সার্ল এর বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-সার্ল এর বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

সার্ল এর বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বাককৃতির ফলাফল
পর্যালোচনা

প্রতিটি দাওয়াতপত্র বিভিন্ন ধরনের কৃতি প্রকাশ করে। দাওয়াতপত্রের ডিসকোর্স বা উক্তিমালায় প্রতিফলিত এসব কৃতির মাধ্যমে আমন্ত্রণকারী তার আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা আমন্ত্রণগ্রহিতার নিকট উপস্থাপন করেন। বিশেষ করে, আমন্ত্রণকারী মনোগত অভিপ্রায় বা নিবেদন কৃতি প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করে থাকেন। এই কারণে বর্তমান গবেষণাকর্মে বিনম্রতা তত্ত্বের সাথে বাকৃতি তত্ত্বের সংযোগ ঘটানো হয়েছে।

गा (Searle, 1969) এর বাককৃতির শ্রেণিবিভাগ অনুসারে বিশ্লেষিত ৫ শ্রেণির দাওয়াতপত্রে বর্ণনামূলক, আদেশমূলক, অঙ্গীকারমূলক এবং প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতির প্রয়োগ ঘটেছে। এশিয়ান সংস্কৃতিতে আদেশমূলক নিবেদন কৃতি সর্বাধিক গৃহীত কৌশল (Harooni & Pourdana, 2017)।

 

সার্ল এর বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

 

এই গবেষণায় বিশ্লেষিত দাওয়াতপত্রে অনুরোধের মাধ্যমে আদেশমূলক নিবেদন কৃতি প্রকাশ পেয়েছে। কেননা, আদেশমূলক নিবেদন কৃতিতে বক্তার আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ প্রকাশ পায়। দাওয়াতপত্রের লিখিত উক্তিমালার ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারীর মনোগত অভিপ্রায় ‘অনুরোধ’ এখানে প্রকাশ পেয়েছে।

আমন্ত্রণকারী অনুরোধের মাধ্যমে অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলেছেন যা আদেশমূলক নিবেদন কৃতি। ব্রাউন ও লেভিনসনের তত্ত্বমতে আমন্ত্রণকারী আদেশমূলক নিবেদন কৃতি প্রকাশে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন। বর্ণনামূলক নিবেদন কৃতি প্রকাশে আমন্ত্রণকারী ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরনের বিদ্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন দাওয়াতপত্রে।

বর্ণনামূলক নিবেদন কৃতিতে আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আমন্ত্রণগ্রহিতাকে প্রদান করেন। তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে সম্বোধন করেন এবং নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করে আমন্ত্রণকারী নিজের বিনয়, আন্তরিকতা, সৌহাদ্য আমন্ত্রণগ্রহিতার নিকট উপস্থাপন করেন।

 

সার্ল এর বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

 

প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতি অর্থাৎ ধন্যবাদ জ্ঞাপন, দুঃখ প্রকাশ, অভিনন্দন জানানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ আমন্ত্রণকারী ব্যবহার করেন। দাওয়াতপত্রের ক্ষেত্রে প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতিতে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নেতিবাচক বিন্দুতাসূচক শব্দ আমন্ত্রণকারী প্রয়োগ করেন। অঙ্গীকারমূলক নিবেদন কৃতিতেও ভবিষ্যতে কোনো অঙ্গীকার প্রদান করার ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করেন।

দাওয়াতপত্রে ৪ ধরনের নিবেদন কৃতির প্রকাশ ঘটলেও মূলত আদেশমূলক নিবেদন কৃতি প্রকাশের জন্যই আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে অন্যান্য কৃতির সংযোগ ঘটিয়েছেন। নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহারে নেতিবাচক পরিস্থিতি পরিহার করা যায়, এ কারণে আমন্ত্রণকারী বর্ণনামূলক, আদেশমূলক, অঙ্গীকারমূলক এবং প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন।

আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে ব্রাউন ও লেভিনসনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিনম্রতার তত্ত্বের সাথে লিচের বিনম্রতার রীতিও প্রয়োগ করেছেন। বর্ণনামূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে অনুমোদিত রীতি, মিতচারিতা রীতি ও সহানুভূতি রীতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।

 

সার্ল এর বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বাককৃতির ফলাফল পর্যালোচনা

 

দাওয়াতপত্রে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য প্রদান অর্থাৎ বর্ণনামূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী নিজেকে তুচ্ছ করার মাধ্যমে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে সম্মানিত করেন। আদেশমূলক নিবেদন কৃতি বা অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানোর ক্ষেত্রেও অতিথির সম্মানকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থাৎ আমন্ত্রণকারী নিজেকে তুচ্ছ করে আমন্ত্রিত অতিথিকে সম্মানিত করেছেন।

লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে আদেশমূলক নিবেদন কৃতিতে অনুমোদিত রীতি ও মিতচারিতা রীতি, প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে অনুমোদিত রীতি, সহানুভূতি রীতি ও মিতচারিতা রীতি আমন্ত্রণকারী ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজে তুচ্ছ হয়ে অতিথির সম্মান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণগ্রহিতার মধ্যকার পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহানুভূতি বৃদ্ধি করার জন্য দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রণকারী এই ধরনেই বিনম্রতা রীতি প্রয়োগ করেন।

অঙ্গীকারমূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে অনুমোদিত রীতি ও মিতচারিতা রীতির প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। এখানেও আমন্ত্রণকারী নিজে অকিঞ্চিৎকর হয়ে বিনয় প্রকাশের মাধ্যমে আমন্ত্রণ গ্রহণকারীকে সম্মানিত করেছেন।

দাওয়াতপত্র প্রণয়নকারী তার বিভিন্ন কৃতি প্রকাশের জন্য প্রয়োজন অনুসারে ব্রাউন ও লেভিনসনের তত্ত্ব বা লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে নানা প্রকার বিনম্রতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে আমন্ত্রণকারী-আমন্ত্রণ গ্রহিতার মধ্যকার ভাষিক যোগাযোগ সুস্পষ্ট হয় এবং আন্তঃসামাজিক সম্প্রীতিও বৃদ্ধি পায়।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment