আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-অস্পষ্টতা তত্ত্ব
অস্পষ্টতা তত্ত্ব
বাস্তব জীবনে প্রায়ই এরকম অভিযোগ শোনা যায় তার কথাগুলো স্পষ্ট নয় কিংবা তার বক্তব্য অস্পষ্টতায় – ভরা। অস্পষ্টতা তাই একটি বাস্তব সমস্যা। অনেকের মতে অস্পষ্টতা ভাষার অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। ভাষার প্রকৃতিই এমন যে তাতে কিছু না কিছু অস্পষ্টতা থাকবেই। অস্পষ্টতা এক ধরনের উপলব্ধির ব্যাপার, তাই সমস্যাটি চরিত্রগতভাবে মানসিক ।
যখন কেউ এমন অবস্থায় পড়ে যে সে কোন কিছুর উপর সুনির্দিষ্ট অর্থ আরোপ করতে পারে না অথবা একটি শব্দ বা বাক্য বিশেষ অবস্থায় প্রযোজ্য কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তখন আমরা তাকে অস্পষ্টতা বলতে পারি। যেমন, মধ্যবয়সী শব্দটি অস্পষ্ট কারণ ষাট বছরের একটি লোককে মধ্যবয়সী বলা যাবে কি যাবে না তা স্পষ্ট নয়, কারণ তাকে বৃদ্ধ বলেও দাবি করা যেতে পারে। । বিভিন্ন কারণে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হতে পারে ।
প্রথমত, ঝাপসা শ্রেণীর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি এক ধরনের অস্পষ্টতা বিরাজ করে। যেমন টমেটো ফল না সব্জি, বাঁশ গাছ না তৃণ তা স্পষ্ট করে বলা যায় না।
দ্বিতীয়ত, অজ্ঞতাজনিত অনিশ্চয়তা অস্পষ্টতার জন্ম দিতে পারে। যেমন, অন্য গ্রহে মানবাকার প্রাণী আছে এই বাক্যটি অস্পষ্ট কারণ আমাদের পক্ষে মহাকাশের সমস্ত গ্রহ ঘুরে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি । একইভাবে ব্রহ্মান্ড অসীম এটি দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের উৎস্য। আত্মা ঈশ্বর, বর্গ, নরক প্রভৃতি সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য।
তৃতীয়ত, শব্দ বা বাক্যের দ্ব্যর্থকতার কারণে অস্পষ্টতা দেখা দিতে পারে। যেমন ঘরে চাল নেই এ বাক্যটি অস্পষ্ট কারণ এখানে চাল শব্দটির দুটো অর্থ হতে পারে। চাউল (যা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া হয়) এবং ছাদ (সচরাচর, টিনের) যা দ্বারা ঘরের আচ্ছাদন দেয়া হয়। একইভাবে নীচের ইংরেজী বাক্য দুটিও স্বার্থকতাজনিত কারণে অস্পষ্ট :
Flying plane can be dangerous.
Visiting relatives can be nuisance.
এখানে (Flying plane) এর অর্থ হতে পারে বিমান চালানো বা উড়ন্ত বিমান এবং (Visiting relatives) -এর অর্থ হতে পারে আত্মীয়ের বাসায় বেড়ানো বা আত্মীয়ের বেড়ানো। চতুর্থত, অনেকার্থকতাও একইভাবে অস্পষ্টতার জন্ম দেয়। অনেকার্থকতার ক্ষেত্রে একটি শব্দের সাথে একাধিক অর্থ যুক্ত থাকে ।
এখানে অ শব্দ এবং ক, খ, গ, ঘ তার অর্থ। যেমন বাংলায় মাধা শব্দটি অনেকার্থক এর অর্থ হতে পারে
শির, বুদ্ধি, অগ্রভাগ, মোজাজ ইত্যাদি। কাজেই আমরা বলতে পারি মাধ্য শব্দটি অস্পষ্ট। তবে এ ধরনের
অস্পষ্টতা হ্রাস পায় শব্দের বাক্যে প্রয়োগের মাধ্যমে । মাথা শব্দটি বিচ্ছিন্নভাবে যতোটা স্পষ্ট নীচের
বাক্যগুলোতে সম্ভবতঃ ততোটা অস্পষ্ট নয় :
গরু মাথায় দুটি শিং ।
ছাত্রটির মাথা ভালো ।
গাছের মাথায় একজোড়া পাখি বসে আছে।
আগে মাথা ঠান্ডা করো ।
পঞ্চমত, রূপকগত প্রসারণ অস্পষ্টতার উৎস্য হিসাবে কাজ করতে পারে। যেমন সুচীভেদা অন্ধকার পিনপতন নীরবতা প্রভৃতি শব্দগুচছ অস্পষ্ট, কারণ কিরকম অন্ধকার হলে সূচ তাকে ভেদ করতে পারবে না কিংবা কিরকম নীরবতা হলে পিন পতনের শব্দ শোনা যাবে এবং তা কতদূর থেকে তা স্পষ্ট নয়। একইভাবে নীচের কবিতাংশে মরণ রথের চাকার গুনি শব্দগুচ্ছ অম্পষ্ট :
মরণ রথের চাকার ধ্বনি ঐরে আমার কানে আসে
পূবের হাওয়া তাই নেমেছে পারুল বনে দীঘল বাসে ।
ষষ্ঠত, গুরুগম্ভীর ধোঁয়াশাপূর্ণ শব্দপ্রয়োগের ফলে কথা অস্পষ্ট বলে প্রতীয়মান হতে পারে। আধ্যাত্মিক আলোচনায় প্রায়ই এধরনের অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হয়। রবীন্দ্রনাথের হিংটিংছট থেকে এধরনের অস্পষ্টতার একটি মোক্ষম উদাহরণ উদ্ধৃত করা যায় :
ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুন শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদে দ্বিগুণ বিগুণ বিবর্তন আবর্তন সন্নৰ্তন আপি জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বাদী আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি আণব চৌম্বক বলে আকৃতি বিকৃতি কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ ধারণা পরমাশক্তি সেখায় উদ্ভূত ত্রয়ীশক্তি ত্রিভুরূপে প্রপঞ্চে প্রকট সংক্ষেপে বলিতে গেলে হিংটিংছট।
সপ্তমত, মানুষ অনেক সময় ইঙ্গিত বা মারপ্যাঁচ দিয়ে কথা বলে থাকে। এর ফলেও শ্রোতার মনে অস্পষ্টতার উপলব্ধি হয়। যেমন ঘরের মধ্যে বিশেষ পরিস্থিতিতে কেউ যখন বলে খুব গরম লাগছে তখন এর ইঙ্গিতটি হতে পারে সে চাচ্ছে কেউ ফ্যান ছেড়ে দিক অথবা জানালা খুলে দিক।
বিশেষ পরিস্থিতিতে আগামীকাল আমার পরীক্ষা আছে এর অর্থ হতে পারে তুমি আমাকে বিরক্ত করো না অথবা তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও । কাজেই খুব গরম লাগছে এবং আগামীকাল আমরা পরীক্ষা আছে এধরনের উক্তি অস্পষ্ট । তেমনি প্রেমিকপ্রেমিকার এ ধরনের কথাও ইঙ্গিতে ভরা এবং অস্পষ্ট :
সন্ধ্যায় মহিলা সমিতিমধ্যে চমৎকার নাটক আছে । তোমার ঠোঁট দুটো খুব সুন্দর । আজ বাসায় কেউ নেই ।
অষ্টমত, সাংকেতিক ভাষার ব্যবহারেও কথা অস্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ পেশা বা গোষ্ঠীর লোকজন কথোপকথনে নিজস্ব সংকেতিকভাষা ব্যবহার করতে পারে যা অন্যের কাছে অস্পষ্ট মনে হবে ।
সোডিয়াম ক্লোরাইড বললে একজন রসায়নবিদ বোঝেন কিন্তু সাধারণ মানুষ বোঝেন না যে তা খাবার লবন । ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক (১৯৯৩) দেখিয়েছেন কিভাবে অপরাধজগতে সাংকেতিক ভাষার ব্যবহার হয়। নীচে তার বই থেকে কিছু মজার সাংকেতিক শব্দ অর্থসহ উদ্ধৃত করছি :
কে. পি. – কেটে পড়ো
তেঁতো পুঁটি – ধুদে মাস্তান লাভ মারা – প্রেম করে বিয়ে করা
voice change কিশোরের যৌবনপ্রাপ্তি টি. সি. ম্যানেজার
টোটো কোম্পানীর ম্যানেজার
মেল যে মেয়ে জোর কদমে হাঁটে –
কেরোশেডিং
কেরোসিনের অভাব
চামচার হ্যান্ডেল চামচার চামচা
চন্দ্রবিন্দু হওয়া মরে যাওয়া –
পেঁপেচোর – প্রফেসর
missile – সিগারেট
এম.বি.বি.এস মা বাবার বেকার সন্তান। –
ঢুকু – সিঙ্গেল চোর
চেয়ার – নিষ্ক্রিয় সমকামী
ময়লাখোর সক্রিয় সমকামী –
বাবাজি একশো ঢাকার নোট –
seventy – দেশি মদ
পেয়ারেলাল – যে লোক তার স্ত্রীর অসুদপায়ে অর্জিত টাকার উপর নির্ভর করে
মাছি – পুলিশ, পুলিশের গুপ্তচর
বি. এইচ. এম. এইচ – বড় হলে মাল হবে
গরম গরম / খাই খাই কামপ্রবন মেয়ে
নবমত, কোন কোন অস্পষ্টতা সংজ্ঞাকরণের সাথে সম্পৃক্ত। এমন অনেক ধারণা আছে যাদের কোন সর্বজনস্বীকৃত সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, ফলে অস্পষ্টতা দেখা দেয়। ধর্ম এর কথা ধরা যাক। আমরা একে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবো এবং কি কি শর্ত প্রতিপালন করলে আমরা বলবো যে এটি ধর্ম এবং এটি ধর্ম নয় ।
ব্যাপারটি তলিয়ে দেখা যাক। প্রথমে আমরা আবশ্যিক বৈশিষ্ট্যের একটি তালিকা তৈয়ার করতে পারি যার প্রেক্ষিতে বলা সম্ভব হবে কোন কিছু ধর্ম কিনা বা কি মাত্রায় ধর্ম। আমরা নিম্নলিখিত নয়টি আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করতে পারি ( Alston 196488 ) :
১. অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় বিশ্বাস (যেমন ঈশ্বর, দেবতা, ফেরেশতা) ।
২. পবিত্র এবং অপবিত্র জিনিসের মধ্যে পার্থক্যকরণ ।
এ পবিত্র জিনিস কেন্দ্রিক আচার অনুষ্ঠান ।
৪. ঐশ্বরিক সত্তা দ্বারা নির্ধারিত নৈতিক বিধান ।
৫. বিশেষ ধরনের ভয়, শ্রদ্ধা অপরাধবোধ, রহস্যবোধ যা আধ্যাত্মিক ধারণা বা কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ।
৬.এ প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের অন্যান্য প্রক্রিয়া ।
৭. একটি বিশ্বের ধারণা যেখানে সমগ্র ও অংশের সম্বন্ধ চিত্রিত ।
৮. বিশ্বের ধারণার আলোকে জীবন পরিচালনা । ৯. একটি সামাজিক গোষ্ঠী যারা বিশেষ নীতিমালার ভিত্তিতে সংঘবদ্ধ ।
এসমস্ত বৈশিষ্ট্যের আলোকে স্পষ্টতঃই বলা যায় ইসলাম, খ্রীষ্টবাদ, হিন্দুবাদ প্রভৃতি ধর্ম। কিন্তু বৌদ্ধধর্ম -এর ব্যাপারে কি বলবো ? এর মধ্যে তা কোন অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় (১ নং বৈশিষ্ট্য) বিশ্বাস নেই। তাহলে কি এটি
ধর্ম নয় ? আমরা যদি মনে করি ১ নং বৈশিষ্ট্য বা শর্ত শিথিলযোগ্য অর্থাৎ ধর্মের জন্য অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় বিশ্বাস অপরিহার্য নয় তাহলে বৌদ্ধধর্ম ধর্ম হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু তখন কি মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ প্রভৃতিকেও ধর্ম বলে মানতে হবে না ? মানবতাবাদকে আমরা কি বলবো ধর্ম না নিছক মতবাদ ? সমাজ, গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র এগুলোও কি কোনভাবে বা কিছু মাত্রায় ধর্ম বলে বিবেচিত হতে পারে ? সম্রাট আবর দীন-ই-ইলাহী প্রচার করেছিলেন, যদিও তা সফল হয়নি ।
একে কি আমরা ধর্ম হিসাবে মেনে নিবো ? সকল দার্শনিকের এবং ব্যাপক অর্থে প্রতিটি মানুষের রয়েছে স্বতন্ত্র জীবনদর্শন যাকে আমরা মাঝে মাঝে ব্যক্তিধর্ম বলি, তা কি আসলে ধর্ম ? এসমস্ত প্রশ্নের কোন সুস্পষ্ট জবাব নেই, এতে বোঝা যায় ধর্ম শব্দটি কতটা অস্পষ্ট । ঠিক একইভাবে সত্যা ন্যায়, মূলা, সমাজ, জাতি প্রভৃতি শব্দও সংজ্ঞাজনিত অনির্দিষ্টতার কারণে অস্পষ্ট ।
দশমত, কোন কোন শব্দ অম্পই হয়ে উঠে পরিমান বা মাত্রাগত অনির্দিষ্টতার কারণে । যেমন শহর (city) এবং নগর (town) এর মধ্যে পার্থক্যটি কোথায় ? কেউ হয়তো বলতে পারেন জনসংখ্যার দিক দিয়ে এদের মধ্যে পার্থক্য হয়। একটি শহরে কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার লোক থাকবে, এর নীচে হলে তা হবে নগর ।
কিন্তু পঞ্চাশ হাজারের একটি লোক কম হলে শহর নগর হয়ে যাবে আর উপপঞ্চাশ হাজার নয়শত নিরানব্বই জনের চেয়ে একটি লোক বেশি হলে নগর শহর হয়ে যাবে তা কি খুব একটা গ্রহণযোগ্য ? ঢিবি টিলা, পাহাড় পর্বত এর পার্থক্যটি কোথায় ? সবাই হয়তো বলবে টিবির চেয়ে টিলা উঁচু টিলার চেয়ে পাহাড় উঁচু এবং পাহাড়ের চেয়ে পর্বত উঁচু কিংবা এভাবে এরা পরস্পরের চেয়ে পরিমানগতভাবে বড়।
কিন্তু কেউ কি সঠিরভাবে বলতে পারবে ঠিক কতফুট উঁচু হলে কোনকিছুকে আমরা টিবি, টিলা, পাহাড় বা পর্বত বলবো, কিংবা কোনটির জন্য কি পরিমান মৃত্তিকা, বালিকণা বা পাথর প্রয়োজন। একটুকু এদিক ওদিক হলেই কি তাদের পরিচয় পাল্টে যাবে ? কেউ কি মেনে নিবে একটি বালিকণা কম বা বেশি হওয়ার কারণে একটি স্তূপ পাহাড় এবং অন্যটি পর্বত বলে গণ্য হবে ? ঠিক একইভাবে ধনী / দরীদ্র, ঠাণ্ডা / গরম, অনেক / স্বল্প আস্তে / জোরে প্রভৃতির ক্ষেত্রেও বিভাজনরেখা অত্যন্ত অনির্দিষ্ট, যদিও চরম ক্ষেত্রে তাদের সনাক্ত করতে কোন অসুবিধা নেই ।
অস্পষ্টতা দূর করার জন্য অনেকরকম প্রস্তাব আছে। তার মধ্যে পরিমানবাচক পদ্ধতিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে কোন কিছুর পরিমান বা মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় এবং বলা হয় যে বিশেষ পরিমান বা মাত্রার হলে কোনকিছুকে এই বা ওই বলে গণ্য করতে হবে।
যেমন দরীদ্র, মধ্যবিত্ত ও ধনীর পার্থক্য নির্ণয়ে বলা যেতে পারে কারো বাৎসরিক আয় বারো লাখ টাকার উপরে হলে সে ধনী, বারো লাখ টাকার নীচে কিন্তু ষাট হাজার টাকার উপরে হলে সে মধ্যবিত্ত এবং ষাট হাজার টাকার নীচে হলে সে দরিদ্র।
একইভাবে বলা যেতে পারে কারো বয়স আঠারো থেকে চল্লিশ বছরের মধ্যে হলে সে যুবক, একচল্লিশ থেকে ষাট বছরের মধ্যে হলে মধ্যবয়সী এবং ষাট বছরের উপরে হলে বৃদ্ধ বলে গণ্য হবে। যদিও সব ক্ষেত্রে এভাবে অস্পষ্টতা দুরীকরণ সম্ভব নয়, তথাপি এরকম পরিমানবাচক সুনির্দিষ্টকরণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ।
কোন বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত বা সুশৃঙ্খল আলোচনার জন্য এটি একান্ত আবশ্যক। এর প্রায়োগিক গুরুত্বও কম নয় । যেমন ডাক্তার কারো শরীরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার উপরে গেলে একে জ্বর বলে চিহ্নিত করেন এবং তদনুযায়ী ঔষধ দেন। সরকার নাগরিকদের নিকট থেকে নির্দিষ্ট আয় অনুযায়ী কর আদায় করে থাকেন।
আমদানী রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্ধিবন্ধভাবে নির্ধারিত বিশেষ শ্রেণীর দ্রব্যের উপর বিশেষ পরিমান শুরু আনায় করা হয়। বিচারকগণও অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সুসংজ্ঞায়িত প্রচলিত আইনের অধীনে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে থাকেন।
একটি ব্যাপার আমাদের খেয়াল করা প্রয়োজন যে অস্পষ্টতা অবাঞ্ছিত হতে পারে, কিন্তু সব পরিস্থিতিতে তা অনাকাঙ্খিত নয়। সাহিত্যে allusion বা ইঙ্গিতে উল্লেখ একটি উঁচুমানের শিল্প হিসাবে বিবেচিত ।
অস্পষ্টতা অনেক সময় কোন্দল বা তিক্ততা থেকে রক্ষা করে । কারো পান যাওয়ার অভ্যাসের সমালোচনা করে যদি বলা হয় পান খাওয়ার বিশ্রি অভ্যাসটা ছেড়ে দিন মশায় তাহলে তা তিক্ততায় ইন্ধন যোগাতে পারে । কিন্তু যদি ঘুরিয়ে বলা হয় আমি শুনেছি পান খেলে নাকি কি সব সমস্যা হয় তাহলে আর তিক্ততার ভয় থাকে না ।
যুদ্ধাবস্থায় অস্পষ্টতা একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। পাকভারত যুদ্ধের সময় ভারত যদি বলে আগামীকাল ঠিক দশটা দশ মিনিটে কাশ্মীর বিমান ঘাঁটি থেকে ইসলামাবাদের উপর দশটি পৃথ্বী ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে তাহলে পাকিস্থান হয়ত তার আগেই কাশ্মীর বিমান ঘাঁটি আক্রমন করে বসে থাকবে ।
যুদ্ধ পরি স্থিতিতে তাই অস্পষ্ট কথায় প্রতিপক্ষকে শাসানো হয়, যেমন – উচিত শিক্ষা দেয়া হবে, আক্রান্ত হলে আমরাও ছেড়ে দেবো না, যুদ্ধের জন্য আমরাও প্রস্তুত আছি ইত্যাদি । পরিশেষে, কোন কোন বিষয় আছে যেখানে অস্পষ্টতা শুধু আকাঙ্খিতই নয়, এটি নৈতিকতার মাপকাঠি। যেন বিষয়ে খোলামেলা আলাপকারীকে আর যাই বলুক কেউ অন্ততঃ ভদ্র বলবে না ।
আরও দেখুন: