আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-অর্থ স্বীকার্য
অর্থ স্বীকার্য
যুক্তিবিদ কারনাপ সর্বপ্রথম অর্থ স্বীকার্যের ধারণা প্রচার করেন। উপাদানিক বিশ্লেষণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এর জন্ম হয় এবং এটিকে সর্বাগ্রে উপনামীয় সম্পর্ক বিশ্লেষণে প্রয়োগ করা হয় (Kempson 1977 188) উপনামিতাকে এভাবে রূপবদ্ধ করা হয় :
x (Ax Bx)
আংশিক বাংলা মিশিয়ে আমরা লিখতে পারি :
X (x => x)
এর অর্থ হতে পারে : যদি কোন কিছু ক হয় তবে তা অবশ্যই ।
এখানে যৌক্তিক চালক হিসাবে ইঙ্গিতকে ব্যবহার করা হয়েছে। ক ও খ কে আমরা যে কোন উপনাম উর্দুনাম দিয়ে অপসারণ করতে পারি। যেমন :
X (গোলাপ ফুল
X (হাতি x = পশু
X (বেগুন x সব্জি x
X (ধাত্রী xx
X (ভাস্কর x > শিল্পী x)
X (মহাভারত x
X (খোশগল্প করা কথা বলা )
X (হাঁটা x না )
এখানে আমরা একটি জিনিস উহ্য রেখেছি, তা হলো সার্বজনীন পরিমাপক যা যুক্তিতে সবার উপর প্রযোজ্যতা নির্ধারণ করে । সাকানীন পরিমাপক প্রকাশ্য হলে আমাদের সুত্রটি দেখাবে এরকম :
Vx (*x => x)
উপনাম ও উর্দুনাম বসিয়ে
Vx ( স্তন্যপায়ী প্রাণী x) X
Vx (কুকুর x অন্যপায়ী x ) Vx (নেডি x কুকুর )
উপরের তিনটি বিধি একত্রে একটি ভরতম গঠন করে যেখানে বৃহত্তের দিক দিয়ে প্রাণী > স্তন্যপায়ী > কুকুর
> লেডি :
লক্ষ্যণীয়, এখানে বৃহত্ব বলতে প্রাণীর আকার আকৃতি ওজন বোঝানো হচ্ছে না, বৃহতু এখানে শ্রেণীর বৃহত্ব । অর্থাৎ একটি শ্রেণীতে কি সংখ্যক ব্যক্তিএকক রয়েছে তা দিয়ে নির্ধারিত হবে শ্রেণীর বৃহত্ত। যেমন নেডির যে ব্যক্তি একক কুকুর -এর ব্যক্তি একক তার চেয়ে বেশি, কারণ কুকুর শ্রেণীটি গঠিত হয় নেষ্টি এবং অন্যান্য অনেক জাতের কুকুর মিলে।
তাই সংখ্যার দিক দিয়ে নেড়ির চেয়ে কুকুর বৃহত্তর এবং স্তরক্রমে কুকুরের অবস্থান নেভির উপরে । এখানে আরেকটি জিনিস লক্ষণীয়, যখন আমরা সংখ্যার কথা বলি তখন আমরা আসলে শ্রেণীর বাচ্যার্থের (বা বহিদ্যোতনার) দিকে ইঙ্গিত করি
। এই হিসাবে কুকুর এর বাচ্যার্থ নেভির চেয়ে বেশি, অন্যপায়ীর বাচ্যার্থ কুকুর এর চেয়ে বেশি এবং প্রাণীর বাচ্যার্থ স্তন্যপায়ীর চেয়ে বেশি। স্পষ্টতঃই এর সাথে সেটের ধারণা যুক্ত। সেট নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যক্তিএককের সংখ্যা দ্বারা । এজন্য স্বাভাবিকভাবে একটি সেট অন্য একটি সেটের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। সেটের ধারণা ভালভাবে বোঝা যায় লেখচিত্রে। যেমন . যদি চারটি সেট হয় এবং স্তরক্রমিকভাবে একটি আরেকটির অন্তর্ভুক্ত হয় তবে তাকে এভাবে প্রকাশ করা যায়
এখন পূর্বের উদাহরণের সাথে সঙ্গতি রেখে আমরা ক -কে প্রাণী, বকে স্তন্যপায়ী কে কুকুর এবং কে নেডি হিসাবে কল্পনা করতে পারি। এখানে দেখা যায় গ-এর অন্তর্ভুক্ত, খ-এর অন্তর্ভূক্ত এবং ব ক -এর অন্তর্ভুক্ত । এই অন্তর্ভুক্তিকে আমরা উপসেটের বা অতিগেটের ধারণা নিয়ে প্রকাশ করতে পারি। ঘ গ-এর উপসেট, গ খ-এর উপস্টে এবং বক-এর উপসেট ।
অথবা বিপরীতক্রমে গ -এর অতিসেট, গ-এর অতিসেট এবং ক খ এর অভিস্টে। সেট তত্ত্বে উপসেটকে C চিহ্ন এবং অতিস্টকে দিয়ে প্রকাশ করা যায়। ফলে আমরা লেখতে পারি :
অথবা,
এবার আমরা উপনামিতার সংজ্ঞা দিতে পারি :
উপনামিতা : ক হবে এর উপনাম যদি কোন অর্থ স্বীকার্য ক ও ব কে এভাবে সম্পর্কিত করে : (Vx (x + x) যেখানে ক-এর বহিদ্যোতনা হবে খ-এর বহির্দ্যোতনার উপসেট।
কেবল উপনামিতাই নয়, অর্থ স্বীকার্যের মাধ্যমে অন্যান্য অর্থ সম্পর্কসমূহও বিশ্লেষণ করা যায়। রনি ক্যান (১৯৯৩) অর্থ স্বীকার্যের মাধ্যমে উপনামিতাসহ সহনামিতা, পরিপূরকতা, প্রতিনামিতা, বিপ্রতীপতা ব্যাখ্যা করেন। নীচে আমরা সেসব সংক্ষেপে আলোচনা করবো (উপনামিতা আমরা উপরে আলোচনা করেছি) ।
সহনাক্ষিতা : ক হবে এর সহনাম যদি কোন অর্থ স্বীকার্য ক ও খ কে এভাবে সম্পর্কিত করে : Vx (x + x) যেখানে ক এবং খ এর বহির্নোাতনা অভিন্ন ।
এখানে এক চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হচ্ছে ইঙ্গিত উভয়মুখী। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি সমতুল্যতা সম্পর্ক প্রকাশ করে
। উদাহরণ :
Vx (রবি x ৫ সূর্য Xx
Vx (x + x) Vx (মৃত্তিকা x এ মাটি x )
Vx (বৃক্ষ এ গাছ x)
Vx (চিত্র x ছবি x )
প্রতিনাম্বিতা : ক হবে খ-এর প্রতিনাম যদি কোন অর্থ স্বীকার্য ক ও খ কে এভাবে সম্পর্কিত করে : Vx (x-x) যেখানে কোন রাগধিক অঞ্চলের প্রেক্ষিতে ও এর বহিদ্যোতনা ভিন্ন। যেমন :
Vx (বড় ছোট x)
Vx (ধনী গরীব x)
Vx (আকাশ x – পাতাল X )
Vx (আলো x = অন্ধকার x )
Vx (সাধু x – শয়তান x)
পরিপুরকতা : ক এবং খ হবে পরস্পরের পরিপুরক যদি কোন অর্থ স্বীকার্য ক ও খ-কে এভাবে সম্পর্কিত করে Vx {(x) (X)} যেখানে ক এবং খ এর বহিদ্যোতনা ভিন্ন । পরিপূরকতার ক্ষেত্রে দুটি পদ কোন বাগার্থিক অঞ্চলকে অতিক্রমন ব্যতিরেকে নিঃশেষে বিভক্ত করে। ফলে এক্ষেত্রে মাঝামাঝি কোন সম্ভাবনা থাকে না (কষ্ট কল্পনা পরিহার্য) । যেমন:
Vx {(মূর্ত x ~বিমূর্ত X) ^ (মূর্ত x = বিমূর্ত x)}
Vx {(জীবিত x – মৃত x) ^ (জীবিত x ⇒ মৃত x)}
Vx { (বিবাহিত অবিবাহিত X ) ( – বিবাহিত x => অবিবাহিত x)}
Vx { (মেরুদণ্ডী x – অমেরুদণ্ডী X) ^ (মরুদণ্ডী x ⇒ অমেরুদন্ডী x)} Vx { (সুস্থ x ⇒ অসুস্থ x ) ^ (সুস্থ x ⇒ অসুস্থা x)}
বিপ্রতীপত্তা : ক এবং স্ব হবে পরস্পরের বিপ্রতীপ যদি কোন অর্থ স্বীকার্য ক এবং কে এভাবে সম্পর্কিত করে Vx… V2
( … X X ) যেখানে বব, যদি ক এর বহিদ্যোতনা হয় তবে বহু ব, হবে এর বহিদ্যোতনা। যেমন
Vx vy Vz (বিক্রি করা xyz ক্রয় করা zyx)
Vx vy Vz (উপহার দেয়া xyz উপহার পাওয়া zyx) Vx Vy (xyyx)
Vx vy (উপরে xy नীচে yx) Vx vy ( সামনে xy ⇒ পিছনে yx)
এভাবেই অর্থ স্বীকার্যের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করে থাকবো অর্থ স্বীকার্যের মাধ্যমে কেবল শব্দার্থ ব্যাখ্যা করা যায় বাক্যার্থ ব্যাখ্যা করা যায় না। ফলে এটি তত্ত্ব হিসাবে উপাদানিক বিশ্লেষণের মতোই সীমাবদ্ধ । কেম্পসন (১৯৭৭ : ১৯০) এর সমালোচনায় বলেন :
“শাব্দিক অর্থ ব্যাখ্যায় অর্থ স্বীকার্যের গ্রহণযোগ্যতা বার্ষিক তত্ত্বের ভিত্তি হিসাবে যন্ত্রের নয়, কারণ আমাদের
শব্দার্থ ও বাক্যার্থের সম্পর্ক নির্ণয় করতে হবে যা অর্থ স্বীকার্য গাঠনিকতার আয়ত্তের বাইরে ।
আরও দেখুন: