Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

আরবি গদ্য (নাসর / প্রবন্ধ/নিবন্ধ) বৈশিষ্ট্য ও পাঠদান পদ্ধতি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি গদ্য (নাসর / প্রবন্ধ/নিবন্ধ) বৈশিষ্ট্য ও পাঠদান পদ্ধতি – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষণের পাঠদান পদ্ধতি ও কলাকৌশল এর অন্তর্ভুক্ত।

আরবি গদ্য (নাসর / প্রবন্ধ/নিবন্ধ) বৈশিষ্ট্য ও পাঠদান পদ্ধতি

 

 

পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার ন্যায় আরবি ভাষায় রচিত সাহিত্যকে আরবি সাহিত্য হিসেবে অভিহিত করা হয়। আরবি সাহিত্য প্রায় দুই হাজার বছরের আরবের সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জীবনবোধ ও ঐতিহ্যবোধের শিল্পায়িত অভিব্যক্তি। সাহিত্যের প্রতিটি শাখা প্রশাখা আরবি সাহিত্যের অবাধ বিচরণে মুখরিত। বিশ্ব সাহিত্যের অঙ্গনে আরবি সাহিত্য নিজস্ব স্বকীয়তা ও অবয়ব তৈরিতে নৈপুন্যতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। আরবি সাহিতের সূচনালগ্নে আরবি গদ্য ছিল গতানুগতিক, অনুপ্রাসযুক্ত, দীর্ঘ জটিল বাক্য সম্বলিত। ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট-এর মিসর আক্রমণের মধ্য দিয়ে আরবি সাহিত্যে রেনেসাঁর উম্মেষ ঘটে।

আরবি গদ্য সাহিত্যও তার প্রভাবে প্রভাবিত হয়। চিন্তার উদারতায় আরবি গদ্য সাহিত্যে আসে গতিময়তা ও বৈচিত্র্য। এ সময় আরবি গদ্য সাহিত্য ফলপল্লবে বিকশিত হয়। ইউরোপীয় সাহিত্যের অনুকরণে সাহিত্যের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় আরবি সাহিত্যিকগণ বিচরণ করেন।

ফলে আরবি গদ্য সাহিত্যে স্বাধীন, জটিল বাক্য বর্জিত ও নবতর শৈলিতে রচিত হয় প্রবন্ধ, নাটক, ছোট গল্প, উপন্যাস, খুতবাহ, সমালোচনা ইত্যাদি। অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও মাদরাসা ধারার দাখিল ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে আরবি গদ্য সাহিত্য পাঠ্য তালিকাভূক্ত আছে। আলোচ্য পাঠে আমরা আরবি গদ্য সাহিত্যের অন্যতমশাখা প্রবন্ধ/নিবন্ধ-এর বৈশিষ্ট্য ও শিখন-শেখানো পদ্ধতি নিয়ে আলেচনা করব।

গদ্য

এ শব্দের অর্থ বিক্ষেপ, বিস্তৃতি, বিস্তার, গদ্য ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে বা গদ্য হলো গভীর আবেগ অনুভূতি দ্বারা চিন্তিত, লিখিত সুন্দর বাক্যমালা, যার মধ্যে ছন্দ ও অন্তমিল-এর সীমাবদ্ধতা নেই। সহজ কথায় গদ্য হলো কাব্যের বিপরীত।

প্ৰবন্ধ:

প্রবন্ধের আরবি প্রতিশব্দ মাকালা, শব্দটি ক্রিয়ামূল থেকে নির্গত। শাব্দিক অর্থ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, রচনা ইত্যাদি। স্বল্প পরিসরে সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান তথা জীবনধর্মী তথ্য নির্ভর আলোচনার লেখ্যরূপকে প্রবন্ধ বলে । বাংলায় প্রবন্ধ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ প্রকৃষ্টরূপে বন্ধন। পরিভাষায় কল্পনা ও বুদ্ধি বৃত্তিকে অবলম্বন করে লেখক কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে যে আত্মসচেতন যুক্তি নির্ভর নাতিদীর্ঘ সাহিত্যরূপ সৃষ্টি করেন, তাকে প্ৰবন্ধ বলে।

অতএব বলা যায়, কোনো বিষয়বস্তুর পারস্পরিক ধারাবাহিক বর্ণনা ও যুক্তিনির্ভর বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার সুলিখিত রূপকে প্রবন্ধ বলা হয়। কল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো বক্তব্যকে যুক্তিযুক্তভাবে সাহিত্যরসমণ্ডিত করে উপস্থাপন করাই প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য। প্রাচীন আরবি সাহিত্যে রিসালাহ নামে প্রবন্ধ চর্চার নিদর্শন পাওয়া যায়। আরবি সাহিত্যের রেনেসাঁর সূচনালগ্ন থেকেই শব্দের পরিবর্তে শব্দটি প্রয়োগ শুরু হয়।

নিবন্ধ

নিবন্ধ শব্দটি প্রবন্ধের প্রতিশব্দ। প্রবন্ধ এবং নিবন্ধের মধ্যে সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং কাঠামোগত দিক বিবেচনায় কোনো পার্থক্য নেই। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য শুধু একটি, তা হলো নিবন্ধ প্রবন্ধের চেয়ে কিছুটা ছোট ও সংক্ষিপ্ত। সুতরাং বলা যায়, যুক্তিতে, বুদ্ধিতে, ভাবে, চিন্তায়, শিল্পসম্মত সুঠাম গঠনে প্রবন্ধ ও নিবন্ধ একই। কিন্তু আকার আয়তনে, ব্যাপ্তিতে ও পরিসরে প্রবন্ধের তুলনায় নিবন্ধ একটু ছোট ।

প্রবন্ধ/নিবন্ধের বৈশিষ্ট্য

প্রবন্ধ নিরাবরণ ও লক্ষভেদী রচনা। এর কোনো চরিত্র মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। এতে যদি কোনো চরিত্র থেকেও থাকে তা হচ্ছে লেখক নিজেই। পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বাক্যাবলি উৎকৃষ্ট উপায়ে সাজিয়ে প্রকাশ করাই প্রবন্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য । তাছাড়া প্রবন্ধ/নিবন্ধের নিম্নরূপ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়:

শ্রেণিতে আরবি প্রবন্ধ পাঠদানের উদ্দেশ্য

নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রবন্ধ পাঠদান করা হয়:

 

 

প্রবন্ধ/নিবন্ধ শিখন-শেখানো পদ্ধতি

শ্রেণিতে বিভিন্ন বিষয়ে আরবি প্রবন্ধ পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রথমে উদ্দেশ্যসমূহ চিহ্নিত করতে হয়। এ উদ্দেশ্যসমূহকে সামনে রেখেই একজন শিক্ষক প্রবন্ধ পাঠদান করবেন। সাধারণত আমাদের দেশে মাদরাসাসমূহে গতানুগতিক পদ্ধতিতে প্রবন্ধ পাঠদান করা হয় যাতে শিক্ষকগণ প্রবন্ধের অনুবাদ এবং বিষয়বস্তু নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করেন। রচনার শিল্পগুণ বা সাহিত্যরস সম্পর্কে তেমন ধারণা দেওয়া হয় না, ফলে শ্রেণিতে প্রবন্ধ পাঠদানের উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হয়। তাই প্রবন্ধ পাঠদানকে ফলপ্রসূ ও কার্যকর করার জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।

পূর্বজ্ঞান যাচাই:

শিক্ষক প্রথমে যথাযথ প্রসঙ্গের অবতারণা করে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান যাচাই করবেন।

পাঠ ঘোষণা:

শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে পাঠের (প্রবন্ধের) শিরোনাম বের করে আনার চেষ্টা করবেন এবং শিরোনাম বোর্ডে লিখবেন ।

লেখক পরিচিতি:

শিক্ষক লেখকের সময়কাল, রচনা, রচনারীতি, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ করে লেখক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে স্মার্ট আর্ট অথবা মনচিত্র-এর ব্যবহার করতে পারেন। আদর্শ পাঠ: শিক্ষক স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণে, সুললিত কণ্ঠস্বরে প্রবন্ধের নির্বাচিত অংশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পড়ে শুনাবেন।

তুলনা পাঠ:

আরবি প্রবন্ধ পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি ও পাঠের বৈচিত্র্য আনয়নের জন্যমূল প্রবন্ধের সাথে সঙ্গতি রেখে আরবি/বাংলা/ইংরেজি ভাষার অন্যান্য লেখকের সমধর্মী রচনার অংশবিশেষ পাঠ করে
শুনাবেন। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জ্ঞান সম্প্রসারিত হবে।

সরব পাঠ:

শিক্ষার্থীদেরকে সরবে প্রবন্ধের অংশবিশেষ পাঠ করতে বলবেন ।

শব্দার্থ শিক্ষণ:

শিক্ষার্থীদেরকে নির্ধারিত পাঠ থেকে নতুন/অজানা শব্দগুলো বের করতে বলবেন এবং এগুলোর অর্থ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বোর্ডে লেখার মাধ্যমে চর্চা করাবেন ।

শীর্ষ ভাগকরণ:

পাঠ বিশ্লেষণের সুবিধার্থে শিক্ষক সমগ্র পাঠটি কয়েকটি শীর্ষে ভাগ করে নিতে পারেন ।

অনুবাদঃ

শিক্ষক পঠিত অংশের সরল বাংলা অনুবাদ করে দিবেন।

ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ:

শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিটি শীর্ষের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দিবেন এবং প্রবন্ধের সাহিত্যরস ও সৌন্দর্যগত দিক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন।

কাওয়ায়েদ বিশ্লেষণ:

প্রাসঙ্গিকভাবে পঠিত অংশের ব্যাকরণগত বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় আলোচনা করবেন।

নীরব পাঠ:

বিষয়বস্তুর মর্ম অনুধাবনও সাহিত্যরস আহরণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে প্রবন্ধের নির্ধারিত অংশ নিরবে পাঠ করতে বলবেন ।

শিক্ষার্থীদের কাজ প্রদান:

পঠিত অংশের ভাব সংগতি যথাযথ অনুধাবনের জন্য শিক্ষার্থীদের জোড়ায়/দলগত কাজ দিবেন। কাজ শেষে প্রতিটি জোড়া/দলকে উপস্থাপনের সুযোগ দিবেন।

 

 

ফলাবর্তন:

অন্যান্য শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকের নিজের ফলাবর্তনের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে অধিকতর স্পষ্ট করবেন।

সারাংশ গঠন:

শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে পাঠের বিষয়বস্তুর সারাংশ বা সারমর্ম আদায় করার চেষ্টা করবেন।

আরও দেখুনঃ

 

Exit mobile version