আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-অর্থের অর্থ
অর্থের অর্থ
অর্থ অর্থ করো কেন অর্থে কেবল যখন হ সেই পরমের অর্থ খোঁজো নেই অর্থে সাধন হয় ।
মরমি কবির এ কথাগুলো আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হলেও এতে অর্থের বহুরূপী চরিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। বাংলা ভাষায় অর্থ শব্দটি অনেকার্থক।
বাগর্থিক তত্ত্বালোচনা করতে গেলে অর্থের নানাবিধ অর্থ সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন এবং এর কোন অর্থটি প্রাসঙ্গিক ও কোনটি অপ্রাসঙ্গিক সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন । যখন আমরা বলি অর্থ কি তখন আমাদের বুঝতে হবে আমরা কোন অর্থের কথা বলছি, নতুবা অনর্থ সৃষ্টি হবে।
আমি যদি একজনকে এখবই আনতে বলি আর সে ব্যাংকের চেকবই নিয়ে আসে তাহলে তার কোন ভুল না থাকা সত্ত্বেও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। রমাপ্রসাদ দাস (১৯৯৫: ৩৩-৩৭) অর্থের পনেরো রকম অর্থের কথা বলেছেন। এগুলো নীচে উল্লেখ করা হলো :
১ অর্থ আপর হেতু । উদাহরণ : ওখানে ধোঁয়া আছে- একথার অর্থ এখানে আগুন আছে ।
২. অর্থ কারক হেতু বা কারণ। উদাহরণ: হঠাৎ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অর্থ কি ?
৩. অর্থ= কার্য। উদাহরণ : এখন যুদ্ধ বাঁধার অর্থ হল বিশ্বংস।
৪. অর্থ = তাৎপর্য। উদাহরণ: জীবনের অর্থ কি ?
৫. অর্থ- প্রসকি। উদাহরণ: বেঁচে থাকার অর্থই হল কেবল দুঃখ ভোগ করা ।
অর্থ = অভিপ্রায়। উদাহরণ তুমি এ কাজ করবে বললে একথার অর্থ কি ?
৭ অর্থ- উদ্দেশ্য। উদাহরণ ঃ এতে কি তোমার অর্থসিদ্ধি হবে ?
৮. অ ব্যাখ্যা। উদাহরণ: তোমার এরূপ আচরণের অর্থ কি ?
৯ অর্থ= মানে (আক্ষরিক) । উদাহরণ : প্রভাকর অর্থ সূর্য
১০- জ্ঞেয় কমু। উদাহরণ: ইন্দ্রিয় ও অর্থের সন্নিকর্ষের ফলে যে জ্ঞান হয় তার নাম প্রত্যক্ষ
১১. অথ- সত্য। উদাহরণ ঃ তুমি যথার্থ বলেছ হে। বিষয়। উদাহরণ : ঈশ্বর জগন্নাথে, তার হাতে সব অর্থ ।
১২. অর্থ
১৩. অর্থ =ধন বা বিত্ত। উদাহরণ প্রজার অর্থ রাজায় কাড়ে ।
১৪. অর্থ= টাকা বা মুদ্রা। উদাহরণ এ বাড়িটি নির্মানে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। ১৫. অর্থ- আকাঙ্খা। উদাহরণ: আমি তোমার শুভার্থী।
ইংরেজীতে mean e meaning-এর রয়েছে নানা অর্থ। বিশেষণ হিসাবে moan এর রয়েছে মোটামুটি সাতটি, ক্রিয়াপদ হিসাবে চারটি ও বিশেষাপন হিসাবে দুটি অর্থ थ
1. He is very mean with his money. (ungenerous )
2. Don’t be so mean to her. (unkind)
3. That’s a mean dog; be careful it doesn’t bite you. (bad tempered)
Longman Dictionary of Contemporary English New Edition, 1987.
4. He is a man of mean birth. (of low social position)
5. I don’t like to drive through those mean streets. (poor-looking)
6. She makes a mean chicken stew. (in American slang. very good)
7. Running ten miles is no mean labour. (insignificant)
8. What does this French word mean? (to represent / express)
9. I mean to go tomorrow. (to intend)
10.Missing the train means waiting. (to be a sign of)
11. Her work means a lot to her. (to be of importance to the stated degree)
12. You’re meant to take your shoes off when you enter a temple. (to have to)
13. The mean of 7, 9 and 14 is 10. (average)
14.It’s a question of finding the mean between too lenient treatment and too severe punishment (a way of behaviour in the middle position)
আবার বিশেষ্যপদ হিসাবে meaning এর রয়েছে তিনটি এবং বিশেষণপদ হিসাবে একটি অর্থ । যথা :
1. One word can have several meanings. ( that which one is intended to
understand)
2. I can’t quite grasp the meaning of these figures. (importance or value)
3. He wore a look full of meaning. (a hidden aim or intention)
4. Your meaning book puzzles me. (giving an affect of important thought)
কাজেই বহুঅর্থকতার কারণে অর্থ, mean বা meaning অনেক ভুলবোঝাবুঝির উৎস হতে পারে । স্পষ্টতঃই অর্থের সব অর্থ বা meaning এর সব meaning বাগর্থবিদের কাছে আগ্রহের বিষয় হবে না । কেবল ভাষা সম্পৃক্ত অর্থ বা meaning -ই তাকে আগ্রহী করে তুলবে ।
এই ভাষাসম্পৃক্ত অর্থ নিয়ে সি. কে. অগডেন ও আই. এ. রিচার্ডস একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন এবং ১৯২৩ সালে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন The Meaning of Meaning নামক পুস্তকে। তারা কম করে হলেও অর্থের ষোলটি অর্থ লিপিবন্ধ করেন। তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হলো :
a. an intrinsic property
b. a unique unanalysable relation to other thing
c. the other words annexed to a word in the dictionary
d. the connotation of a word
e. an event intended
f emotion aroused by anything
g. that to which the user of a symbol actually refers
h. that to which the interpreter of a symbol refers
চার্লস সি ফ্রাইজ (১৯৭১ : ১০৪-১০৫ ) অ্যাডেন ও রিচার্ডসের মতো অনুরূপ এক গবেষণায় অর্থের এগারটি অর্থ উদঘাটন করেন। এগুলো নিম্নরূপ :
1. the denotation of a name
2. the connotation of a symbol
3. the implication of a concept
4. the neuro-muscular and grandular reaction produced by anything
5. the place of anything in a system
6. the practical consequence of anything
7. the usefulness of anything
8. that to which the interpreter of a symbol does refer
9. that to which the interpreter of a symbol ought to be referring
10.that to which the user of a symbol wants the interpreter to infer
11.any object of consciousness whatever
অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে অর্থের এ অর্থগুলো এসেছে বিভিন্ন তত্ত্বগত দৃষ্টিভঙ্গির নির্যাসরূপে। বিভিন্ন তাত্ত্বিক তাদের তত্ত্বগত প্রয়োজনে অর্থকে বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। জেফ্রি লীচ (১৯৮১ : ১-২৩) অর্থের সাতটি শ্রেণী নির্ধারণ করেন এবং বলেন যে ভাষা সম্পৃক্ত যে কোন অর্থ এর একটিতে পড়বে। লীচের সপ্তপ্রকার নিম্নরূপ :
(ক) ধারণাগত অর্থ :
ধারণাগত অর্থ ভাষার কেন্দ্রীয় অর্থ যাকে নিরে ভাষিক যোগাযোগ আবর্তিত হয় । এটি ভাষার যৌক্তিক, জনীয় বা বাচ্যিক উপাদান যা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও গণস্বীকৃত। ধারণাগত অর্থের রয়েছে নিজস্ব সংগঠন যার ফলে একে বিভিন্ন তাত্ত্বিক কাঠামোর ভিতরে এনে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। যেমন, নারী শব্দের ধারণাগত অর্থ হতে পারে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে মানুষ।
(খ) দ্যোতিত অর্থ :
ধারণাগত অর্থের বাইরে ভাষার মাধ্যমে যে অতিরিক্ত অর্থ প্রকাশিত হয় ভাব-ইঙ্গিত রূপে তাকে দ্যোতিত অর্থ বলা হয়। দ্যোতিত অর্থ স্থান ও পাত্র সাপেক্ষ, যার ফলে তার একরূপতা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। যেমন চীনে সমাজতন্ত্র শব্দটি যেভাবে বিবেচিত ও মূল্যায়িত হবে সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে হবে না। একজন কৃষকের রাজনীতির ধারণা ব্যবসায়ী কিংবা মামলার রাজনৈতিক ধারণা থেকে ভিন্ন।
বিবাহ শব্দটি উচ্চারণ করলে একেক জনের একেক রকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে বিবাহিতের কাছে একরকম, অবিবাহিতের কাছে আরেক রকম, পুরুষের কাছে একরকম, যুবকের কাছে এক রকম এবং বৃদ্ধের কাছে আরেক রকম।
কারো কাছে বিবাহ পবিত্র ধর্মীয় বন্ধন, কারো কাছে এটি অবাধ যৌনতার সামাজিক স্বীকৃতি, কারো কাছে একটি ছেলে একটি মেয়ের স্বপ্ন কারো কাছে সংসারের অনাকাঙ্খিত নিগড়, আবার কারো কাছে আবেগের পাখায় ভর করে মুক্ত আকাশে বিচরণ।
ধারণাগত ও দ্যোতিত ভাষার উভয় অর্থই সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। ধারণাগত অর্থ বহির্মুখী, আর দ্যোতিত অর্থ অন্তর্মুখী, একটি যদি হয় প্রবাহমান নদী অন্যটি অঞ্চসলীলার ফল্গুধারা। ধারণাগত অর্থ যেন পাড়াবেড়ানো দুষ্ট ছেলেটি যাকে সবসময় দেখা যায় আর দ্যোতিত অর্থ যেন গাঁয়ের শান্তসুবোধ অন্তপুরবাসিনী লাজুক মেয়েটি যাকে কদাচিৎ দেখা যায় ।
গ) সামাজিক অর্থ :
যে কোন ভাষিক যোগাযোগ কোন না কোন সামাজিক পরিস্থিতির ভিতর সংঘটিত হয় । ভাষার যে অর্থ সামাজিক অবস্থার ইঙ্গিতবহ তাকে সামাজিক অর্থ বলে । শৈলির বিভিন্ন মাত্রা ও স্তরে সামাজিক অর্থ উপস্থাপিত হয়। এজন্য একে আমরা শৈলিগত অর্থও বলতে পারি। যেমন কারো কথা বলার ধরন ও উচ্চারণ থেকে আমরা বুঝতে পারি সে কোন অঞ্চল থেকে এসেছে, সে কোন সামাজিক স্তর বা পেশার লোক।
শৈলীগত অর্থের মধ্যে সামাজিক স্তরের ধারণাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলা ভাষায় আপনি, তুমি ও তুই -এর পার্থক্যের কথা উল্লেখ করতে পারি; আপনি সম্মানার্থে, তুই তুচ্ছতাচ্ছিল্যে ও তুমি সমমর্যাদায় ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। রাজীব হুমায়ুনের মতে, বাংলা সর্বনামের শ্রেণীবিন্যাসের মধ্যে নিহিত আছে বাঙালী সমাজের স্তরীভবনের পরিচয় ।
তিনি দেখেয়েছেন আপনি, আপনারা তিনি, তাঁরা ব্যবহৃত হয় ধনী (এবং বয়স্ক) প্রসঙ্গে, তুমি, তোমরা ব্যবহৃত হয় মধ্যবিত্ত (এবং সমবয়সী) প্রসঙ্গে এবং তুই তোরা, সে, তারা ব্যবহৃত হয় নিম্নবিত্ত (এবং কমবয়সী প্রসঙ্গে)। তিনি বলেন, “সর্বনামের এ ব্যবহার থেকে বেঝা যায়, সমাজে কমপক্ষে তিনটি শ্রেণী আছে এবং এতগুলো সর্বনাম থাকার মূলে সমাজের শ্রেণীবিভক্তি ।” (হুমায়ূন : ১৯৯৩ : ৩২) আমরা এই বিশেষ সামাজিক অর্থের নাম দিতে পারি স্তরীভবনগত অর্থ ।
(গ) আনুভূতিক অর্থ :
ভাষার মাধ্যমে বক্তার অনুভূতি এবং শ্রোতা ও বক্তব্য বিষয়ের প্রতি তার মনোবার প্রাকাশিত হতে পারে। এ ধরনের অর্থকে বলা হয় আনুভূতিক অর্থ । আনুভূতিক অর্থের কোন স্বাধীন সত্তা নেই। এটি নির্ভর করে ধারণাগত বা দ্যোতিত অর্থের উপর । বক্তার বাচনভঙ্গি বা স্বরভঙ্গি থেকে পরিস্ফুট হয়ে উঠে বক্তার অনুভূতির ধরন।
কোন পথিক যখন পুলিশকে দেখে বলে ঠোলা তখন বোঝা যায় সে তার প্রতি বিদ্রুপ করছে। কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলে মাগি তখন তাতে ক্রোধ ঝরে পড়ে। যখন কাউকে দেবতার সাথে তুলনা করা হয়ে তখন তার প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশিত হয় ।
(ঙ) প্রতিফলিত অর্থ :
ভাষা যখন একটি বিশেষ তাৎপর্যকে প্রতিফলিত করে অর্থাৎ কোন শব্দের প্রতি মানুষ যখন এমন মনোভাব পোষণ করে যা অন্য শব্দ থেকে প্রাপ্ত তখন তাকে প্রতিফলিত অর্থ বলে । প্রতিফলিত অর্থ ভাষার একটি গৌণার্থ এবং এটি নির্ভর করে ধারণাগত অর্থের বিচ্যুতির উপর ।
শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শত নাম রয়েছে বলে হিন্দুরা এবং আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে । এরকম একেকটি নামে একেক গুণের প্রতীক। যেমন আল্লাহর একটি নাম রাজ্জাক (যিনি রিজিক বা আহার দান করেন)। এখন এই নামটি উচ্চারণ করলে কারো মনে যদি নায়ক রাজ্জাকের অভিনয়ের চিত্র ভেসে উঠে তাহলে এটিই হবে ঐ শব্দের প্রতিফলিত অর্থ।
তরণী শব্দের সাধারণ অর্থ নৌকা। কিন্তু যদি এই শব্দটি শুনে কেউ ভবনদী পারাপারের কথা চিন্তা করে তবে বলতে হবে শব্দটিতে প্রচলিত আটপোরে অর্থের বদলে আধ্যাত্মিক অর্থ প্রতিফলিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের খেয়াপারের তরণী থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যাক :
আবুবকর উসমান উমর আলী হায়দর পীডি যে এ তরণীর, নাই ওরে নাই ভর, কান্ডারী এ তরীর পাকা মাঝি মাল্লা, দাঁড়ি-মুখে সারিগান – লা শরীক আল্লাহ্ ।
চ) সহাবস্থানিক অর্থ :
ভাষার কোন কোন শব্দের মধ্যে বিশেষ বিশেষ শব্দের সাথে যুথবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের প্রবণতা থেকে সৃষ্টি হয় সহাবস্থানিক অর্থ। সহাবস্থানিক অর্থ নিতান্তই শব্দের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যিক বৈশিষ্ট্য। বাংলায় ভূঁইফোঁড় (যা ভূই ফুঁড়ে ওঠে) শব্দটি বড়লোক শব্দের এবং হাতুড়ে (যে হাতড়ায়) শব্দটি ডাক্তার শব্দের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সহাবস্থানগত কারণে তাদের মূলগত অর্থ লোপ পেয়ে ভিন্নরকম অর্থ দাঁড়িয়েছে । এখন ভুইফোঁড় বললেই হঠাৎ ধণীদের বোঝায় এবং হাতুড়ে বললেই অশিক্ষিত চিকিৎসক বুঝায়। সব শব্দ সব শব্দের সাথে সহাবস্থান করে না। যেমন, Colourless green ideas sleep furiously এ বাক্যটি সহাবস্থানিক নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে অসমাস বলে বিবেচিত হবে ।
green -এর সাথে grass সহাবস্থান করতে পারে, কিন্তু idea নয় এবং colourless এর সাথে liquid সহাবস্থান করতে পারে, কিন্তু idea নয়। তদুপরি যা colourless তা green হতে পারে না অথবা যা green colourless হতে পারে না। একইভাবে sleep এর সাথে furiously-s বেমানান ( Stock & Widdowson 1974 122)
(ছ) বিষয়বস্তুগত অর্থ :
ভাষাব্যবহারকারীরা তাদের বক্তব্য বিষয়কে বিশেষভাবে বিন্যাস করেন ও বিশেষ জায়গায় দৃষ্টি নিবন্ধ করেন বা জোর দেন। এরকম অর্থকে বলে বিষয়স্তুগত অর্থ। বিষয়গত অর্থ সাধারণত একই বাক্যের বিভিন্নরকম ব্যাকরণগত গঠনের ব্যাপার। যেমন :
মাস্তানরা পিটিয়েছে মিঠুকে ।
মিঠুকে পিটিয়েছে মাস্তানরা।
মাস্তানরা মিঠুকে পিটিয়েছে।
প্রায় একইরকম মনে হলেও উপরের বাক্য তিনটির মধ্যে সূক্ষ্ণ পার্থক্য রয়েছে। প্রথমটি জোর দেয় কাকে পিটিয়েছে তার উপর, দ্বিতীয়টি জোর দেয় কারা পিটিয়েছে তার উপর এবং তৃতীয়টি জোর দেয় কি করেছে তার উপর ।
লীচ দ্যোতিত, সামাজিক, আনুভূতিক, প্রতিফলিত ও সহাবস্থানিক এই পাঁচ রকমের অর্থকে একত্রে বলেছেন আনুষঙ্গিক অর্থ কারণ এগুলোর সবই কোন না কোনভাবে মন বা চিন্তার অনুষঙ্গগুণে প্রাপ্ত। লীচ আরো দু’ধরনের অর্থের কথা বলেছেন, যথা- অভিপ্রেত ও ব্যাখ্যাত অর্থ। বক্তার মনে যে অর্থ থাকে তাকে অভিপ্রেত অর্থ এবং শ্রোতা সেটি যেভাবে উপলব্ধি করেন তাকে ব্যাখ্যাত অর্থ বলে।
মজার ব্যাপার হলো অভিপ্রেত ও ব্যাখ্যাত অর্থ একই বাণীর দ্বৈত প্রকাশ হলেও তারা প্রায়ই সমাপতিত হয় না ।
উইডোসন (১৯৯০) এবং লুইস (১৯৯৩) -এর মতে, ভাষার অর্থ আবিষ্কৃত হয় বক্তা ও শ্রোতার জ্ঞানের মিথক্রিয়ার ফলে। বক্তা যা বলেন শ্রোতা একটি নির্দিষ্ট ভাষিক ও পরিস্থিতিগত প্রসঙ্গের প্রেক্ষিতে তার অর্থ উদ্ধার করেন ।
তারা এ ধরনের অর্থের নাম দেন আলাপিত অর্থ। প্রয়োগাত্মক বাগর্থবিদদের জন্য এই আলাপিত অর্থই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।এবার কিছুটা আঁচ করা যায় অর্থ বিষয়টি কত গভীর, ব্যাপক ও জটিল। কাজেই অর্থ কি? আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি সহজ প্রশ্ন মনে হলেও আদতে এটি জগতের সবচেয়ে জটিল প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি ।
এর উত্তরের সন্ধানও ভাই জগতের কঠিনতম বুদ্ধিবৃত্তিক কাজগুলোর মধ্যে একটি। দার্শনিক, ভাষাবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, যুক্তিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, নৃতত্ত্ববিদ, গণিতজ্ঞ, তথ্যবিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের অজস্র তত্ত্বালোচনার পরও অর্থের স্বরূপ পুরোপুরি আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত মনে হয় অর্থ বুঝি সেই মরমি কবির পরমার্থের মতো অধরা থেকে যাবে উপলব্ধি করা যায় ।
আরও দেখুন: