নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব

নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব

নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব অনুসারে কোন শব্দের অর্থ হলো শব্দ নির্দেশিত বস্তু । এই তত্ত্বে শব্দ ও বন্ধের মধ্যে একটা অভেদসম্পর্ক স্থাপন করা হয়। দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল নির্দেশনাত্মক তত্ত্বের একজন প্রধান প্রবক্তা। রাসেল বলেন যে শব্দের অর্থ আছে একথা বলার অর্থ এই যে শব্দ প্রতীক হিসাবে কোন কিছুকে নির্দেশ করে। যেমন কুকুর শব্দটির অর্থ হবে পৃথিবীর সেই চতুষ্পদ প্রাণী যার মধ্যে কুকুরত্ব গুণটি রয়েছে।

আবার টান শব্দের অর্থ হতে পারে সাহেব বাড়ির সেই কালো কুকুরটি যা গেটের সামনে বাধা থাকে এবং পথচারী দেখলেই বেউ ফেউ করে। কাজেই দেখা যায় এ তত্ত্বে শব্দের অর্থ বলতে তার বাচ্যার্থকে বোঝানো হচ্ছে। এজন্য এর অন্য নাম বাচ্যার্থমূলক ভয়। যখন মনে করা হয় যে কোন শব্দের অর্থ হলো এর বাচ্যার্থে তখন নিম্নলিখিত তিনটি দাবি প্রাসঙ্গিকভাবে সামনে পড়া (Akmajian et al 1995 218)

 

নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব

 

(ক) কোন শব্দের অর্থ আছে একউইলিয়াম এ্যালটন (১৯৬৪ : ১২) মনে করেন নির্দেশনাত্মক তত্ত্বের দুটি রূপ রয়েছে – একটি সরল ও অন্যটি মার্জিত। এতক্ষণ আমরা যা আলোচনা করালাম তা হলো নির্দেশনাত্মক তত্ত্বের সরল রূপ অর্থাৎ কোন শব্দের অর্থ হলো শব্দটি যে ঝাকে নির্দেশ করে তা-ই। এর মার্জিত রূাপটি হলো কোন শব্দের অর্থ বলতে শব্দনির্দেশিত বন্ধকে বোঝায় না, বরং বোঝায় শব্দ ও বছর সম্পর্ককে। ক যদি কোন শব্দ হয় এবং খ য বন্ধ হয় তবে মার্জিত তত্ত্বটিকে এভাবে প্রদর্শন করা যায়থা বলার মানে হলো শব্দটির বাচার্থ আছে ।

(খ) যদি দুটি শব্দের বাচ্যার্থে এক হয় তবে তাদের অর্থও এক হবে ।

(গ) কোন শব্দের বাচ্যার্থে সম্পর্কে যা সত্য শব্দটির অর্থ সম্পর্কেও তা সত্য হবে। এ তত্ত্ব শব্দ ও

বাস্তব পৃথিবীর মধ্যে একটা সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে ।

এ তত্ত্বকে একটি সহজ সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় :
ক – নির্দেশিত বস্তু
এখন ক যদি গরু হয় তবে বলা যায়

উইলিয়াম এ্যালটন (১৯৬৪ : ১২) মনে করেন নির্দেশনাত্মক তত্ত্বের দুটি রূপ রয়েছে – একটি সরল ও অন্যটি মার্জিত। এতক্ষণ আমরা যা আলোচনা করালাম তা হলো নির্দেশনাত্মক তত্ত্বের সরল রূপ অর্থাৎ কোন শব্দের অর্থ হলো শব্দটি যে ঝাকে নির্দেশ করে তা-ই।

এর মার্জিত রূাপটি হলো কোন শব্দের অর্থ বলতে শব্দনির্দেশিত বন্ধকে বোঝায় না, বরং বোঝায় শব্দ ও বছর সম্পর্ককে। ক যদি কোন শব্দ হয় এবং খ য বন্ধ হয় তবে মার্জিত তত্ত্বটিকে এভাবে প্রদর্শন করা যায়

একইভাবে

নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব

 

এখানে দেখা যায় শব্দ ও বস্তুর মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে, তবে তা পরোক্ষ (বিন্দুযুক্ত রেখা পরোক্ষ সম্পর্কের প্রতীক) এবং কোন শব্দের অর্থ বলতে শব্দ ও বছর এই সম্পর্ককেই বোঝাবে।
তবে অধিকাংশ নির্দেশনাত্মক তত্ত্ববিদ মার্জিত রূপের চেয়ে বরং সরল রূপটিকেই শব্দের অর্থ ব্যাখ্যায় প্রয়োগ করেছেন।

অনেকেই স্বীয় নামকে ব্যাখ্যা করেছেন এ তত্ত্বের দ্বারা। তাদের দাবি অনুসারে, স্বীয় নাম বাস্তব জগতের বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করতে পারে। যেমন শামছুর রাহমান নামটি দ্বারা বাংলাদেশের এক বিশিষ্ট কবি চিহ্নিত হয়। কাজেই ঐ ব্যক্তিই শামছুর রাহমান শব্দটির অর্থ

মূলনীতি ও সমস্যা :

নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব মনে করে যে ভাষা ও বাস্তব জগতের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। এ্যাসটন (১৯৬৪ : ১৯) বলেন, “নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তদৃষ্টির উপর ভিত্তিশীল যে ভাষা ব্যবহৃত হয় ভাষার বাইরের (এবং ভিতরের জিনিস সম্পর্কে কথা বলার জন্য এবং সেই কথায় শব্দের উপযুক্ততা শব্দের অর্থের জন্য জরুরী ।

নির্দেশনাত্মক তত্ত্বের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে । এজন্য অনেক দার্শনিক ও ভাষাতাত্ত্বিক এ তত্ত্বের সমালোচনা করেছেন। প্রথমত, একই বন্ধ দুটি ভিন্ন শব্দ বা শব্দসমষ্টি যারা নির্দেশিত হতে পারে। দার্শনিক ফ্রেজ দেখান যে morning stars evening star একই বস্তুকে নির্দেশ করে, কিন্তু তা বলে এদের অর্থ এক নয় ।

 

নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব

 

দ্বিতীয়ত, এমন অনেক শব্দ আছে যেগুলো বাস্তব জগতে কি বন্ধু নির্দেশ করে তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল । যেমন – যাদি, তবে এবং না, কিন্তু ইত্যাদি শব্দের দ্বারা নির্দেশিত বন্ধ কোনগুলো ? কিংবা ভুত পেত্নী, জলকন্যা, পরী এসব কোন বন্ধর নির্দেশক না স্পষ্ট নয় ।

তৃতীয়ত, এমন অনেক শব্দ আছে যাদের অর্থ পরিস্থিতিভেদে পরিবর্তিত, যেমন আমি, তুমি, এটা, – ওটা, এখানে, সেখানে এখন, তখন (এ ধরনের শব্দকে বলা হয় দ্বিবাচক প্ৰকাশ)। এই অভিসম্পর্ক লেখক যখন বলবে আমি যোগ্য তখন আমি যে ব্যক্তিকে বোঝাবে, অভিসম্পওঁ পাঠক যখন বলবে আমি যোগ্য তখন আমি প্রথমোক্ত ব্যক্তিকে বোঝাবে না।

চতুর্থত, শব্দের অর্থ = শব্দনির্দেশিত বা একথা মেনে নিলে এটা বলতে হবে যে বন্ধুর মতো অর্থের জন্ম আছে, মৃত্যু আছে, বিবাহ করে, বায়ু, ঘুমায় ইত্যাদি । কাজেই এ তত্ত্ব প্রচলিত বাকরীতির সাথে সম্পূর্ণ নয় ।
পঞ্চমত, স্বীয় নামের ক্ষেত্রেও তত্ত্বটি প্রযোজ্য বলে মনে হয় না। যেমন, শামছুর রাহমান নামটি কেবল বাংলাদেশের কোন বিশিষ্ট কবিকেই বোঝাবে না, এটি উক্ত নামের যে কোন ব্যক্তিকে বোঝাবে।

কাজেই স্বীয় নাম নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক এ দাবি দুর্বল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত । কাজেই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় বলা যায় নির্দেশনাত্মক তত্ত্ব শব্দের অর্থ সম্পর্কে কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা
উপস্থাপন করতে পারে না। তাই এই তত্ত্বটি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয় ।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment