আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক ও নদ-নদীর প্রাচুর্যের জন্য ১৬১০ সালে বাংলার মোগল শাসনকর্তা ইসলাম খান বিহারের তাজমহল থেকে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। ইসলাম খানের সময় থেকে ঢাকা বিস্তৃত হতে থাকে এবং ঢাকার বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগার (পুরনো দুর্গ) অঞ্চলটি নতুন মোগল শহরে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে। এরপরেই ঢাকা বাণিজ্যিক এলাকাতে পরিণত হয়।
এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম বিশেষ করে সুতি কাপড় ও পোষাক সংগ্রহ করে উত্তরে গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চল ও বহির্বিশ্বে রপ্তানি করে এবং আমদানিকৃত সকল কাঁচামাল ও শিল্পকর্ম সারা পূর্ববাংলায় বিতরণ করার মধ্যদিয়েই ঢাকার উন্নয়ন শুরু হয়।
ইউরোপীয়, আরমেনিয়, মোগল, পাঠান, তুর্কি, মাওয়ারি ও উত্তর ভারতীয় হিন্দুসহ সকল বিদেশি ও ভারতীয় বণিক, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার সকলে ব্যবসা-বাণিজ্য উপলক্ষে ঢাকায় আসতে শুরু করে। সংগঠিত ইউরোপীয় বাণিজ্য কোম্পানিগুলোও আসতে থাকে। ইংল্যান্ড, হল্যান্ড এবং ফ্রান্সের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও ঢাকায় এসে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। ঢাকা এসময়ে একটি বৃহৎ শিল্পএলাকা হিসেবে বিকশিত হয়। শহর গড়ে ওঠার সাথে সাথে আগমন ঘটে বিভিন্ন কারিগর, শিল্পী এবং উৎপাদনকারীদের।
রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর পর ঢাকাও একটি বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ সুতিবস্ত্র তৈরির কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয় এবং মোগল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকা শহরের অদূরে ডেমরা এলাকার তাঁতিদের তৈরি মসি শিল্পের উৎপাদন চূড়ান্ত উৎকর্ষ এবং খ্যাতি অর্জন করে। এ সময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢাকার তাঁতিদের তৈরি এই সূক্ষ্ম মসলিন কাপড় রপ্তানি করা হত।
কালের পরিক্রমায় এ শিল্প হারিয়ে গেছে, কিন্তু এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের বংশধরেরা যুগ যুগ ধরে এ শিল্পধারা বহন করে আসছে বলে জামদানি শাড়ি আমরা আজও দেখতে পাই। নারায়ণগঞ্জ জেলার নওয়াপাড়া গ্রামেই জামদানি শিল্পের কারিগরদের বসতি, আর ডেমরাঘাট এলাকা জামদানি শাড়ি বিক্রির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
আরও দেখুন: