আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় আরবি ভাষার উচ্চারণ রীতি ও লাহ্জাহ – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিখনের বিবেচ্য দিকসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত।
আরবি ভাষার উচ্চারণ রীতি ও লাহ্জাহ
বর্তমান সময়ে সমগ্র বিশ্বে আধুনিক আরবি ভাষা, সাহিত্য রচনা, পাঠদান ও সংবাদপত্র প্রকাশে ব্যবহৃত হচ্ছে। আল-কুরআন ও আল-হাদিস-এর প্রভাবে আরবি ভাষা, ভাষার ব্যাকরণগত দুর্বলতা ও ব্যবহারের শুদ্ধতায় এখন পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ ভাষা। যাকে je se নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও আরব্য যাযাবর জাতির বিভিন্ন এলাকা, এলাকার ভৌগলিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশের কারণে আরো ২৭টি উপভাষাও প্রচলিত আছে।
আরবি বর্ণের উচ্চারণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদির ফলে আরবি ভাষার মধ্যে বিভিন্ন বিকৃতি, সংযোজন- বিয়োজন, এ সকল উপ-ভাষায় পরিলক্ষিত হয়। এই বিকৃতি রোধেই আরবি ব্যাকরণের সৃষ্টি। আবুল আসওয়াদ আদ-দুয়াইলির মাধ্যমে পরবর্তীতে নোক্তা ও হারাকাত সংযোজ করা হয়। তবুও নানাবিধ কারণে আরবি ভাষায় আঞ্চলিকতার প্রভাব আজও চলমান।
আরবি ভাষাকে ব্যবহার-এর সময়কাল ও সাহিত্যিক দিক বিবেচনায় দুইভাগে ভাগ করা হয়।
১. ধ্রুপদী আরবি
২. আধুনিক প্রমিত আরবি
ধ্রুপদী আরবি
ধ্রুপদী আরবি, যা নবম শতাব্দী পর্যন্ত সাহিত্যে ও লেখনীতে ব্যবহৃত হতো, যা আধুনিক প্রমিত আরবির ভিত্তিভূমি। আরবির এই পার্থক্য কথিত ও লিখিত ভাষার আধুনিকীকরণ ও সাবলীলীকরণের সাথে সম্পর্কিত।
আরব ভাষাবিদগণ মনে করেন, আরবি ভাষার দুটি ভিন্ন রূপ রয়েছে।
ধ্রুপদী আরবি আল-কুরআনের আরবি নামেও পরিচিত। ইসলামী যুগের শুরুতে এই ধ্রুপদী আরবি ভাষায় পরিবর্তন আসে। আবুল আসওয়াদ আদ- দুয়াইলি ও খলিল ইবনে আহমদ আল-ফারহিদিসহ অন্যান্য ভাষা পণ্ডিতগণ একই রকম দেখতে বর্ণের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য বিন্দুর (নক্তা) ব্যবহার এবং উচ্চারণ চিহ্নিত করার জন্য ধ্বনি নির্দেশক ‘তাশকিল’ ব্যবহার করেন।
আধুনিক প্রমিত আরবি
আধুনিক প্রমিত আরবি বা চলিত আরবি বলতে সেই অঞ্চলে ব্যবহৃত ধ্রুপদী আরবি থেকে উৎপন্ন বহু আঞ্চলিক উপভাষাকে বুঝায়। মধ্যপ্রাচ্যসহ উত্তর আফ্রিকা ও আফ্রিকা জুড়ে এ ভাষার বিস্তৃতি। বর্তমানে জাতিসংঘে ও আরবলীগের মুদ্রিত সংবাদপত্র, পত্রিকা, সরকারি নথি এবং শিশু পাঠ্যবই প্রমিত আরবিতে লেখা হয়। এই চলিত আরবি অঞ্চল ভেদে কারো প্রথম ভাষা, আবার সেখানকার স্থানীয় ভাষা প্রথম হলে এটি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই উপ-ভাষাগুলো কথোপকথনে ব্যবহৃত হয়। লেখার সময় চলিত আরবিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়।
আধুনিক যুগে আরব দেশসমূহের সকল শিক্ষাব্যবস্থায় চলিত আরবির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আধুনিক প্ৰমিত আরবিতে ও আরবি উৎসবগুলোতে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়। এখানে ধ্রুপদী আরবির ব্যাকরণের জটিল নিয়মগুলো তেমন পালন করা হয় না। আধুনিক ও ধ্রুপদী আরবি মূলত তিনটি নিয়মে পৃথক ।
ক. শব্দ ভাণ্ডার, রচনাশৈলী এবং প্রান্তস্থ কিছু উদ্ভাবন, যা কঠোরভাবে ধ্রুপদী কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না ।
খ. শব্দ ভাণ্ডার-এর প্রভাব কোথাও আরবি না হয়ে ইংরেজির প্রভাব বিদ্যমান। যেমন- লেবানন, জর্ডান, মিসর, আঞ্চলিক বিবেচনায় এমন হচ্ছে ।
গ. আধুনিক প্রমিত আরবি অপ্রচলিত ধ্রুপদী আরবি শব্দসমূহ বর্জন করে, তার স্থানে নতুন শব্দ ঋণ নিয়েছে।
তাছাড়া স্থানীয় শব্দের, ঋণ শব্দের, বিদেশি শব্দের উচ্চারণ আধুনিক আরবিতে শিথিল করা হয়েছে। নাম জ্ঞাপক শব্দ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে ব্যবহার ও উচ্চারণ করা হয়। উচ্চারণ ব্যক্তির শিক্ষা জ্ঞান ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল ।
ধ্রুপদী আরবি ও আধুনিক প্রমিত আরবির পার্থক্য
বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে
ধ্রুপদী আরবিতে ব্যবহৃত জটিল বাক্য ও শব্দ গঠন প্রক্রিয়াকে আধুনিক আরবিতে সহজ করা হয়েছে। বিশেষ্য
পদগুলো এবং আংশিক বাক্যের পরিবর্তে ক্রিয়া বাক্য ব্যবহার করা হয়। পদগুচ্ছীয় বিশেষণ ব্যবহার না করে পদ মর্যাদা ব্যবহার এবং চাকুরীগত উপাধি-এর ক্ষেত্রে স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহার হয়।
পরিভাষার পার্থক্য
প্রযুক্তি সাহিত্য ও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বা রাখতে এই পার্থক্যের জন্ম। যে সকল পরিভাষা ধ্রুপদী আরবিতে ছিল না।
উচ্চারণ এর পার্থক্য
ধ্রুপদী আরবি লিপিতে যে সমস্ত উচ্চারণ নেই, সেই সমস্ত উচ্চারণ আধুনিক প্রমিত আরবিতে ব্যবহার করা হয়। যেমন— ম/গ, ঢ়/প, া/ভ, ইত্যাদি, যা ধ্রুপদী আরবিতে পাওয়া যায় না। ধ্রুপদী আরবিতে তাশকিল হরকত ব্যবহার আবশ্যক। আধুনিক প্রমিত আরবিতে বাক্যের শেষে এমনকি কখনো বাক্যের মধ্যখানেও তাশকীল ব্যবহার করা হয় না ।
যতি চিহ্নের পার্থক্য
বিশেষ করে মুদ্রণ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন যতি চিহ্ন আধুনিক প্রমিত আরবিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ধ্রুপদী আরবিতে ছিল না।
শৈলীয় পার্থক্য
ধ্রুপদী আরবির রীতি অনুসরণ না করে আধুনিক প্রমিত আরবের অনুসরণে লেখার রীতি প্রচলিত। যেমন প্রবন্ধ— নিবন্ধ, প্রযুক্তিগত প্রতিবেদন ইত্যাদি।
আঞ্চলিক প্রকারভেদ
আধুনিক প্রমিত আরবি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তুলনামূলকভাবে অভিন্ন। কিন্তু আঞ্চলিকতার কারণে আরবি ভাষার উচ্চারণেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য উপস্থাপকদের আঞ্চলিকতা পরিহারের নির্দেশ দেয়া হয়।
আরও দেখুনঃ