আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কথন দক্ষতা – যা আরবি ভাষার দক্ষতা শিক্ষাদান পদ্ধতি এর অন্তর্ভুক্ত।
কথন দক্ষতা
ভূমিকা
ভাষা বিকাশের দ্বিতীয় স্তর হলো, কথন বা বলার দক্ষতা মানুষের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের বা যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো, কথোপকথন বা বলার দক্ষা। আধুনিক যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হওয়ায়, দেশ থেকে দেশান্তরে মানুষের অবাধ বিচরণের পথ সহজলভ্য হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে— মৌখিক যোগাযোগ বা কথোপকথনের মাত্রা কল্পনাতীতভাবে ব্যাপকতা লাভ করেছে।
কথোপকথনের যোগ্যতা বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এর অংশ বিশেষ। কিন্তু এর উপর পূর্ণদক্ষতা অনেক ধৈর্য, চেষ্টা- সাধনা, যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে দীর্ঘদিন শ্রমের বিনিময়েই কেবল অর্জন করা যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষকগণকে অবশ্যই কিছু গুণের অধিকারী হতে হবে।
কথন দক্ষতার গুরুত্ব
ভাষার মৌলিক চারটি দক্ষতার মধ্যে অন্যতম প্রধান দক্ষতা হলো কথোপকথন বা বলতে পারা। অন্যের কাছে মানুষ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার প্রধান উপায় হলো, বলা । যে ভাল বলতে পারে, সে তার জীবনে বিশেষ সফলতা অর্জন করতে পারে। বিশেষভাবে আরবি ভাষা। বলার দক্ষতার গুরুত্ব যেমনটি মাতৃভাষায় রয়েছে, অনুরূপভাবে আরবি ভাষায়ও বিদ্যমান। আরবি একটি বিদেশি ভাষা। সম্প্রতি, বিভিন্ন প্রয়োজনে আরবদের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আরবি ভাষা জানতে হবে।
আরবি কথন দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো:
১. সকল পরিবেশে ভাব বিনিময় সহজ হয়;
২. স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ে;
৩. শৈল্পিক বাচনভঙ্গি অর্জন করা যায়;
৪. নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়; ৫. অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।
শিখন ফল: বলার দক্ষতা
- পারস্পরিক কথোপকথনের মাধ্যমে আরবি ভাষায় নৈপুণ্য অর্জন।
- দৈনন্দিন ব্যবহারিক বিষয়াদি অধ্যয়নের মাধ্যমে কোন ঘটনা নিজের মত করে প্রকাশ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
- সিলেবাসভুক্ত পঠিতব্য বিষয়াদির মূলভাব সহজ আরবি ভাষায় সাবলীল ও প্রাঞ্জলভাবে ব্যক্ত করতে পারবে ।
- একত্ববাদ, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বীরদের জীবনী, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র, নৈতিকতা, দেশাত্ববোধ, শিক্ষকের মর্যাদা, প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে যোগাযোগ ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ প্রভৃতি বিষয়ে পঠিত অংশের অর্থ বুঝে সারসংক্ষেপ সহজ আরবি ভাষায় গুছিয়ে অনায়াসে ও সাবলীলভাবে বলতে পারবে।
- তাওহীদ, রেসালাত, নসিহত, নদ-নদীসহ নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য, মানুষকে সহায়তা, প্রতিষ্ঠান, আমানত, দয়া, ভাতৃত্ব, হাট বাজার বা মার্কেটে কথোপকথন, ইন্টারনেট, প্রভৃতি বিষয় সম্পৃক্ত বর্ণনা, কবিতা ও সংলাপের জ্ঞানার্জন করে তা বাস্তব জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যে ও সাবলীলভাবে ব্যক্ত করতে সক্ষম হবে।
- প্রকাশভঙ্গির উন্নয়ন, উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধিত হবে।
- আরবি কাওয়াইদ বা ব্যাকরণের নিয়ম-পদ্ধতি বাস্তব প্রয়োগের সময়ে সঠিক ব্যবহার করে বলতে পারবে এবং কথন দক্ষতায় নিপুণতা অর্জ করতে পারবে।
- বিভিন্ন বিষয় আলোচনয় কুরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিতে সক্ষম হবে।
- যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কুশল বিনিময়, আমন্ত্রণ জানানো, অনুরোধ জ্ঞাপন ও পরিচয় দিতে সক্ষম হবে।
আরবি ভাষায় ‘কথন দক্ষতার’ শিক্ষাদানে সমস্যাসমূহ
বাংলাদেশের কওমি ও আলিয়া মাদরাসাগুলো মূলত আরবি ভাষার প্রাণকেন্দ্র। আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায়-এর পঠন-পাঠন দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এসব মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্নভাবে আয়ত্ব করে বটে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই কথন বা বলার দক্ষতায় অত্যন্ত দুর্বল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে যারা অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন, তাদেরও অধিকাংশই বলার ক্ষেত্রে দক্ষ ও পারদর্শী নয়। এর পেছনে গবেষকগণ বেশ কিছু অন্তর্নিহিত কারণ নির্ধারণ করেছেন। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. আরবি ভাষার চর্চা ও গবেষণার অপর্যাপ্ততা।
২. আরবি ভাষা কুরআন- হাদিসের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও এ ভাষায় অভিজ্ঞ ও বুৎপত্তিধর শিক্ষকের স্বল্পতা।
৩. উপযুক্ত শিক্ষা কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের অভাব ।
৪. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্রের স্বল্পতা।
৫. বলা শিক্ষাদানে উন্নত উপকরণাদির অভাব ।
৬. শিক্ষার্থীর কথাবলার মত কোন সুযোগ না থাকা।
‘কথন দক্ষতা” অর্জনের কৌশলসমূহ
প্রথম ধাপ
শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে কোনো বস্তুকে উপস্থাপন করে ছোট ছোট বাক্য বলবেন। শিক্ষার্থীরা শুনবে এবং এককভাবে কিংবা দলীয়ভাবে উচ্চারণ করবে। নমুনাস্বরূপ- শিক্ষক নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলবে هذارأس শিক্ষার্থীরা তার অনুসরণে মাথায় হাত দিয়ে যৌথভাবে বা এককভাবে ওই কথা উচ্চারণ করবে। এভাবে শিক্ষক তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হাত রেখে বাক্য উচ্চারণ করবে। এ ধাপটি ভাষার দুটো দক্ষতা— শ্রবণ ও বলা অন্তর্ভুক্ত করে। একই সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা দেখে দেখে বলার সুযোগ পায়। তাই তারা বিষয়টি খুব সহজে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয় ।
দ্বিতীয় ধাপ
শ্রেণিকক্ষে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে কথোপকথনের ব্যবস্থা করা। সাধারণত অধীত পাঠ বা সংলাপসম্পর্কিত কোন লেখা ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ণিত পদ্ধতিতে অনুশীলন করানো যেতে পারে বা সংলাপের মাধ্যমে আরবি ভাষা চর্চা করবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাঝে দলীয়ভাবে ও জোড়ায় জোড়ায় গ্রুপ তৈরি করে দেবেন। অতপর পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত এবারত বা বাক্য সমষ্টি প্রত্যেক গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রীরা পরস্পর মুখেমুখে চর্চা করবে। অনুশীলন কাজটি যৌথভাবে সম্পাদিত হবে।
তৃতীয় ধাপ
ক্লাসে মাঝে মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে কোন একজনকে আলোচিত ও ব্যাখ্যাকৃত পাঠের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা আরবি ভাষায় ব্যক্ত করতে বলতে পারেন। অথবা শিক্ষা সফর বা কোন ঘটনা আরবি ভাষায় বর্ণনা করতে বলতে পারেন। ছাত্র-ছাত্রীদের দু’ভাগে ভাগ করে কোন ব্যক্তিগত, সামাজিক বা অর্থনৈতিক যে কোন একটি বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কথা বলার দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা করতে পারেন।
উপকরণ
ছবি, পাওয়ার পয়েন্ট সিস্টেম, অডিও ক্লিপ, ভিডিও ক্লিপ, তথ্যপত্র, ধারণা মানচিত্র, রেখাচিত্র, ভূগোলক, চার্ট, মডেল, নকশা, অঙ্কিতচিত্র, বাস্তবস্তু, পোস্টার, আর্ট/পোস্টাপেপার, চকবোর্ড/হোয়াইট বোর্ড, ফ্লাশকার্ড/ভিপকাউ, পাঠ্যপুস্তক ।
আরও দেখুনঃ