সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখার বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা করা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখার বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা করা – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিতে সকল শিক্ষার্থীর চাহিদা মেটানোর উপায় এর অন্তর্ভুক্ত।

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখার বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা করা

 

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখার বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা করা

 

একটি শ্রেণিকক্ষ

একটি শ্রেণিকক্ষে নানা রকম বৈশিষ্ট্যের শিক্ষার্থীর সমাগম থাকে। তাদের শিখন সামর্থ্য এবং ধরণও বৈচিত্র্যময়। এজন্য শ্রেণিকক্ষকে সবসময়ই একটি জটিল জগৎ (A complex world) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ জটিল জগতে প্রবেশ করে এ জগতকে জয় করার জন্য একজন শিক্ষকের বহুমাত্রিক কলাকৌশল ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে হয়।

শ্রেণিকক্ষ নামক এ জটিল জগতের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শ্রেণির সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি করা ও তা ধরে রাখা। শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের সফল ও সার্থক ব্যবস্থাপনায় পাঠ্য বিষয়ের প্রতি সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি করা ও তা ধরে রাখার গুরুত্বও অনস্বীকার্য। এ অধিবেশনে আমরা আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি করার উপায় ও তা ধরে রাখার প্রক্রিয়া ও কলাকৌশল সম্পর্কে জানবো।

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখার গুরুত্ব

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রমকে কার্যকর ও অর্থবহ করতে পাঠে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি করা এবং তা ধরে রাখা একজন শিক্ষকের মৌলিক যোগ্যতাসমূহের অন্যতম একটি যোগ্যতা। শিখনে সকল শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি করতে এবং তা ধরে রাখতে না পারলে শ্রেণিকক্ষের অন্যান্য সকল আয়োজন গুরুত্বহীন হয়ে যেতে পারে। শ্রেণির সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে সবার আগে আমাদের জানা দরকার যে শ্রেণিতে কোন কোন ধরনের/পর্যায়ের শিক্ষার্থী থাকে।

মূলত একটি শ্রেণিকক্ষে নানা চাহিদা ও নানা বৈশিষ্ট্যের শিক্ষার্থীর সমাবেশ থাকে। যাদেরকে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিবেচনায় বিভিন্ন নামে অভিহিত করি। যেমন অগ্রসর শিক্ষার্থী, অনগ্রসর শিক্ষার্থী ও মধ্যম মানের শিক্ষার্থী। আচরণিক দিক বিবেচনায় কখনো কখনো আবার তাদেরকে আমরা নিরব শিক্ষার্থী, আচরণিক সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থী, আধিপত্য বিস্তারকারী শিক্ষার্থী, নেতিবাচক শিক্ষার্থী, ইতিবাচক শিক্ষার্থী ইত্যাদি নামে আখ্যা দেই।

এছাড়া ও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সচরাচর আমরা আরো কিছু বিশেষণমূলক শব্দ ব্যবহার করে থাকি যেমন— অতিমেধাবী শিক্ষার্থী, ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (Learners with special need) বা বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের আবার কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন— শারীরিক সমস্যা-সম্পন্ন শিক্ষার্থী, শ্রবণ সমস্যা-সম্পন্ন শিক্ষার্থী, বাক সমস্যা-সম্পন্ন শিক্ষার্থী, বুদ্ধি ও আবেগিক সমস্যা-সম্পন্ন শিক্ষার্থী ইত্যাদি।

আবার বুদ্ধিমত্তা বিচারে একটি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীদের Auditory and musical learners, Visual and spatial learner, Verbal learner, Logical and mathematical learner, Physical or kinesthetic learner, Social and interpersonal learner, Solitary and intrapersonal learner এ সাত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এছাড়াও আর্থ- সামাজিক অবস্থা, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, লিঙ্গ, চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রিক বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য থাকে। কিন্তু সবকিছু সত্ত্বেও তারা একটি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থী।

তাদের সবার শেখার অধিকার আছে এবং তারা সকলেই শিখতে পারে। শিখনে তাদের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেই শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কারণ একজন শিক্ষক কেবল অগ্রসর শিক্ষার্থী কিংবা শ্রেণির দুর্বল শিক্ষার্থীর জন্যই নন। তিনি শ্রেণির সবার শিক্ষক। শিখনে তিনি সকলকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাবেন।

শ্রেণিতে শিখনে একাংশের মনোযোগি তা আবার আরেক অংশের অমনোযোগিতা একটি শ্রেণিকক্ষকে যথার্থ শিখনবান্ধব শ্রেণিকক্ষে পরিণত করতে পারে না। যাদেরকে শ্রেণিতে শিখনে আগ্রহী ও মনোযোগী করা যাবে না, তারা কেবল অমনোযোগী শিক্ষার্থী তাই নয়।

অমনোযোগিতার ফলশ্রুতিতে শ্রেণিতে তারা নানা রকম বিশৃংখলা ও অবাঞ্ছিত আচরণ করবে, যা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়ে আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। এ প্রসঙ্গে কবিতার এ উক্তিটি খুবই প্রাসঙ্গিক: ‘পশ্চাতে রেখেই যাবে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিবে নিশ্চয়ই”। শ্রেণিতেও যাদেরকে শিখনে আগ্রহ ও মনোযোগের বাইরে রাখা হবে, তারা সে শ্রেণিকক্ষের সবকিছুকে পশ্চাতে টেনে নিয়ে যাবে। তাই শ্রেণির উল্লেখিত সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর শিখন সফলতার প্রয়োজনেই সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি করা ও তা ধরে রাখা অপরিহার্য।

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল

শিখন-শেখানো কার্যক্রম বরাবরই একটি জটিল প্রক্রিয়া। শ্রেণিকক্ষের শিখন-শেখানো কাজটি আরো জটিল। তদুপরি, আবার শিখন-শেখানো কাজের সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে শ্রেণিতে পাঠ্য বিষয়ের শিখনে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ সৃষ্টি ও তা ধরে রাখা নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কারণ একটি শ্রেণিকক্ষে নানা রকম বৈশিষ্ট্যের শিক্ষার্থীদের সমাগম থাকে। তাদের শিখন স্টাইল, শিখন চাহিদা, শিখন সমস্যা বৈচিত্রময়।

শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখতে কেবল শিক্ষকের প্রতিশ্রুতি, সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাই যথেষ্ঠ নয়। এসবের সাথে এ ব্যাপারে শিক্ষকের কৌশলগত কার্যকর পরিকল্পনা ও তা প্রয়োগ করার দক্ষতা থাকা অপরিহার্য। পাঠের এ পর্বে আমরা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো, তবে এ আলোচনার প্রাককালে এ বিষয়ে আমরা আপনার নিজস্ব চিন্তাধারা ও ভাবনা সম্পর্কে ধারণা নিতে চাই। এ বিষয়ে আপনার নিজস্ব চিন্তাধারা নিচের বক্সে সংক্ষেপে লিখুন।
১.

২.

৩.

8.

৫.

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে যেসব কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, তার কতিপয় নিম্নরূপ :

শিখন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রেষণা শিক্ষার্থীদের পাঠে আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে। কোনো কিছুর কামনা এবং তা পাওয়ার কর্মপ্রেরণার নাম প্রেষণা। প্রেষণা সৃষ্টি করা বলতে কোন কিছুতে আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করাকে বোঝায়।

প্রেষণা হল এক ধরনের প্রণোদনা বা তাড়না (Drive)- যা মানুষ ও সকল প্রাণীর কর্মপ্রেরণার উৎস। শিখনে প্রেষিত আচরণের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষার্থী যতক্ষণ না উদ্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিখতে পারবে, ততক্ষণ সে বিষয়ে শিখতে তার তীব্র ইচ্ছা, অনুরাগ, তাড়না অব্যাহত থাকবে।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে পেমণাদান করা যায়। শিখনে পেমণার মূলকথা তালা শিখনের আবেগ ও আবেগীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা। শিক্ষার্থীদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া, উপযুক্ত সময় তাদের পুরস্কার দেওয়া ইত্যাদি প্রেষণা সৃষ্টির উদাহরণ। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক যদি শিখনের প্রেষণা সৃষ্টি করতে পারেন, তা হলে সে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ও মনোযোগী হয়ে উঠবে শ্রেণির সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে শ্রেণিকক্ষের নিয়ম-শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করা ও তা বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

ছোট-খাট নানা প্রতিকূলতা দক্ষতার সাথে দ্রুত মোকাবেলা করে কাজের গতি অক্ষুন্ন রাখতে হবে। শ্রেণিকক্ষ পরিচালনার এ শৃংখলা রক্ষার সাথে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার অন্যতম একটি কৌশল হল মনোযোগী আচরণের স্বীকৃতি দেয়া। স্বীকৃতি শিখনে প্রেষণা হিসেবে কাজ করে। তাই শ্রেণিতে যেসব শিক্ষার্থী শিখনে আগ্রহী ও মনোযোগী থাকে শিক্ষক যদি তাদের এ মনোযোগী আচরণের স্বীকৃতি দেন, তাহলে তাদের আগ্রহ ও মনোযোগ আরো বেশি বেড়ে যায় এবং এ কারণে অন্য শিক্ষার্থীরাও মনোযোগী হতে উৎসাহ পায়।

শ্রেণিকক্ষের বাঞ্ছিত আচরণ শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে সকল স্তরের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখা যায়। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের যেসব আচরণ বাঞ্ছিত ও প্রশংসনীয় সেসব আচরণের প্রশংসা করা। শ্রেণিকক্ষে কোন শিক্ষার্থীর ভাল আচরণের প্রশংসা করা হলে সে শ্রেণিকক্ষে ভাল আচরণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যায়। শ্রেণিকক্ষে বাঞ্ছিত আচরণকে শক্তিশালী করার জন্য শিক্ষকের মৌখিক বা অন্য কোনো ধরণের ইতিবাচক কৌশল অবলম্বন করা উচিত।

শ্রেণিতে আচরণগত সমস্যা বিশিষ্ট শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ নজরদারি বজায় রেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগ অক্ষুন্ন রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তাছাড়া ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের কারণে কখনো কখনো শ্রেণিকক্ষের দলীয় মনোযোগ বিঘ্নিত হয়। দলীয় মেনোযোগ ধরে রাখার জন্য শ্রেণিতে এ ধরনের শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের ব্যক্তিগত নজর এবং প্রতি শিক্ষার্থীর প্রতি একই সময় একইভাবে দৃষ্টি রাখা হলে শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে কাজে মনোনিবেশ করতে পারে।

শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখার জন্য শ্রেণিতে আগ্রহ, উদ্দীপনামূলক প্রশ্নকরণ অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। এজন্য পাঠের বিষয়বস্তুকে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রশ্ন করা হলে পাঠ্য বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখা সহজ হয়।

শিক্ষক যদি পাঠ উপস্থাপনের সময় আগ্রহ, উদ্দীপনামূলক প্রশ্ন করেন, তাহলে তার উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা সক্রিয় হবে। প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে গিয়ে তাকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, সহপাঠীদের সাথে মতের আদান-প্রদান করতে হবে- আর এসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের অজান্তেই তারা শিখনে আগ্রহী ও গভীর মনোযোগী হবে। মনে রাখতে হবে, শ্রেণিতে প্রশ্ন করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠে আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে সক্রিয় করা।

শিক্ষণ শিখন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের একাধিক ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে শিখনে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ অপেক্ষাকৃত ভাল থাকে। যেমন: শিক্ষার্থীদের শোনানোর সাথে সাথে সে বিষয়টি দেখানো। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের একটি পাঠ উপস্থাপনে ও কিছু বিষয় মৌখিক আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা, কিছু বিষয় আবার প্রদর্শনের মাধ্যমে তুলে ধরা, তারপর আবার হয়তো হাতে-কলমে কাজ করতে দেয়া- এভাবে একাধিক ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারের মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তাতে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ অপেক্ষাকৃত ভাল থাকে ।

শ্রেণিতে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রখতে পাঠে চাক্ষুষ প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ কার্যকর। চাক্ষুষ প্রযুক্তি পাঠ্যপুস্তকের শিখন বিষয়কে আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ করে তুলতে সহায়তা করে। চাক্ষুষ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু প্রাণবন্ত হয়ে উঠে, যার ফলে এ কৌশলে শ্রেণির সব ধরণের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

চাক্ষুষ প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে সাথে অন্যান্য আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ ও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। অধিবেশনের একঘেয়েমি দূর করে অধিবেশনকে আনন্দদায়ক করে। যেসব শিক্ষার্থী বক্তৃতা কিংবা আলোচনার সময় অমনোযোগী থাকে, দেখা যায় আকর্ষণীয় উপকরণ ব্যবহারের সময় তারা আগ্রহী ও মনোযোগী হয়। এজন্য শ্রেণিতে সব ধরনের শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টি ও মনোযোগ ধরে রাখতে শিক্ষককে শিখন- শেখানো কাজে আকর্ষণীয় উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।

 

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখার বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা করা

 

শিক্ষণ-শিখনে বলবৃদ্ধিকরণ (Reinforcement)-এর গুরুত্ব রয়েছে। শ্রেণি পাঠে বিভিন্ন ধরনের বলবৃদ্ধি কারক (Reinforcers)-এর ব্যবহার শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ও উদ্দীপ্ত করতে সহায়ক। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের বল বৃদ্ধিকারক ব্যবহার করতে পারেন। বল বৃদ্ধিকারক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন-

(ক) শব্দ বা শব্দ গুচ্ছের মাধ্যমে প্রশংসা করা: যেমন- চমৎকার, আসলেই তুমি খুব ভাল বুঝেছ;

(খ) মৌখিক ইতিবাচক বিভিন্ন অভিব্যক্তি: যেমন- হাসি, আগ্রহীভাব নিয়ে তাকানো;

(গ) নৈকট্য ও ঘনিষ্টতা: যেমন- দলের সাথে বসা, শিক্ষার্থীদের কাছে যাওয়া;

(ঘ) শারীরিক সংস্পর্শ: যেমন- সুন্দর উত্তর দেয়ার কারণে স্নেহ বসত পিঠে বা বাহুতে টোকা দেয়া ইত্যাদি। এগুলো সামাজিক বল বৃদ্ধিকারক-এর উদাহরণ। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে টোকেন বল বৃদ্ধিকারক (Token Reinforcers), কাজ সম্পর্কীয় বলবৃদ্ধিকারক (Activity Reinforcers) শ্রেণিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণি কক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে শিক্ষকের যোগাযোগ দক্ষতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শ্রেণিকক্ষ একটি যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ার স্থান। শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকের দক্ষতা একদিকে যেমন শ্রেণিকক্ষকে সুশৃংখল, নিয়ন্ত্রিত ও গতিশীল রাখে, অন্যদিকে এ দক্ষতা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে।

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিক্ষকের বাচনিক দক্ষতার ব্যবহার— যেমন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের স্পষ্ট, দরাজ কন্ঠস্বর সাধারণত শিক্ষার্থীদেরকে পাঠে মনোযোগী থাকতে সহায়তা করে । আবার পাঠের বিভিন্ন পর্বে বা প্রেক্ষাপটে কণ্ঠস্বরের তারতম্য (Tone Variation) ঘটানো হলে তা শিক্ষার্থীদেরকে পাঠে মনোযোগী হতে কিছুটা সহায়তা করে। পাঠ উপস্থাপন কালে সর্বদা একই মাত্রা বা ভঙ্গির কন্ঠস্বর ব্যবহার করা হলে কিছুক্ষণ পরেই শিক্ষার্থীদের কাছে তা একঘেয়ে মনে হয় এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা ঝিমিয়ে পড়ে।

পাঠ উপস্থাপনকালে মৌখিক বর্ণনার সাথে সাথে উপযুক্ত অঙ্গভঙ্গির ব্যবহার পাঠকে ও শ্রেণিকক্ষকে প্রাণবন্ত করে তোলে, যা একাধারে পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সৃষ্টিতে ও মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে। উপযুক্ত অংগভঙ্গির মাধ্যমে কখনো কখনো আবেগঘন শিখন পরিবেশ তৈরি করা যায়। আবার কোন বিষয়ের ধারণা স্পষ্টকরণে অঙ্গভঙ্গি বেশ কার্যকর। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হতে পারে শ্রেণিতে অংশগ্রহণমূলক, শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক ও সক্রিয় শিখন পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করা। এ পদ্ধতি ও কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো, হাতে কলমে কাজ করানো, জোড়ায় ও দলীয় কাজসহ অন্যান্য কাজে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

শিক্ষক যদি দক্ষতার সাথে এ পদ্ধতি যথাযথভাবে শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে পারেন, তা হলে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিষ্ক্রিয়তা ও অমনোযোগিতার কোন সুযোগ থাকে না, বরং শিক্ষার্থীরা কর্মতৎপর থেকেই পাঠের বিষয়বস্তু শেখে। যেমন- শ্রেণিতে অংশগ্রহণমূলক/সক্রিয় শিখন কৌশলের অংশ হিসেবে শিক্ষক যদি ভূমিকাভিনয় (Role Play), বিতর্ক (Debate), ডাকবাক্স (Post Box), মার্কেটপ্লেস (Market Place), নাটকাভিনয় (Dramatization), স্নো-বল (Snow Balling), মৎস রঙ্গপাত্র (Fish Bowl), বিশেষজ্ঞকর্তন (Expert Jigsaw), আটাররোলে বাদাম সাজানো (Doughnut), বুলেটিনবোর্ড (Bulletin Board) ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করেন তাহলে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী সক্রিয় কর্মতৎপর থাকে এবং আনন্দ ও উদ্দীপনার সাথে পাঠে অংশগ্রহণ করে ।

শিক্ষকের ভাল প্রস্তুতি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সৃষ্টি ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পাঠদানে শিক্ষকের প্রস্তুতির অর্থ হলো পাঠদানের বিষয়বস্তুর উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং এ উদ্দেশ্য অর্জনের উপযোগী পদ্ধতি ও কৌশল বেছে নেওয়া।

আবার উপযুক্ত পদ্ধতি নির্ধারণে অনিবার্যভাবে পাঠের বিষয়বস্তুর উপরে স্পষ্ট ধারণা ও শিখন সহায়ক উপকরণ ও সামগ্রী বেছে নিতে হয়। এছাড়াও পাঠে প্রস্তুতির অনিবার্য অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার কৌশলও শিক্ষককে পরিকল্পনা করতে হয়। তাই দেখা যায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে একজন শিক্ষক যে পাঠটি শ্রেণিতে উপস্থাপন করেন, সে পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত বেশি আগ্রহী ও মনোযোগী থাকে ।

আলোচিত উক্ত কৌশলগুলো ছাড়াও আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের শ্রেণিকক্ষে বৈচিত্র্যময় শিখন-শেখানো কৌশল ব্যবহার, শিক্ষার্থীদের শিখনে/কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত (Engage) করা, শিখনে প্রতিযোগিতার ও মিথস্ক্রিয়ার পরিবেশ তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট ভাল কাজের জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা, লজ্জা ও ভয়ের কারণ থেকে শিক্ষার্থীদেরকে মুক্ত রাখা, শিক্ষার্থীদের সকল কাজের সক্রিয় তদারকি করা, শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া, শ্রেণিকক্ষের নানা রকম কাজের মাঝে ধারাবিহিকতা রক্ষা করা, শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি ঘটনার প্রতি শিক্ষকের তীক্ষ্ণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহী ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখার উপরোক্ত কৌশলসমূহ পাঠান্তে এ বিষয়ে আরো কোন কৌশল আপনার মাথায় আসলে তার ইঙ্গিত মাইন্ডম্যাপ সংযুক্ত করুন নিম্নের মাইন্ডম্যাপে লিপিবদ্ধ করুন। শিখনে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ধরে রাখতে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদাসমূহ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শ্রেণিকক্ষ ও শিখন ব্যবস্থাপনার কৌশল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

শ্রেণিকক্ষের বাহ্যিক অনুকূল পরিবেশের সাথে সাথে শ্রেণিকক্ষের সামাজিক পরিবেশ পাঠে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি ও তা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রেণিকক্ষের গুরুগম্ভীর পরিবেশ শিক্ষার্থীদের সব সময় পছন্দনীয় নয়। তারা শ্রেণিকক্ষে এমন পরিবেশ চায় যে পরিবেশে কোন ধরণের শঙ্কা ও সংকোচের কোন কিছু বিদ্যমান থাকবে না। সেখানে নির্বিঘ্নে তারা তাদের মতামত প্রকাশ করবে, মিথস্ক্রিয়া করবে, প্রশ্ন করবে, জানতে চাইবে এবং আনন্দের মাধ্যমে শিখবে। শ্রেণিকক্ষের সামাজিক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের চিত্তের বিকাশ ঘটানোর অনুকূল হতে হবে।

 

সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখার বিভিন্ন কৌশলের পরিকল্পনা করা

 

সর্বোপরি, আরবি ভাষা ও সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ ধরে রাখতে শ্রেণিকক্ষে, আগ্রহ ও উদ্দীপনামূলক প্রশ্নকরণ, শিখনে একাধিক ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, যোগাযোগ দক্ষতার ব্যবহার, বাচনিক দক্ষতার ব্যবহার, প্রেষণা সৃষ্টি, বিভিন্ন বল বৃদ্ধিকারক-এর ব্যবহার, চাক্ষুষ প্রযুক্তি ও অন্যান্য আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার, সক্রিয় শিখন পদ্ধতি ব্যবহার, হাতে-কলমে কাজ করানো, বাঞ্ছিত আচরণ শক্তিশালীকরণ, মনোযোগী আচরণের স্বীকৃতি, দলীয় মনোযোগ রক্ষায় সক্রিয় থাকা, কাজের গতি অক্ষুন্ন রাখা, শ্রেণি শৃংখলা বজায় রাখা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment