বিয়ারভিশের তত্ত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-বিয়ারভিশের তত্ত্ব

বিয়ারভিশের তত্ত্ব

মানফ্রেট বিয়ারডিশ (১৯৭০) উপাদানিক বিশ্লেষণ বা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণকে কাজে লাগিয়ে তার বাগার্থিক তত্ত্ব প্রগঠন করেন । তিনি ইঙ্গিতমূলক নিয়মের ধারণা প্রচার করেন । তার মতে, শব্দকে এর উপাদানে বিশ্লেষণ করার সময় ইঙ্গিতমূলক নিয়ম অনুপূরক হিসাবে কাজ করে । যেমন বালক, বালিকা, পুরুষ, মহিলা প্রভৃতি শব্দকে যখন এভাবে বিশেষণ করা হবে :
বালক :

+ প্ৰাণী + মানব, + ছেলে, প্রাপ্তবয়স্ক –

বালিকা :

+ প্রাণী, + মানব, ছেলে, প্রাপ্তবয়স্ক – – + প্রাণী, + মানব, + ছেলে, + প্রাপ্তবয়স্ক
পুরুষ :

মহিলা : + প্রাণী, + মানব, ছেলে, + প্রাপ্তবয়স্ক –

তখন নিম্নলিখিত ইঙ্গিতমূলক নিয়ম প্রযোজ্য হবে :
+ ानव
↑ + প্ৰাণী মেয়ে ছেলে + ছেলে
+ মেয়ে
+ ছেলে + প্রাণী + প্ৰাণী
+ মেয়ে

 

বিয়ারভিশের তত্ত্ব

 

এই নিয়মগুলো নির্দেশ করে যে যা মানব তা অবশ্যই প্রাণী, যা ছেলে তা অবশ্যই মেয়ে নয়, যা মেয়ে তা অবশ্যই ছেলে নয়, যা ছেলে তা অবশ্যই প্রাণী এবং যা মেয়ে তা অবশ্যই প্রাণী। এসমস্ত নিয়ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাগার্থিক বৈশিষ্ট্যের পৌনপুনিকতা রোধ করে। যেমন বালক শব্দের বিশ্লেষণে :
বালক :

+ প্রাণী, + মানব, + ছেলে – মেয়ে,

অপ্রাপ্তবয়স্ক

এভাবে বর্ণনার প্রয়োজন নেই । যেহেতু + মানব প্রাণী” এবং “+ ছেলে → এটুকু বর্ণনা করাই যথেষ্ট : – মেয়ে” সেহেতু কেবল
বালক :

+ প্রাণী, + ছেলে, – অপ্রাপ্তবয়স্ক

বিয়ারভিশ জ্ঞাতিশব্দের অর্থ বিশ্লেষণে সম্পর্কসূচক উপাদানের ধারণা প্রচলন করেন। যেমন ক জন্মদানকারী খ এবং ক সন্তান খ এগুলো হলো সম্পর্কসূচক উপাদান । নীচে পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগিনী, পুত্র, কন্যা -র বিশ্লেষণ দেয়া হলো :

পিতা : খ -এর জন্মদানকারী ক এবং ছেলে ক

মাতা : খ এর জন্মদানকারী ক এবং মেয়ে ক

পুত্রঃ খ -এর সন্তান ক এবং ছেলে ক কন্যা: খ -এর সন্তান ক এবং মেয়ে ক

ভ্রাতা : খ -এর জন্মদানকারীর সন্তান ক এবং ছেলে ক ভগিনী : খ -এর জন্মদানকারীর সন্তান ক এবং মেয়ে ক

এখানে ভ্রাতা ও ভগিনীর অর্থের সংগঠনটি একটু জটিল এবং নিম্নরূপ সংজ্ঞার মাধ্যমে এদের আরেকটু পরিস্কার করা যায় :
ভ্রাতা :

খ -এর জন্মদানকারীর সন্তান ক =Df একজন গ আছে যে খ-এর জন্মদানকারী এবং যার সন্তান ক এবং খ এবং ছেলে ক

খ -এর জন্মদানকারীর সন্তান ক =Df একজন গ আছে যে খ -এর জন্মদানকারী
এবং যার সন্তান ক এবং ক খ এবং মেয়ে ক

ভগিনী :
একইভাবে বিয়ারভিশ সম্পর্কসূচক উপাদানের মাধ্যমে উঁচু নীচু প্রভৃতি শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করেন (স্ব এখানে স্বাভাবিক) :

উচু :

ক. বৃহত্তর স্ব এবং (ক মাত্রা স্ব এবং উলম্ব ক ক ক্ষুদ্রতর স্ব এবং (ক মাত্রা খ এবং উলম্ব ক)

নীচু :

অর্থাৎ তখনই আমরা কোন বন্ধু খ -কে উঁচু বলবো যখন তা ক মাত্রায় অর্থাৎ উলম্বভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃহত্তর হবে এবং তখনই আমরা কোন বন্ধ খ কে নীচু বলবো যখন তা ক মাত্রায় অর্থাৎ উলম্বভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ক্ষুদ্রতর হবে ।
বিয়ারভিশ ক্রিয়াবাচক শব্দের অর্থও এভাবে বিশ্লেষণ করেন।

তার মতে, আছে (have) কে যদি ক -এর আছে খ এভাবে বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেয়া (give), নেয়া (take), ধার দেয়া (lend ), ধার নেয়া ( borrow), হত্যা করা (kill) প্রভৃতি শব্দের বাগার্থিক উপাদানকে এভাবে দেখানো যায় :

দেয়া
ক -এর আছে খ এবং ক ঘটায় গ -এর আছে খ)

নেয়া :

 

বিয়ারভিশের তত্ত্ব

 

ধার দেয়া :
গ এর আছে খ এবং ক ঘটায় (ক -এর আছে খ) ক এর আছে খ এবং গ -এর নেই স্ব এবং ক ঘটায় গ -এর আছে খ) এবং খ এর এমন পরিবর্তন ঘটে না (গ মালিক খ)

গ এর আছে খ এবং ক এর নেই এবং ক ঘটায় (ক -এর আছে খ) এবং ব এর এমন পরিবর্তন ঘটে না (ক মালিক খ) জীবিত ক এবং জীবিত ব এবং ক ঘটায় (খ পরিবর্তিত হয় (জীবিত নয় ) হত্যা করা :

কাজেই এখন আমরা বালকটি কুকুর হত্যা করেছে এ বাক্যটিকে এভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি : বালকটি কুকুর হত্যা করেছে = Df মানব ক এবং ছেলে ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ক এবং জীবিত ক এবং জীবিত খ এবং ক ঘটায় (খ পরিবর্তিত হয় (জীবিত নয় খ)
এবং প্রাণী এবং স

কাজেই বিয়ারডিশের তত্ত্ব দিয়ে শুধু শব্দবিশ্লেষণ নয়, বাক্যবিশ্লেষণও সম্ভব। বাক্যবিশ্লেষণের সময় এর বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে গুরুক্রমিক সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে উঠে। এবং বৃক্ষচিত্রে তা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। কেম্পসন (১৯৭৭ : ১১0 ) The man killed the woman এই ইংরেজী বাক্যটিকে নিম্নরূপ চিত্রে প্রকাশ করেন :

 

বিয়ারভিশের তত্ত্ব

 

মূলনীতি ও সমস্যা: ঔপাদানিক বিশ্লেষণ বা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এবং তাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বাগধিক তত্ত্বসমূহ এই মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যে শব্দের অর্থকে ক্ষুদ্রতম উপাদানে বা বৈশিষ্ট্যে বিশ্লিষ্ট করা সম্ভব এবং এভাবে শব্দসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু এভাবে অর্থ বিশ্লেষণের অনেক সমস্যা আছে ।

প্রথমত, যে সমস্ত বাগার্থিক বৈশিষ্ট্যের সাথে ব্যকরণের যোগ রয়েছে এবং যে সমস্ত বাগধিক বৈশিষ্ট্যের সাথে ব্যাকরনের যোগ নেই তাদের বিভাজন রেখাটি কোথায় তা স্পষ্ট নয় ।
দ্বিতীয়ত, অনেক সময়ই শব্দের বাগধিক উপাদান বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে এবং অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াটি নিতান্তই ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
তৃতীয়ত, এটি অর্থের আংশিক চিত্র তুলে ধরে এবং সামগ্রিক বাগার্থিক তত্ত্ব নির্মানে ব্যর্থ ।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment