প্রশ্নোত্তেরর সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তের বিনম্রতা ও বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-প্রশ্নোত্তেরর সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তের বিনম্রতা ও বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

প্রশ্নোত্তেরর সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তের বিনম্রতা ও বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

সাক্ষাৎকার পর্বে প্রশ্নোত্তরের সাহায্যে প্রাপ্ত উপাত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দাওয়াতপত্র প্রণয়নকারী সচেতনভাবে দাওয়াতপত্রে বিভিন্ন ধরনের বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করেন আমন্ত্রিত অতিথির উদ্দেশ্যে। পারিবারিক দাওয়াতপত্রে ধর্মীয় বিদ্ৰতাসূচক শব্দও ব্যবহার করা হয়।

ধর্মীয় দাওয়াতপত্রে আবশ্যিক হিসেবে ধর্মীয় বিনম্রতাসূচক শব্দ তারা ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য থাকে বলেও উত্তরদাতা মনে করেন। এছাড়া আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে বিভিন্ন ইতিবাচক কিন্তুতাসূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন আমন্ত্রিত অতিথির প্রতি সম্মান, আন্তরিকতা, বিনম্রতা প্রকাশের মাধ্যমে বিধিবদ্ধ পারিবেশে তাকে সম্বোধন করার জন্য।

ফলাফলে দেখা যায়, আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন আমন্ত্রণগ্রহিতার প্রতি বিনয়, সৌজন্য, আন্তরিকতা প্রকাশ করে তাকে উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য অনুরোধ করে। দাওয়াতপত্র প্রণয়নকারী বিনম্রতার

 

প্রশ্নোত্তেরর সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তের বিনম্রতা ও বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

 

তত্ত্ব অনুসারে ইতিবাচক বিদ্ৰতাসূচক শব্দ অপেক্ষা নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ অধিক ব্যবহার করেন। ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহারে আমন্ত্রণকারীর ‘অভিব্যক্তি’ বৃদ্ধি পায়, নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহারে আমন্ত্রণকারীর ‘অভীক’ হ্রাস পায়।

আমাদের সংস্কৃতিতে অতিথিকে অনুরোধের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ কারণেও নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দের আধিক্য দাওয়াতপত্রে পরিলক্ষিত হয়। আমন্ত্রণকারী মনে করেন, বিনম্রতা প্রকাশক শব্দাবলি দাওয়াতপত্রে যথাযথভাবে প্রয়োগ না করলে তা সৌজন্য বহির্ভূত হবে এবং আমন্ত্রিত অতিথি হয়তো উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না।

আমন্ত্রণগ্রহিতার নিকট হতে প্রাপ্ত উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, দাওয়াতপত্রে বিনম্রতাসূচক শব্দের ব্যবহার অনেকেই সচেতনভাবে লক্ষ করেন, কাঠামোবদ্ধ রীতি বলে অনেকে আবার করেন না। তবে দাওয়াতপত্রে বিনম্রতা প্রকাশক শব্দসমূহ ব্যবহার করা না হলে যে তা সৌজন্য বহির্ভূত হতো, এ বিষয়ে সবাই একমত প্রকাশ করেছেন এবং এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করা না হলে অনেকেই অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন না।

পারিবারিক এবং ধর্মীয় দাওয়াতপত্রে ধর্মীয় বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহারে মতভেদ রয়েছে। দাওয়াতপত্রগ্রহিতাদের মতে ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক বিভিন্ন শব্দ আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে প্রয়োগ করেন অতিথির প্রতি আন্তরিকতা, বিনম্রতা প্রকাশের পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক পরিবেশে সম্বোধনের জন্য।

 

প্রশ্নোত্তেরর সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তের বিনম্রতা ও বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

 

আমাদের সামাজিক রীতি অনুযায়ীও এ ধরনের শব্দাবলির ব্যবহার সুপ্রচলিত। ব্রাউন ও লেভিনসনের তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) মতে এই বিনম্রতাসূচক শব্দসমূহ ইতিবাচক বিনম্রতা নির্দেশ করে । এই ধরনের বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে আমন্ত্রণকারী নিজের ‘অভিব্যক্তি’ বৃদ্ধি করেন আমন্ত্রণগ্রহিতার নিকট।

আবার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে সৌজন্য, বিনম্রতা, আন্তরিকতা প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহার করা হয়। এগুলো নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ। এই ধরনের বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহারে অতিথির সম্মান যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি দাওয়াতপত্র প্রণয়নকারীর আন্তরিকতাও সুস্পষ্ট হয়।

মূলত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানোর জন্যই এই ধরনের শব্দ দাওয়াতপত্রে ব্যবহার করা হয় বলে আমন্ত্রণগ্রহণকারীগণ মনে করেন। ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার কৌশল ( Brown and Levinson, 1987) অনুসারে বিশ্লেষিত ৫ শ্রেণির দাওয়াতপত্রের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহারের পরিমাণ ৩৩ শতাংশ এবং নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ

ব্যবহারের পরিমাণ ৬৭ শতাংশ। দাওয়াতপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী ‘অভীক’ হ্রাস করার জন্য নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ অধিক ব্যবহার করেছেন। সাক্ষাৎকার পর্বে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্ত পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় আমন্ত্রণকারী ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ অপেক্ষা নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ দাওয়াতপত্র প্রণয়নে অধিক ব্যবহার করেছেন।

আমন্ত্রণগ্রহিতার নিকটও নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ অধিক গুরুত্ব বহন করে। নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দাবলি আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে ব্যবহার না করলে তা সৌজন্যবহির্ভূত হতো বলেও আমন্ত্রণপত্রগ্রহিতারা উল্লেখ করেছেন। আমন্ত্রণকারী লিচ এর বিনম্রতার রীতি (Leech, 1983) অনুসারে অনুমোদিত রীতি, মিতচারিতা রীতি, সহানুভূতি রীতি দাওয়াতপত্রে প্রয়োগ করেছেন।

বাককৃতি প্রকাশের জন্য তারা মূলত বর্ণনামূলক নিবেদন কৃতি, আদেশমূলক নিবেদন কৃতি, অঙ্গীকারমূলক নিবেদন কৃতি ব্যবহার করেছেন। দাওয়াতপত্রের প্রস্তাব কৃতির অন্তরালে আমন্ত্রণকারী আদেশমূলক নিবেদন কৃতি প্রকাশ করেছেন তার মনোগত অভিপ্রায় প্রকাশের জন্য। এক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারীর মনোগত অভিপ্রায় উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো।

 

প্রশ্নোত্তেরর সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তের বিনম্রতা ও বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

 

বিনম্রতাসূচক যোগাযোগের জন্য নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশের সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই গবেষণাকর্মের নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ এবং প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ, উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাককৃতিতে বিশেষ করে আদেশমূলক বাককৃতিতে লিচের অনুমোদিত রীতি এবং মিতচারিতা রীতির প্রয়োগ ঘটেছে যা মূলত ব্রাউন ও লেভিনসনের নেতিবাচক বিনম্রতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দও বিনম্র যোগাযোগে ক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করে যা লিচের সহানুভূতি রীতির ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। প্রশ্নোত্তরের সাহায্যে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্তও এই বিষয়গুলিকেই নির্দেশ করে।
পরিশেষে বলা যায়, উক্ত গবেষণাকর্মের দাওয়াতপত্রে ব্রাউন ও লেভিনসনের (Brown and Levinson, 1987) বিনম্রতার তত্ত্ব, লিচের বিনম্রতার রীতি (Leech, 1983) এবং সার্লের বাককৃতি (Searle, 1969) তত্ত্বের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেছে।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment