সভ্যতার সংকট ১

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সভ্যতার সংকট ১

সভ্যতার সংকট ১

 

সভ্যতার সংকট ১

সভ্যতার সংকট ১

ভূমিকা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ প্রবন্ধ রচনা ‘সভ্যতার সংকট’। এখানে প্রবন্ধকার নিজের গোটা জীবন-পরিসরের উপর আলোক প্রক্ষেপণ করে পাশ্চাত্য সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র তুলে ধরেছেন। জীবনের অন্তিমকালে এসে প্রবন্ধটিতে রবীন্দ্রনাথ এমন মত ব্যক্ত করেছেন, যেখানে পাশ্চাত্য সভ্যতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশিত, প্রতীচ্য সভ্যতায় আস্থা পুনর্ঘোষিত। তবে মানুষের উপরই তার অন্তিম নির্ভরতা স্থাপন। কারণ, তিনি মনে করেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’।

লেখক পরিচিতি

আপনারা ইতোপূর্বে ইউনিট-২-এর বলাকা শীর্ষক পাঠে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও তাঁর সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে জেনেছেন। রবীন্দ্র-জীবনী সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে কবির স্বপ্রণীত-জীবনীগ্রন্থ ‘আমার ছেলেবেলা’ ও ‘জীবনস্মৃতি’ নামক গ্রন্থ দুটি পাঠ করতে পারেন ।

পাঠ পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটি রচনা করেছেন ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ। ওই বছরই তাঁর একাশিতম জন্মদিনে প্রবন্ধটি পঠিত হয়। রবীন্দ্র – জীবনীকারদের ভাষ্য মতে, এটিই তাঁর রচিত সর্বশেষ প্রবন্ধ। পরে ‘কালান্তর গ্রন্থে প্রবন্ধটি স্থান পায়। সর্বমোট দশটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত এই প্রবন্ধের শব্দসংখ্যা প্রায় আঠারো শত।

এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাশ্চাত্য, বিশেষ করে ইংরেজদের লালিত ও প্রচারিত সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতার কথা তুলে ধরে প্রাচ্যের নিজস্ব কৃষ্টির উপর আস্থা প্রকাশ করেছেন। জীবনের প্রান্তিকে রচিত বর্তমান প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন যে, এ সিদ্ধান্ত তাঁর জীবনোপলব্ধিজাত ।

‘সভ্যতার সংকটে’র সূচনায় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, তাঁর আশি বছর পূর্ণ হয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ে তাঁর জীবনের ও দেশের মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখন্ডিত হয়ে গেছে। এতে দুঃখবোধের কারণ আছে। প্রবন্ধকার বলেছেন, তাঁর দেশ বা উপমহাদেশে জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাহিত্য ইত্যাদিতে যে ব্যাপক অগ্রসরতার সূচনা হয়েছিলো তা মূলত ইংরেজদের কল্যাণে। আর এ জন্যে ওই সময় বাঙালিরা বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলো যে, ইংরেজদের ঔদার্য ও দাক্ষিণ্যেই বুঝি ভারতের স্বাধীনতা অর্জিত হবে।

অবশ্য তখনো ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের প্রকাশ ঘটেনি। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিগত-স্মৃতি রোমন্থন করে বলেছেন, তরুণ বয়সে ইংল্যান্ড গমন করে তাদের সম্পর্কে জেনে, বিশেষ করে পার্লামেন্টারিয়ান জন ব্রাইটের বক্তব্য শুনে তিনি ইংরেজদের হৃদয়ের ব্যাপ্তি ও জাতিগত অসংকীর্ণতা আবিষ্কার করে মোহাবিষ্ট হন। ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়নও তাঁকে জ্ঞানসম্পদবান করে তোলে।

প্রবন্ধকার এখানে ‘সভ্যতা’ বলতে ইংরেজি ‘সিভিলিজেশন’-এর অযথার্থ বঙ্গানুবাদের কথা উলেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর শৈশবে শিক্ষিত সমাজে বাহ্য আচরণ বিরোধী একটা মনোভাব প্রবল হয়ে ওঠে। এতে ইংরেজদের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক পরিএগুলেও এর প্রভাব পড়ে। অথচ, প্রাচীন ভারতে এই ‘সভ্যতা’-কেই বলা হতো ‘সদাচার’।

প্রবন্ধের পঞ্চম অনুচ্ছেদ থেকে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের বোধজগতে কালক্রমে যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় তার উল্লেখ আছে। নিরন্ন, হীনস্বাস্থ্য ভারতবাসীকে শাসক ইংরেজদের শোষণ ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে তিনি ব্যথিত হন। আবিষ্কার করেন, ইংরেজগণ বিশ্বজুড়ে যে আধিপত্য বিস্তার করেছে তা নৈতিক শক্তিরমারা নয়, যন্ত্রশক্তি দিয়ে।

রবীন্দ্রনাথ এখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইংল্যান্ডের তুলনা করে বলেছেন যে, বহুজাতিক সোভিয়েত ইউনিয়ন যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড তা করেনি। বরং ভারতে বহুজাতি ও ধর্মের মধ্যে বিদ্বেষ ও সন্দেহ সৃষ্টি করে দেশ শাসন করছে। তিনি ইংরেজদের ঔপনিবেশিক নীতির সমালোচনায় কঠোর হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেছেন যে, একদিন ভারতবর্ষ ত্যাগ করে ইংরেজরা যেতে বাধ্য হবে।

তবে তখন হয়তো তারা ভারতকে শোষণ-বঞ্চনায় নিঃস্ব করে ফেলবে। জীবনের প্রথম দিকে ইউরোপের অন্তরের সম্পদ সম্পর্কে তাঁর যে উচ্চধারণা ছিলো এখানে তা তিনি পরিত্যাগ করেছেন। এ অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ শেষবারের মতো মানুষের কাছেই ফিরে গেছেন, তাদের প্রতি বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে সে মানুষ আর ইংল্যান্ড বা পাশ্চাত্যবাসী নয়, সে মানুষের বাস ‘পূর্ব দিগন্তে’ অর্থাৎ তারা প্রাচ্যের অধিবাসী।

মূলপাঠ

আজ আমার বয়স আশি বৎসর পূর্ণ হল, আমার জীবনক্ষেত্রের বিস্তীর্ণতা আজ আমার সম্মুখে প্রসারিত। পূর্বতম দিগন্তে যে জীবন আরম্ভ হয়েছিল তার দৃশ্য অপর প্রান্ত থেকে নিঃসক্ত দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি এবং অনুভব করতে পারছি যে, আমার জীবনের এবং সমস্ত দেশের মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখন্ডিত হয়ে গেছে- সেই বিচ্ছিন্নতার মধ্যে গভীর দুঃখের কারণ আছে। বৃহৎ মানববিশ্বের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় আরম্ভ হয়েছে সেদিনকার ইংরেজ জাতির ইতিহাসে।

আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে উদ্ঘাটিত হল একটি মহৎ সাহিত্যের উচ্চশিখর থেকে ভারতের এই আগন্তুকের চরিত্রপরিচয়। তখন আমাদের বিদ্যালাভের পথ্য-পরিবেশনে প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য ছিল না। এখনকার যে বিদ্যা জ্ঞানের নানা কেন্দ্র থেকে বিশ্বপ্রকৃতির পরিচয় ও তার শক্তির রহস্য নতুন নতুন করে দেখাচ্ছে তার অধিকাংশ ছিল তখন নেপথ্যে, অগোচরে। প্রকৃতিতত্ত্বে বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা ছিল অল্পই।

তখন ইংরেজি ভাষার ভিতর দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা ও উপভোগ করা ছিল মার্জিতমনা বৈদগ্ধ্যের পরিচয়। দিনরাত্রি মুখরিত ছিল বার্কের বাগ্মিতায়, মেকলের ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গ-ভঙ্গে; নিয়তই আলোচনা চলত শেপিয়ারের নাটক নিয়ে, বায়রনের কাব্য নিয়ে এবং তখনকার পলিটিক্সে সর্বমানবের বিজয়ঘোষণায়। তখন আমরা স্বজাতির স্বাধীনতার সাধনা আরম্ভ করেছিলুম, কিন্তু অন্তরে ছিল ইংরেজ জাতির ঔদার্যের প্রতি বিশ্বাস।

সেই বিশ্বাস এত গভীর ছিল যে এক সময় আমাদের সাধকেরা স্থির করেছিলেন যে, এই বিজিত জাতির স্বাধীনতার পথ বিজয়ী জাতির দাক্ষিণ্যেরত্নারাই প্রশস্ত হবে। কেননা এক সময় অত্যাচার-প্রপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল ছিল ইংলন্ডে। যারা স্বজাতির সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণপণ করছিল তাদের অকুণ্ঠিত আসন ছিল ইংলন্ডে। মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখেছি ইংরেজ-চরিত্রে। তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেম।

তখনো সাম্রাজ্যমদমত্ততায় তাদের স্বভাবের দাক্ষিণ্য কলুষিত হয়নি। আমার যখন বয়স অল্প ছিল ইংলন্ডে গিয়েছিলেম। সেই সময় জন্ ব্রাইটের মুখ থেকে পার্লামেন্টে এবং বহুজাতিক রাষ্ট্র তার বাহিরে কোনো কোনো সভায় যে বক্তৃতা শুনেছিলেম তাতে শুনেছি চিরকালের ইংরেজের বাণী। সেই বক্তৃতায় হৃদয়ের ব্যাপ্তি জাতিগত সকল সংকীর্ণ সীমাকে অতিক্রম করে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল সে আমার আজ পর্যন্ত মনে আছে এবং আজকের এই শ্রীভ্রষ্ট দিনেও আমার পূর্বস্মৃতিকে রক্ষা করছে।

এই পরনির্ভরতা নিশ্চয়ই আমাদের শাখার বিষয় ছিল না। কিন্তু এর মধ্যে এইটুকু প্রশংসার বিষয় ছিল যে, আমাদের আবহমান কালের অনভিজ্ঞতার মধ্যেও মনুষ্যত্বের বহুজাতিক রাষ্ট্র যে-একটি মহৎ রূপ সেদিন দেখেছি তা বিদেশীয়কে আশ্রয় করে প্রকাশ পেলেও, তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করবার শক্তি আমাদের ছিল ও কুণ্ঠা আমাদের মধ্যে ছিল না। কারণ, মানুষের মধ্যে যা-কিছু শ্রেষ্ঠ তা সংকীর্ণভাবে কোনো জাতির মধ্যে বদ্ধ হতে পারে না, তা কৃপণের অবরুদ্ধ ভান্ডারের সম্পদ নয়।

তাই, ইংরেজের যে সাহিত্যে আমাদের মন পুষ্টিলাভ করেছিল আজ পর্যন্ত তার বিজয়শৃখ আমার মনে মন্ত্রিত হয়েছে। সিভিলিজেশন, যাকে আমরা সভ্যতা নাম দিয়ে তর্জমা করেছি, তার যথার্থ প্রতিশব্দ আমাদের ভাষায় পাওয়া সহজ নয়। এই সভ্যতার যে রূপ আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল মনু তাকে বলেছেন সদাচার। অর্থাৎ, তা কতকগুলি সামাজিক নিয়মের বন্ধন।

সভ্যতার সংকট ১

সেই নিয়মগুলির সম্বন্ধে প্রাচীন কালে যে ধারণা ছিল সেও একটি সংকীর্ণ ভূগোলখন্ডের মধ্যে বদ্ধ। সরস্বতী ও দৃশদ্বতী নদীর মধ্যবর্তী যে দেশ ব্রহ্মাবর্ত নামে বিখ্যাত ছিল সেই দেশে যে আচার পারম্পর্যক্রমে চলে বহুজাতিক রাষ্ট্র এসেছে তাকেই বলে সদাচার। অর্থাৎ এই আচারের ভিত্তি প্রথার উপরেই প্রতিষ্ঠিত – – তার মধ্যে যত নিষ্ঠুরতা, যত অবিচারই থাক্। এই কারণে প্রচলিত সংস্কার আমাদের আচার-ব্যবহারকেই প্রাধান্য দিয়ে চিত্তের স্বাধীনতা নির্বিচারে অপহরণ করেছিল।

সদাচারের যে আদর্শ একদা মনু ব্রহ্মাবর্তে প্রতিষ্ঠিত দেখেছিলেন সেই আদর্শ ক্রমশ লোকাচারকে আশ্রয় করলে। আমি যখন জীবন আরম্ভ করেছিলুম তখন ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে এই বাহ্য আচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেশের শিক্ষিত মনে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। রাজনারায়ণবাবু কর্তৃক বর্ণিত তখনকার কালের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের ব্যবহারের বিবরণ পড়লে সে কথা স্পষ্ট বোঝা যাবে।

এই সদাচারের স্থলে সভ্যতার আদর্শকে আমরা ইংরেজ জাতির চরিত্রের সঙ্গে মিলিত করে গ্রহণ করেছিলেম। আমাদের পরিবারে এই পরিবর্তন, কী ধর্মমতে, কী লোকব্যবহারে, ন্যায়বুদ্ধির অনুশাসনে পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছিল। আমি সেই ভাবের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলুম এবং সেই সঙ্গে আমাদের স্বাভাবিক সাহিত্যানুরাগ ইংরেজকে উচ্চাসনে বসিয়েছিল। এই গেল জীবনের প্রথম ভাগ – – তার পর থেকে ছেদ আরম্ভ হল কঠিন দুঃখে।

প্রত্যহ দেখতে পেলুম, সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিত রূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে। নিভৃতে সাহিত্যের  বহুজাতিক রাষ্ট্র রসসম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য আমার সম্মুখে উদ্ঘাটিত হল তা হৃদয়বিদারক।

অন্ন বস্ত্র পানীয় শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীর মনের পক্ষে যা-কিছু অত্যাবশ্যক তার এমন নিরতিশয় অভাব বোধ হয় পৃথিবীর আধুনিক শাসন- চাালিত কোনো দেশেই ঘটেনি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে।

যখন সভ্য জগতের মহিমাধ্যানে একান্তমনে নিবিষ্ট ছিলেম তখন কোনোদিন সভ্যনামধারী মানব আদর্শের এত বড়ো নিষ্ঠুর বিকৃত রূপ কল্পনা করতেই পারিনি; অবশেষে দেখছি, একদিন এই বিকারের ভিতর দিয়ে বহুকোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্যজাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য। যে যন্ত্রশক্তির সাহায্যে ইংরেজ আপনার বিশ্বকর্তৃত্ব রক্ষা করে এসেছে তার যথোচিত চর্চা থেকে এই নিঃসহায় দেশ বঞ্চিত।

অথচ চক্ষের সামনে দেখলুম, জাপান যন্ত্রচালনার যোগে দেখতে দেখতে সর্বোতভাবে কী রকম সম্পদবান হয়ে উঠল। সেই জাপানের সমৃদ্ধি আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি, দেখেছি বহুজাতিক রাষ্ট্র সেখানে স্বজাতির মধ্যে তার সভ্যশাসনের রূপ। আর দেখেছি রাশিয়ার মস্কাও নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের আরোগ্যবিস্তারের কী অসামান্য অকৃপণ অধ্যবসায়— সেই অধ্যবসায়ের প্রভাবে এই বৃহৎ সাম্রাজ্যের মূর্খতা ও দৈন্য ও আত্মাবমাননা অপসারিত হয়ে যাচ্ছে।

এই সভ্যতা জাতিবিচার করেনি, বিশুদ্ধ মানব সম্বন্ধের প্রভাব সর্বত্র বিস্তার করেছে। তার দ্রুত এবং আশ্চর্য পরিণতি দেখে একই কালে ঈর্ষা এবং আনন্দ অনুভব করেছি। মস্কাও শহরে গিয়ে রাশিয়ার শাসনকার্যের একটি অসাধারণতা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছিল— দেখেছিলেম, সেখানকার মুসলমানদের সঙ্গে রাষ্ট্র-অধিকারের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে অমুসলমানদের কোনো বিরোধ ঘটে না, তাদের উভয়ের মিলিত স্বার্থসম্বন্ধের ভিতরে রয়েছে শাসনব্যবস্থার যথার্থ সত্য ভূমিকা।

বহুসংখ্যক পরজাতির উপর প্রভাব চালনা করে এমন রাষ্ট্রশক্তি আজ প্রধানত দুটি জাতির হাতে আছে – এক ইংরেজ, আর-এক সোভিয়েট রাশিয়া। ইংরেজ এই পরজাতীয়ের পৌরুষ দলিত করে দিয়ে তাকে চিরকালের মতো নির্জীব করে রেখেছে। সোভিয়েট রাশিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রিক সম্বন্ধ আছে বহুসংখ্যক মরুচর মুসলমান জাতির – আমি নিজে সাক্ষ্য দিতে পারি, এই জাতিকে সকল দিকে শক্তিমান করে তোলবার জন্য তাদের অধ্যবসায় নিরন্তর।

সকল বিষয়ে তাদের সহযোগী করে রাখবার জন্য সোভিয়েট গভর্নমেন্টের চেষ্টার প্রমাণ আমি দেখেছি এবং সে সম্বন্ধে কিছু পড়েছি। এই রকম গভর্নমেন্টের প্রভাব কোনো অংশে অসম্মানকর নয় এবং তাতে মনুষ্যত্বের হানি করে না। সেখানকার শাসন বিদেশীয় শক্তির নিদারুণ নিষ্পেষণী যন্ত্রের শাসন নয়।

দেখে এসেছি, পারস্যদেশ একদিন দুই য়ুরোপীয় জাতির জাঁতার চাপে যখন পিষ্ট হচ্ছিল তখন সেই নির্মম আক্রমণের য়ুরোপীয় দংষ্ট্রাঘাত থেকে আপনাকে মুক্ত করে কেমন করে এই নবজাগ্রত জাতি আত্মশক্তির পূর্ণতাসাধনে বহুজাতিক রাষ্ট্র প্রবৃত্ত হয়েছে। দেখে এলেম, জরথুসূট্রিয়ানদের সঙ্গে মুসলমানদের এক কালে যে সাংঘাতিক প্রতিযোগিতা ছিল বর্তমান সভ্যশাসনে তার সম্পূর্ণ উপশম হয়ে গিয়েছে।

তার সৌভাগ্যের প্রধান কারণ এই যে, সে য়ুরোপীয় জাতির চক্রান্তজাল থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল। সর্বান্তঃকরণে আজ আমি এই পারস্যের কল্যাণকামনা করি। আমাদের প্রতিবেশী আফগানিস্থানের মধ্যে শিক্ষা এবং সমাজনীতির সেই সার্বজনীন উৎকর্ষ যচি এখনো ঘটেনি, কিন্তু তার সম্ভাবনা অক্ষুণ্ণ রয়েছে, তার একমাত্র কারণ – – সভ্যতাগর্বিত কোনো য়ুরোপীয় জাতি তাকে আজও অভিভূত করতে পারেনি। এরা দেখতে দেখতে চার দিকে উন্নতির পথে, মুক্তির পথে, অগ্রসর হতে চলল।

 

সভ্যতার সংকট ১

 

শব্দার্থ ও টীকা

বার্ক — জন্ম ১৭২৯, মৃত্যু ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে। আইরিশ দার্শনিক ও বাগ্মী বার্ক এডমন্ড ছিলেন মূলত মানবতাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। ‘A Philosophyical Inquiry into the Sublime and Beautiful’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ।

মেকলে— জন্ম ১৮০০, মৃত্যু ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে। টমাস ব্যারিংটন মেকলে একজন খ্যাতি সম্পন্ন ঐতিহাসিক ছিলেন। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের সদস্যও ছিলেন তিনি। তিনি ভারতীয় শিক্ষাপরিকল্পনা ও চিন্তাকে তাঁর মতবাদ দিয়ে প্রভাবিত
করেন ব্যাপকভাবে। ‘Macaulay’s History of England’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ।

শেপিয়র— উইলিয়াম শেপিয়রের জন্ম ১৫৬৪, মৃত্যু ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ইংল্যান্ডের মহাপ্রতিভাশালী কবি ও নাট্যকার। বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। কিং লিয়ার, মার্চেন্ট অব্ ভেনিস, ম্যাকবেথ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ।

বায়রন— ইংরেজ কবিদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তাঁর কাব্যে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বাধীনতাস্পৃহা প্রবল। ‘Child Harold’s Pilgrimage’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ । যখন সাম্রাজ্যের বিস্তার করে, তখন সেই বিস্তারকে এবং তার সাম্রাজ্য বিস্তারের আকাঙ্ক্ষাকেই সাম্রাজ্যমদমত্ততা বলে।

সাম্রাজ্যমদমত্ততা— সাম্রাজ্য লাভ করার উগ্রতা। এই নীতিকে বলা হয় সাম্রাজ্যবাদীনীতি। সাধারণত শক্তিশালী রাষ্ট্র রাশিয়ার ভ.ই. লেনিন ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘Imperialism, The Highest Stage of Capitalism’ গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদের সুনিপুণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
জন্ ব্রাইট— ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তৎকালীন সদস্য।

শ্রীভ্ৰষ্ট— সৌন্দর্যহানি বা সৌন্দর্য-বিচ্যুতি।

সিভিলিজেশন— ইংরেজি শব্দ Civilization-এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘সভ্যতা’। বর্বর জীবন থেকে উন্নত হওয়া; মার্জিত রুচিবোধে পরিশীলিত হওয়া।

মুন— পৌরাণিক মনু ব্রহ্মারপুত্র; মানবজাতির আদিপুরুষ। মনু ১৪ জন। মানবের এই ১৪ জন জন্মদাতা এক-এক মতান্তরের অধিপতি। মনুগণ প্রত্যেকেই ধর্মশাস্ত্রপ্রণেতা।

সরস্বতী ও দৃশদ্বতী— হিন্দু পুরাণে বর্ণিত দুই নদী। ব্রহ্মাবর্ত মহাভারত অনুসারে কুরুক্ষেত্রের নিকটে এবং সরস্বতী ও দৃশদ্বতী নদীর মধ্যে অবস্থিত প্রাচীন দেশ।

রাজনারায়ণবাবু — প্রকৃতনাম রাজনারায়ণ বসু। তিনি রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষক ছিলেন। তবে তাঁর বড় পরিচয় একজন জাতীয়তাবাদী ও উনিশ শতকের শিক্ষা-সংস্কৃতি বিকাশের আন্দোলনের নেতা হিসেবে বেশি। তিনি হিন্দুমেলার উদ্বোধক ছিলেন। রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘আত্মচরিত’, ‘সায়েন্স অব রিলিজিয়ন’, ‘সেকাল আর একাল’ উল্লেখযোগ্য।

বস্তুসংক্ষেপ

আশি বছর অতিক্রান্ত রবীন্দ্রনাথ তাঁর সুদীর্ঘ জীবন পরিসরের অর্জিত অভিজ্ঞতা ও বোধ প্রকাশ করেছেন ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে। এই সুদীর্ঘ সময়ে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের অনুভব আর মনোবৃত্তিগত খন্ডতায় তিনি দুঃখিত হয়েছেন। বাঙালি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ মানব বিশ্বের বৃহত্তর আঙ্গিনার সঙ্গে পরিচিত হয় ইংরেজদের কল্যাণে। বার্ক, মেকলে, শেকস্পীয়র, বায়রন প্রমুখের রচনা ও চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে এদেশীয় মানুষ প্রভূত লাভবান হয়।

ইতোপূর্বে জ্ঞানার্জনের বিচিত্রপথ কিংবা বিজ্ঞানের রহস্য ভারতবাসীর অজানাই ছিলো । বাঙালিদের একটা অংশ তখন বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন ইংরেজদের জ্ঞানস্পৃহা ও ঔদার্যে। তাঁরা মনে করতেন ভারতের স্বাধীনতাও ইংরেজ-দাক্ষিণ্যেই সম্ভব। রবীন্দ্রনাথ নিজেও বাল্যকালে ইংল্যান্ডে গিয়েছেন এবং ব্যাপক পরিমাণে ইংরেজি গ্রন্থ পাঠ করেছেন।

এসব ছাড়াও ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে রাজনীতিকদের বক্তব্য শুনে রবীন্দ্রনাথ প্রথম জীবনে ইংরেজদের হৃদয়ের ব্যাপ্তি ও জাতিগত অসংকীর্ণ চিন্তায় মোহাবিষ্ট হন। তাঁর শৈশব কালে বাঙালি শিক্ষিত সমাজে ইংরেজ-অনুসৃত সভ্যতার চর্চা হিসেবে প্রথাগত আচার-বিরোধিতা দেখা দেয়। এতেও ইংরেজদের প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো প্রকাশমান। রবীন্দ্রনাথের পারিবারিক অবস্থান ছিলো এই নতুন মূল্যবোধের অনুকূলে।

এসবের প্রভাব ও সাহিত্যানুরাগের ফলে ইংরেজদের উচ্চাসন দান করা হয়েছিল। কিন্তু সাহিত্যের কল্পনারাজ্যের বাইরে রবীন্দ্রনাথ যখন তাকালেন বাস্তবে, দেশের জনসাধারণের দিকে, তাঁর তখনই ইংরেজদের প্রতি মোহ ভঙ্গ হতে শুরু করে। মানুষকে অন্ন-বস্ত্র-স্বাস্থ্যহীন রেখে ইংরেজরা ভারতবর্ষকে শাসনের নামে যে কেবল শোষণই করছে এই সত্য সেসময় তিনি অনুধাবন করতে পারেন।

রবীন্দ্রনাথ লক্ষ করেন যে, ইংরেজরা দেশ শাসন করার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, এখন যন্ত্র শক্তি দিয়ে কেবল শোষণ করছে। বহুজাতিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন যেখানে জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে মনুষ্যত্বকে গুরুত্ব দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও উন্নতির নজির স্থাপন করেছে, ইংরেজরা সেখানে অন্যের সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি জিইয়ে রেখে দেশ শাসন করছে।
পারস্য, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশেও সহাবস্থানের অনন্য নজির স্থাপিত।

পাঠোত্তর মূল্যায়ন

সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্নের উত্তর লিখুন

১. ইংরেজ শাসনামলে কতিপয় বাঙালি ইংরেজদের ঔদার্য ও দাক্ষিণ্যেরশারাই ভারতের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব এই মতে কেন বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন?

২. রবীন্দ্রনাথের তরুণ বয়সে বাঙালি শিক্ষিত সমাজের একটা অংশ কি কারণে ইংরেজদের উপর আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলো?

৩. রবীন্দ্রনাথ বর্ণিত ইংরেজদের বিশ্বকর্তৃত্ব অর্জনের কারণটি চিহ্নিত করুন।

৪. বহুজাতিক রাষ্ট্র শাসনের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ও সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসকদের পার্থক্য কোথায়?

২ নং সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্নের নমুনা-উত্তর:

ভারতের শাসনভার ইংরেজরা গ্রহণ করার কারণে এই দেশবাসীর সঙ্গে ইংরেজদের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জাতিগত সম্প্রসারণের প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটে। ইতোপূর্বে জ্ঞানার্জনের বিচিত্র পন্থা এদেশের লোকের অজ্ঞাত হয়। প্রকৃতির রহস্যজানা বিজ্ঞানীর সংখ্যাও ছিলো না। বার্ক, মেকলে, শেকস্পীয়র, বায়রন প্রমুখের রচনা ও ইংরেজদের রাজনৈতিক ঔদার্যের সঙ্গে এ সময় বাঙালি শিক্ষিত সমাজের পরিচয় ঘটে। সর্ব মানবের বিজয় ঘোষণার রাজনৈতিক ঐতিহ্য ইংরেজদের কাছ থেকে পাওয়া সম্ভব হয়। এ-সব কারণে এক সময় বাঙালি শিক্ষিত সমাজের একটা অংশ ইংরেজদের উপর আস্থাশীল হয়ে ওঠে। তারা এমনও ভাবতে থাকে যে, ভারতের স্বাধীনতাও ইংরেজদের ঔদার্য ও দাক্ষিণ্যেরত্নারাই অর্জিত হবে। রবীন্দ্রনাথ তখন বয়সে তরুণ। তিনি ওই বয়সেই ইংল্যান্ড গমন করেন এবং ইংরেজদের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নীতিবোধের সঙ্গে পরিচিত হন। সে সময় তিনিও ইংরেজদের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়েছিলেন।

প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা লিখুন

১. তখন আমরা স্বজাতির স্বাধীনতার সাধনা আরম্ভ করেছিলুম, কিন্তু অন্তরে অন্তরে ছিল ইংরেজ জাতির ঔদার্যের প্রতি বিশ্বাস ।

২. অবশেষে দেখেছি, একদিন এই বিকারের ভিতর দিয়ে বহুকোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্যজাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য।

৩. এই সভ্যতা জাত বিচার করেনি, বিশুদ্ধ মানব সম্বন্ধের প্রভাব সর্বত্র বিস্তার করেছে। ৪. এই রকম গভর্নমেন্টের প্রভাব কোনো অংশে অসম্মানকর নয় এবং তাতে মনুষ্যত্বের হানি করে না ।

২ নং ব্যাখ্যার নমুনা-উত্তর:

ব্যাখ্যেয় অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘সভ্যতার সংকট’ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বাস্তব থেকে অর্জিত ব্যক্তি-অভিজ্ঞতা প্রাবন্ধিকের মনোজগতে যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিলো- – এখানে তা-ই ব্যক্ত। ইংরেজদের আগমন ও শাসন পরিচালনার কারণে ভারতে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তার ক্রমপ্রসার ঘটে। বিদেশী সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে উন্নত জীবনবোধের পরিচয়ও এ সময় ভারতীয়রা লাভ করে।

 

সভ্যতার সংকট ১

 

ইংরেজ কথিত ‘সিভিলিজেশন’ অনুসরণের নামে এদেশীয় শিক্ষিতদের জীবনাচরণেও পরিবর্তন ঘটতে থাকে এবং ইংরেজরা পূজনীয় হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের মনেও ইংরেজদের সম্পর্কে বাল্যকালে একটা মোহ জন্মে। কারণ ওই সময় তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন, তাছাড়া ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক পরিবেশও তাঁকে প্রভাবিত করে। কিন্তু যৌবনে রবীন্দ্রনাথ কল্পনার সাহিত্য পরিত্যাগ করে যখন বাস্তবধর্মী সৃষ্টিতে মন দেন তখন তাঁর মোহভঙ্গ হতে থাকে।

জমিদারির কাজে গিয়ে পলীগ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রত্যক্ষ করার পর তিনি অনুভব করেন শাসক ইংরেজদের সভ্যতা বা মানবতার বুলির আড়ালে মানুষ শোষণের কুচিন্তা ক্রিয়াশীল। উলিখিত বাক্যে সভ্যতাদর্শী ইংরেজদের এই হীন মানসিকতার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।

আরও দেখুন :

 

Leave a Comment