আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিখনের বিবেচ্য দিকসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব
প্রাচীনকাল
প্রাচীনকাল থেকে ভাষা একটি দেশ বা জাতির অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছে। যাদের ভাষা যত উন্নত তাদের অর্থনীতিও তত উন্নত। আমরা ইংরেজি, ফার্সি, স্প্যানিশ ও
সমকালীন যুগের চীনের মান্দারিন ভাষার কথা বলতে পারি। এ সকল ভাষার চেয়ে অন্যতম শক্তিশালী ভাষা হিসেবে আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে আমরা আরবি ভাষাকে দেখতে পাই। ভাষার কোন সীমানা নেই,
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্রোতস্বিনী নদীর ন্যায় প্রবাহমান। যখন যার যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবে ভাষাকে গ্রহণ করে।
প্রাচীনকালে আরবদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি ছিল ব্যবসা। মক্কা-মদিনা থেকে সিরিয়া, ইয়েমেন বিভিন্ন এলাকায় আরবরা ব্যবসা বাণিজ্য করতো। ইসলামী যুগে আমরা আরব্য অর্থনীতির ব্যাপক বিস্তার লক্ষ্য করি। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ফলে ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তৃতি লাভের সাথে সাথে আরবি ভাষা ও তার পরিধিরও বিস্তার হতে থাকে। এভাবে আফ্রিকা, ইউরোপ, পারস্য সাম্রাজ্য পর্যন্ত আরব্য শাসনের সাথে আরবি প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ভাষা হিসেবে একক কর্তৃত্ব অর্জন করে।
উমাইয়া শাসকগণ আরবিকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করেন। ফলে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম ও চাকুরীর জন্য আরবি শেখার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলে সে সময়ের অর্থনীতিও আরবি ভাষা নির্ভর হয়ে পড়ে। আব্বাসী আমলে আরবি ভাষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সোনালী যুগ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করে।এ সময় আরবি ভাষার মর্যাদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। আব্বাসীয় যুগের অর্থনীতিও ব্যাপক প্রসার লাভ করে। কালের পরিক্রমায় ধর্মীয়, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ভাষা হিসেবে আরবি জনপ্রিয় হয় এবং তার অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
আরবি ভাষার ব্যবহারে আরবি অর্থনীতিকে দুইভাগে ভাগ করতে পারি।
১. ইসলামি অর্থনীতি
ইসলামি শরীয়া মোতাবেক অর্থাৎ আল-কুরআন ও আল-হাদিস অনুসারে যে অর্থনীতি পরিচালিত হয়, তাই ইসলামি অর্থনীতির কেবল উৎপাদন ও বন্টন এবং উপকারিতার ইসলামি নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী অর্থনীতি পরিচালিত হলেই চলবে না। তা ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় সূচক নিশ্চিত করার পাশাপাশি অন্যের কোনো না কোনোভাবে উপকার করে কিনা বা ক্ষতি সাধন করে কিনা তাও পর্যবেক্ষণ অনস্বীকার্য। এখানে যাকাত, ঊষর, খারাজ ও জিজিয়া করের ধারণা ও নির্দেশনা বিদ্যমান।
২. পুঁজিবাদী অর্থনীতি
আধুনিক বিশ্ব এই পুঁজিবাদী অর্থনীতির উপর পরিচালিত যেখানে লাভটাই মুখ্য। অন্যের ক্ষতি সাধন হচ্ছে কিনা (ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত) তা এখানে গৌণ। এই দুই ধারার অর্থনীতিতেই আমরা আরবি ভাষার গুরুত্ব দেখতে পাই। আরবি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক লেনদেনে বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ ও সমাদৃত ভাষা। আরবের তেল ও খনিজ সম্পদের ফলে পুরো আরব বিশ্বের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।|
সমৃদ্ধ অর্থনীতির ভাষা
বিশ্বের প্রতিটি দেশ আরবি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে তার জনশক্তি রপ্তানির জন্য পর্যাপ্ত কার্যক্রম ও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সকল পণ্যের লেভেলে আজ আরবি ভাষার ব্যবহার করা হচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বিশ্বের বৃহৎ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো আরবি ভাষার উপর গুরুত্বারোপ করছে।
অর্থনীতির শক্তি বাড়লে ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। আরবি ভাষার দক্ষতা অর্জনের জন্য আজ মুসলিম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও আরবি ভাষার দক্ষতা অর্জন করছে শুধুমাত্র ভালো বেতনে আরব দেশসমূহের চাকরির প্রত্যাশায়। আরব্য অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দৃঢ়তা ও ব্যাপকতার কারণেই আরবি ভাষা দিন দিন আরো প্রসার লাভ করছে। আরবি ভাষার শব্দভাণ্ডারও এতে ভূমিকা রাখছে ।
উল্লেখ যে, পবিত্র হজ ও ওমরা পালনের জন্য সমগ্র বিশ্বের ৩০ থেকে ৪০ লাখ মুসলিম সৌদি আরব ভ্রমণ করেন। ফলে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিকভাবে আরবি ভাষার প্রসারতা এখানে লক্ষণীয়। এর মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি সমগ্র বিশ্বেই আরবি ভাষার গুরুত্ব পৌঁছে যাচ্ছে।গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কারণে সমগ্র বিশ্বে দিন দিন আরবি ভাষা চর্চার বিস্তৃতির পাশাপাশি এর মর্যাদা আরো উন্নত হচ্ছে যা চলমান থাকবে আগামীতেও |
আরও দেখুনঃ