আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-দ্ব্যর্থকতা ও অস্পষ্টতা
দ্ব্যর্থকতা ও অস্পষ্টতা
রূপমূলের অর্থগত দিকের দুটো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। প্রথমত দ্ব্যর্থকতা ও দ্বিতীয়ত অস্পষ্টতা।
দ্বার্থকতা
একটি রূপমূলের নানাবিধ অর্থ হতে পারে। সাধারণত একটি রূপমূলের দুটো অর্থ যখন ক্রিয়াশীল থাকে তখন তা দ্ব্যর্থক হিসেবে চিহ্নিত হয়। উদাহরণ-
৬. বুয়ায় কামের হিসাব করতাছে (বুয়া কাজের হিসেব করছে)
৭. তুমি আগুনেনা দেকছি (তুমি আসাতে দেখছি)
ওপরের বাক্যদুটির একাধিক অর্থগত তাৎপর্য বিদ্যমান ।
৬ নং বাক্যে
ক. বুয়া তার নিজের কাজের হিসেব করছে। সে কি কি কাজ করেছে। এ অর্থ বোঝাতে পারে।
খ. অন্যজন কাজ করছে বুয়া সে কি কি কাজ করছে তার হিসাব রাখছে এ অর্থও হতে পারে।
৭ নং বাক্যে :
ক. একজন লোক আসাতে সে তাকে দেখতে পেয়েছে। আবার
খ. কোন কাজ বাকি ছিল লোকটি আসাতে সে কাজের প্রতি খেয়াল হয়েছে। এ অর্থও হতে পারে।
দুটি বাক্যেরই একাধিক অর্থ বিদ্যমান। রূপমূলের একাধিক অর্থ থাকলে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে সমগ্র বাক্যের অর্থ দ্ব্যর্থক হয়ে যায়।
‘বাক্যের দ্ব্যর্থকতা দূরীকরণে সংযোগস্থলের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রূপমূল গঠনে সংযোগস্থলে ধ্বনিগত উপলব্ধিই প্রধান এবং সংযোগস্থল সংযুক্ত রূপমূল বাক্যে ব্যবহারের পর অর্থগত দিক অনুধাবন সহজ সাধ্য হয়।’ (মোরশেদ: ১৯৯৭:438)
যেমন ৮ বাজান (বাবা) না
= বাজান না (বাবার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে বাবা নয় কি) বাজাননা (অনুরোধ করা অর্থে) =
৯. বাজান + না
উদাহারণে সমশ্রেণির ধ্বনি দ্বারা গঠিত দুটো রূপমূল রয়েছে, যার দুটো অর্থও আছে, তাই আপাতদৃষ্টিতে রূপমূল দুটিকে দ্ব্যর্থক মনে হয়। একটু লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, ‘বাজাননা’ রূপমূলের শেষের স্বরধ্বনি না-এর /আ/ এ বেশি স্বরাঘাত নেই। আবার ‘বাজান না’ ‘বাজান নয় কি’ এই অর্থদ্যোতক রূপমূলের ‘না’ এর শেষের / আ / স্বরের উপর বেশি স্বরাঘাত দেখা যায়। অপরদিকে ‘বাজান না’ কোন সংযোগস্থল নেই।
বাজান + না =বাজাননা রূপমূলে সংযোগস্থল রয়েছে। এ থেকে দুটো রূপমূলের পৃথক অর্থ উপলব্ধি করা যায়।
অস্পষ্টতা
রূপমূলের দ্ব্যর্থকতার পাশাপাশি অর্থের অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। কোন বাক্যে রূপমূল যখন নির্দিষ্ট কোন অর্থ প্রকাশ করে না, তখন বাক্যের অর্থ অনুধাবনে অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
১০. পোলাটা (ছেলেটা)
১১. পরায় পরায় এমুন অয় (প্রায় প্রায় এমন হয়) এখানে ‘পোলাটা’ রূপমূল কি অর্থ প্রকাশ করছে তা স্পষ্ট নয়। তেমনি প্রায় প্রায় এমন হয়’ এখানেও অর্থ স্পষ্ট নয়। এ ধরনের অর্থগত অস্পষ্টতার জন্য দুর্বোধ্যতার সৃষ্টি
হয়।
একই বস্তু ও রূপমূলের একাধিক অর্থের জন্যও অর্থগত অস্পষ্টতা দেখা দেয়। যেমন-
12. বস্তু
ভাতের মার গালার পাত্র
একাধিক নাম
মালসা, আতানি, ফের পালুনি
রূপমূল
একাধিক অর্থ
কোণা
ঘরের কোণা, কোন চিপাস্থান,
কোন কিছুর প্রান্ত (শাড়ি, কাগজ, কাপড়)
আরও দেখুন: