আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষণ-শিখনের পরিবেশ তৈরি করা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষণ-শিখনের পরিবেশ তৈরি করা – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিতে সকল শিক্ষার্থীর চাহিদা মেটানোর উপায় এর অন্তর্ভুক্ত।

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষণ-শিখনের পরিবেশ তৈরি করা

 

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষণ-শিখনের পরিবেশ তৈরি করা

 

শিখন-শেখানো

শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সফলতা অনেকটাই-এর সামগ্রিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য পাঠ্য বিষয়ের শিখন-শেখানোর উপযোগী পরিবেশের সাধারণ উপাদান, প্রভাবক ও বিবেচ্য বিষয়াবলীর সাথে দাখিলস্তরের মাদরাসার আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়ের শিখন পরিবেশের সাদৃশ্য আছে। অধিকন্তু আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়টির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা অনুসারে এ বিষয়ের শিখন-শেখানো পরিবেশের জন্য বাড়তি কিছু বিবেচ্য বিষয় আছে। শিখন-শেখানো পরিবেশ একটি ব্যাপক ধারণা।

মাদরাসার আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণিকক্ষের ভৌত অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র, শ্রেণিকক্ষের সাজ-সজ্জা, মাদরাসার আঙ্গিনা, মাঠ, বাগান, মাদরাসার আশ-পাশ, রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন, শ্রেণিকক্ষের সংস্কৃতি, শ্রেণি পাঠনার পদ্ধতি ও কৌশল, শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়া ও পারস্পরিক সম্পর্ক, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী ইত্যাদির সমন্বয়ে শিখন-শেখানো উপযোগী পরিবেশ গঠিত হয়। শিখন-শেখানো পরিবেশের নানা নিয়ামক ও প্রভাবকের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ এর ধারনা ব্যাপক এবং এর অনুষঙ্গও অনেক। শ্রেণিতে শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় শ্রেণিকক্ষের বাহ্যিক, সামাজিক, আবেগিক, মনস্তাত্ত্বিক তথা মানবীয় পরিবেশ অনুকূল হওয়া অত্যাবশ্যক।

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের একজন শিক্ষক হিসেবে আপনাকে শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে হবে এবং আপনার মাদরাসার বিদ্যমান সম্পদ, শ্রেণিকক্ষের পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে কীভাবে অনুকূল শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ তৈরি করা যায়— সে সম্পর্কে জেনে অনুকূল শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আসুন এ অধিবেশন থেকে আমরা দাখিলস্তরের মাদরাসায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়ের শিখন-শেখানোর অনুকূল শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ সম্পর্কে জানি ।

শিখন-শেখানো পরিবেশ-এর ধারণা

শিখন পরিবেশ কথাটি সাধারণত বিদ্যালয়ের বাইরে, বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিখন পরিবেশকে ইঙ্গিত করে। শিখন পরিবেশের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ‘Learning environment refers to the diverse physical locations, contexts, and cultures in which students learn’ অর্থাৎ “শিখন পরিবেশ বলতে যেখানে শিক্ষার্থীরা শিখে তার বৈচিত্র্যময় ভৌত অবস্থান, তার অনুষঙ্গসমূহ এবং সংস্কৃতিকে বোঝায়” ।

আবার অন্যত্র বলা হয়েছে – The term learning environment encompasses learning resources and technology, means of teaching, modes of learning, and connections to societal and global contexts. The term also includes human behavioral and cultural dimensions, including the vital role of emotion in learning. অর্থাৎ শিখন পরিবেশ প্রত্যয়টি শিখন সহায়ক সম্পদ এবং প্রযুক্তি, শিখন-শেখানো পদ্ধতি, শিখনের ধরণ এবং সামাজিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট-এর সাথে-এর সম্পর্ককে বোঝায়।

এছাড়াও শিখনে শিক্ষার্থীদের আবেগের মূখ্য ভূমিকাসহ শিখনের ক্ষেত্রে মানবীয় আচরণগত ও সাংস্কৃতিক দিকগুলিও অন্তর্ভুক্ত করে। শ্রেণিকক্ষের প্রেক্ষিতে শিখন পরিবেশ বলতে একটি শ্রেণিকক্ষের বাহ্যিক, সামাজিক, আবেগিক/মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। এ প্রসঙ্গে Gary D Borich (2008) বলেন, ‘The learning climate of a classroom refers to its physical and emotional environment. শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ বলতে শ্রেণিকক্ষে শিখনের সার্বিক অনুকূল পরিবেশকেই বোঝায়।

একটি শিখন বান্ধব শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ অন্যান্য বিষয়ের সাথে বিভিন্ন সামর্থ্য ও শিখন চাহিদা এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও সংস্কৃতিক শিক্ষার্থীদের একীভূত করে তাদের সকলের শিখন নিশ্চিত করে। শ্রেণিকক্ষে অনেক ক্ষেত্রে ভৌত পরিবেশ অনুকূল থাকলেও প্রত্যাশিত সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ তৈরির অভাবে সে ভৌত পরিবেশ তেমন গুরুত্ব বহন করে না।

আবার শিক্ষক তার কৌশল ও দক্ষতার মাধ্যমে শ্রেণিতে অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ভৌত পরিবেশের অনেক সীমাবদ্ধতাকেও জয় করে প্রত্যাশিত মানে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের আঞ্জাম দিতে পারেন। শ্রেণিকক্ষের ভৌত পরিবেশের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষক কর্তৃক সম্ভব নাও হতে পারে। পক্ষান্তরে শ্রেণিকক্ষে অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ তথা মানবীয় পরিবেশ গঠনে শিক্ষকের ভূমিকাই একচ্ছত্র। তাই শ্রেণিকক্ষে প্রত্যাশিত মানবীয় পরিবেশ গঠনে শিক্ষকের কৌশলগত সামর্থ্য বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক।

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়ের শিখন-শেখানো পরিবেশ

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়ের শিখন-শেখানো উপযোগী পরিবেশ বলতে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলোকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও যথাযথভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে এবং শিক্ষার্থীদের নিকট আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিখনকে আনন্দদায়ক, আকর্ষণীয়, কার্যকর ও স্থায়ী করার জন্য প্রয়োজনীয় ও সহায়ক সামগ্রী এবং এ বিষয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, সমাজ, রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় সৃষ্ট অনুকূল সামষ্টিক পরিবেশকে বোঝায়।

মূলত আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিখন-শেখানো পরিবেশের সাথে-এর ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইনগত, প্রযুক্তিগত, এমন কি আন্তর্জাতিক পরিবেশের সম্পর্ক আছে। আলোচনার কলেবর সংক্ষিপ্ত রাখার স্বার্থে এ অধিবেশনে আমরা কেবল আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনায় শ্রেণিকক্ষ পরিবেশের প্রতি গুরুত্বারোপ করবো।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে শিখন-শেখানো পরিবেশের উপাদানসমূহ

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের শিখন-শেখানো পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ নিম্নরূপ-

১. শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক/আনন্দময় শিখন কৌশল;

২. ইতিবাচক বক্তব্য/শ্রেণিকক্ষের কথোপকথন/নির্দেশনা;

৩. আসন ব্যবস্থা;

৪. শ্রেণিকক্ষ অর্থপূর্ণভাবে সাজানো ;

৫. পাঠ পরিকল্পনা;

৬. শিক্ষক-শিক্ষার্থী মূল্যায়ন;

৭. দলীয় কাজ;

৮. শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া;

১০. সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক কাজ

১০. সময় ব্যবস্থাপনা;

কাজ

শ্রেণিকক্ষে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের বিষয়ের অনুকূল শিখন-শেখানো পরিবেশ সৃষ্টিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনায় আপনার কর্মকৌশল কী হবে- সে বিষয়ে ৩টি করে বাক্য খাতায় লিখুন ।

শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক/আনন্দময় শিখন কৌশল

ইতিবাচক বক্তব্য:

শ্রেণিকক্ষ অর্থপূর্ণভাবে সাজানো

দলীয় কাজ

শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া:

সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক কাজ

সহপাঠক্রমিক কাজ:

শ্রেণিকক্ষের ভৌত/বাহ্যিক পরিবেশ তৈরিতে বিবেচ্য বিষয়াবলী

অনুকূল শিখন পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শ্রেণিকক্ষের ভৌত/বাহ্যিক পরিবেশ। শ্রেণিকক্ষের ভৌত/বাহ্যিক পরিবেশের মধ্যে শ্রেণিকক্ষের আকৃতি, মেঝে, জানালা, দেয়াল, কক্ষ অ্যাকোস্টিক, চকবোর্ড/হোয়াইটবোর্ড/স্মার্টবোর্ড, প্রজেক্টর/স্মার্ট টিভির স্থাপন ও ব্যবহার, আলো বাতাসের ব্যবস্থা, আসবাবপত্র, শ্রেণিবিন্যাস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এ ভৌত পরিবেশ অনুকূল হওয়া কাম্য। শ্রেণিকক্ষের আকৃতি থেকে শুরু করে শ্রেণিবিন্যাস পর্যন্ত এদের প্রতিটিরই কিছু নিয়ম-নীতি ও আদর্শমান (Standard) রয়েছে।

কোন শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে এ মানগুলো বিদ্যমান থাকলে ভৌত পরিবেশ বিবেচনায় সে শ্রেণিকক্ষকে আদর্শ শ্রেণি কক্ষ বলে। যেমন আদর্শ শ্রেণিকক্ষ হবে বর্গাকারের। তবে আয়তাকারের হলেও সেটির দৈর্ঘ্যপ্রস্থ: ৪:৩ হওয়া শ্রেয়। দেয়ালে বোর্ড বসানোর ক্ষেত্রে শ্রেণির দরজা বা জানালার অবস্থান বিবেচনা করতে হবে। শ্রেণিতে প্রবেশের দরজার বিপরীত দিকে বোর্ড স্থাপন করা উচিত। শ্রেণিতে প্রবেশের সম্মুখভাগে বাইরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা প্রয়োজন যাতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিতে প্রবেশ করা ও শ্রেণি থেকে বের হওয়া সহজ ও আরামদায়ক হয় ।

আবার শ্রেণিকক্ষের ফ্লোর অপেক্ষকৃত গুণগতমানের হওয়া প্রয়োজন, যাতে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সহজেই পরিষ্কার করা যায়। শ্রেণিকক্ষের মেঝে এমনভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত যাতে বিভিন্ন শ্রেণি কাজের সময় প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা সে মেঝের খালিস্থানে বসে কাজ করতে কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সামগ্রী সহজেই মেঝেতে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষের দেয়াল শ্রেণি পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কক্ষটি ইটের তৈরি হলে দেয়ালের রঙ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিবান্ধব হওয়া জরুরি। শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ইটের কিংবা কাঠের অথবা অন্য যে ধরণেরই হোক না কেন, শ্রেণিকক্ষের দেয়াল হতে হবে অর্থপূর্ণ ও নান্দনিকভাবে সাজ- সজ্জাপূর্ণ। সেখানে থাকবে শিক্ষার্থীদের নানা সৃজনশীল ও উদ্ভাবনীমূলক কাজের স্বাক্ষর।

সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের দেয়াল হবে নানা জ্ঞানের উৎস। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষ হিসেবে এর দেয়ালে বিষয় সহায়ক নানা উপকরণ ও উপাচারে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে প্রথম দর্শনে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এটি একটি আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের শ্রেণিকক্ষ। সর্বোপরি দেয়াল হবে একটি শ্রেণিকক্ষের সামগ্রিক চেহারার তাৎপর্যপূর্ণ পরিচায়ক শ্রেণিকক্ষের অবস্থান এমন স্থানে হওয়া উচিত, যেখানে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ থাকে ।

কারণ অনেক সংখ্যক শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় ধরে একটি কক্ষে অবস্থান করলে সেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা না থাকলে শিক্ষার্থীরা অল্পতেই অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে— যা শিক্ষণ-শিখন পরিবেশের অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা। বিশেষত লেখার বোর্ড, শিক্ষকের দাড়ানোর স্থান এবং শিক্ষার্থীদের বসার স্থানে যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ।

এ জন্য প্রয়োজনে শ্রেণিকক্ষে পরিবেশ, বান্ধব বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রেণিতে আলোর যেমন প্রয়োজন আছে, আবার প্রজেক্টর ব্যবহার করার সময় যেন দরজা-জানালা সহজেই বন্ধ করে কিছুটা অন্ধকারের ব্যবস্থা করা যায় সে সুযোগও থাকতে হবে। এজন্য শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় স্থানে মোটা কাপড়ের পর্দারও দরকার হতে পারে।

কালোবোর্ড/সাদাবোর্ড শ্রেণিকক্ষের আরেকটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কালো চকবোর্ডের স্থান দিনে দিনে সাদাবোর্ড দখল করে নিচ্ছে। চকবোর্ডের সীমাবদ্ধতা হলো চক দিয়ে লেখার পরে বোর্ড মুছার সময় চকের গুড়া বোর্ড ব্যবহারকারীর শরীর ও জামা-কাপড়ে লেগে যায়, কখনো কখনো ব্যবহারকারীদের অনেকের এলার্জি ও সর্দি- কাশি সৃষ্টি করে, আবার চকের গুড়া বাতাসে মিশে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ কিছুটা বিঘ্নিত করে। তবে চকের গুড়া মারাত্মক কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে না। চকবোর্ডের এ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বে ও সাদাবোর্ডের তুলনায় এটি টেকসই, সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যায়।

এজন্য উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে এখনো চকবোর্ড ব্যবহার বিদ্যমান আছে। চকবোর্ডের অন্যতম একটি সুবিধা হলো একটি পাঁকা দেয়ালের সর্বোচ্চ জায়গাকে বোর্ডে পরিণত করে লেখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায়। বোর্ড এমন উচ্চতায় স্থাপন/তৈরি করা উচিত যাতে এর সামনে টেবিল রাখার পরেও শিক্ষার্থীরা এর নিচের লেখাগুলো পরিষ্কারভাবে দেখতে পায়। বোর্ডের সামনে প্লাটফর্ম থাকলে শিক্ষকের বোর্ড ব্যবহার ও শিক্ষার্থীদের বোর্ডের লেখা দেখতে সুবিধা হয়।

 

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষণ-শিখনের পরিবেশ তৈরি করা

 

আলো বাতাস প্রবেশের জন্য শ্রেণিকক্ষে একাধিক সুবিধাজনক সংখ্যক জানালা থাকা অনিবার্য। সূর্যের আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানালায় শেড সিস্টেম থাকলে ভাল হয়। এ ব্যবস্থা এমন হবে যাতে শ্রেণিকক্ষটিকে প্রখর আলো থেকে রক্ষা করতে আবার প্রয়োজনে কক্ষটিকে কিছুটা অন্ধকার বা মৃদু আলোতে রূপান্তর করতে পারবে। শেডের রঙ শ্রেণিকক্ষের দেয়ালের রঙের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে নির্বাচন করা উচিত যাতে সুর্যের প্রখর আলো শ্রেণিকক্ষ কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে ।

শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কী হবে, কেমন হবে- পরিস্থিতি ভেদে এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। আসবাবপত্রের সাথে বিদ্যালয়ের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি জড়িত। বিশেষত প্ৰযুক্তিগত উপকরণ ও অন্যান্য সরঞ্জামের সুবিধার সাথে বিদ্যালয়ের আর্থিক সামর্থ্যমূখ্য বিবেচ্য। তদুপরি শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্রের মাঝে এমন কিছু আসবাবপত্র আছে যা ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলেই না। যেমন: প্রয়োজনীয় সংখ্যক বসারবেঞ্চ/ডেস্ক। আবার এমন কিছু আসবাবপত্র আছে যা শ্রেণিকক্ষে থাকলে শ্রেণিকক্ষের শিখন পরিবেশ উন্নত হয়।

শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে যেন তা আরামদায়ক ও টেকসই হয়। সেগুলো রাখা/বসানো, সরানো এবং পরিষ্কার করার জন্য যেন প্রয়োজনীয় জায়গা ও সুযোগ থাকে। মনে রাখতে হবে, একটি শ্রেণিকক্ষ যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের দিনের তথা জীবনের বড় পরিমাণের একটা সময় কাটায়— সে শ্রেণিকক্ষ আসবাবপত্রের সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা উচিৎ।

অনেক আধুনিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম, উপকরণ ও আসবাবপত্র এখন আর শ্রেণিকক্ষের বিলাসিতা নয় বরং দিনে দিনে তা আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে। যেমন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, মাল্টি-মিডিয়া প্রজেক্টর, সাদাবোর্ড ইত্যাদি প্রজেক্টর শ্রেণিকক্ষের ডান বা বাম দিকে এমন স্থানে স্থাপন করা উচিৎ যাতে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী স্ক্রিনে প্রদর্শিত বিষয় সহজেই দেখতে পায়, আবার এটি যেন শিক্ষকের বোর্ড ব্যবহারে ও শিক্ষার্থীদের বোর্ডের লেখা দেখতে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না করে। প্রজেকশন স্ক্রিনের অবর্তমানে যেন দেয়ালে প্রজেকশন সম্ভব হয় সে বিষয়টিও মাথায় রেখে প্রজেক্টর স্থাপন করতে হবে। প্রজেক্টর শ্রেণিকক্ষের ছাদের সাথে উপযুক্ত স্থানে স্থাপনের ব্যবস্থা করাই শ্রেয়।

শ্রেণিবিন্যাস শ্রেণিকক্ষের ভৌত/দৃশ্যমান পরিবেশের একটি অন্যতম বিবেচ্য দিক। শ্রেণিবিন্যাস কেবল আসন বিন্যাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একীভূত একটি শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের কাকে/কাদেরকে কোথায় বসাতে হবে— তাও শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়। ত্রুটিপূর্ণ শ্রেণিবিন্যাস কিছুটা হলেও শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিখন-শেখানো কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ দুর্বল বা ত্রুটিপূর্ণ আসন বিন্যাসের ফলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিতে বসতে বা দেখতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে— যা শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের শিখনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

শিক্ষা বিজ্ঞান (Pedagogy) -এর বিভিন্ন গ্রন্থে শ্রেণি ব্যবস্থাপনার আলোচনা প্রসঙ্গে শ্রেণিবিন্যাসের নানাকৌশল/ধরণ চিত্র সমেত বর্ণিত আছে। পদ্ধতি বিজ্ঞানে যতভাবেই বর্ণিত থাকুক না কেন, মনে রাখতে হবে— শ্রেণিবিন্যাস কৌশল নির্ধারণে বিদ্যমান শ্রেণিকক্ষের আকার, সংকুলানের জায়গা, আসন ব্যবস্থার ধরন সর্বাগ্রে বিবেচ্য। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে শ্রেণিতে বসতে, দেখতে ও শ্রেণির কাজসমূহ সম্পন্ন করতে পারে, শ্রেণিবিন্যাসের কৌশল নির্ধারণে অন্তত এ তিনটি দিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখতে হবে।

মোটকথা, শ্রেণিকক্ষের বাহ্যিক পরিবেশ অনুকূল রাখতে শ্রেণিকক্ষের ভেতর ও বাহির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, উপযোগী পদ্ধতিতে আসন বিন্যাস করতে হবে, প্রয়োজন সাপেক্ষে শ্রেণিকক্ষের দরজা জানালা খোলা ও বন্ধ রাখতে হবে, পাঠের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের চাহিদা পুরণের ব্যবস্থা করতে হবে, শ্রেণিতে শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে, যথাসময়ে শ্রেণিতে আগমন ও প্রস্থান করতে হবে ইত্যাদি ।

শ্রেণিকক্ষে অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ এর ধারণা

শ্রেণিকক্ষের সামাজিক পরিবেশ বলতে বিশেষত শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, সম্পর্কের গভীরতা, শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন রীতি-নীতি, শ্রেণিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ, তাদের বিশ্বাস ও বিভিন্ন আচরণকে ইঙ্গিত করে। এছাড়া আবার শিক্ষার্থীদের আত্ম-বিশ্বাস, শিখনে প্রেষণা, আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক, দলীয় চেতনা, বিশ্বাস, বিভিন্ন ধরণের মূল্যবোধ, শ্রেণিকক্ষে পারস্পরিক সহযোগিতা, গণতান্ত্রিকতা ইত্যাদি শ্রেণিকক্ষের সামাজিক পরিবেশের অনুষঙ্গ।

অধিকন্তু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, উদ্দীপনা, কৃতিত্ব, প্রভাব, সুরক্ষা, নিয়ন্ত্রণ, সহায়তা, অংশগ্রহণ, দায়বদ্ধতা ইত্যাদি শ্রেণিকক্ষের সামাজিক পরিবেশের প্রভাবক হিসেবে গণ্য। যেমন এ প্রসঙ্গে Mara W. Allodi বলেন,

‘The concept of social climate is closely related to classroom climate, school climate and school ethos, and refers to characteristics of the psychosocial environment of educational settings. Interpersonal relationships, student-teacher relationship, peer relationships, teachers’ beliefs and behaviours, teachers’ communication style, classroom management and group processes are themes that can be considered to be included in the concept of the social climate of learning environments’.

শ্রেণিকক্ষে শিখনের সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টি করা মূলত বিভিন্ন কৌশলগত ও মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার সমাহার- যার জন্য এ বিষয়ে শিক্ষকের কৌশলগত জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রতিশ্রুতি এবং এ বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা অত্যাবশ্যক। শ্রেণিকক্ষের সামাজিক ও আবেগিক/মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ-এর ধারণার মূলকথা হল— শ্রেণিকক্ষ একটি সমাজ।

শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষক এ সমাজের বাসিন্দা। একটি সমাজে বাস করতে যেমন পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, মিথস্ক্রিয়া, যোগাযোগ, আবেগ, অনুভুতি, দয়া, মায়া, হৃদ্যতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, মানবিকতা, সামাজিকতার রীতি-নীতি মেনে চলতে হয় তেমনি শ্রেণিকক্ষে শিখনের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে শ্রেণিকক্ষ রূপ সমাজের বাসিন্দা হিসেবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের জন্য এ ধরণের বিভিন্ন সংস্কৃতি মেনে চলতে হয়।

শ্রেণিকক্ষে অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টির উপায়

শিখন পরিবেশ শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের তিনটি উপাদানের অন্যতম একটি। শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনায় শিখন পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুশৃঙ্খল, মানবিক, গণতান্ত্রিক,সহযোগিতামূলক ও হৃদ্যতাপূর্ণ শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ শিখন-শেখানো প্রক্রিয়াকে অর্থবহ করে তোলে।

শ্রেণিকক্ষে ফলপ্রস শিখন- শেখানো কার্যক্রম আঞ্জাম দিতে কেবল শ্রেণিকক্ষের অনুকূল বাহ্যিক পরিবেশ নিশ্চিত করাই যথেষ্ঠ নয়। শ্রেণিতে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সফল ও সার্থক ব্যবস্থাপনায় অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টির বিকল্প কিছুই নেই।

শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সুবিধাসমূহ সরবরাহ করে হয়তো শ্রেণিকক্ষের বাহ্যিক পরিবেশ সহজেই নিশ্চিত করা যেতে পারে কিন্তু শ্রেণিকক্ষের শিখনের সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ নিশ্চিত করা ততটা সহজ কাজ নয়। শ্রেণিকক্ষে অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে অনুকূল সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টির কতিপয় উপায়ের ইঙ্গিত নিম্নরূপ :

  •  শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক মানসিকসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  •  শ্রেণিতে কোন অবস্থাতেই এবং কোনভাবেই ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করা ।
  • সকল শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া ও নৈর্ব্যক্তিক আচরণ প্রদর্শন করা।
  •  শ্রেণিতে পছন্দনীয় বা সর্বোত্তমের প্রতি সর্বদা দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা ।
  • শিক্ষার্থীদের মতামতকে সম্মান করা ও গুরুত্ব দেওয়া।
  •  শিক্ষার্থীদেরকে অবাধ ও মুক্ত মনে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ।
  •  শ্রেণিতে শিক্ষক নিজেকে হাসি-খুশি রাখা। কারণ গুরু-গম্ভীর শিক্ষকের শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা সহজ হতে পারে না।
  • শ্রেণিতে শিক্ষক নিজেকে শিক্ষার্থীদের সামনে গণতন্ত্রের আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা।
  •  আচরণিক ক্ষেত্রে শিক্ষক নিজেকে একজন মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা।
  •  শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত না করে সর্বাবস্থায় উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রাখা। নেতিবাচক মনোভাব ও বক্তব্য বর্জন করে ইতিবাচক বক্তব্য ও মনোভাব প্রদর্শন করা
  •  শিক্ষার্থীদের প্রতি স্নেহ, ভালবাসা ও আন্তরিকতা দেখানো।
  • মনোযোগের সাথে শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনা ।
  • শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের সমস্যায় সহানুভূতি প্রদর্শন ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।
  •  শিক্ষার্থীদের ভুল-ত্রুটিকে সহজভাবে নিয়ে তা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা ।
  • শিক্ষার্থীদের মিথস্ক্রিয়ামূলক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে ও তা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
  •  শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের কাজের মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক সৃষ্টি করা ।
  •  শ্রেণিতে সহযোগিতামূলক শিখনকে গুরুত্বারোপ ও বাস্তবায়ন করা।
  • শিক্ষার্থীদের অব্যক্ত আচরণসমূহ বুঝতে চেষ্টা করা।
  • শিক্ষার্থীদের অভিব্যক্তিকে গুরুত্বারোপ করা ।
  • শিক্ষার্থীদের অপ্রকাশিত আগ্রহ বা চাহিদা অনুধাবনপূর্বক সাড়া প্রদান করা ।
  •  সতীর্থ শিক্ষণকে জোরদার করা।
  •  শিক্ষার্থীদের মনস্তাপ তথা শ্রেণিকক্ষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ বুঝে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
  •  শিক্ষার্থীদের কোন মতামত বা ধারণাকে গুরুত্ব প্রদানের স্বীকৃতি হিসেবে শিক্ষক কর্তৃক তা পুনরাবৃত্তি করা। কোন বিষয়ে মনোনিবেশ করে সাড়া প্রদানের পর অংশগ্রহণকারীদের মাঝে তার গুণগত পরিবর্তন পরিবীক্ষণ করা।
  •  অংশগ্রহণকারীদের মতামতের নিজস্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা
  •  শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং শিখন প্রক্রিয়ায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে সে বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা।
  • শ্রেণির প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে দূর্বল ও অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের অগ্রসরের সুযোগ সৃষ্টি করা।
  •  বিভিন্ন সামর্থ্যের শিক্ষার্থীর সংমিশ্রণে দল গঠন করে কাজ করতে দেওয়া।
  • শ্রেণিতে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকের কার্যক্রমের অবাধ ফলাবর্তন প্রদানের দ্বার উন্মুক্ত রাখা।
  • শিক্ষার্থীদের প্রেষণা ও গুণগতমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রাখা।
  • শিখনে শিক্ষার্থীদেরকে ক্ষমতায়িত করার নীতি অবলম্বন করা।
  •  শিক্ষার্থীদের আত্ম-মর্যাদাকে সম্মান করা ।
  •  শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক ফলাবর্তন দেওয়া।
  • বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেন্ডার নিরপেক্ষতা বজায় রাখা।
  •  বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মাঝে সমতা ও ন্যায্যতার নীতি অবলম্বন করা।
  • একীভূত শিক্ষার নীতি পদ্ধতি অনুসরণ করা।
  • শ্রেণির কাউকে অবজ্ঞা, অবহেলা, তুচ্ছ জ্ঞান কিংবা হেয় প্রতিপন্ন না করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষ কর্তৃক সামাজীকীকরণকৃত আচরণ প্রদর্শন করা ।

অধিকন্তু, শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ে এমন সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা করা— যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অন্যের প্রতি ভাল আচরণ করবে; অন্যের ব্যক্তিসত্তা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে; অন্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবে; সমব্যথী হবে, শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, গোত্রীয়, বৈচিত্র্যকে সম্মান করবে এবং ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে; শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য ও যোগ্যতার ভিন্নতাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে এবং ঐসব নৈতিক আদর্শ অনুসরণ করবে যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।

এছাড়াও অনুকূল শিখন পরিবেশ সৃষ্টির অনুষঙ্গ হিসেবে প্রয়োজন শিক্ষার্থীর মাঝে শিখনের আবেগ সৃষ্টি করা। এজন্য শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে পাঠের শুরুতে এবং পাঠের মাঝেমাঝে উপযুক্ত সময়ে অল্পক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরণের কৌশল ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে পাঠের শুরুতে আন্তরিকতাপূর্ণ কুশল বিনিময়, শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা জানা, পাঠ সংশ্লিষ্ট অডিও ভিডিও, ছবি, গল্প, ছড়া, কবিতা, গান, কৌতুক, ধাঁধাঁ ইত্যাদির অবতারণা শিখনের আবেগীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক।

সর্বোপরি, শ্রেণিকক্ষে শিখনে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় করা এবং সকল কাজে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেখানে শিক্ষক থাকবেন সহায়ক এবং নির্দেশনা দাতার ভূমিকায় এবং শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবে, মিথষ্ক্রিয়া করবে, ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ করবে, অন্যের মত শুনবে, নিজের মত প্রদান করবে এবং সবশেষে সিদ্ধান্ত নিবে।

 

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষণ-শিখনের পরিবেশ তৈরি করা

 

শ্রেণিতে এসব কিছুই যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ ও আনন্দের সাথে করতে পারে সে জন্য চাই অনুকূল ও নির্ভরযোগ্য শ্রেণি পরিবেশ যেখানে শিক্ষার্থীদের মনে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ভয়-ভীতি, সন্দেহ- সংশয় থাকবে না এবং এ পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের সতীর্থদের সাথে দ্বিধাহীন চিত্তে মেলামেশা করবে, মিথস্ক্রিয়া করবে, সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালাবে এবং জানার দুনির্বার আকর্ষণ নিয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করবে কিংবা তার সহায়তার শরণাপন্ন হবে।

এ ধরণের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হবেন একজন ইতিবাচক শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ হবে যথাক্রমে ইতিবাচক, আনন্দময় ও শিখনবান্ধব। শ্রেণিতে উপযুক্ত সামাজিক ও আবেগিক পরিবেশ সৃষ্টিতে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের শিক্ষককে কৌশলগত নানা পদক্ষেপের সাথে সাথে শিক্ষা মনোবৈজ্ঞানিক দক্ষতা প্রয়োগে সুনিপুণ হতে হবে ।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment