ফার্সি ভাষা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ভাষাগুলোর একটি। এই ভাষার লিপি মূলত আরবি বর্ণমালা থেকে গৃহীত হলেও এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। ফার্সি বর্ণমালা আধুনিক ফার্সি (Persian/Dari/Tajiki) ভাষার লিখিত রূপ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজকের এই আলোচনায় আমরা ফার্সি বর্ণমালার উৎস, কাঠামো, উচ্চারণপদ্ধতি, আরবি থেকে পার্থক্য এবং ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
ফার্সি বর্ণমালার উৎস ও ইতিহাস:
ফার্সি ভাষার প্রাচীন রূপ অবেস্তান ও পেহলভি লিপিতে লেখা হতো। ইসলাম আগমনের পরে ফার্সি ভাষা আরবি লিপিকে গ্রহণ করে।
ফলে আধুনিক ফার্সি ভাষা বর্তমানে আবজাদ লিপি অর্থাৎ এমন এক লিপিতে লেখা হয়, যেখানে স্বরবর্ণগুলি সম্পূর্ণভাবে লেখা না হলেও অর্থ বোঝা যায়।
ফার্সি লিপির মূল গঠন আরবি বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও এটি আরবি বর্ণমালার ২৮টি অক্ষরের সঙ্গে আরও ৪টি বর্ণ যোগ করে মোট ৩২টি অক্ষর ব্যবহার করে।
ফার্সি বর্ণমালার ৩২টি অক্ষর:
| বর্ণ | নাম | উচ্চারণ | বৈশিষ্ট্য |
| ا | আলিফ | ā / a | স্বরবর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত |
| ب | বে | b | ব্যঞ্জনবর্ণ |
| پ | পে | p | ফার্সির নিজস্ব বর্ণ |
| ت | তে | t | – |
| ث | সে | s | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| ج | জিম | j | – |
| چ | চে | ch | ফার্সির নিজস্ব বর্ণ |
| ح | হা | h (গভীর) | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| خ | খে | kh | – |
| د | দাল | d | – |
| ذ | যাল | z | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| ر | রে | r | – |
| ز | জে | z | – |
| ژ | ঝে | zh | ফার্সির নিজস্ব বর্ণ |
| س | সিন | s | – |
| ش | শিন | sh | – |
| ص | সাদ | s | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| ض | জাদ | z | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| ط | তো | t | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| ظ | যো | z | আরবি শব্দে ব্যবহৃত |
| ع | আয়ন | `a | গলার আওয়াজ |
| غ | গেইন | gh | – |
| ف | ফে | f | – |
| ق | কাফ | q | গভীর k |
| ک | কাফ | k | – |
| گ | গাফ | g | ফার্সির নিজস্ব বর্ণ |
| ل | লাম | l | – |
| م | মিম | m | – |
| ن | নুন | n | – |
| و | ভাও | v / u / o | স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ |
| ه | হে | h | – |
| ی | ইয়ে | y / i | স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ |
ফার্সির চারটি নিজস্ব বর্ণ (আরবিতে নেই):
১. پ (pe) – ইংরেজি P এর মতো
২. چ (che) – CH
৩. ژ (zhe) – ZH (যেমনঃ “measure”)
৪. گ (gaf) – G (যেমনঃ “go”)
এই চারটি বর্ণ আরবি বর্ণমালায় অনুপস্থিত, তাই এগুলোকে ফার্সি লিপির স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য বলা হয়।
️ স্বরবর্ণ (Vowels) ব্যবহারের নিয়ম:
ফার্সিতে তিনটি সংক্ষিপ্ত স্বরবর্ণ এবং তিনটি দীর্ঘ স্বরবর্ণ রয়েছে:
▸ সংক্ষিপ্ত স্বরবর্ণ:
- ـَ (zabar) – a (যেমন: بَد – bad = খারাপ)
- ـِ (zer) – e (যেমন: بِس – bes = যথেষ্ট)
- ـُ (pesh) – o/u (যেমন: بُد – bud = ছিল)
▸ দীর্ঘ স্বরবর্ণ:
- آ – ā (যেমন: آب – āb = পানি)
- ی – ī / e
- و – ū / o
✍️ বর্ণের অবস্থানভেদে রূপান্তর:
ফার্সি অক্ষরগুলি আরবির মতো চারটি অবস্থানে রূপান্তরিত হয়:
১. একাকী
২. শব্দের শুরুতে
৩. শব্দের মাঝে
৪. শব্দের শেষে
উদাহরণ: বর্ণ “ب” (be)
- একাকী: ب
- শুরুতে: بـ
- মাঝে: ـبـ
- শেষে: ـب
ভাষাগত বৈচিত্র্য ও ব্যবহার:
- ইরান, আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তান – ফার্সি ভাষার তিনটি প্রধান রূপের মধ্যে লিখিত ভাষা প্রায় অভিন্ন, যদিও উচ্চারণ ও কিছু শব্দ আলাদা।
- তাজিকিস্তান – এখন সাইরিলিক লিপিতে ফার্সি (তাজিক) লেখা হয়, কিন্তু পুরনো সাহিত্য আরবি-ফার্সি লিপিতেই ছিল।
- উর্দু, কুর্দি, পশ্তু ইত্যাদি ভাষা – ফার্সি লিপির প্রভাব ও বর্ণ ব্যবহারে মিল রয়েছে।
ফার্সি বর্ণমালা শুধুমাত্র একটি ভাষার ভিত্তি নয়, বরং হাজার বছরের সাহিত্য, ধর্ম, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ধারক। যারা ফার্সি ভাষা শেখার পরিকল্পনা করছেন, তাদের প্রথম পদক্ষেপ হল এই বর্ণমালা ও তার ব্যবহার ভালোভাবে আয়ত্ত করা। এই ভিত্তির উপর গড়ে উঠবে কাব্য, দর্শন, প্রেম ও জ্ঞানের এক অসাধারণ যাত্রা।