ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিখনের বিবেচ্য দিকসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত।

ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

 

ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

 

ধর্মীয় উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

ধর্মীয় গ্রন্থ আরবি ভাষায় নাযিল

আল্লাহ রাবুল আ’লামিন পৃথিবীতে মানবজাতি প্রেরণ করার সাথে সাথে তাদের জীবনাচরনের দিক নির্দেশনার জন্য প্রতিনিধির মাধ্যমে সহিফাহ্ ও কিতাব নাযিল করেন। এ সকল সহিফাহ্ ও আসমানি কিতাব অধিকাংশই আরবি ভাষায় অবতীর্ণ। আরবি ভাষার এ শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের অশেষ দান। এ ভাষা অত্যন্ত সহজ, প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী।
এ প্রসংগে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিন বলেন-

‘নিশ্চই আমি এ কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি, যেনো তোমরা বুঝতে পারো’ (সূরা ইউসুফ)।

আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন আরো বলেন- ‘আমি কুরআনকে তোমাদের ভাষায় সহজ করে দিয়েছি অর্থাৎ আরবি ভাষায়, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’।

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন- ‘তোমরা আরবিকে তিনটি কারণে ভালবাসোঃ আমার ভাষা আরবি, আল-কুরআনের ভাষাও আরবি, আর জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি’ (বায়হাকী- ১৩৬৪)।

আরবি ভাষায় ধর্মীয় প্রভাব প্রসঙ্গে হযরত শাফেঈ রহমাতুল্লাহ আলাইহিবলেন- ‘আরবি ভাষা অর্জন না করার কারণে লোকজন মূর্খ হয়েছে এবং বিভিন্ন মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যদি তারা ভালোভাবে আরবি জানতো তাহলে ধর্মীয় বিষয়ে সংশয়, সন্দেহ ও মতবিরোধ এমনিতেই নিঃশেষ হয়ে যেতো । বিখ্যাত বুজুর্গ হযরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহ আলাইহিবলেন— ‘বিদআ’ত সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে আরবি
ভাষা ভুলে যাওয়া। মানুষকে অনারব ভাষা ধ্বংস করে দিয়েছে।

মুসলিম জীবন ধারায় আরবি

মুসলিমদের বিশ্বাস, একত্ববাদ, সর্বোপরি দৈনন্দিন জীবনাচরণে আরবি উচ্চারণ বা পাঠের কোন বিকল্প নেই । ইবাদত-বন্দেগি তথা সালাত আদায় করতে হয় আরবি ভাষায়। আরবি ভাষা বিশুদ্ধভাবে পাঠ না করতে পারলে কোন ইবাদত কবুল হয় না। বিশুদ্ধভাবে পাঠ করলে সওয়াব বা নেক হাসিল হয়, অন্যথায় গুনাহগার হতে হয়।

ইসলামী শরিয়ত সম্পর্কিত জ্ঞানসমূহ ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হলে অবশ্যই ভালোভাবে আরবি ভাষা জানা জরুরি। মানব সমাজে নানান মাসআলা প্রয়োজন। এ সকল মাসআলা-মাসায়েলের সঠিক ব্যাখ্যাদানের জন্য আল-কুরআন ও আল-হাদিস বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা চাই। আর আরবি ভাষা আয়ত্তের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে আল-কুরআন ও আল-হাদিসকে বিশ্লেষণ করে মতামত দেয়া সম্ভব। আরবি ভাষা ভালোভাবে জানলেই এর প্রত্যক্ষ অনুবাদ ও ভাবার্থ জানা সম্ভব। অন্যথায় ভুল ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ হতে পারে ।

ধর্মীয় কারণে বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ আল-কুরআন। এর উপর নির্ভর করে লক্ষ লক্ষ ইসলামিক পুস্তক রচিত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় আর কোন গ্রন্থ নেই। তাই আরবি ভাষা একটি জীবন্ত ভাষা হিসেবে সমগ্র বিশ্বে চলমান। ধর্মীয়ভাবে আমরা আমাদের শিক্ষিত ব্যক্তিকে আ’লেম বলে থাকি। যে আ’লেম যত ভালো আরবি জানেন, তিনি ইসলামী জ্ঞানেও তত সমৃদ্ধ। অর্থাৎ আরবি ভাষা জানার কারণে তার সম্মান ও মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়৷

 

ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

 

আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেন-

  • কুরআন আরবিভাষায় অবতীর্ণ করেছি যা কল্যাণময় ।
  • ইয়াসিন, শপথ প্রজ্ঞাময় কোরআনের।
  • নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন আরবি ভাষায়।
  • আমাদের সহজ সরল পথ প্রদর্শন কর।
  • ইহা মানব জাতরি জন্য স্পষ্ট বর্ণনা।

ইসলামের রোকন পালনে আরবি ভাষা

ইসলামের রোকন পাঁচটি। যথা- (ক) বিশ্বাস, (খ) নামাজ, (গ) রোজা, (ঘ) হজ্ব ও (ঙ) যাকাত। এ ইবাদতগুলো কোনোটি মানসিক, কোনোটি শারীরিক আবার কোনটি আর্থিক। কিন্তু এ সবকিছুর ধারন, লালন, পালনে আরবি ভাষার প্রভাব বিদ্যমান। ইসলামি অনুশাসন পালনে এ রোকনগুলো যেমন আবশ্যক, তেমনি আরবি ভাষা না জানলে-এর সঠিক বাস্তবায়নও অসম্ভব।

সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

ভাষা যে কোনো সমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। এটি সমাজে বা রাষ্ট্রে নানাভাবে পতিত হয়। আরবি ভাষাও তেমনি সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। জাহেলি যুগে আরবের সামাজিক পরিস্থিতি ছিল হতাশায়পূর্ণ। মদ, জুয়া, নারী, গোত্রীয় যুদ্ধ, বহু বিবাহ, কন্যা সন্তান হত্যা, আধিপত্যের লড়াইয়ে ‘খুন কা বদলা খুন’ প্রভৃতি ছিল তাদের সমাজের নিত্যকর্ম। সেই বিভীষিকাময় সামাজিক অবস্থায় ‘সভ্য সমাজ ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয় আল-কুরআনের মতো আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হওয়ার পর ।

ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের অধিকারের বিষয়ে বর্ণনা করা হয়। কোথায় কার কী দায়িত্ব, অধিকার ও দাবি এবং তা কীভাবে পালন করতে হবে, সেসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হলে আরবগণ তাদের পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতা অর্জন করে। আরবি ভাষায় অবতীর্ণ তাই অনেক অজানাকে তারা জানতে পারে এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনা লাভ করে।

ন্যায় বিচার, সুদ, চরিত্র, মজলিসের শিষ্টাচার, অন্যের হক বা বান্দার হক, চুরির শাস্তি, লুটতরাজ ও ডাকাতির শাস্তি, অপবাদ রটানোর শাস্তি ও পরিণাম, যিনার শাস্তি, (নারী নির্যাতন- শারীরিক, মানসিক, সামাজিক) সঠিক মাপ ও ওজন, সৎকর্মের আদেশ, অসৎ কর্মের নিষেধ ইত্যাদি সামাজিক বিষয়গুলো আরবি ভাষায় বর্ণিত হওয়ার সুবিধায় আরব্য সমাজ ছাড়াও বিশ্বমগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সহায়ক ।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষা

সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরবি ভাষা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

  • তোমরা জমিনে বিশৃংখলা করো না ।
  • তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ।

 

ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নে আরবি ভাষার প্রভাব

 

ঐক্যবদ্ধ বা একতাই শক্তি। আল্লাহ বলেন-

  • তোমরা আল্লাহ্ রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধর, আর দলা-দলী করো না ।
  • তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআনুগত্য করো এবং  তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বশীলদের।

পরিবেশ সুরক্ষা, মহামারী হতে সুরক্ষার নির্দেশনা, অন্যের হক-এর বিধান, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, প্রতিবেশীর অধিকার, ব্যবসা, বাণিজ্য প্রতিটি বিষয়ে আরবরা জ্ঞান অর্জন করে তাদের জীবন ধারায় বাস্তবায়ন করে। আরবি ভাষা এভাবে একটি শক্তিশালী সামাজিক কাঠামো দাঁড় করতে সাহায্য করে।

আরও দেখুনঃ

 

Leave a Comment