ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয় ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

স্বরধ্বনি উচ্চারণে মুখের ভেতর শ্বাসবায়ু কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হয় না। স্বরতন্ত্রীদ্বয় টানটান অবস্থায় থাকে বলে শ্বাসবায়ুতে কম্পন যুক্ত হয় এবং সেই কারণেই সকল স্বরধ্বনি ঘোষধ্বনি। স্বরধ্বনির উচ্চারণে জিভের সম্মুখে, পশ্চাতে, ওপরে ও নিচে গতিবিধি পরিলক্ষিত হয়, ওষ্ঠদ্বয় কখনও প্রসারিত, কখনও বা বর্তুলাকার আবার কখনও অপ্রসারিত বর্তুল অবস্থায় থাকে।

প্রমিত বাংলা ভাষায় সাধারণত সাতটি স্বরধ্বনির ব্যবহার দেখা যায়। এই সাতটি স্বরধ্বনি সানুনাসিকভাবেও উচ্চারণ করা যায়। আনুনাসিক ও সানুনাসিক স্বরধ্বনির মধ্যে পরস্পর ধ্বনিমূলীয় বিরোধ থাকায় প্রচলিত বাংলা ভাষার স্বরধ্বনির সংজ্ঞা নিরূপণে ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান।

মুহম্মদ আবদুল হাই (ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব ২০১০:১৬), সুকুমার সেনের মতে স্বরধ্বনির সংখ্যা ‘আর্ট’। আবার রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ, পবিত্র সরকারের মতে স্বরধ্বনির সংখ্যা ‘মা’।
ডেমরা থানার বিভিন্ন প্রান্তের শব্দে ব্যবহৃত স্বরধ্বনির সংখ্যা নির্ণয়কল্পে ধ্বনিতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় এ উপভাষায়ও স্বরধ্বনির সংখ্যা সাত।
স্বরধ্বনিগুলো হল-ই, এ, অ্যা, আ, অ, ও,

স্বরধ্বনি বিচার

ড্যানিয়েল জোনস স্বরধ্বনি বিচার পদ্ধতির ক্ষেত্রে মূলত জিভের উচ্চতা ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করেছেন। মুহম্মদ আবদুল হাই তাঁর ‘ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’ শীর্ষক গ্রন্থে (২০১০ : ১৩) স্বরধ্বনি বিচারের মানদণ্ড প্রসঙ্গে বলেছেন-

“স্বরধ্বনি বিশ্লেষণ এবং বিচারের মাপকাঠি তিনটি, যথা-

১. স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বার যে অংশ উঁচু করা হয় তা খুঁজে বের করা;

২. জিহ্বার যে অংশ উঁচু করা হয় তার পরিমাণ অর্থাৎ তা কতটুকু উঁচু করা হয় তা জানা
এবং

৩. স্বরধ্বনির উচ্চারণে ঠোঁটের ও চোয়ালের অবস্থা কেমন থাকে সে সম্বন্ধে অবহিত হওয়া।”
মুহম্মদ আবদুল হাই-এর স্বরধ্বনি বিচারের প্রথম পদ্ধতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি উচ্চারণে জিভের সম্মুখ পশ্চাৎ ও মধ্যবর্তী ভাগের উঁচু করা দিক থেকে স্বরধ্বনি তিন ভাগে বিভক্ত-

১. ই, এ, এ্যা (সম্মুখ পর্যায়)

২. অ, ও, উ (পশ্চাৎ পর্যায়)

৩. আ মধ্যবর্তী মৌলিক স্বরধ্বনি

ভাষাতাত্ত্বিক রফিকুল ইসলাম ও আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে উল্লেখিত

প্রক্রিয়ায় স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত, যথা-

১. উচ্চ

এ উ

২. উচ্চমধ্য
এ, ও

৩. নিম্নমধ্য
এ্যা, অ

8. নিম্ন

আ (মোরশেদ ১৯৯৭)
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট খোলার পরিমাণগত দিক থেকে স্বরধ্বনি চার ভাগে
বিভক্ত :

১. /ই/ সংবৃত সম্মুখ স্বরধ্বনি

২. / এ / অর্ধ-সংবৃত সম্মুখ স্বরধ্বনি

৩. / এ্যা/ অর্ধ-বিবৃত সম্মুখ স্বরধ্বনি

৪. /আ/ সম্মুখ ও পশ্চাতের মাঝামাঝি বিবৃত স্বরধ্বনি
ঠোঁট প্রায় বন্ধ থাকলে ‘সংস্কৃত’ স্বরধ্বনি, ঠোঁট সবচেয়ে বেশি খোলা থাকলে বিবৃত স্বরধ্বনি।

পশ্চাৎ পর্যায়ের চারটি স্বরধ্বনি

১. /অ/ অর্ধবিবৃত পশ্চাৎ

২. /ও/ সিকি সংবৃত পশ্চাৎ

৩. /ও/ অর্ধ সংবৃত পশ্চাৎ

৪ . /উ/ সংবৃত পশ্চাৎ

তৃতীয় পদ্ধতিতে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ঠোঁট ও চোয়ালের অবস্থানগত দিক থেকে

/২/- ঠোঁট ঈষৎ প্রসূত

আ-ঠোঁট খোলা ও বিবৃত

/এ/-ঠোঁট নির্লিপ্ত থেকে ঈষৎ প্রসূত

ও-ঠোঁট গোল

/এস/

ও-ঠোঁট অপেক্ষাকৃত কম গোল (এ ধ্বনিটির নাম অভিজ্ঞত ‘ও’ )
উঠোঁট যথেষ্ট গোল হয়

স্বরধ্বনির গঠনে ব্যবহৃত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল বাকপ্রত্যঙ্গের উচ্চারণকালীন আকৃতি, প্রকৃতি, অবস্থান ও উচ্চারণস্থানগত দিক বিবেচনা করে ভাষাতাত্ত্বিক রফিকুল ইসলাম ও আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ তাঁদের গ্রন্থে স্বরধ্বনির শ্রেণিকরণ নিম্নোক্তভাবে করেছেন-

১. উচ্চ সম্মুখ স্বরধ্বনি /ই/
২. উচ্চ-মধ্য সম্মুখ স্বরধ্বনি / এ /
৩. নিম্ন-মধ্য সম্মুখ স্বরধ্বনি / এ্যা/
৪. মধ্য-পশ্চাৎ স্বরধ্বনি / অ, ও/
৫. উচ্চ-পশ্চাৎ স্বরধ্বনি /উ/
৬. মধ্য স্বরধ্বনি /আ/

 

ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

 

বাংলায় যে সাতটি স্বরধ্বনি আছে সেগুলি হল যথাক্রমে ই, এ, এ্যা, আ, অ, ও, উ। এই সাতটি স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে মুখের ভেতর জিভের ওপরে নিচে ওঠানামা ও সম্মুখে পশ্চাতে এগিয়ে যাওয়া ও পিছিয়ে আসা এবং ওষ্ঠদ্বয়ের সংকোচন ও প্রসারণে মুখগহবরের আকৃতির পরিবর্তন লক্ষ্য করা হয়।

ছকের বাঁদিকে আছে ই, এ, এ্যা ধ্বনি। এই ধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিভ মুখের ভেতরে কঠিন তালুর দিকে সম্মুখে অগ্রসর হয়। /ই/ ধ্বনি উচ্চারণে জিভ সর্বোচ্চ সীমায় থাকে, // ধ্বনি উচ্চারণে জিভ ওপর থেকে এক ধাপ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ ছেড়ে নিচে নেমে উচ্চ-মধ্যসীমায় অবস্থান করে ও / এ্যা / ধ্বনি উচ্চারণে জিভ আরও এক ধাপ নিচে অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ ছেড়ে নিম্ন-মধ্যসীমায় অবস্থান করে।

ছকের ডানদিকে আছে উ, ও, অ ধ্বনি। এই ধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিভ পেছনের দিকে সরে যায়। সম্মুখ স্বরধ্বনির মতো জিতের সর্বোচ্চ সীমায় আমরা পাই /উ/ ধ্বনি। জিভের উচ্চ-মধ্য অবস্থায় পাই /ও/ ধ্বনি ও নিম্ন-মধ্য অবস্থানে পাই /অ/ ধ্বনি। এই স্বরধ্বনিগুলো পশ্চাৎধ্বনি।

সর্বোচ্চ সীমায় জিভ উঠে গেলে চোয়ালসমেত মুখের হাঁ থাকে সংকুচিত ও সংবৃত। তাই /ই/ /উ/ ধ্বনি উচ্চ ও সংবৃত। /এ/ /ও/ ধ্বনি উচ্চারণে চোয়ালসমেত মুখের হাঁ থাকে অর্ধ-সংবৃত অর্থাৎ অর্ধ-সংকুচিত। / এ্যা/ /অ/ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভের উচ্চতা থাকে নিম্ন-মধ্য অবস্থায়। তাই মুখের হাঁ থাকে অর্ধ-বিবৃত অর্থাৎ আধ-খোলা।

ওষ্ঠদ্বয়ের আকৃতি বিচার করলে দেখা যায়, /ই/ ধ্বনিতে ওষ্ঠদ্বয় সম্পূর্ণ প্রসারিত থাকে। /উ/ ধ্বনিতে সম্পূর্ণ গোলাকার থাকে। /এ/ ধ্বনির বেলায় ওষ্ঠদ্বয় অর্ধ-প্রসারিত /ও/ ধ্বনিতে অর্ধ-গোলাকার; / এ্যা/ ধ্বনিতে সামান্য প্রসারিত ও /অ/ ধ্বনিতে ওষ্ঠদ্বয় সামান্য গোলাকার। /অ/ ধ্বনি উচ্চারণে জিভ থাকে সর্বাপেক্ষা নিম্ন অবস্থায়, জিভ সামনে বা পিছনে সরে যায় না। তাই /আ/ ধ্বনি কেন্দ্রীয়, নিম্ন ও বিবৃত
কোমল তালুর অবস্থা অনুসারে স্বরধ্বনি দুই ভাগে বিভক্ত :

১. মৌখিক

২. আনুনাসিক

মৌখিক ধ্বনি উচ্চারণে কোমল তালু স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে এবং ফুসফুস তাড়িত বাতাস মুখ দিয়ে বের
হয়ে যায়। আনুনাসিক স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় কোমল তালু নিচে নেমে যায় এবং ফুসফুসতাড়িত বাতাস মুখ ও নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে ধ্বনিগুলোর নাসিক্যজাত অনুরণন শোনা যায়। ডেমরা থানার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ভাষায় আনুনাসিক ধ্বনির ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না।

ডেমরা অঞ্চলের শ্রমিক শ্রেণির ভাষায় ব্যবহৃত স্বরধ্বনি

ঢাকার পূর্ব-উপকণ্ঠে অবস্থিত ডেমরা থানার উপভাষায় প্রমিত বাংলার মূল স্বরধ্বনিগুলোর প্রয়োগ দেখা যায়।
ডেমরায় উপভাষায় স্বরধ্বনিমূল তালিকা (The list of vowels)
স্বরধ্বনিগুলো হল- ই (i) এ (e), এ্যা (e) আ (a), অ (3) ও (o) উ (u)

স্বরধ্বনি
এ /e/

উদাহরণ

হিকর / hikor (শিকড়
টেকা / teka/ (টাকা)
কাইল /kail/ (কাল)
কেটা /keta/ (কে)

এ্যা //
এ্যা /ac/ (ডাকের জবাব অর্থে)
আ /a/
জামা / Jama /
অ/3/
8/0/

অহন / phon / (এখন)
শুনদা /ondal (ওদিক দিয়ে)
উফরে / uphre/ (উপরে)

ধ্বনির উচ্চারণগত দিক থেকে ধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটে সেই পরিবর্তনের মধ্যদিয়েই ভাষার রূপান্তর পরিলক্ষিত হয়। ধ্বনির এই পরিবর্তনের ফলে শব্দের গঠনগত রূপেও পার্থক্য দেখা যায়। প্রমিত ভাষা

থেকে ডেমরা থানার প্রচলিত উপভাষার উচ্চারণে তারতম্য দেখা যায়। শব্দের উচ্চারণের এই পরিবর্তন শব্দের ‘আদি’, ‘মধ্য’ ও ‘অন্তে’ এই তিন ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়। নিচে পরিবর্তনগুলো দেখানো হল-

স্বরধ্বনির অবস্থান (Distribution of vowels)

 

ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

 

ধ্বনিতত্ত্ব স্বরধ্বনি

 

স্বরধ্বনির পরিবেশ বন্টন

শব্দের মধ্যে ধ্বনির অবস্থান এবং একটি ধ্বনির সঙ্গে অন্য ধ্বনির সংযোগ সম্মিলনের মাধ্যমে ভাষার
ধ্বনি সমষ্টির পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। শব্দের মধ্যে ধ্বনির অবস্থান (Distribution) তিন জায়গায় হতে পারে শব্দের আদিতে, মধ্যে ও অস্তে বাংলায় প্রায় সব ধ্বনি আদি, মধ্য ও অন্ত্য ত্রিবিধ অবস্থানেই বসে, শুধু দু’ একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়।

/অ/ ধ্বনিটি শব্দের আদি ও মধ্যে বসে, কিন্তু অন্তে ব্যবহৃত হয় না। তবে শব্দের অন্তে বাংলায় প্রায়ই /অ/ এর স্থানে /ও/ উচ্চারিত হয়। ঢাকার ডেমরার উপভাষায় সব স্বরধ্বনি রূপমূলের আদি, মধ্য ও অন্তে ব্যবহৃত হয়। রূপমুদের মধ্যে ধ্বনিমূল /অ/-এর ব্যবহার ব্যাপক, তবে ‘অঙ্গে ব্যবহারের সময় অন্য ধ্বনির সঙ্গে মিশে থাকে এবং /অ/ ধ্বনিমূল /ও/ এর মত উচ্চারিত হয়। যেমন-

রূপমূলের শেষে বড়

বাংলা একক স্বরধ্বনিগুলোর দৈর্ঘ্য মূলত একই অবস্থানগত পরিবেশের কারণেই প্রতিটি মৌলিক হ্রস্বস্বর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যায়। শব্দের আদ্য অবস্থানে যেকোনো মূলস্বরের উচ্চারণ হ্রস্ব থাকে। কিন্তু পরবর্তী ধ্বনি থেকে শুরু করে শেষ অবধি ক্রমশ এই ধ্বনির দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে, অর্থাৎ শব্দের অন্তস্বরের উচ্চারণ দীর্ঘতর হয়।

যেমন-ডেমরার আঞ্চলিক রূপমূল খাইবা (খাবে) রূপমূলটিতে (খ+আ+ই+ব+আ) তিনটি স্বরধ্বনি আছে। আদ্যস্বর ‘খা” এর চেয়ে /ই/ একটু বেশি দীর্ঘ, আবার অন্ত স্বরধ্বনি /আ/-এর উচ্চারণ দীর্ঘ হয়েছে। রূপমূল উচ্চারণের ক্ষেত্রে ধ্বনির স্বল্প ও দীর্ঘ উচ্চারণের জন্য শব্দের অর্থগত ভারতম্য ঘটে না।

স্বরধ্বনির পরিবর্তন

 

প্রমিত বাংলার সঙ্গে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণের ক্ষেত্রে স্বরধ্বনিগত পার্থক্য লক্ষ্যণীয়।

প্রমিত রূপ

ক্ষুধা >

লিখ

পিশাপ

আঞ্চলিক রূপ

ন্যাকো/

ল্যাখো ই

বৈশিষ্ট্য

/উ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয়েছে /ই/ ধ্বনিতে

/ই/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয়েছে / এ্যা/ ধ্বনিতে
T>
প্রস্তাব >

প্রমিত রূপমূলের উচ্চ মধ্য অর্থ সংস্কৃত সম্মুখ স্বরধ্বনি / এ / পরিবর্তিত হয় /ই/ ধ্বনিতে
একটু > ইটটু
ছেড়া ছিলা
সেজনা >
সেমাই >
ইততা

নিম্ন মধ্য অর্থ বিবৃত / এ্যা / ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ সংস্কৃত /ই/ ধ্বনিতে >

নিম্ন বিবৃত্ত /আ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ সংবৃত্ত /ই/ ধ্বনিতে
টান্ডি

ঘণ্টা

উচ্চ মধ্য অর্থ সংস্কৃত /৩/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ সংস্কৃত (ই/ ধ্বনিতে শিক্ষা
সোজা

উচ্চ সংবৃত /উ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ সংস্কৃত /ই/ ধ্বনিতে

/ঋ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ সংবৃত /ই/ ধ্বনিতে

কৃপন >কিরপিন

সৃষ্টি>ছিত্রিশটি

উচ্চ সংস্কৃত /ই/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত্ত / এ / ধ্বনিতে

নিমন্ত্রণ >নেমেনতননো

নিম্ন বিবৃত /আ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ মধ্য অর্থ সংস্কৃত / G / ধ্বনিতে
> গেলাশ
ঢাকা >ডেকা
বাঁকা >বেহা
আঁকা >এহাৰেহা

নিম্ন অর্থ বিবৃত /অ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত / এ / ধ্বনিতে

মেজো >মাজে
সেজো >শাজে
খাইলখেল >

উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত / ৪ / ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত / এ / ধ্বনিতে
ওমা>>এমা
এই

উচ্চ সংবৃত /ই/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন মধ্য অর্ধ বিবৃত / এ্যা / ধ্বনিতে
>
জীবন্ত > জ্যান্ত
লিখঢিল
>ল্যাখ> ভ্যাল

উচ্চ মধ্য অর্থ সংস্কৃত / এ / ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন মধ্য অর্ধ বিবৃত / এ্যা/ ধ্বনিতে
প্রমিত বাংলায় উচ্চারিত / এ / ধ্বনি ডেমরার ভাষায় / এ্যা/ রূপে উচ্চারিত হয়। তবে /এ-এর উচ্চারণও
শোনা যায়।
ক্ষেত >বেল
Λখ্যাতব্যান

বেড়াΛব্যারা

নিম্ন বিবৃত /আ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন মধ্য অর্থ বিবৃত / এ্যা / ধ্বনিতে

কাঁথা >
দাও > দ্যাও
ধাক্কা >ডেকা/ড্যাকা

নিম্ন অর্ধ বিবৃত /অ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন মধ্য অর্থ বিবৃত / এ্যা/ ধ্বনিতে
খড়>খ্যার

গজানো >পাট
গ্যাজানো>নাইল্যা (ভিন্ন রূপমূল)

উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত্ত / এ / ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন বিবৃত / আ / ধ্বনিতে

এসো > আশো
এসেছি >আইছি
বেগুন > বাইগুন
খেয়ে > খাইয়া
যেয়ে > যাইয়া
খেলাম > খাইলাম
যাবে > যাইবা

ডেমরার ভাষা /এ্যা / ধ্বনির ব্যবহার বেশি দেখা যায়। প্রমিতের / এ / ধ্বনি ডেমরার ভাষায় / আ/-এ রূপান্তরিত হতে দেখা যায় বেশি।

নিম্ন অর্থ বিবৃত্ত /অ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন বিবৃত /আ/ ধ্বনিতে

অমাবশ্যা >আমাশশা
অর্ধেক > আদদেক
পাতা>অফিস

উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত্ত /ও/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন বিবৃত / আ / ধ্বনিতে
গোসল >পাদুয়া/নাহান

উচ্চ সংবৃত/উ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় হয় নিম্ন বিবৃত / আ / ধ্বনিতে
সুৰাশ >বাশনা

উচ্চ সংস্কৃত /ই/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন বিবৃত /অ/ ধ্বনিতে

বিরাট >বরো

উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত্ত / এ / ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন বিবৃত / অ / ধ্বনিতে

বলেছ >ক‍ইছ

দিয়েছিস>দিছত

নিম্ন বিকৃত/আ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন অর্ধ বিবৃত /অ/ ধ্বনিতে

রাবার >লবাট/লবার

উচ্চ মধ্য অর্থ সংস্কৃত /ও/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্ন অর্থ বিবৃত /অ/ ধ্বনিতে

কোরবো>করমু

উচ্চ সংস্কৃত /ই/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় নিম্নবিবৃত / আ / ধ্বনিতে

লুকিয়ে >লুকায় লুকাইয়া

নিম্ন অর্থ বিবৃত /অ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ মধ্য অর্থ সংবৃত /ও/ ধ্বনিতে

অভ্যাস >শুব্বাশ

অসুখ > শুশুক

বছর > বচোর

বন>দোবন্ধ

উচ্চ সংস্কৃত /উ/ ধ্বনি পরিবর্তিত হয় উচ্চ মধ্য অর্ধ সংবৃত /ও/ ধ্বনিতে
কুনু

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অর্ধ-স্বরধ্বনি (semi-vowels)

অর্ধ-স্বরধ্বনি উচ্চারণ প্রক্রিয়ার দিক থেকে স্বরধ্বনির মধ্যবর্তী বলা যায়। অর্থাৎ এগুলো উচ্চারণের সময় স্বর ও ব্যঞ্জন উভয় ধ্বনির প্রকৃতি গ্রহণ করে থাকে। অর্ধ-স্বরধ্বনি স্বরধ্বনির মত স্বরিত নয়। তার কারণ, এগুলো শ্রুতজনিত আওয়াজ ছাড়াই দ্রুত উচ্চারিত হয়। ধ্বনির পরিবর্তন অনেক সময় মুখগহ্বরের আকৃতি ও প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। অর্ধ-স্বরধ্বনি গঠনের সময় জিভ ক্রমাগত উঁচুতে ও পেছনে যেতে পারে এবং সেই সঙ্গে ঠোঁটের আকারও গোলাকার ধারণ করে। অর্ধ-স্বর একক ভাবে উচ্চারিত হতে পারে না। অর্ধ-স্বরগুলো পূর্ণস্বরের পিছনে যুক্ত হয়ে যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বর গঠন করে।

বাংলায় অর্ধ-স্বরধ্বনির সংখ্যা নিয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যায়। সুনীতি কুমার চ্যাটার্জি ও সুকুমার সেন দুটি অর্ধ-স্বরধ্বনির (অন্তঃস্থ-য় ও অন্তঃস্থ-ব) উল্লেখ করেছেন। মুহম্মদ আবদুল হাই তিনটি অর্ধ-স্বরধ্বনি (অন্তঃস্থ-য়, অন্তঃস্থ-ব ও ই-শ্রুতি) উল্লেখ করেছেন।

চার্লস ফার্গুসন এবং মুনীর চৌধুরী (১৯৬০ : ৩৯-৪২) বাংলায় চারটি অর্ধ-স্বরধ্বনির উল্লেখ করেছেন। এগুলো যথাক্রমে /ই, এ, ও, উ/-এই চারটি স্বর অক্ষরের চূড়া থেকে খাদ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। অর্ধ-স্বরধ্বনির উদাহরণে তাঁরা /উ/- এর জন্য কোনো ন্যূনতম জোর দেখাতে পারেননি বলে ভাষাতাত্ত্বিক আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ (আ. ডা., ১৯৯৭, ২১২) /ই এ ও/ তিনটি অর্ধ-স্বরধ্বনির ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন।

ঢাকার উপভাষায় ই/j/, এ // উ/p/, ও/g/ চারটি অর্ধ-স্বরধ্বনির ব্যবহার দেখা যায়। ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় এই ধ্বনির প্রয়োগ নিয়ে দেখানো হল :

অর্ধ-স্বরের ব্যবহার

বাই /bai (ভাই)

খাই /khai

আইছো /njcho/ ( এসেছো)

কবিই /kobi/ (বলবিই)

খাইছো / khaicho (খেয়েছো

দুইয়া / dujêa/ (ধোয়া )

নাহাই / nahaji / (গোসল)

খাওয়াই / khaoçaj/ ( খাওয়ানো)

থুই (thuj/ (রাখা)

///g/ (অ) আয় / ac/ (আস)

/s//g/

খায় /kchael

কও /kag/ (বল)

কেওর (kegr/ (দরজা)

বঙ (bag/ (বস)

দাও / dag (দা)

লও /log/ (নাত)
////

জাউ (jau/ (নরম ভাত )

ডেউয়া / degla/ (একধরনের ফল)

আ /aw/

বাউ / bau/ (ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে)

লাউ / lau/

যাউক /jagk/ (যা দেবার দাও)

বেউয়া /beta/ (চোখের পাতার পাপড়ি)

কো-উক (kopk / (বলুক )

উল্লেখিত অর্ধ-স্বরগুলোর উচ্চারণ স্বরধ্বনির মত কিন্তু প্রয়োগ রীতিতে এর বৈশিষ্ট্য ব্যঞ্জনধ্বনির মত। অর্ধস্বর এককভাবে উচ্চারিত হতে পারে না এবং অক্ষর তৈরি করতে পারে না। ব্যঞ্জনধ্বনির মত অক্ষর
বদ্ধ করে দেয়।
অর্ধ-স্বরের পরিবর্তন

অর্ধ-স্বরও ডেমরার কথ্যভাষায় বিবর্তিত হয়ে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়-

চলিত     আঞ্চলিক
গায়ক >গান / gan// ধ্বনি পরিবর্তিত / এ / ধ্বনিতে য় > এ

শয়ন >শোষন / fogn/ য় ধ্বনি পরিবর্তিত ও ধ্বনিতে

মোয়া > মুউআ / muga/ য় ধ্বনি পরিবর্তিত উ ধ্বনিতে > উ

দুউআ / duga/ য় ধ্বনি পরিবর্তিত উ ধ্বনিতেদোয়া >

ধোয়া >দটোআ / duga/ য় ধ্বনি পরিবর্তিত উ ধ্বনিতে

অর্ধ-স্বর য়, ই, ও, উ-তে পরিবর্তিত হওয়ায় পূর্ববর্তী ধ্বনিও পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেমন : “মোয়া’-একধরনের খাবার। ডেমরার ভাষা উচ্চারণের সময় অর্ধস্বর /৫/ পরিবর্তিত হওয়ায় পূর্ববর্তী ‘মো’ পরিবর্তিত হয়ে ‘মু’ হয়ে যায় ‘মুউআা’।

দ্বি-স্বরধ্বনি (Dipthongs)

দ্বি-স্বরধ্বনিতে দুটি স্তর মিলিতভাবে একটি অক্ষর তৈরি করে। যদি পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সমশ্রেণির অথবা অসমশ্রেণির স্বরধ্বনি নিশ্বাসের একই প্রয়াসে উচ্চারিত হয়ে আক্ষরিক ধ্বনি গঠন করে এবং দ্বিতীয় স্বরধ্বনির তুলনায় প্রথমটা দীর্ঘ এবং স্পষ্ট হয় তাহলে এই শ্রেণির আক্ষরিক স্বরধ্বনিকে দ্বি-স্বরধ্বনি বলা
হয়।

যেমন- ই-এ বিয়ে

ই-আ টিয়া, বিয়া

দ্বি-স্বরধ্বনি উচ্চারণে প্রথম স্বরধ্বনিটি মুক্তভাবে উচ্চারিত হয়ে দ্বিতীয় স্বরে মিশে যায় এবং দ্বিতীয় স্বরটি অর্ধস্বর

রূপে থাকে।

মো. আব্দুল হাই প্রমিত বাংলায় উনিশটি নিয়মিত এবং বারটি অনিয়মিত দ্বি-স্বরধ্বনির উল্লেখ করেছেন। ঢাকার ডেমরা থানার উপভাষায়ও দ্বি-স্বরধ্বনি প্রমিত বাংলার উচ্চারণ এবং আঞ্চলিক উচ্চারণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ত্রি-স্বরধ্বনি, চতুঃস্বর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

দ্বি-স্বরধ্বনির ব্যবহার

 

ধ্বনিতত্ত্ব  স্বরধ্বনি

 

ধ্বনিতত্ত্ব  স্বরধ্বনি

 

আদিতে ‘এও’ ‘আএ’ দ্বিস্বরধ্বনির ব্হার পরিলক্ষিত হয় না ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায়। ডেমরা অঞ্চলে নিয়মিত দ্বিস্বরধ্বনি ছাড়াও কিছু দ্বিস্বরধ্বনির ব্যবহার দেখা যায়, যা বিশ্বধ্বনির গঠন প্রক্রিয়ার নিয়মবহির্ভূত। নিচে এই অনিয়মিত দ্বিস্বরধ্বনির ব্যবহার দেখানো হল :

 

ধ্বনিতত্ত্ব  স্বরধ্বনি

 

চলিত থেকে আঞ্চলিকে দ্বিস্বরধ্বনিগত পরিবর্তন

অও > এ্যাও

চওড়া > চ্যাওরা

লও > ন্যাও

অএ > অই

হয়েছে > হইছে

অউ > ওউ

বউ > বোউ

আও > এ্যাও

দাও > দ্যাও

আও > আয়

বিলাও > বিলায়

ইয়ে > আয়

এগিয়ে > আগায়

চেঁচিয়ে > চ্যাচায়

হারিয়ে > হারায়

ইয়ে > ইয়া

বিছিয়ে > বিছাইয়া

চিনিয়ে > চিনাইয়া

এগিয়ে > আগাইয়া

ইয়ে > আই

এই > আই

খেয়েছি > খাইছি।

এয়ে > আই

খেয়েছিলাম > খাইছিলাম

খেয়েছি > খাইছি

ওই উই

ওই > উই

ওও > এ্যাও

নোওয়ানো > ন্যাওয়ানো

ওয়া > উয়া

গোয়ার > গুয়ার

দোয়া > দুউয়া

 

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ” গ্রন্থে দ্বিস্বরধ্বনি ছাড়াও ত্রিস্বর
(Triphthong) চতুম্বর (Tetraphthong) উদাহরণসহ উল্লেখ করেছেন।
ঢাকার উপভাষায়ও কিছু ত্রিস্বর, চতুঃস্বর, পঞ্চস্বর, ঘষ্টস্বরের প্রয়োগ দেখা যায়-

ত্রি-স্বরধ্বনি

দ্রুত উচ্চারণে যৌগিক স্বরধ্বনির ত্রিমাত্রিক উচ্চারণ ডেমরার ভাষায় দেখতে পাওয়া যায়। চলতি বাংলায় সাধারণত এ ধরনের উচ্চারণ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় না। এক্ষেত্রে দ্বি-স্বরধ্বনির সাথে আরেকটি স্বরধ্বনির সংযোগ ঘটে এবং নিজস্ব প্রকৃতি পরিবর্তন করে। ত্রি-স্বরধ্বনির ক্ষেত্রে প্রথম স্বর দ্বিতীয় স্বরের তুলনায় দীর্ঘ ও তৃতীয় স্বর প্রায় সমরূপ। দ্বিস্বরের মত এগুলো ত্রিশ্বরে এককভাবে স্ফূরিত হয়। যেমন :

ত্রিস্বর

উদাহরণ

ইআএ (iac)

হিআলে (hiale) (শিয়ালে)

ইআও (iao)

জিগাও নিআও (niao), জিরাও, 1

উইএ (ule)

উইও (uio)

উইয়ে (uic) (সে)

দুইও (duio), তইও, চুইও (জমিচাষ)

উজও (uao)

হুআও (huao) (শোয়াও

হেইএ (heie), অইএ (তুচ্ছার্থে সে)

এইএ (ele)

বেআই (beai)

এআই (eai)

আইও (alo)

আইও (aio) (এসো)

আইআ (ala)

বাইআ (baia) (বেয়ে),

নাহাইআ (nahaia) (গোসল করে

আইয়া (aica)

যাইয়া (jaica), শুইয়া

, দুইয়া (ধুয়ে),

থুবাইয়া (একত্রিত করা),

কুরাইয়া (কুড়িয়ে),

নুয়াইয়া (নিচু করে)

আগুই (aoi)

মাওই (ভাই/বোনের শাশুড়ি)

কাহই (চিরুনি)

অওয়া (Joa)

সওআ (foon) (সহ্য করা )

ওআও (Oao)

নোআও (noao), শোওআও, দোওআও

চতুঃস্বর

এক্ষেত্রে ধ্বনি মাত্রিকতা আরো সম্প্রসারিত হয়ে চতুর্মাত্রিকতা লাভ করে। তৃতীয় স্বরধ্বনি এবং চতুর্থ স্বরধ্বনি যৌগিক প্রবণতা স্বতস্ফুর্থভাবেই ঘটে। বাংলায় এটি এ উপভাষার ভিন্নমাত্রিক বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে। এক্ষেত্রে উচ্চারণ দ্রুত অর্থে শব্দে স্বরের চতুর্মাত্রা এককভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন :

অওআই (coai)

অওয়াই (30ai) (জন্মানো), কওয়াই (বলা)

আওয়াই (acai) অ্যাওয়াই (acoai) খাওয়াই (khaoai) (আ+ও+আ+ই), নাওয়াইয়া, (গোসল করা) ন্যাওয়াই (neoai) (নেয়া অর্থে) দ্যাওয়াই (দেওয়া অর্থে) ন্যাওয়াইতাছি (নেতিবাচক অর্থে), দ্যাওয়াইতাছি (নেতিবাচক অর্থে)

ওয়াইআ (oaia) শোওয়াইয়া (Joaia), নোওয়াইয়া,

ওআইও (oaio) ধোওয়াইয়া শোয়াইও (joaio), নোয়াইও, ধোয়াইও

পঞ্চস্বর

দ্রুত উচ্চারণে যৌগিক স্বরধ্বনির পঞ্চমাত্রিক উচ্চারণ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এক্ষেত্রে পাঁচটি স্বরধ্বনি একসঙ্গে উচ্চারিত হয়।

আওয়াইও (acaio) অওয়াইও (coaio)

খাওয়াইও, নাওয়াইও

কওয়াইও

আওয়াইয়াই

খাওয়াইয়াই গেছি (খাইয়ে দিয়ে যাওয়া অর্থে) নাওয়াইয়াই গেছি (গোসল করিয়ে দিয়ে যাওয়া অর্থে) (aoaiai) ডেমরার উপভাষায় আনুনাসিক স্বরধ্বনির ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না।

স্বরধ্বনিগত পরিবর্তন

স্বর ও ব্যঞ্জন উভয় ধ্বনিই ধ্বনিগত পরিবেশের মধ্য দিয়ে নানাভাবে রূপান্তরিত হতে পারে, তাই বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষার বিভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হয়। ভাষার এ বিভিন্নতার কারণ ধ্বনিগত পরিবর্তন। তার ফলে ভাষায় নতুন নতুন রূপমূল তৈরি হয়। আর এভাবে ভাষার পরিবর্তন ঘটে।

ভাষাবিজ্ঞানীরা ভাষার পরিবর্তনের পেছনের কারণ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে ধ্বনি পরিবর্তনের কিছু প্রক্রিয়া বা সূত্র নির্দেশ করেছেন। প্রমিত বাংলায় স্বরধ্বনি পরিবর্তনে যে প্রক্রিয়া বা সূত্র প্রযোজ্য ডেমরা আঞ্চলিক ভাষায়ও সে সূত্রগুলো ক্রিয়াশীল। নিচে সূত্রগুলোর আলোকে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল :

অপিনিহিতি ( Epenthesis)

স্বরধ্বনিগত পরিবর্তনে শব্দের ই-কার বা উ-কারের স্থানান্তর ঘটে অপিনিহিতিতে। অনেক সময় শব্দের মধ্যে / ই / বা /উ/ থাকলে সেটি যে ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে সেই ব্যঞ্জনের আগে সরে এসে উচ্চারিত হয়। এছাড়া শব্দে য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জন বা /ক্ষ/ বা // থাকলে তার আগে অনেক সময় একটা অতিরিক্ত স্বরধ্বনি /ই/ বা /উ/ উচ্চারিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে অপিনিহিতি বলে।

অপিনিহিতিজাত ধ্বনি পরিবর্তন বাংলা উপভাষায় অনেক লক্ষ্য করা যায়। ঢাকার ডেমরার উপভাষায়ও শব্দ মধ্যস্থিত ই-কার বা উ-কার যথাস্থানের পূর্বে উচ্চারণ করার রীতি খুব বেশি প্রচলিত।
১. ‘র’ এবং ‘ল’ ব্যঞ্জন বর্ণ দুটির পূর্বে /আ/ থাকলে /ই/ ‘র’ ও ‘ল’-কে পরিত্যাগ করে তাদের পূর্বে
বসে।

চলিত ভাষা

উপভাষা (ডেমরা)

কাল

কাইল

চার

চাইর

চালতা

চাইলতা

২. প্রমিতভাষা

উপভাষা(ডে.)

উপভাষা (ডে.) প্রমিতভাষা

আইজ

পাঠিয়ে

আজ>পাটাইয়া

ভাগিনা>ভাইগনা

বেটে (ভাগ করে) >ৰাইট্যা

মাটি>মাইট্যা

ফাটিয়ে >ফাডাইয়া

করে>কইরা

রাত>রাইভ

প্রাচীন বাংলার ‘আজি’ প্রমিত রূপ ‘আজ’ ডেমরা ভাষায় ‘জ’ এর পরবর্তী /ই/ স্থান পরিবর্তন করে ‘জ’ এর আগে উচ্চারিত হয়ে ‘আইজ’ হয়েছে। তদ্রুপ চারি > চাইর, রাখিয়া > রাইখ্যা, রাতি > রাইত হয়েছে।

৩. ‘ইয়া’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার /ই/ ব্যাঞ্জনকে ত্যাগ করে স্বাধীনভাবে সেই ব্যঞ্জনের পূর্বে বসে। কখনো কখনো ‘ইয়া’-র, য়, য-ফলাতে পরিণত হয়। প্রথম ধ্বনি / ও / কারান্ত হয়। য ফলাযুক্ত অপিনিহিতি বেশি লক্ষ করা যায়।
চলিত রূপ

উপভাষা (ডেমরা)

পরিবর্তন রীতি

কোইরা (koira) (30) (আও)

করিয়া (koria) >

মরিয়া>মোইর‍্যা (moire) (30) (a) ( > ) ( > )

চলিয়াচোইল্যা (coile) (a) (আ > এ্যা

ধরিয়া দইরা (doire)
(a>æ) ( > TT)

উড়িয়া উইরা (uire)
(a) (আ > এ্যা)

ছুইট্যা (chuitar) (ছুটিয়া

হেঁটে হাটাইয়া হাইটা (hataia / haita )
( 0 ) ( a 2 ) আ>ও) (আ> এ্যা

চাটিয়া

চাইট্যা (caitar)
(a> æ) (IT > 43T)

বসিয়া

বোইশ্যা (boifa)
(a> æ) (আ > এ্যা)

পড়িয়া

পোইরা (poire)
(a> æ) (আ> এ্যা)

সরিয়া

মাখিয়া

শোইরা (foire)
(a) (আ > এ্যা)

মাইক্যা (maike)
(a> æ) (আ > এ্যা)

৪. সংযুক্ত /ক্ষ/ / জ্ঞ/ ও য-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে তার আগে /ই/ ধ্বনি উচ্চারিত হয় এবং ‘ক্ষ’ উচ্চারিত হয় ‘খ্য’ রূপে।
পদ্য
গ্রাহ্য> পইদদ

গেরাইজজ

সহ্য>সাইজজ

লক্ষ

ব্রাক্ষস

লইকথ্য

রাইকখশ সইত্য

সত্য

৫. স্পষ্ট স্বরাগম লক্ষ্যণীয়। এক্ষেত্রে শব্দের স্বরাগমে দ্বিতুতার প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন: খাইট্যা (khaittee) (খেটে), লাইত্যা (laitta) (লাথি দেওয়া), বাইট্যা (baitte) (ভাগ করে দেওয়া), গুইট্যা (guitte) (ঘুটে দেওয়া)।

৬. বিভক্তি লোপ পেয়েও অপিনিহিতি হয়ে থাকে। যেমন : বাড়িতে > বাইত (bait), গাড়িতে > গারিত (garit)। এখানে / এ / /e/ লোপ পেয়েছে।

৭. নাসিক্যধ্বনির বিকল্পে অপিনিহিতি ব্যবহৃত হয়। যেমন কেঁদে কাইন্দা (kainda), রাধা >

রাইন্দা (rainda)।
৮. নাম শব্দের বিকৃতিতে অপিনিহিতির প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন: রশিদ > রইশ্যা, রনি > রইন্যা, তকি > ভইক্যা।

৯. অপিনিহিতি শব্দে দ্বৈতস্বরের গঠন নিয়মিত; তবে কিছুকিছু শব্দে দ্বৈতস্বরের দ্বিতীয় এককের স্বর সংকোচন দেখা দেয়, ফলে তার উচ্চারণ একক স্বরের পর্যায়ে পড়ে। যেমন হোউরি > হোরি /hári/, কইগো > কো’গো / kagoj.

১০. বাক্য শব্দে অপিনিহিতি দেখা যায়। যেমন কোথা থেকে > কইত্যে, কি জন্য > কি ল্যাগি। এক্ষেত্রে প্রলম্বিত বা দীর্ঘ /ই/ উচ্চারিত হয়।
সাধারণত ক্রিয়া ও বিশেষ্যপদে উচ্চ সংস্কৃত /ই/ /i/ ধ্বনির ব্যবহার যেমন :

আরও দেখুন:

Leave a Comment