Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

পূর্বধারণা ও প্রজ্ঞাপন

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-পূর্বধারণা ও প্রজ্ঞাপন

পূর্বধারণা ও প্রজ্ঞাপন

প্রতিটি উক্তিই কোন না কোন কিছুকে সত্য বলে ধরে নেয় অথবা বক্তাশ্রোতার সাধারণ জ্ঞানের বিষয় বলে গণ্য করে। যেমন তার ভাই বাইরে অপেক্ষা করছে এই উক্তিতে এটি সত্য বলে ধরে নেয়া হয়েছে যে তার একটি ভাই আছে। আবার

ক. সে কাজটা ঠিক করেনি ।

খঃ তার শাস্তি হওয়া উচিত ।

এই কথোপকথনে যার সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে সে বক্তা শ্রোতা উভয়ের নিকট পরিচিত। সে তার এখানে বিশেষ একজন লোকের অস্তিত্বের ধারণা প্রকাশ করে। এই ধরনের ধারণা বা বিষয় যা কোন উক্তি থেকে অনুমানমূলকভাবে পাওয়া যায় তাকে বলে পূর্বধারণা। আমরা পূর্বধারণার আরো কিছু উদাহরণ দিতে পারি :

১. তুমি সিগারেট খাওয়া করে ছাড়লে ? (পূর্বধারণা : তুমি সিগারেট খেতে এবং এখন যাও না)

২. যখন তাকে আক্রমন করলেন তখন আপনার সাথে কে কে ছিল ? (পূর্বধারণা : আপনি তাকে আক্রমন করেছেন)

৩. বিপ্লব তাকে মিথ্যা বলার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। (পূর্বধারণা: বিপ্লব মনে করে মিথ্যা বলা অন্যায়)

৪. আজান শহীদের চেয়ে ভালো ভাষাতাত্ত্বিক নয় । (পূর্বধারণা : আজাদ এবং শহীদ ভাষাতাত্ত্বিক) ৫. যদি আমি পাখি হতাম তবে আকাশে উড়ে বেড়াতাম । (পূর্বধারণা : আমি পাখি নই)

 

 

পূর্বধারণার একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য এই যে যে হাঁবোধক উক্তি বা বাক্য থেকে পূর্বধারণা আহরিত হয় তাকে যদি নাবোধক বাক্যে পরিণত করা হয় তবে পূর্বধারণাটি অক্ষুন্ন থাকে। পূর্বধারণার এই মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে বলা হয় নেতিবাচকতায় স্থিরতা (Levinson 1983 168; George Yule 1996 132 ) । বাশ (১৯৭৬ : ৬৭) নেতিবাচকতায় স্থিরতাকে পূর্বধারণার সংজ্ঞায় এভাবে প্রকাশ করেন :

A necessitates B

A presupposes B = Df and

-A necessitates B

হীরোধক উক্তি থেকে যে পূর্বধারণা পাওয়া যায় তা তার প্রতিপক্ষ নাবোধক বাক্য থেকে পওয়া যায় কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আমরা নীচের উদাহরণগুলো বিবেচনা করতে পারি :

১. তার মামা লন্ডন থেকে আসছে। তার মামা লন্ডন থেকে আসছে না । পূর্বধারণা : তার একজন মামা আছে ।

২. আমার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে । আমার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েনি । পূর্বধারণা আমার একটি পাড়ি আছে।

৩. দরজা বন্ধ করো । পরজা বন্ধ করো না। পূর্বধারণা : এখন দরজা খোলা।

. or পুনরায় এখানে এসেছে। সে পুনরায় এখানে আসেনি । পূর্বধারণা সে আগেও এখানে এসেছিল ।
উপরের উদাহরণগুলিতে দেখা যায় পূর্বধারণা বাকানিহিত বচনের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয় । অর্থাৎ একটি বচন সত্য হলে পূর্বধারণাটি বজায় থাকে বা সত্য হয় ।

এদিক থেকে পূর্বধারণা প্রজ্ঞাপন থেকে পৃথক । প্রজ্ঞাপনের ফলে যে অনুমিত ধারণাটি পাওয়া যায় তা কেবল বচনের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অস্বীকৃতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ যদি কোন বচন সত্য হয় তবে প্রজ্ঞাপিত ধারণা সত্য হবে আর যদি বচনটি মিথ্যা হয় তবে প্রজ্ঞাপিত ধারণাটি সত্য না মিথ্যা হবে তা নিশ্চিত নয়। আমরা প্রজ্ঞাপনের কয়েকটি উদাহরণ দিতে পারি :

১. পিনু অন্তসত্ত্বা। (প্রজ্ঞাপন : পিলু একজন নারী)

২. সে একটি কমলা খেয়েছে। (প্রজ্ঞাপন সে একটি ফল খেয়েছে)

৩. একটি বিড়াল খাটের উপর বসে আছে। (প্রজ্ঞাপন : একটি প্রাণী খাটের উপর বসে আছে)

৪. সে পত্রিকা পড়ছে। (প্রজ্ঞাপন : সে পড়ছে

৫. বাদল গান গেয়েছে। (প্রজ্ঞাপন : বাবল শব্দোচ্চারণ করেছে)

এখন আমরা নেতিবাচকতা পরীক্ষা করে দেখতে পারি এই প্রজ্ঞাপনগুলি টিকে কিনা ।

১. পিনু অন্তসত্ত্বা নয় । . পিনু একজন নারী।

২. সে কোন কমলা খায়নি।

: সে একটি ফল খেয়েছে।

৩. কোন বিড়াল খাটের উপর বসে নেই । ১. একটি প্রাণী খাটের উপর বসে আছে।

৪. সে পত্রিকা পড়ছে না।

— সে পড়ছে।
৫. বাদল গান গায়নি ।

. বাদল শব্দোচ্চারণ করেছে।

স্পষ্টতঃই উপরের উপহরণগুলিতে সিদ্ধান্ত বৈধভাবে অনুমিত হয়নি। এখানে যৌক্তিক ত্রুটি হলো সিদ্ধান্তের বচন আশ্রয় বাক্যের বচনের চেয়ে অধিক ব্যাপক। অর্থাৎ

নারী > অন্তসত্তা

ফল > কমলা

প্রাণী > বিড়াল

পড়া > পত্রিকা পড়া শব্দোচ্চারণ করা > গান গাওয়া

যে অন্তসত্তা সে অবশ্যই একজন নারী, কিন্তু যে অন্তসত্তা নয় সে নারী না হয়ে পুরুষও হতে পারে। যে কমলা খেয়েছে সে অবশ্যই ফল খেয়েছে, কিন্তু যে কমলা খায়নি সে কমলা ছাড়া অন্য যে কোন কিছু খেতে পারে । কোন কিছু বিড়াল হলে অবশ্যই তা প্রাণী হবে, কিন্তু কোনকিছু বিড়াল না হলে তা যে প্রাণী হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

 

একইভাবে কেউ পত্রিকা না পড়লে বা গান না গাইলে অন্য যে কোন কিছু করতে পারে । কাজেই প্রজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে শুধু এতটুকু গ্যারান্টি পাওয়া যায় যে কোন বাক্য সত্য হলে তার প্রজ্ঞাপিত বচনটিও সত্য হবে । কেম্পসন (১৯৭৭ ১৪৩) প্রজ্ঞাপন ও পূর্বধারণার পার্থক্যটি একটি সারণীর মাধ্যমে স্পষ্টরূপে প্রকাশ করেন :

প্রজ্ঞাপন

পূর্বধারণা

S S FF

S S TT

T → T

– (TV F ) F F→ T

F→ Tv F

প্রজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে Si সত্য হলে S2 সত্য হবে, S, মিথ্যা হলে S, মিথ্যা হবে এবং S, মিথ্যা হলে S2 সতা অথবা মিথ্যা হবে। অন্যদিকে পূর্বধারণার ক্ষেত্রে S1 সত্য হলে S সত্য হবে, S, মিথ্যা হলে S, সত্য বা মিথ্যা কিছুই হবে না এবং S, মিথ্যা হলে S2 সত্য হবে ।

এখানে পূর্বধারণার ক্ষেত্রে S2 মিথ্যা হলে S, সতা বা মিথ্যা কিছুই হবে না (দ্বিতীয় সূত্র) এটি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন যে ফ্রান্সের রাজা টেকো (The king of France is bald) এই বাক্য এই পূর্বধারণা প্রকাশ করে যে ফ্রান্সের একজন রাজা আছেন।

রাসেল দাবি করেন বাস্তবে ফ্রান্সের যদি কোন রাজা থেকে না থাকে তাহলে ফ্রান্সের রাজ টেকো এই বাক্যটি মিথ্যা হবে । কিন্তু যুক্তিবিদ স্ট্রসন এক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন ফ্রান্সের রাজা টেকো এই উক্তিতে বক্তা এটা বলে না যে কোন ব্যক্তি অস্তিত্বশীল, এতে সে শুধু তার অস্তিত্বের পূর্বধারণা করে। যদি উক্ত ব্যক্তির অস্তিত্ব না থাকে তবে পূর্বধারণা ব্যার্থতা ঘটে ।

এক্ষেত্রে উক্তিটি মিথ্যা হয়ে যায় না বরং একটি না সত্য না মিথ্যা অবস্থার সৃষ্টি হয় যাকে বলা যেতে পারে সত্যমূল্য ব্যবধান। ফ্রান্সের রাজা টেকো নয় এই নেতিবাচক বাক্যের ক্ষেত্রেও একই ব্যাখ্যা প্রযোজ্য (Palmer 1981 167)
পূর্বধারণাকে প্রধানতঃ দুই ভাগে ভাগ করা হয় বাগার্বিক পূর্বধারণা ও প্রায়োগিক পূর্বধারণা । প্রায়োগিক পূর্বধারণার ক্ষেত্রে পূর্বধারণাটি ভাষার বাস্তব প্রয়োগ থেকে দ্যোতনা মূল্যের মাধ্যমে অনুমিত হয় । যেমন :

ক তুমি আমার লাইলী ।

: তুমি আমার মজ

এখানে লাইলী ও মজনুর বিশেষ প্রয়োগ থেকে বোঝা যায় বক্তা শ্রোতা উভয়ে উভয়কে ভালবাসে । বাগধিক পূর্বধারণার ক্ষেত্রে পূর্ব্বারণাটি প্রথাগত অর্থ থেকে যোগাযোগের সাধারণ নিয়মে নিঃসৃত হয়। বাগধিক পূর্বধারণা দু’ধরনের হতে পারে। অস্তিত্ববাচক পূর্বধারণা এবং বৌক্তিক পূর্বধারণা। অস্তিত্ববাচক পূর্বধারণা প্রকাশিত হয়

 

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version