আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সংস্কৃত সমাসপ্রকরণম
সংস্কৃত সমাসপ্রকরণম
সংস্কৃত সমাসপ্রকরণম
উপরের প্রথম উদাহরণে ‘বিদ্যায়াঃ’ একটি পদ এবং ‘আলয়ঃ’ আরেকটি ভিন্ন পদ। এ দুটো পদ মিলিত হয়ে ‘বিদ্যালয়ঃ’ পদটি গঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় উদাহরণে ‘মহান্’ একটি পদ এবং ‘জনঃ’ আরেকটি পৃথক পদ। এ দুটো পদের মিলনে গঠিত হয়েছে ‘মহাজনঃ’ পদ ।
এরূপভাবে পরস্পর সম্বন্ধবিশিষ্ট দুই বা বহুপদের একপদে মিলনকে সমাস বলে।
সমাস শব্দের অর্থ একত্রীকরণ বা সংক্ষেপ
সমাসের প্রয়োজনীয়তা: শব্দগঠন, বাক্যের শ্রুতিমধুরতা সাধন ও বাক্যকে সংক্ষিপ্তকরণ সমাসের প্রধান প্রয়োজন ।
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য : সন্ধিতে বর্ণে বর্ণে মিলন হয়, আর সমাসে মিলন হয় দুই বা বহুপদের।
ব্যাসবাক্য : ‘ব্যাস’ শব্দটির অর্থ বিভক্ত হয়ে অবস্থান। সুতরাং যে-বাক্যের সাহায্যে সমাসের অন্তর্গত পদগুলোকে বিভাগ অর্থাৎ পৃথক করা হয়, তার নাম ব্যাসবাক্য। ব্যাসবাক্যের অন্য নাম সমাসবাক্য ও বিগ্রহবাক্য। যেমন- নদী মাতা যস্য সঃ = নদীমাতৃকঃ ।
সমস্যমান পদ : যে-সকল পদের মিলনে সমাস গঠিত হয়, তাদের প্রত্যেককে সমস্যমান পদ বলা হয় । যেমন— নবম্ অন্নম্ = নবান্নম্ । এখানে ‘নবম্’ ও ‘অনুম্’ দুটো সমস্যমান পদ
সমস্তপদ : সমাসবদ্ধ পদকে বলা হয় সমস্তপদ। জায়া চ পতিশ্চ = দম্পতী, এখানে ‘দম্পতী’ একটি সমস্তপদ ।
সমাসের শ্রেণীভেদ : সমাস প্রধানত চার প্রকার- অব্যয়ীভাব, তৎপুরুষ, দ্বন্দ্ব ও বহুব্রীহি। কর্মধারয় ও দ্বিগু সমাস তৎপুরুষ সমাসেরই অন্তর্গত। কারো কারো মতে সমাস ছয় প্রকার- দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, অব্যয়ীভাব, তৎপুরুষ, কর্মধারয় ও বহুব্রীহি। আমরাও সমাস ছয় প্রকার বলছি।
অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয় শব্দ পূর্বে থেকে যে-সমাস হয় এবং অব্যয়ের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলা হয় । অব্যয়ীভাব সমাসে শেষের পদটি থাকে বিশেষ্য এবং অব্যয় ও ক্লীবলিঙ্গ হয় । সামীপ্য, সাদৃশ্য, অভাব, পশ্চাৎ, যোগ্যতা, বীপ্সা, অনতিক্রম প্রভৃতি অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয় ।
সামীপ্য :
- কূলস্য সমীপম্ = উপকূলম্
- গৃহস্য সমীপম্ = উপগৃহম্
সাদৃশ্য :
- দ্বীপস্য সদৃশম্ = উপদ্বীপম্
- হরেঃ সদৃশম্ = সহরি
অভাব :
- ভিক্ষায়াঃ অভাবঃ = দুর্ভিক্ষম্
- মক্ষিকাণাম্ অভাবঃ = নির্মক্ষিকম্
পশ্চাৎ :
- পদস্য পশ্চাৎ = অনুপদম্
- রথস্য পশ্চাৎ = অনুরথম্
অনতিক্রম:
- বিধিম্ অনতিক্রম্য = যথাবিধি
- শক্তিম্ অনতিক্রম্য = যথাশক্তি
তৎপুরুষ সমাস
যে-সমাসের পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি (দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী) বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। বিভক্তির লোপ অনুসারে তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার – দ্বিতীয়া তৎপুরুষ, তৃতীয়া তৎপুরুষ, চতুর্থী তৎপুরুষ, পঞ্চমী তৎপুরুষ, ষষ্ঠী তৎপুরুষ ও সপ্তমী তৎপুরুষ।
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
- গৃহং গতঃ = গৃহগতঃ
- শরণম্ আপন্নঃ = শরণাপন্নঃ
তৃতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
- কীটেন দৃষ্টঃ = কীটদষ্টঃ
- পদেন দলিতঃ = পদদলিতঃ
চতুর্থী তৎপুরুষ : পূর্বপদের চতুর্থী বিভক্তি লোপ পায় । যেমন—
- দেবায় দত্তঃ = দেবদত্তঃ
- পুত্রায় হিতম্ = পুত্রহিতম্
পঞ্চমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
- বৃক্ষাৎ পতিতঃ = বৃক্ষপতিতঃ
- শাপাৎ মুক্তঃ = শাপমুক্ত
ষষ্ঠী তৎপুরুষ : পূর্বপদের ষষ্ঠী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
- রাজ্ঞঃ পুত্রঃ = রাজপুত্রঃ
- কাল্যাঃ দাসঃ = কালিদাসঃ
সপ্তমী তৎপুরুষ : পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি লোপ পায়। যেমন—
- রণে নিপুণঃ = রণনিপুণঃ
- তর্কে পণ্ডিতঃ = তর্কপণ্ডিতঃ
কর্মধারয় সমাস
যে-সমাসে সাধারণত পূর্বপদ বিশেষণ, পরপদ বিশেষ্য ও সমস্ত পদটি বিশেষ্য হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলা হয় । কর্মধারয় সমাস যেহেতু তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণীভেদ, সেহেতু তৎপুরুষ সমাসের মত এই সমাসের পরপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় ।
ব্যাসবাক্যসহ কয়েকটি কর্মধারয় সমাস :
- নীলম্ উৎপলম্ = নীলোৎপল
- রক্তং কমলম্ = রক্তকমলম্
- নবম্ অন্নম্ = নবান্নম্
দ্বিগু সমাস
যে-সমাসে পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে এবং সমাহার অর্থ প্রকাশ করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাসবদ্ধ পদ সাধারণত ক্লীবলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ হয়। যেমন—
ক্লীবলিঙ্গ
- ত্রয়াণাং ভুবনানাং সমাহারঃ = ত্রিভুবনম্চ
- তুর্ণাং যুগানাং সমাহারঃ = চতুর্যুগম্
- পঞ্চানাং গৰাং সমাহারঃ = পঞ্চগবম্
দ্বন্দ্ব সমাস
যে-সমাসে সমস্যমান পদের প্রত্যেকটির অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় এবং ব্যাসবাক্যে প্রত্যেক সমস্যমান পদের পরে ‘চ’ – এই অব্যয় যুক্ত হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন—
- রামশ্চ লক্ষ্মণশ্চ = রামলক্ষ্মণৌ
- ভীমশ্চ অৰ্জুনশ্চ = ভীমার্জুনৌ
- কর্ণশ্চ অর্জুনশ্চ = কর্ণার্জুনৌ
প্রশ্নমালা
শুদ্ধ উত্তরটির পাশে টিক (/) চিহ্ন দাও :
(ক) গৃহস্য সমীপম্ = প্রতিগৃহ/উপগৃহম্/পরিগৃহম্/সগৃহম্।
(খ) ত্রয়াণাং লোকানাং সমাহারঃ = ত্রিলোকী/ত্রিলোকম/ত্রিলোকি/ত্রিলোকঃ ।
(গ) তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের/মধ্যপদের/উভয়পদের/পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে ।
(ঘ) সমাহার অর্থ প্রকাশ করে দ্বিগু/দ্বন্দ্ব/তৎপুরুষ/অব্যবীয়ভাব সামস।
একপদে প্রকাশ কর :
(ক) বিধিম্ অনতিক্রম্য। (খ) রণে নিপুণঃ। (গ) সপ্তানাং শতানাং সমাহারঃ। (ঘ) নদী মাতা যস্য সঃ। (ঙ) ত্রয়াণাং লোকানাং সমাহারঃ। (চ) ভিক্ষায়া অভাবঃ।
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
(ক) সমাস শব্দের অর্থ কি?
(খ) সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য কি?
(গ) সমাসের প্রয়োজনীয়তা কি?
(ঘ) অব্যয়ীভাব সমাসবদ্ধ পদ কোন লিঙ্গ হয়?
(ঙ) বহুব্রীহি সমাসে কোন পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে ?
বাংলায় অনুবাদ কর :
(ক) তে বিদ্যালয়ং গচ্ছস্তি। (খ) অর্জুনঃ রণনিপুণ আসীৎ। (গ) বাংলাদেশো নদীমাতৃকঃ। (ঘ) সা নীলোৎপলং চিনোতি। (ঙ) কালিদাসঃ মহাকবিঃ।
সংস্কৃতে অনুবাদ কর :
(ক) ফলটি বৃক্ষ থেকে পতিত হয়েছে। (খ) যযাতি শাপ থেকে মুক্ত হয়েছেন। (গ) সে আমার প্রিয় বন্ধু। (ঘ) বালিকারা লালপদ্ম চয়ন করছে। (ঙ) এটি পঞ্চবটী।
সমাস ও ব্যাসবাক্য লেখ :
দম্পতী, উপকূলম্, কালিদাসঃ, নবান্নম্, পঞ্চবটী।
আরও দেখুন :