আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় লিখন দক্ষতা বা লেখালেখির মাধ্যমে আরবি ভাষার নৈপুণ্য অর্জন – যা আরবি ভাষার দক্ষতা শিক্ষাদান পদ্ধতি এর অন্তর্ভুক্ত।
লিখন দক্ষতা বা লেখালেখির মাধ্যমে আরবি ভাষার নৈপুণ্য অর্জন
ভূমিকা
ভাষার অন্যতম মৌলিক দক্ষতা হলো ‘লিখন দক্ষতা’। ‘লিখন দক্ষতা বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এরই একটি অংশ বিশেষ। পড়া ও বলার মতোই মানুষের পরস্পরের সাথে যোগাযোগ ও ভাবের আদান প্রদানের অন্যতম একটি মাধ্যম হলো লিখন।
চিন্তা-চেতনা ও ভাবের আদান প্রদান এবং নিজের ধ্যান-ধারণা অন্যদের অবগতির জন্য লেখার দক্ষতা ও নিপুণতা অর্জন সামাজিকভাবেই আবশ্যক হিসেবে দেখা দিয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি শ্রবণ, কথন ও পঠন দক্ষতায় অভিজ্ঞ হয় কিন্তু লেখায় দুর্বল হয়— তবে তার ভাষাগত পাণ্ডিত্য অর্জন হয় না। তাই প্রত্যেক শিক্ষকের এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিত এবং তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের শিখন-শিখানোর কৌশলও অবগত হওয়া অতিশয় জরুরি। অতএব, ‘লিখন দক্ষতা’ শিক্ষাদানের কলাকৌশল সংক্রান্ত সম্ভাব্য সকল দিকের একটি পর্যালোচনা এখানে তুলে ধরা হলো ।
গুরুত্ব
‘লিখন দক্ষতা’ শিক্ষা জীবনের অন্যতম উপাদান। পড়তে শেখা, পড়ে বুঝতে পারা, শুনে শুনে বুঝতে পারা, বুঝে মুখে প্রকাশ করার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফলের পূর্ণপ্রকাশ ঘটে— লিখিত বিষয়ের মাধ্যমে। কিন্তু সঠিকভাবে আরবি ভাষা লিখতে পারার দক্ষতা- আমাদের দেশে মাদরাসাগুলোতে খুবই কম অর্জিত হচ্ছে। মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে লেখাচর্চার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ‘লিখন
দক্ষতা’ শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাগুলো নিম্নরূপ:
- লেখাচর্চা শিক্ষার্থীকে পঠনে মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
- লেখাচর্চা শিক্ষার্থীকে সৃজনমুখী করে তুলে। যা দেখে ও অনুভব করে— তা লিখে প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত করে।
- লেখা অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভাষা আয়ত্ত্ব করে।
- হাতের লেখার মাধ্যমে তারা ভাষা ব্যবহারের কৌশল আয়ত্ত করে এবং দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ভাষা প্রয়োগে দক্ষতা অর্জন করে।
- বিভিন্ন বর্ণ ও শব্দ সঠিক রেখাবিন্যাস ও বানান নির্ভুলভাবে আয়ত্ত ও সুন্দর করে— অক্ষরগুলোকে লেখ্যরূপদান করে।
- লেখাচর্চা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষাগত দক্ষতা, সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এবং প্রকাশ দক্ষতা বাড়াবে।
- লেখার নিয়মকানুন অনুশীলনে শিক্ষার্থীর লেখার জন্য তার মনে অনাবিল আনন্দ সৃষ্টি হবে এই স্বতঃস্ফুর্ত প্রয়াসই তার ভাব প্রকাশের গণ্ডি অতিক্রম করে— শিল্প ও সৌন্দর্য চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে।
- শিল্প ও সৌন্দর্যবোধ শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল রচনার মাধ্যমে সাহিত্যকর্মে অনুপ্রেরণা দেবে। লেখার মাধ্যমে মানুষের কল্পনা, চিন্তা ও জ্ঞান পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
উল্লিখিত বিভিন্ন প্রয়োজন সিদ্ধ করার জন্য মাদরাসায় লেখা শিক্ষাদান করতে হবে। ভাষা ব্যবহারের কলাকৌশল শিক্ষা ও ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন এবং শিল্প ও সৌন্দর্যের চেতনা ও বিকাশ সাধন করতে হলে মাদরাসায় যথাযথভাবে লেখা শিখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিখন ফল
১. শিক্ষক কর্তৃক বোর্ডে লিখিত শব্দসমূহ শিক্ষার্থীর নিজের খাতায় সঠিকভাবে লিখে নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে।
২. না দেখে আরবি শব্দ লিখতে পারবে।
৩. আরবি বাক্যগুলো মুখস্ত করার পর তা না দেখে লিখতে সক্ষম হবে।
৪. স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সাবলীল ভাষায় লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে।
৫. ছাত্রদেরকে আরবি ভাষা লেখার সঠিক নিয়ম-কানুনগুলো ও যতি চিহ্নগুলো ব্যবহারে সক্ষম হবে। যে কোন ভাষার উপর ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে হলে এ চারটি দক্ষতার উপর নৈপুণ্য অর্জন জরুরি।
লেখা শিক্ষাদান কৌশল
লেখা এক ধরণের চারু শিল্প। এই শিল্পে দক্ষতা অর্জন করতে হলে- ব্যাপক অনুশীলন প্রয়োজন। দক্ষতা ও নিপুণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারটি বিষয়ে লিখন শক্তির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে:
প্রথম ধাপ- বর্ণ শিখন
বর্ণ লেখা শিখানোর পূর্বের কাজসমূহ
- কলম ধরার পদ্ধতি শেখানো ।
- খাতা রাখার পদ্ধতি শেখানো ।
- বিভিন্ন প্রকার রেখাঙ্কন, বৃত্তাঙ্কন শেখানো।
- আঁকা-আঁকি ডানদিক থেকে এবং ওপর থেকে নিচে শেখাতে হবে।
বর্ণ লেখা শিখানো
- দৈনিক ১/২ টা করে বর্ণ লেখা শিক্ষা দিতে হবে। যে বর্ণটি লেখা শেখাতে হবে- তা বোর্ডে লিখে দিতে হবে।
- প্রথমে সমান আকারের বর্ণ শেখানো। যেমন ك،ث،ت،ب অতঃপর ধারাবাহিকভাবে বাকিগুলো শেখানো।
- শিক্ষার্থী প্রথমে দেখে দেখে পেন্সিল দিয়ে অক্ষরগুলি লিখবে।
- হস্তলিপির জন্য নির্দিষ্ট খাতা ব্যবহারের ব্যবস্থা করবে।
- এককভাবে বর্ণগুলো শেখানো হলে- প্রতিটি বর্ণ শব্দের প্রথমে, মাঝে ও শেষে এলে কেমন হবে, তা শেখাবেন।
দ্বিতীয় ধাপ: আরবি শব্দ লেখা শেখানো
শব্দ লেখা শিক্ষাদান করতে হলে- দুটি পর্যায় অবলম্বন করা যেতে পারে । যথা:
হরফ সংযুক্ত করে শব্দ লেখা। যেমন:
হস্তলিপি বা দেখে দেখে শব্দ লেখা:
- শিক্ষক বোর্ডে শব্দ লিখবেন, শিক্ষার্থীরা তা দেখে দেখে খাতায় লিখবে ।
- পাঠ্যপুস্তকের শব্দগুলো দেখে দেখে লিখবে।
বাক্য লেখা শেখানো
- হস্তলিপি: দেখে দেখে বাক্য লেখা ।
- শ্রুতলিপি: শুনে শুনে বাক্য লেখা।
তৃতীয় ধাপ:
স্বাধীনভাবে আরবি ভাষায় একটি বিষয় সম্পর্কে কিছু লিখতে পারা। লিখন দক্ষতার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে রচনামূলক লেখা শেখাতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা লেখায় পারদর্শী হয়ে উঠবে। আরবিতে রচনা লেখা শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষকের উপর কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উত্তম হবে। যথা:
- শিক্ষার্থীদের সহজ বাক্য লিখতে অভ্যস্ত করা।
- কিছু প্রশ্নের উত্তর আরবি ভাষায় লিখতে অভ্যস্ত করা।
- সচরাচর দৃশ্যমান সাধারণ বিষয় সম্পর্কে অনুচ্ছেদ লিখতে দেওয়া । যথা: গ্রাম, বাগান, মসজিদ, ঢাকা শহর প্রভৃতি সহজ বিষয়সমূহ।
- প্রশ্ন তৈরি করতে শেখানো।
- চিঠিপত্র লিখতে বলা ।
ভুল সংশোধনের কৌশল
কোন বিষয়ে লিখতে গেলে তাতে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তবে লেখক লেখার শুরুতেই যেন ভুল না করে, সে ব্যাপারে অধিক সচেতন হলে— নিঃসন্দেহে ভুলের সংখ্যা কমে যাবে। খাতায় ভুলভ্রান্তি নির্ণয় করার সময়ে— শিক্ষক যে বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ রাখবেন। তা হলো:
- শব্দে ব্যবহৃত বর্ণগুলো আরবদের অনুকরণে হলো কি না- তা ঠিক করা।
- একটি শব্দ থেকে আরেকটি শব্দ আলাদাভাবে লেখা হলো কি না- তা ঠিক করা।
- বাক্যের যতিচিহ্ন ঠিক মতো বসানো না হলে, তা সংশোধন করা।
- ব্যাকরণগত ত্রুটি।
- বানান ভুল অর্থাৎ ইমালার নিয়মকানুনের ত্রুটি
- লেখার নিয়মকানুনের ভুল।
- লেখার ভঙ্গির দুর্বলতা ।
- ভুল ধারণার প্রকাশ ।
- প্যারাগুলো ঠিক মতো বসানো না হলে, তা সংশোধন করা ।
আরও দেখুনঃ