Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

বাংলাদেশে আরবি ভাষা চর্চাঃ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশে আরবি ভাষা চর্চাঃ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিখনের বিবেচ্য দিকসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত।

Table of Contents

Toggle

বাংলাদেশে আরবি ভাষা চর্চাঃ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

 

 

বাংলাদেশে আরবি ভাষাচর্চা

বাংলাদেশে আরবি ভাষার প্রচলন ও চর্চা দীর্ঘ দিনের। ভারতীয় উপমহাদেশে আরবি ভাষার প্রবেশ প্রথমে আরব বণিকদের মাধ্যমে। আরব বণিকরা বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের বাণিজ্য করতেন। এই বাণিজ্যের ফলে আমাদের চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, নোয়াখালীতে ও উপকূলীয় এলাকায় তাদের ভাষার আগমন। পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব এই বণিক আরব ও ধর্ম প্রচারক আরবদের যাতায়াতের মাধ্যমে বাংলাদেশে ধীরে ধীরে আরবি ভাষার চর্চা শুরু হয়।

উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলে আরবি ভাষা শেখার অধির আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তায় এদেশের মানুষ আরবি ভাষা শিখতে শুরু করে। প্রথমে আল-কুরআন তেলাওয়াত, নামাজ, রোজা সঠিকভাবে পালনের জন্য আরবি শেখা শুরু হয়। ধীরে ধীরে সুফি- সাধকগন এই ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে বসতি স্থাপন, খানকাহ-মসজিদ নির্মাণ করে মক্তবের মাধ্যমে আরবি ভাষার পাঠদান করতে থাকেন।

বঙ্গ অঞ্চলে ইসলাম আগমনের ফলে আরবি ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। আরব্য বণিক শ্রেণি ও ধর্ম প্রচারকগণ উপকূলীয় অঞ্চল হয়ে এদেশে প্রবেশ করার কারণে বৃহত্তম চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর অধিবাসীরা আরবি শব্দ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। এই অঞ্চলের অধিবাসীরা দ্রুত কথা বলেন এবং শব্দের শেষ বর্ণ শেষ না করেই বাক্য সমাপ্ত করেন, যা আরবি ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এভাবে সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামের ব্যাপক প্রসারের ফলে আরবি ভাষা চর্চা ও ব্যাপ্তি লাভ করে ।

সময়ের ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশ প্রায় ৮০০ বছর মুসলিম শাসনাধীন থাকার কারণেও বিশেষ করে আদালতে ব্যাপক আরবি ভাষার শব্দ আমরা দেখতে পাই। বিশ্বের ১৫০ কোটির বেশি মানুষের ধর্মীয় আচার- অনুষ্ঠানে আরবি ভাষার প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১২০০ আরবি শব্দ আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি। বাংলাদেশের সকল জেলায় মক্তব, পরবর্তীতে মাদরাসা শিক্ষার প্রচলন এর ফলে আরবির ব্যাপক চর্চা বর্তমানেও বিদ্যমান ।

মুসলিম দেশ হিসেবে ধর্মীয় প্রয়োজনে

বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। তাই ধর্মীয় কারণে কুরআন-হাদিসসহ ইসলামিক জ্ঞান লাভের জন্য আরবি ভাষা জানা আবশ্যক। কেননা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হলে আরবি ভাষা ভালোভাবে জানার কোন বিকল্প নেই। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য আরবি বিশুদ্ধভাবে জানা প্রয়োজন। তাছাড়া ইসলামি বিধি-বিধান, মাসয়ালা-মাসায়েল জানার জন্য বর্ণিত মূল ভাষা অর্থাৎ আরবি ভাষা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।

জ্ঞানার্জনের জন্য

আল-কুরআন শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। এটি মুসলিমদের জন্য ধর্মগ্রন্থ, অন্যদিকে সমগ্র মানবজাতির জন্য জীবন বিধান। জ্ঞানের এমন কোন শাখা নেই যা আল-কুরআনে নেই। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর হাদিসসমূহও আরবি ভাষায়। আল-কুরআন ও আল-হাদিস বিষয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞানের পাশাপাশি মুসলিম মনীষীগণ যে সকল মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন তার অধিকাংশই আরবি ভাষায় রচিত।

ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানসহ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য আরবি ভাষা জানা প্রয়োজন। আরবি ভাষা সঠিকভাবে না জানলে ধর্মীয় বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়।

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম ক্ষেত্র

আমরা আজ যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে গর্ববোধ করি কিংবা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি, এর প্রধান কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলার। রেমিটেন্স বা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার আমাদের জনশক্তি রপ্তানি। মধ্যপ্রাচ্যসহ আরবের অন্যান্য দেশে আমাদের এক কোটিরও বেশি জনশক্তি রয়েছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরবের মুসলিম দেশসমূহের সহানুভূতি ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের সততা, কর্মস্পৃহার জন্য তাঁরা সুনাম বয়ে আনছে।

কিন্তু এ সকল শ্রমজীবি লোকজন প্রচুর টাকা ব্যয় করে উক্ত দেশসমূহে চাকুরি করতে গেলেও আরবি ভাষা জ্ঞান না থাকার কারণে তারা ভালো বেতনে চাকরি করতে পারছে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রায় ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থী মাদরাসায় অধ্যয়ন করে আরবি ভাষা জ্ঞানের জন্য। ভারতীয়রা আরবি ভাষার দক্ষতা অর্জনের কারণে ভালো প্রতিষ্ঠানে, ভালো বেতনে কাজ করতে পারছে। আমাদের দেশের প্রবাসীরাও দ্রুত আরবি ভাষাকে আয়ত্ত করে নিজের অবস্থান সুসংগত করছে।

ব্যবসায়িক কারণ

আমাদের দেশে আরবি ভাষা চর্চার অন্যতম একটি কারণ হলো ব্যবসায়িক কারণ। মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল বাজারের চাহিদা এবং সম্পর্ক জোরদার করার জন্য আরবি ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখা দরকার। পৃথিবীর প্রতিটি দেশ তাদের পণ্যের গায়ে আরবি ভাষা ব্যবহার করছেন। তেমনি আমাদের দেশ থেকে যে সকল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, সেখানেও আরবি ভাষার ব্যবহার আমরা দেখতে পাচ্ছি। এভাবে ব্যবসায়িক গুরুত্বের কারণে আমাদের দেশে আরবি ভাষার চর্চা অব্যাহত আছে।

 

 

মাদরাসাসমূহে আরবি ভাষার চর্চা

বাংলাদেশের প্রচলিত সকল শিক্ষা ব্যবস্থায় আরবি ভাষাচর্চা অনিয়তি হলেও আলিয়া ও কওমি মাদরাসায় আরবি ভাষা চর্চা দৈনন্দিনই হচ্ছে। মাদরাসাসমূহে আরবি বিষয়গুলো, যেমন- আল-কুরআন, আল-হাদিস, আরবি সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে ও দক্ষতা লাভের জন্য পড়ানো হয়। এই অধ্যয়নের মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় জ্ঞান লাভ। আরবি ভাষার আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এখানে উপস্থাপন করা হয় না। ফলে বর্তমান বিশ্বে আরবি ভাষার অবস্থান যে শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, অনেকে তা বুঝতে ও বুঝাতে সক্ষম হন না ।

আরব দেশসমূহে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য

বাংলাদেশে আরবি ভাষাচর্চার অন্যতম দিক হচ্ছে আরব দেশসমূহের সাথে জোরালো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন । মুসলিম দেশ ও আরবি চর্চা অব্যাহত বিধায় আরব দেশসমূহের সাথে আমাদের সম্পর্ক বিদ্যমান। এই রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ করার জন্য আরবি চর্চা অব্যাহত রয়েছে। যার কারণে আরব দেশসমূহের রাজনৈতিক প্রয়োজনেও আমাদের দেশের শান্তিরক্ষীরা আরব দেশসমূহে কাজ করে যাচ্ছে। বিপরীতে বিভিন্ন উন্নয়নে তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থন আমরা পেয়ে যাচ্ছি।

আরবি ভাষা চর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই

আরবি আমাদের মাতৃভাষা বা জাতীয় ভাষা কিংবা Terget Language নয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক কারণে আরবি ভাষা আমাদের নিকট মর্যাদাবান ও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে আরবি ভাষা ব্যবহারের তেমন সুযোগ নেই। চর্চা-অনুশীলনের অভাবে আরবি ভাষায় আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুবিধা থাকলে আরবি ভাষা দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পেতো।

পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নেই

আরবি ভাষায় কথোপকথনের দক্ষতা বা বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শেখার জন্য পর্যাপ্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন কোনো ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নেই, যেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকে আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে। যদি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে আরবি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা মাফিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আরবি ভাষায় দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পেতো।

দক্ষ প্রশিক্ষক নেই

আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোতে ব্যাপক আরবি পড়ানো হলেও আরবি ভাষা জানা দক্ষ শিক্ষক ও প্রশিক্ষককের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অনেকেই মাদরাসায় পড়ান বা পড়েন, কিন্তু তারা বেশির ভাগই আরবি ভাষায় কথা বলতে পারেন না। দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি হলে আরবি ভাষায় দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি হবে। ফলে, আরবি ভাষা দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

 পেশাগত দক্ষতায় ভাষা না জানা

আমাদের দেশের অনেকেই পেশাগত জ্ঞানে দক্ষ। কিন্তু আরবি ভাষায় দক্ষতা না থাকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বেশি বেতন ও সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। পেশাগত উন্নয়নে আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারলে এ সকল সমস্যার সমাধান করা সহজ হতো।

ব্যাকরণ নির্ভর পাঠদান

বাংলা ভাষাকে আমরা মায়ের ভাষা বলি। আমাদের মাতৃভাষা শিখতে গিয়ে আমরা কি আগে ব্যাকরণ পড়েছি? নিশ্চয়ই না। আমাদের দেশে ব্যাকরণ নির্ভর আরবি পড়াশোনার কারণে তা জটিল ও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করার ফলে আরবি ভাষা-ভীতি মননে গেঁথে আছে।

পাঠদান পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ

আমাদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতিতে প্রাচীন বা সনাতন বক্তৃতা পদ্ধতিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পাঠদান পদ্ধতির উন্নয়ন সাধিত হয়নি। যদি পাঠদান পদ্ধতিকে আমরা বর্তমান চাহিদা অনুসারে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে সঠিকভাবে অনুসরণ করি, তাহলে আরবি ভাষা বোঝা, শোনা, পড়া বা শেখা আরো সুন্দর ও সহজ হতো। আরবি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি পেতো ।

ব্যবহারিক আরবির প্রতি যত্নবান না হওয়া

বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আরবি ব্যবহারিক ভাষা বোঝেন না বা ব্যবহারও করেন না। পাঠ্যপুস্তক নির্ভর পাঠদান যুগযুগ ধরে বিদ্যমান। যদি ব্যবহারিক আরবির প্রতি যত্নবান হওয়া যায় তাহলে আরবি শিখা সহজবোধ্য হতো। আরবি ভাষা জ্ঞান বৃদ্ধি পেতো।

আরবি ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ না করা

আরবি ভাষা চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আরবি ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। যেহেতু আরবি একটি বিদেশী ভাষা, সুতরাং-এর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

আরবি ভাষা শিক্ষা উপকরণের অভাব

আরবী ভাষার শিক্ষাদানের জন্য আমাদের দেশে এই বিষয়ে উপকরণের যথেষ্ট পরিমাণ অভাব রয়েছে। পাঠ্যবইগুলোও সেভাবে প্রস্তুত না। দৈনন্দিন জীবনের কথাগুলো উপকরণের মাধ্যমে ব্যবহৃত হলে শিক্ষার্থীরা সহজেই আরবি ভাষার সাথে পরিচিত হতে পারতো। আমাদের প্রথমেই লক্ষ্য হওয়া উচিত আরবি ব্যবহারিক শব্দসমূহ আয়ত্ত করা। তাহলে ধীরে ধীরে আরবি ভাষায় দক্ষতা অর্জন সম্ভব ।

 

 

শিক্ষাদানগত সমস্যা

ভাষা শিক্ষার জন্য প্রশিক্ষক হতে হবে দক্ষ ও মেধাবী যুগোপযুগী। আমাদের দেশের শিক্ষক বা প্রশিক্ষকরা ট্রেনিংপ্রাপ্ত নন। অপ্রতুল প্রশিক্ষণের কারণে শিক্ষক নিজেকে আধুনিক বা বিশ্বমানের প্রশিক্ষক হিসেবে তৈরি করতে পারছেন না। বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন শিক্ষক নিজের পেশাগত জীবনে নিজেকে শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রাখেন। আমাদের দেশে আরবী ভাষার শিক্ষাদানের জন্য দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে শিক্ষার্থীরা আরবি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে নিজের মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হতো।

আরও দেখুনঃ

 

Exit mobile version