আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় -বিদেশ এবং বিদেশি ভাষা প্রভাবিত রাজনীতিকেন্দ্রিক বাংলা শব্দ
বিদেশ এবং বিদেশি ভাষা প্রভাবিত রাজনীতিকেন্দ্রিক বাংলা শব্দ
ক. ভূমিকা
বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকে বহু বিদেশি ও বিদেশি শব্দের আগমন ঘটেছে। বিদেশিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আর্য, মোগল, ইংরেজ এবং পাকিস্ত জানি। প্রত্যেক বিদেশি শক্তি এদেশে আগমনকালে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এসেছেন। যেমন- আর্যদের সঙ্গে এসেছে সংস্কৃত ভাষা। মোগলদের সঙ্গে এসেছে ফারসি ভাষা।
ফারসি এবং বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে এসেছে আরবি ভাষা। ১৭৫৭ সালের পর ধীরে ধীরে ইংরেজ শাসকরা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে এবং তাদের ইংরেজি ভাষা ছড়িয়ে পড়ে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলসহ ভারতবর্ষের সকল অঞ্চলে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সে সময় পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা ছিল বাংলা ভাষা।
কিন্তু পাকিস্তানের শাসকবর্গ বাংলা ভাষাভাষীদের উপর উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস পান। বিদেশি জনগোষ্ঠী এবং বিদেশি ভাষার সহাবস্থানের ফলে বাংলার সমাজ-সংস্কৃতিতে বিরাট পরিবর্তন আসে এবং এ পরিবর্তন প্রবলভাবে দেখা যায় বাংলা শব্দভাণ্ডারে এবং বাংলা শব্দের গঠন প্রক্রিয়ায়। বাংলার রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রতিদিনের ব্যবহৃত শব্দাবলীতে বিদেশি ভাষা বা সভ্যতার ছাপ সুস্পষ্ট।
খ. রাজনীতিকেন্দ্রিক শব্দাবলী ও গঠন
আমাদের দেশে প্রাচীন আমলে রাজনীতিকেন্দ্রিক যে সব শব্দ ব্যবহৃত হতো সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজা, রাজপুত্র, রাজকন্যা, নৃপতি, রাণী, মহারানী, রাজসভা ইত্যাদি। মোগল, সুলতানি ও নবাবি আমলে ব্যবহৃত শব্দসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাদশা, কোম, সম্রাট, সুলতান, নবাব, শাহজাদা, শাহজাদি
ইত্যাদি শব্দ। ইংরেজ শাসন আমলে ব্যবহৃত শব্দসমূহ হচ্ছে গভর্নর জেনারেল, ভাইস রয়, লর্ড, কিং, মহারানী, প্রিন্স, গভর্নমেন্ট, ইত্যাদি শব্দ। পাকিস্তান আমলে ব্যবহৃত শব্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল উজিরে আজম, প্রাদেশিক গভর্নর, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, চিফ মার্শালল এ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইত্যাদি শব্দ। বাংলাদেশ আমলে উল্লেখযোগ্য শব্দ হচ্ছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, উপপ্রধানমন্ত্রী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জোট সরকার, সংসদীয় গণতন্ত্র, বাকশাল ইত্যাদি শব্দ।
গ. প্রাচীন বাংলায় ব্যবহৃত রাজনীতিকেন্দ্রিক তৎসম শব্দ ও তাদের সমাজ ভাষাতাত্ত্বিক গঠন
একদেশে ছিল এক রাজা”। বাংলার কিচ্ছাকাহিনীর এ রাজা গল্পের ইঙ্গিতানুসারে ছিলেন অবশ্যই সে রাজ্যের মালিক এবং সকল ক্ষমতার অধিকারি। তিনি যখন যাকে ইচ্ছা হত্যা করতে পারতেন এবং যখন যাকে ইচ্ছা প্রাণভিক্ষা দিতে পারতেন এবং তার কন্যা অর্থাৎ রাজকন্যাকে বিয়ে দিতে চাইলে অর্ধেক রাজ্য ও রাজত্ব প্রদানের ক্ষমতাও ছিল তার।
‘রাম রাজত্ব’ বলে বাংলায় আরেকটি প্রচলিত শব্দ আছে। সে শব্দও অনেকটা এ ধরনের ইঙ্গিত দেয়।
(২) নৃপতি শব্দের গঠ ন + পতি = নৃপতি। নৃ মানে মানুষ, পতি মানে প্রভু। এ অর্থ থেকে বোঝা যাচ্ছে একটি দেশের
সকল মানুষের প্রভূকে বোঝানো হতো নৃপতি শব্দে।
(৩) রাজ্যেশ্বর রাজ্য+ঈশ্বর = রাজ্যেশ্বর
এ শব্দের সহজ ব্যাখ্যা একটি দেশের রাজাকে রাজ্যের ঈশ্বর ভাবা হতো। পরবর্তীকালে রাজতন্ত্র শব্দটি রাজারতন্ত্র বোঝালেও প্রাচীনকালের রাজার মতো রাজতন্ত্রে রাজার ক্ষমতা থাকে না। বর্তমানে ব্রিটেনের যে রাজতন্ত্র সেটা অনেকটা নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র।
রাজা বা রানী এলিজাবেথ এখন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী
প্রাচীন বাংলার কয়েকটি শব্দ বর্তমানে ব্যবহৃত না হলেও প্রাচীনকালের সমাজব্যবস্থা বোঝাবার প্রয়োজনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। যেমন-
(১) দৌবারিক অর্থ দারপাল। সংস্কৃত দ্বার শব্দ থেকে এসেছে। এ শব্দটির গঠন এ রকম হতে পারে-
=দ+ওয়া+র+ইত
= দোওয়ার + ইক
= নৌওয়ার + ইক
= দৌবারিক।
সংস্কৃতে অন্তস্থ ব বাংলার নিয়মে ‘ওয়া হয়েছে। ইক যোগ হবার পর ‘দো’ পরিণত হয়েছে ‘দৌ’তে, আর ‘ওয়া’ পরিণত হয়েছে ‘বা’ তে, শেষ পর্যন্ত শব্দটি দাঁড়াল দৌবারিক।
(২) চতুরঙ্গ সেনা। এ শব্দটির গঠন বিশ্লেষিত হলো-
হস্তি, অশ্ব, রথ ও পদাতিক এই চার শাখাবিশিষ্ট সৈন্যদল। চতুঃ শব্দের অর্থ চার। তার সঙ্গে অঙ্গ শব্দ যুক্ত হয়ে চতুরঙ্গ শব্দটি গঠিত হয়েছে। যেমন- ‘চতুরঙ্গে রণরঙ্গে ভুলিব এ জ্বালা’ (দেবসনাপতি; ১৯৯৭; ৩৬)
ঘ) মোঘল আমলে ব্যবহৃত ফারসি প্রভাবিত বাংলা শব্দের গঠন
মোঘলরা ভারতবর্ষে আসবার পর ধীরে ধীরে ফারসিকে রাজভাষা করেছিলেন। ফারসির প্রভাবে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে, বাংলা শব্দের গঠনে এবং বাংলার সামাজিক সংস্কৃতিক জগতে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। পণ্ডিতগণের ধারণা কোনো বিদেশি ভাষার বদ্ধরূপমূল অন্য একটি ভাষার বন্ধরূপমূলকে প্রভাবিত করে না অর্থাৎ সোজা কথায় একটি ভাষার বন্ধরূপমূল (Prefix Suffix) অন্যভাষায় গৃহীত হয়।
না। অত্যন্ত বিস্ময়কর হলেও সত্য ফারসি ভাষার প্রচুর Prefix Suffix বাংলায় গৃহীত হয়েছে। রাজনীতিকেন্দ্রিক কয়েকটি ফারসি শব্দের বিশ্লেষণ করে ফারসি বদ্ধরূপমূলসমূহ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোচনা লিপিবদ্ধ করা হলো।
(১) বাদশাঃ
বহুল প্রচলিত বাদশা শব্দটি ফারসি ‘পাদশা’ থেকে এসেছে। প্রসঙ্গত ডক্টর জি এম হিলালীর বিশ্লেষণ উদ্ধৃত হতে পারে।
Pers. pad shah, written badshah in pure Arabic letter king, emperor (পূর্বোক্ত; জি এম হিলালী, ১৯৬৭, ১৯৪)।
(২) জাহাপনাঃ
উজির-নাজির, সেনাপতি অথবা সেনাপতিকে তার সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতেন মুঘল বাদশা। তাঁরা বিশেষ কায়দায় ডান হাত বার বার কপালের কাছে ঠেকিয়ে কুর্নিশ করে বলতেন ‘জো হুকুম জাহাপনা’ অর্থাৎ জাহাপনা আপনি যে আদেশ করবেন সে আদেশই পালন করা হবে।
‘জাহাপনা’ শব্দটির সঙ্গে অঙ্গের ভাষা ব্যবহার আবশ্যিক ছিল। ডঃ হিলালী জাহাপনা শব্দটি লিখেছেন জাহাপনা হিসেবে এবং তাঁর বিশ্লেষণ নিম্নরূপঃ
Pers. jahän- panah, panah- shelter] shelter or protector of the world (used in addressing a king or emperor) (পূর্বোক, জি এম হিলালী: ১৯৬৭: ১০১)।
অন্যদিকে, দেবসেনাপতির বিশ্লেষণে ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য এবং সমাজভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।
মূল ফারসি শব্দ জহান পনাহ্ ‘। জহান অর্থ পৃথিবী, পনাহ্ অর্থ আশ্রয়। এর অর্থ হল পৃথিবীর আশ্রয়। মোগল বাদশাহের সম্মানসূচক সম্বোধনপদ। অনেকটা Your majesty শব্দের মতো। যেমন- জিহাপনা, আপনি সারা বাংলার মালিক’ (পূর্বোক্ত দেব সেনাপতি; ৩৮)
গবেষক হিলালী অথবা দেবসেনাপতির বিশ্লেষণ নিয়ে দ্বিমত পোষণের প্রয়োজন না থাকলেও একথা বলা যায় পৃথিবীর আশ্রয় অর্থে ‘জাহাপনা’ শব্দের ব্যবহার সঠিক ছিল না। কেননা, নবাব অথবা বাদশাহগণ বড়জোর বাংলা অথবা ভারতবর্ষের আশ্রয় ছিলেন, পৃথিবীর আশ্রয় ছিলেন না। শব্দটিকে সুভাষণ হিসেবে ধরলে ভুল বলার অবকাশ থাকে না।
ঙ) কয়েকটি ফারসি বন্ধরূপমূল ও বাংলা শব্দ
ডক্টর জি এম হিলালী তাঁর গ্রন্থে (জি এম হিলালী; ভূমিকা অংশ: ৭-১০) বাংলায় ব্যবহৃত হয় এরকম ২৬টি বদ্ধরূপমূল (suffix) এর কথা বলেছেন। তাঁর অনুসরণে রাজনীতি ও প্রশাসনকেন্দ্রিক কয়েকটি শব্দের গঠন বিশ্লেষিত হলো। উদাহরণঃ-
১)অন্দাজ
তীরন্দাজ
তীর + অন্দাজ
২)বাজ
চালবাজ
চালবাজ
৩)বরদার
হুকুমদার
হুকুম+বরদার
8)খানা
জেলখানা
জেলখানা
খোর
সুদখোর
সুদখোর
5)সাঙ্গ
সাজ থেকে সাজস
যোগসাজস
যোগ+সাজস
৭)গিরি,
গারি, গরি
কেরানিগিরি
কেরানি+গিরি
৮)জাহাগীর
জাহান গীর
জাহাঙ্গীর
৯)নশীন
গদিনশীন
গদিনশীন
ফারসি উপসর্গ (prefix) – রাজনীতি এবং প্রশাসনকেন্দ্রিক শব্দের উদাহরণঃ-
১)কম
কমবখত
কম- বখত
2)কার
কারসাজি
কার+সাজি
৩)দরখাস্ত
দরখাস্ত
8)না
নামঞ্জুর
নামঞ্জুর
৫) ফি
ফি-মাহিনা
ফি-মাহিনা
৬)বল
বদজাত
বদা > বনজাত > বজাত
৭)বর
বরখাস্ত
বরখাস্ত
৮)বে
বেকসুর
বেকসুর
এসব শব্দ ও ব্যাকরণ সংক্রান্ত উপাদান বাংলা ভাষার অস্থিমজ্জার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। অনেক সময় এগুলোকে অন্যভাষার শব্দ বলে মনে হয় না (ডক্টর কাজী দীন মোহাম্মদ; বাংলা ভাষার সমৃদ্ধিতে বিদেশী ভাষার প্রভাব; প্রবন্ধঃ আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউটে পঠিত)।
চ. ফারসি ও রাজনীতিকেন্দ্রিক বাংলা শব্দের উৎখাত প্রসঙ্গে রামায়ণ, মহাভারত এবং সম্পর্কিত অনেক সংস্কৃত গ্রন্থে রাজনীতি ও প্রশাসনকেন্দ্রিক অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এবং তাদের অনেকগুলো বাংলা শব্দভাণ্ডারে সংযোজিত হয়েছিল। ফারসির প্রভাবে অনেক শব্দ অপ্রচলিত হয়ে গেছে এবং কিছু কিছু শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency) কমে গিয়েছে।
এ ধরণের শব্দগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাদশা, জমিদার, সিপাই, কামান, আইন, আসামি, মোকদ্দমা, জমি, দলিল দস্তাবেজ, কাচারি ইত্যাদি।
ছ. আরবি উপসর্গ (prefix) এবং রাজনীতিকেন্দ্রিক কয়েকটি শব্দ
উদাহরণঃ-
১) আম (সাধারণ)
আমদরবার
আম+পরবার
২)আস
খাসদরবার
খাস+ দরবার
(৩)গর
গরহাজির
গর+হাজির
8) লা (-না অর্থে) লাখেরাজ
লাখেরাজ
লাখেরাজ শব্দটি বলতে বিনা খাজনায় ব্যবহৃত সম্পত্তিকে বোঝায়। খাজনা বা রাজস্ব অর্থে খেরাজ শব্দটি বাংলায় ব্যবহৃত হয় না অথচ লাখেরাজ শব্দটি বহুল প্রচলিত। ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রক্রিয়াটি তাৎপর্যপূর্ণ।
জ. ব্রিটিশ শাসন এবং ইংরেজি প্রভাবিত রাজনীতিকেন্দ্রিক বাংলা শব্দ
বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের সূত্রপাত ঘটেছিল ১৭৫৭ সালে এবং প্রায় দুশ বছর পর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অফিস আদালত ও স্কুল কলেজ সর্বত্র ইংরেজি ব্যবহৃত হতে শুরু করে। সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলার শব্দভাণ্ডারে এমনকি রাজনীতিকেন্দ্রিক শব্দাবলীতেও ইংরেজির প্রভাব চলে আসছে।
এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলো বাংলা বলে মনে হয়, আসলে সেগুলো ইংরেজি ধারণার (concept) অনুবাদ মাত্র। রাষ্ট্রপতি, লালফিতার দৌরাত্মা, ঠাণ্ডালড়াই, রুদ্ধদ্বার বৈঠক, অসহযোগ আন্দোলন, বামপন্থি এ শব্দগুলো যথাক্রমে ইংরেজি President, Redtapism, Coldwar, Close door meeting. Non-cooperation movement, Leftist ইত্যাদির অনুবাদ।
এ তালিকা অনায়াসে সুদীর্ঘ করা চলে। আজকাল হরদম ব্যবহৃত হয় পরাশক্তি এবং Superpower শব্দ দুটি। পরাশক্তি শব্দটি Superpower এর অনুবাদ মাত্র। এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো মনে হয় বাংলা। আসলে শব্দগুলো এসেছে ইংরেজি থেকে। দুটি শব্দের কথা উল্লেখ করা যায় আগ্রাসন ও আদানি। আদালি এসেছে ইংরেজি orderly থেকে। ডক্টর পরেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে- আগ্রাসন শব্দটি এসেছে ইংরেজি Aggression থেকে।
ঝ. ইংরেজি ও code switching
Code switching বা সঙ্কেত বদলের মূলে রয়েছে পদমর্যাদা সচেতনতা, আরো বহুবিদ কারণ। একজন রাজনীতিকের সঙ্কেতবদল ( Code switching) হতে পারে নিম্নরূপঃ
তুমি তো জান আমি ‘পলিটিক্স’ করি। আমার মত ‘পলিটিশিয়ান’ বাংলাদেশে বেশি নেই। কিছুকাল আগের একজন রাজনীতবিদ বলতে পারতেন আমি অমুক “সাব-ডিভিশনে গিয়েছিলাম।
সেখানকার সাব-ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমার দেখা হলো। তিনি একজন সাব-ইন্সপেক্টর’কে আমাকে কো-অপারেশন দেয়ার জন্য অর্ডার দিলেন। পলিটিক্স করি শব্দটি গঠিত হয়েছে ইংরেজি পলিটিক্সের সঙ্গে বাংলা “করা” ক্রিয়া যুক্ত হয়ে। এটি N+ V রীতির ক্রিয়াসংগঠন।
সাব-ইন্সপেক্টর এবং এ জাতীয় শব্দগুলো গঠিত হয়েছে ইংরেজি prefix sub’ এর সহযোগে। অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষী এ সম্পর্কে সচেতন নন।
ঞ) উর্দু ও বাংলা রাজনীতিকেন্দ্রিক শব্দের গঠন
বাংলা শব্দভাণ্ডারে এবং শব্দের গঠনে আরবি, ফারসি ও উর্দুর সংমিশ্রন ঘটিয়ে বাংলাকে মুসলমানি বাংলায় পরিণত করবার চেষ্টা চলছিল কয়েক শতাব্দী ধরে। সন্দ্বীপের কবি আব্দুল হাকিমের শক্ত উচ্চারণের পরেও মুসলমানি বাংলা বানানোর প্রয়াস থেমে থাকেনি।
ইংরেজ আমলে ভেজিল, সুমার করা এধরনের দোভাষী বাংলা ব্যবহারের মাধ্যমে এ প্রয়াস অব্যাহত ছিল। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সৃষ্টি পর এ প্রয়াস জোরদার হয়েছিল এবং এ প্রয়াসের পেছনে ক্রিয়াশীল ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনীতি। উদাহরণ- রেডিও পাকিস্তানের থেকে প্রচারিত একটি বাংলা খবরের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করলে রাজনীতির অপপ্রয়াসটি বোঝা যাবে। “
পিছলে এতোয়ার খান গাফ্ফার খাঁ কা লড়কা গ্রেফতার হয়েছে। হুকুমতে হায়দারাবাদ হুকুমত হিন্দুস্থানের কেলাকে জং ও জোহাদের ইরাদা জাহির করেছেন’ (রাজীব হুমায়ুন: ২০০১: 128 )
ভাষা তার নিজস্ব গতিতে চলে। স্বদেশি বিদেশি রাষ্ট্রনায়কেরা তাদের রাজনীতির প্রয়োজনে ভাষাকে ব্যবহারের চেষ্টা করলেও সে চেষ্টা সব সময় সফল হয় না। রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে কিছু শব্দ তারা দ্রুত সৃষ্টি করিয়ে নেন। প্রতিদিনের ব্যবহারে তার কিছু টিকে যায়, কিছু টেকে না (মুহম্মদ আব্দুল হাই রচনাবলী; ১৯৯৪ : ৩১২)।
আরও দেখুন: