছ থেকে পাতা পড়ছে)। স গ্রামাৎ আয়াতি (সে গ্রাম থেকে আসছে)। প্রথম উদাহরণে বৃক্ষ থেকে পাতাগুলো পড়ছে, কিন্তু বৃক্ষ স্থির হয়ে আছে। দ্বিতীয় উদাহরণে সে গ্রাম থেকে সরে এসেছে, কিন্তু গ্রাম স্থির হয়ে আছে। সুতরাং ‘বৃক্ষ’ ও ‘গ্রাম’ অপাদান কারক ।
বিভক্তি (শব্দবিভক্তি)
শব্দবিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশেষ্য, বিশেষণ ও সর্বনাম পদ গঠন করে। শব্দবিভক্তি সাত প্রকার- প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী ।
প্রথমা বিভক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহ
১। যা ধাতু নয়, প্রত্যয়ও নয়, অথচ যার অর্থ আছে, তাকে প্রাতিপদিক বলে। প্রাতিপদিক অর্থে প্রথমা বিভক্তি হয়। যেমন— বৃক্ষঃ, জলমু, নদী, পুষ্পম্ ইত্যাদি ।
২। কর্তৃবাচ্যে কর্তৃকারকে প্রথমা বিভক্তি হয়। যেমন- নদী প্রবহতি (নদী প্রবাহিত হচ্ছে)। ব্রাহ্মণঃ পূজয়তি (ব্রাহ্মণ পূজা করছেন)।
৩। অব্যয় শব্দের যোগে প্রথমা বিভক্তি হয়। যেমন- বিশ্বামিত্রঃ ইতি মহর্ষিঃ আসীৎ (বিশ্বামিত্র নামে একজন মহর্ষি ছিলেন। “বিষবৃক্ষো২পি সংবর্ধ্য স্বয়ং ছেত্তুমসাম্প্রতম্” (বিষবৃক্ষও বর্ধন করে নিজে ছেদন করা উচিত নয়)।
8। কর্মবাচ্যে কর্মকারকে প্রথমা বিভক্তি হয়। যেমন- শিশুনা চন্দ্ৰঃ দৃশ্যতে (শিশু কর্তৃক চন্দ্ৰ দৃষ্ট হয়)। ছাত্রেণ পুস্তকং পঠ্যতে (ছাত্র কৃর্তক পুস্তক পঠিত হয়)।
দ্বিতীয়া বিভক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহ
১। কর্তৃবাচ্যে কর্মকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন- স জলং পিবতি (সে জল পান করছে)। অহং তং জানামি (আমি তাকে জানি)।
২। ক্রিয়াবিশেষণে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন- বালকঃ ধীরং গচ্ছতি (বালকটি ধীরে ধীরে যাচ্ছে)। বালিকা মধুরং গায়তি (বালিকাটি মধুর স্বরে গাইছে)।
৩। ব্যাপ্তি অর্থে কালবাচক ও পথবাচক শব্দের সঙ্গে দ্বিতীয়া হয়। যেমন- কালবাচক শব্দের সঙ্গে: সঃ মাসং ব্যাকরণং পঠতি (সে একমাস যাবৎ ব্যাকরণ পড়ছে)। পথবাচক শব্দের সঙ্গে: ক্রোশং গিরিঃ তিষ্ঠতি (পাহাড়টি একক্রোশ পর্যন্ত অবস্থান করছে।
8। অন্তরা (মধ্যে) ও অন্তরেণ (ব্যতীত) শব্দযোগে দ্বিতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন- ত্বাং মাং চ অন্তরা হরিঃ তিষ্ঠতি (তোমার ও আমার মধ্যে হরি অবস্থান করছে।
তৃতীয়া বিভক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহ
১। করণকারকে প্রধানত তৃতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন- বয়ং লেখন্যা লিখামঃ (আমরা কলম দিয়ে লিখি)। অহং হস্তেন গৃহামি (আমি হাত দিয়ে গ্রহণ করছি)।
২। সহ, সার্ধম্, সমম্, প্রভৃতি সহার্থক শব্দযোগে তৃতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন— পিতা পুত্রেণ সহ গচ্ছতি (পিতা পুত্রের সঙ্গে যাচ্ছেন)। কেনাপি (কেন + অপি) সার্ধং কলহং ন কুর্যাৎ (কারো সঙ্গে বিবাদ করা উচিত নয়)। গুরুঃ শিষ্যেণ সহ গচ্ছতি (গুরু শিষ্যের সঙ্গে যাচ্ছেন)।
৩। উন, হীন, শূন্য, রহিত, অলম্ ও প্রয়োজনার্থক শব্দযোগে তৃতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন—
একেন উনঃ (এক কম)। ধর্মেণ হীনঃ (ধর্মহীন)। ধনেন শূন্যঃ (ধনশূন্য)। বিবেকেন রহিতঃ (বিবেকহীন) । বিবাদেন অলম্ (বিবাদের প্রয়োজন নেই)। মম ধনেন প্রয়োজনম্ অস্তি (আমার ধনের প্রয়োজন আছে ।
8। যে-অঙ্গের বিকারকশত অঙ্গীর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, সেই অঙ্গে তৃতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন— স চক্ষুষা কাণঃ (সে কানা) । পাদেন খঞ্জঃ বালকঃ (বালকটির পা খোঁড়া) ।
৫ । যে-লক্ষণ অর্থাৎ চিহ্ন দ্বারা কোনও ব্যক্তি সূচিত হয়, সেই লক্ষণবোধক শব্দের সঙ্গে তৃতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন— পুস্তকেন ছাত্রং জানামি (পুস্তকের দ্বারা ছাত্রকে বুঝতে পারি)। জটাভিঃ তাপসম্ জানামি (জটাসমূহের দ্বারা তপসীকে বুঝতে পারি)।
৬ । হেতু অর্থে তৃতীয়া বিভক্তি হয়। যেমন- ময়ূরঃ হর্ষেণ নৃত্যতি (ময়ূর আনন্দে নাচছে)। বৃদ্ধা শোকেন রোদিতি (বৃদ্ধা শোকে কাঁদছেন)।
চতুর্থী বিভক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহ
১। সম্প্রদান কারকে প্রধানত চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- তৃষ্ণার্তায় জলং দেহি (তৃষ্ণার্তকে জল দাও)। বহীনায় বসব্ৰং দেহি (বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দাও)।
২। তাদর্ঘ্যে অর্থাৎ নিমিত্তার্থে চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- দানায় ধনম্ (দানের জন্য ধন)। অশ্বায় ঘাসঃ (গোড়ার জন্য ঘাস)।
৩। হিত, সুখ ও নমস্ শব্দযোগে চতুর্থী বিভক্তি হয়। যেমন- ব্রাহ্মণায় হিতম্ (ব্রাহ্মণের হিত)। সুখং শিষ্যায় (শিষ্যের সুখ)। রামকৃষ্ণায় নমঃ (রামকৃষ্ণকে নমস্কার)।
প্রশ্নমালা
সঠিক উত্তরটির পাশে টিক (/) চিহ্ন দাও :
(ক)যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্ম/অপাদান/অধিকরণ/করণ কারক বলে।
(খ) যে বস্তু দান করা হয়, তাকে সম্প্রদান/কর্ম/অপাদান/অধিকরণ কারক বলে।
(গ) যাকে দান করা হয়, তাকে বলা হয় সম্প্রদান/অপাদান/অধকরণ/করণ কারক ।
(ঘ) ‘অন্তরেণ’ শব্দযোগে হয় ৪র্থী / ৫মী/৬ষ্ঠী/২য়া বিভক্তি।
(ঙ) ‘ঋতে’ শব্দযোগে হয় ৪র্থী/ ৫মী/৬ষ্ঠী/৭মী বিভক্তি ।
(চ) ‘নিপুণ’ শব্দযোগে হয় ২য়া/৪র্থী /৭মী/৫মী বিভক্তি।
(ছ) তৃপ্ ধাতুর যোগে বিকল্পে করণে হয় ৫মী/১মা/৭মী/৬ষ্ঠী বিভক্তি।
বাক্য রচনা কর :
ইতি, চ, ধিক্, পরিতঃ, নিকষা, প্রতি, উভয়তঃ।
উদাহরণ দাও :
অব্যয়যোগে ১মা, নির্ধারণে ৬ষ্ঠী, ভাবে ৭মী, অনাদরে ৬ষ্ঠী, কালাধিকরণে ৭মী, ব্যাপ্ত্যর্থে ২য়া, তাদর্ঘ্যে ৪র্থী, অপেক্ষার্থে ৫মী।
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
(ক) ‘অলম্’ শব্দযোগে কোন্ বিভক্তি হয়?
(খ) ‘ক্রিয়ান্বয়ি কারকম্’ বলতে কি বোঝ?
(গ) ‘যাবৎ’ শব্দযোগে কোন্ বিভক্তি হয় ?
(ঘ) সম্প্রদান কারকে কোন্ বিভক্তি হয়?
(ঙ) নমস্ (নমঃ) শব্দযোগে কোন্ বিভক্তি হয়?
(চ) অপেক্ষার্থে কোন্ বিভক্তি হয়?
বাংলায় অনুবাদ কর :
(ক) অহং তং জানামি। (খ) শ্রমম্ অন্তরেণ বিদ্যা ন ভবতি। (গ) বয়ং লেখন্যা লিখামঃ। (ঘ) পুস্তকেন ছাত্রং জানামি।) (ঙ) পিতুঃ গরীয়সী মাতা। (চ) জ্ঞানাৎ ঋতে সুখং নাস্তি।
সংস্কৃতে অনুবাদ কর :
(ক) বৃদ্ধ শীতে কাঁপছেন। (খ) বীরদের মধ্যে ভীষ্ম শ্রেষ্ঠ। (গ) আকাশে চাঁদ উঠছে। (ঘ) বিজয় সঙ্গীতে নিপুণ । (ঙ) শৈশব থেকে সে কৃষ্ণভক্ত। (চ) সে গ্রামের বাইরে যাচ্ছে। (ছ) তৃষ্ণার্তকে জল দাও ।
রেখাঙ্ক্ষিত পদসমূহের কারণসহ বিভক্তি নির্ণয় কর :
(ক) সঃ মাসং ব্যাকরণং পঠতি। (খ) পিতা পুত্রেণ সহ গচ্ছতি। (গ) পাদেন খঞ্জঃ বালকঃ। (ঘ) জটাভিঃ তাপসং জানামি (ঙ) মেঘাৎ বৃষ্টিঃ ভবতি। (চ) শীতাৎ কম্পতে বৃদ্ধা। (ছ) ন অগ্নিঃ তৃপ্যতি কাষ্ঠানাম্। (জ) কবি কালিদাসঃ শ্ৰেষ্ঠঃ ।
আরও দেখুন :