আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বিদেশি রূপমূল
বিদেশি রূপমূল
সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় প্রয়োজনে বিদেশি জনগোষ্ঠীর এদেশে আগমন ও বসবাসের ফলে বাংলার সমাজ সংস্কৃতিতে যেমন এসেছে পরিবর্তন তেমনি প্রাত্যহিক জীবনাচরণে ব্যবহৃত শব্দাবলিতে লক্ষ্য করা যায় বিদেশি ভাষার সুস্পষ্ট ছাপ।
বাংলাভাষার রূপমূল ভাণ্ডারে যেসব বিদেশি ভাষার রূপমূল অপরিবর্তিতভাবে বা কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলাভাষায় অনুপ্রবেশ করেছে সেগুলো হল: আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি। ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় উল্লেখিত বিদেশি ভাষার রূপমূল প্রচলিত।
আরবি ও ফারসি রূপমূল
বিশেষত রাজনৈতিক, ধর্ম প্রচারের কারণে উনিশ শতকে আরবি, ফারসি ভাষার বহুল ব্যবহার ঘটেছে বাংলা ভাষায়। এভাবে বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি, ফারসি প্রবেশ করে বাংলার রূপমূল ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। নিচে ডেমরা অঞ্চলে প্রচলিত আরবি ফারসি রূপমূলের ব্যবহার দেখানো হল।
ডেমরার আঞ্চলিক ভাষা
আক্কল (বুদ্ধি )
অকতো (নামাজের সময়)
উছিলা
কিছছা (গল্প)
কেমত (শেষ বিচারের দিন)
কুরান (ধর্ম গ্রন্থ)
খাইছলত (অভ্যাস)
খেন্যত
গোলাম (চাকর অর্থে)
গোস্যা (অভিমান)
ছোয়াৰ
শালিশ
জবাব
জমাত (মসজিদে একত্রে নাম
তছবি/তজি
দরজাল/জরদাল
দুইন্যা
ফিরিছতা
ফুরছত
মুলোবি
মাপ (ক্ষমা)
মুয়াজ্জিম (যে আজান দেয়)
মুরুব্বি
মারম
জবো
জিফত/ জেফত ( নিমন্ত্রণ )
জেরত
প্রমিত বাংলা
আক্কেল
দিন)
কিয়ামত
কোরান
খাসলত
খিয়ানত গোলাম
গোসা
সওয়ার
সালিস
জওয়াব
এ নামাজ) জামাত
তসবীহ
দজ্জাল
দুনিয়া
ফেরেশতা
ফুরসাত
মৌলবী
মাফ
মুয়াজ্জিন
মুরব্বি
মহরম
জবাই
জিয়াফত
জিয়ারত
আরবি
আকল
ওয়াকত
ওয়াসীলা
কিসসাহ
কিয়ামাহ কুরআন
খাসলত
খিয়ানাহ গুলাম
গমুসাহ
ছাওয়াব
ছালিছ
জাওয়াৰ
জামায়াত তাসবীহ
দজজাল
দুনইয়া
ফিরিশতাহ
সুরসাত
মাওলবী
মুআফ
মুআযযিন
মুরাব্বী
মুহাররম
যাবহ
যিয়াত
যিয়ারত
উল্লেখিত আরবি রূপমূলসমূহ ডেমরা অঞ্চলে উচ্চারণগত তারতম্যের কারণে ধ্বনিগত পরিবর্তিত লক্ষ্য
করা যায়। ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় প্রচলিত আদি প্রতায় হিসেবে ব্যবহৃত আরবি ও ফারসি ভাষার রূপমূল
আদি প্রত্যয় (আরবি/ফারসি)
কার
বদ
বে
না
ডেমরার আঞ্চলিক রূপ
কারসাজি
বদমাইশ
বদরাগি
বদজাত
বেকুব
বেকসুর
বেয়াদব
বেইজ্জত
বেতুমিজ
বেলাজা
বেসবুর
বেরাজ
নালায়েক
নারাজ
ডেমরায় আঞ্চলিক ভাষায় প্রচলিত অন্ত্যপ্রত্যয় হিসেবে ব্যবহৃত আরবি ফারসি ভাষার রূপমূল
আদি প্রত্যয় (আরবি/ফারসি) ডেমরার আঞ্চলিক রূপ
বাজ চাইলবাজ
জেলখানা, গোছলখানা পায়খানা
খোর গিরি
সুদখোর বাবুগিরি
বাণিজ্যিকসূত্রে পর্তুগিজ রূপমূল বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায়ও কিছু পর্তুগিজ রূপমূলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাংলা ভাষায় ধ্বনি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্তুগিজ শব্দের কিছু উচ্চারণে ধ্বনিগত পরিবর্তন ঘটেছে। যথা :
ডেমরায় প্রচলিত পর্তুগিজ রূপমূলের বাংলা রূপ : আনারছ (আনারস), আলকাত্তা (আলকাতরা), আইলপিন (আলপিন)
আলমিরা (আলমারি), কামিজ, ছাবি (চাবি), জিনালা (জানালা) ফেরেক (পেরেক) তোয়াইলা (তোয়ালিয়া) বোয়াম (বয়াম ) ছাবান (সাবান) ইত্যাদি ।
বুতাম (বোতাম), ম্যাশতরি (মিস্ত্রি) তামুক (তামাক)
ইংরেজি রূপমূল
ইংরেজি প্রভাবিত বাংলা রূপমূল দুই শতাব্দী ধরে বাংলায় ইংরেজ শাসনে প্রচুর ইংরেজি রূপমূল বাংলা রূপমূল ভাণ্ডারে প্রবেশ করেছে। কখনও রূপমূলগুলো অবিকৃতভাবে ভাষায় চলে এসেছে। কখনও নিজের ভাষায় গঠনের সঙ্গে মিলিয়ে কিছুটা পরিবর্তিত করে ব্যবহার করে। যেমন-
বাংলায় ইংরেজি রূপমূল স্কুল, কলেজ, বাস, পেনসিল, ডিস, প্লেট, কাপ, ইত্যাদি অবিকৃতভাবে প্রবেশ
করেছে। আবার কিছু রূপমূলে ধ্বনিগত পরিবর্তন লক্ষণীয়, যেমন-গেলাশ, ফিলিম, অপিশ
আঞ্চলিক
ইসকুরূপ
কারেন
ডেইন
পারাইবট
মেইল
কুমিডি
কিরকেট
অন্ডা
লেপটিন
লেম
প্রমিত
কারেন্ট
ড্রেন
প্রাইভেট
মিল
কমিটি
ক্রিকেট
হুন্ডা
লেট্রিন
ল্যাম্প
আরও দেখুন: