আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিনম্রতা
ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিনম্রতা
ব্রাউন এবং লেভিনসন তাঁদের তত্ত্বে দুই ধরনের বিনম্রতা নির্দেশ করেছেন, যথা- ইতিবাচক বিনম্রতা (positive politeness) এবং নেতিবাচক বিনম্রতা (negative politeness) (Brown and Levinson, 1987)। এই দুই শ্রেণির বিনম্রতার বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো।
ক. ইতিবাচক বিনম্রতার কৌশল
ইতিবাচক বিনম্রতা বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড, যেমন- প্রশংসা করা, অভিনন্দন জানানো, সৌহার্দ্য দেখানোর ক্ষেত্রে প্রদর্শিত হয়। ইতিবাচক বিনম্রতা প্রদর্শনের জন্য ব্রাউন এবং লেভিনসন ১৫ ধরনের কৌশল নির্ধারণ করেন (Brown and Levinson, 1987; উদ্বৃত, আরিফ, ২০২২)। এগুলো হলো-
১। শ্রোতাকে খেয়াল করা, মনোযোগ দেওয়া (তাঁর আগ্রহ, প্রয়োজন, চাওয়া এবং সম্পত্তি) Notice,
attend to H (his interests, wants, needs, goods)
২। বাড়িয়ে তোলা (শ্রোতার কৌতূহল, অনুমোদন এবং সহানুভূতি) Exaggerate (interest,
approval, sympathy with H)
৩। শ্রোতার কৌতূহলকে তীব্রতর করা (Intensify interest to H
৪। দলভূক্ত পরিচয়কে সূচিত করা (Use in-group identity markers)
৫। মতৈক্য অন্বেষণ (Seek agreement)
৬। মতানৈক্য এড়ানো (Avoid disagreement)
৭। অভিন্ন ভিত্তিকে অনুমান উত্থাপন / ঘোষণা করা (Presuppose / raise assert common ground)
৮। তামাশা (Joke )
৯। শ্রোতার প্রত্যাশা বিষয়ে বক্তার যত্নশীল হওয়ার বিষয়ে পূর্বানুমান করা (Assert or presuppose
১০।S’s knowledge of concern for H’s wants) ১০। প্রস্তাব দেওয়া, প্রতিশ্রুতি দেওয়া (Offer, promise)
১১। আশাবাদী হওয়া (Be optimistic)
১২। কার্যক্রমে বক্তা-শ্রোতাকে অন্তর্ভুক্ত করা (Include both S and H in the activity)
১৩। যুক্তি প্রদান করা বা যুক্তি প্রত্যাশা করা Give (or ask for ) reasons
১৪। পারস্পরিকতা বিষয়ে অনুমান করা বা ঘোষণা করা (Assume or assert reciprocity)
১৫। শ্রোতাকে উপহার প্রদান (দ্রব্য, সহানুভূতি, বোঝাপড়া, সহযোগিতা) Give gifts to H (goods,
খ. নেতিবাচক বিনম্রতার কৌশল
যেকোনো ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বা সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বা আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে নেতিবাচক বিনম্রতা ভাষায় ব্যবহৃত হয়। নেতিবাচক পরিস্থিতি প্রশমনের কৌশল হিসেবে এই শ্রেণির বিনম্রতা ব্যবহার করা হয় বলে একে নেতিবাচক বিনম্রতা নামকরণ করা হয়েছে।
নেতিবাচক বিনম্রতা চরিতার্থতা করার জন্যও ব্রাউন এবং লেভিনসন ১০ ধরনের কৌশল শনাক্ত
করেছেন (Brown and Levinson, 1987; উদ্বৃত, আরিফ, ২০২২)। এগুলো হলো-
১। স্বাভাবিকভাবে পরোক্ষ হওয়া (Be conventionally indirect)
২। প্রশ্ন, রক্ষাকবচ (Question, hedge)
৩। নিরাশ হওয়া (Be pessimistic)
৪। হস্তক্ষেপ কমিয়ে আনা (Minimize the imposition, R )
৫। ভিন্নধর্মী হওয়া (Give deference)
৬। ক্ষমা চাওয়া (Apologize)
৭। বক্তা-শ্রোতাকে নিরপেক্ষ করা : ‘আমি’ এবং ‘তুমি’র ব্যবহারকে এড়িয়ে যাওয়া (Impersonalize
S and H: Avoid the pronouns ‘T’ and ‘you’)
৮। অকিঞ্চিৎকর হওয়া (State the FTA as a general rule)
৯। সম্মান দেওয়া (Nominalize )
১০। বক্তা হিসেবে কৃতজ্ঞ হওয়া, শ্রোতাকে অকৃতজ্ঞ না করা/ভাবা (Go on record as incurring a
debt, or as not indebting H)
এখানেও H (hearer) এবং S (speaker) দিয়ে বক্তা ও শ্রোতাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, ব্রাউন এবং লেভিনসনের মতে, বিনম্রতার সাথে দুইটি বিষয় সংশ্লিষ্ট। একদিকে অভীক
(FTA) হ্রাস করা, অন্যদিকে অভিব্যক্তি (face) বৃদ্ধি করা।
নেতিবাচক বিনম্রতায় অভীক হ্রাস পায় কারণ বক্তা এক্ষেত্রে শ্রোতাকে কোনো বিষয়ে জোর করেন না বা সরাসরি আদেশ করেন না। নেতিবাচক বিনম্রতার ক্ষেত্রে বক্তা অনুরোধের মাধ্যমে বা পরোক্ষভাবে শ্রোতাকে তার মনোগত অভিপ্রায় বা ইচ্ছা (intention) সম্পর্কে বলেন।
ইতিবাচক বিনম্রতার বক্তার অভিব্যক্তি (face) বৃদ্ধি পায় কারণ বক্তা চান, তার সম্পর্কে যে ইতিবাচক ধারণা শ্রোতার মনে রয়েছে তা যেন বর্তমান থাকে বা বৃদ্ধি পায় ।
আরও দেখুন: