আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বাগর্থবিদ্যার অতিসাম্প্রতিক অবস্থা
বাগর্থবিদ্যার অতিসাম্প্রতিক অবস্থা
বর্তমান শতাব্দীর সত্তর, আশি ও নব্বই দশক তিনটি আধুনিক বাগর্থবিদ্যার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । রাপাঙ্করবাদী বাগর্থবিদ্যার সীমাবদ্ধতার দিকে ইঙ্গিত করে জ্যাকেনডফ (১৯৭২, ৮৩), পিকে (১৯৭২), পুটনাম (১৯৭৫), লুইস (১৯৭২), পার্টী (১৯৭৩, ১৯৮২, ১৯৮৪), কন্যান ও ফ্যাটজ (১৯৮৫)) বাগধিক বারাবাদ প্রতিষ্ঠিত করেন।
বাগথিক বাস্তববাদ মডেল থিয়োরি, সেট থিয়োরি বা টাইপ থিয়োরির মাধ্যমে জাগতিক সত্তার সাথে ভাষিক সত্তার সম্পর্ক ব্যাখ্যায় প্রয়াসী হয়। এই রূপায়ন অনুমান, প্রজ্ঞাপন ও সমতুল্যতার ধারণাকে কাজে লাগিয়ে অস্বচ্ছ প্রসঙ্গ, দৃষ্টিভঙ্গিমূলক ক্রিয়া ও মানসিক প্রপঞ্চের ব্যাখ্যা প্রদান করে।
বাস্তববাদী বাগধিক তত্ত্বসমূহ পড়ে উঠেছিল রৌলিক ভাষাকে আশ্রয় করে এবং তারা প্রকৃতিক ভাষার সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করেছিল । ফলে অনেকেই প্রাকৃতিক ভাষাকে তত্ত্বায়নের কাজে লাগাতে চাইলেন এবং নানারকম প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হলেন (দ্রষ্টব্য : William A. Ladusaw 1988 89 112 Murvet Enc 1988 239-254)। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
(১) মনটো তত্ত্ব (Montague 1974 Partee 1976; Dowty, Wall & Peters 1981)
(২) ক্রীড়া তত্ত্ব (Hintikka 1973 Saarinen 1978)
(৩) সম্পর্ক উপস্থাপনা তত্ত্ব (Kamp 1981)
(৪) পরিস্থিতি তত্ত্ব (Barwise and Perry 1983)
(৫) বাচনিক তত্ত্ব (Stalnaker 1984 )
(৬) সংগঠিত অর্থ তত্ত্ব (Cresswell 1985)
এসমস্ত তন্তু ফ্রেন্দ্রীয় বিরচনামূলক নীতিকে তাদের তত্ত্বের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে যা একটি নতুন অভিক্রমে পরিণতি লাভ করে। এর নাম দেয়া হয় বিরচনামূলক বাগবিদ্যা বিরচনামূলক বাগর্থবিদ্যার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি চরিত্রগতভাবে গতিশীল যার মাধ্যমে ভাষা প্রয়োগের সূত্রাবলীও ব্যাখ্যা করা যায় ।
এজন্য উক্ত অভিক্রমটিকে গতিশীল বাগবিদ্যাও বলা হয়। গতিশীল বাগর্থবিদ্যার উপর সাম্প্রতিক যে কাজ হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো গোনারো চিয়েটিয়ার Dynamics of Meaning (1995) মাকোতো কানাজাওয়ার Dynamics, Polarity and Quantification (1995) এবং ক্রিস্টোফার লিয়ন্সের Definiteness (1999)।
তবে অতিসাম্প্রতিক তত্ত্বসমূহ ভবিষ্যতে কিভাবে মূল্যায়িত হবে এবং তারা বাগর্থবিদ্যার ভবিষ্যৎ গবেষণাকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তা বলা মুশকিল । এ প্রসঙ্গে অ্যালিস মিউলেন ( ১৯৮৮ : ৪৪৪ ) -এর মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য :
“এসমস্ত নতুন তত্ত্বের লাভালাভ ভবিষ্যৎ গবেষণায় পরীক্ষিত হবে, কিন্তু অর্থ উপস্থপনার সংগঠনের পরিমার্জনে এই চলতি পদ্ধতিগত প্রবনতা বৈশিষ্ট্যমূলকভাবে বাক্যতত্ত্ব, বাগর্থবিদ্যা, প্রয়োগবিদ্যা, এবং দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার জন্য যৌথ কার্যক্রম সূচিত করে নব্বইয়ের দশকে জ্ঞানাত্মক বাগর্থবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। ল্যাঙ্গাকারের Foundations of Cognitive Grammar (1986)- এর পর থেকে অনেক মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাবিজ্ঞানী অর্থের মনস্তাত্ত্বিক উপস্থাপনার গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন এবং তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন বিভিন্ন প্রকাশনায় ।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রে জ্যাকেনডফের Language of Mind (1997), গিলেস ফুকোনিয়ারের Mappings in Thought and Language (1997), এ্যান্ডি ক্লার্ক ও যোসেফা টরিবিও সম্পাদিত Language and Meaning in Cognitive Science (1998), জেস এস অলউড সম্পাদিত Cognitive Semantics (1999) এবং সবশেষে লিওনার্ড ট্যামির Toward a Cognitive Semantics (2000)।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাগর্থবিদ্যার আরেকটি শাখা খুব দাপটের সাথে বিকাশ লাভ করেছে যা আমরা আমাদের অভিসন্দর্ভে আলোচনা করিনি। এটি হলো প্রগণনমূলক বাগবিদ্যা । এটি কম্পিউটার ভাষার সাথে সম্পৃক্ত। বিংশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তে তথ্য মহাসরণীতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর যে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় প্রাণনমূলক বাগর্থবিদ্যা তাতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রাণনমূলক বাগর্থবিদ্যার কিছু সাম্প্রতিক প্রকাশনা হলো মাইকেল রজনার ও রোডেরিক জনসন সম্পাদিত Computational Linguistics and Formal Semantics (1992), গ্রিন উইন্সকেলের The Formal Semantics of Programming Languages (1993) এবং জে ডব্লিউ ডি বেকার ও অন্যান্যের Control Flow Semantics (1996)।
প্রাণনমূলক বাগর্থবিদ্যা এমন একটি অভিক্রম যা কম্পিউটার প্রযুক্তির বা তথ্য প্রযুক্তির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। কৃত্রিম সাংকেতিক ভাষায়: গঠিত এর অবয়ব । তাই পর্যাপ্ত কৌশলগত জ্ঞান ছাড়া এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায় না। তবে এর যেহেতু একটি কল্যানকর প্রায়োগিক দিক রয়েছে তাই আশা করা যায় আগামী শতাব্দীতে বাগর্থবিদ্যার এই শাখাটিই হয়ে উঠবে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং নির্মান করবে অর্থের নতুন সংজ্ঞা ।
আরও দেখুন: