আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ” বুদ্ধ বগৃগো “। যা “ধম্মপদ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
বুদ্ধ বগৃগো
বুদ্ধ বগ্গো
১।যস জিতং নাবজীযতি জিতমস নো যাতি কোচিলোকে
তং বৃদ্ধমনন্তগোচরং অপদং কেন পদের নেস?
২।যস জালিনী বিসত্তিকা তস্পৃহা নথি কুহিঞ্চি নেতবে,
তং বুদ্ধমনস্তগোচরং অপদং কেন পদেন নেস?
৩।যে ঝানপসুতা ধীরা নেঙ্খম্মুপসমে রতা,
দেবাপি তেসং পিহয়স্তি সম্বুদ্ধানং সতীমতং ।
8। কিছো মনুসপটিলাভো কিচ্ছং মচান জীবিতং,
কিচ্ছং সন্ধম্মসেবনং কিছো বুদ্ধানং উপপাদো।
৫ । সর্বপাপস্স অকরণং কুসলস উপসম্পদা,
সচিত্তপরিযোদপনং এতং বুদ্ধানুসাসনং ।
৬।খস্তী পরমং তপো তিতিক্খা, নিবানং পরমং বদন্তি বুদ্ধা,
নহি পৰ্ব্বজিতো পরূপঘাতী, সমনো হোতি পরং বিহেঠযন্তো।
৭। অনুপবাদো অনুপঘাতো পাতিমোখে চ সংবরো,
মত্ততা চ ভত্তস্মিং পঞ্চ সয়নাসনং, অধিচিত্তে চ যোগো এতং বুদ্ধানুসাসনং ।
৮। ন কহাপণবসেন তিত্তি কামেসু বিজ্জাতি,
অপসাদা দুখা কামা ইতি বিজ্ঞঞায় পণ্ডিতো।
৯।অপি দিবেসু কামেসু রতিং সো নাধিগচ্ছতি,
তহাখযরতো হোতি সমাসম্বুদ্ধসাবকো ।
১০।বহুং বে সরণং যক্তি পর্বতানি বনানি চ আরামরুখ
চেতিযানি মনুসা ভয়তজ্জিতা।
১১। নেতং খো সরণং খেমং নেতং সরণমুত্তমং,
নেতং সরণমাগম সব্বা দুকখা পঙ্গুচচতি।
১২।যো চ বুদ্ধঞ্চ ধম্মক সব সরণং গতো,
চত্তারি আরিযসচ্চানি সমৃমপপঞঞায় পস্সতি।
১৩। দুখং দুগ্ধসমুপপাদং দুগ্ধসস চ অতিক্ৰমং,
অরিষঠঙ্গিকং মগ্গং দুকৰূপসমগামিনঃ ।
১৪ ।এতং খো সরণং খেমং এতং সরণমুত্তমং,
এতং সরণমাগমম্ সব্বদুক্খা পক্ষতি।
১৫। দুৰ্ল্লভো পুরিসাজঞো ন সো সখ জাযতি,
যথ সো জায়তি ধীরো তং কুলং দুখমেধতি।
১৬। সুখো বুদ্ধানং উপপাদো সুখো সন্ধম্মদেসনা,
সুখো সঙ্ঘস সামগ্রী সমগ্গানং তপো সুখো।
১৭। পূজারহে পূজয়তো বুদ্ধে যদি ব সাবকে,
পপঞ্চ সমতিক্কস্তে তিঃসোকপরিদবে।
১৮। তে তাদিসে পূজ্যতো নিব্বুতে অকুতোভযে
ন সক্কা পুঞঞং সংখাতুং ইমেত্তম’পি কেনচি।
শব্দার্থ
যস – যার; জিতং – বিজয়; জিতমস – বিজিতের, পরাজিত ব্যক্তির; বুদ্ধমনন্তগোচরং – সর্বদর্শী বুদ্ধ; – নেসসথ – নিয়ে যাবে, বিচলিত করবে; জালিনী – জালস্বরূপ; বিসত্তিকা – বিষময়; তহা – তৃষ্ণা; অপদং – নিষ্কলুষ; ঝানপসুতা – ধ্যানরত; নেকখম্মুপসমে – নিষ্কাম শান্তিতে; পিহযক্তি – স্পৃহা করেন; সতীমতং – – – – – স্মৃতিমান;
কিচ্ছং – কষ্টসাধ্য; মনুসসপটিলাভো মানবজন্ম লাভ; মচান – বিপদসংকুল; উপ্পাদো – উৎপত্তি; সর্বপাপস সকলপ্রকার পাপের; অকরণং বিরতি, কারণ ছাড়া; উপসম্পদা পরিপূর্ণতা – – পরিযোদপনং পবিত্রতাসাধন; বুদ্ধানুসাসনং – বুদ্ধের অনুশাসন। –
খণ্ডি – ক্ষমা; ভিভিক্খা – তিতিক্ষা, সহিষ্ণুতা; বদন্তি বলেন; পরূপঘাতী – পরকে আঘাত যে দেয়; বিহেঠযস্তো – কষ্ট দিয়ে; অনুপবাদো অনুপঘাতো – পরচর্চা ও পরপীড়ন না করা; মঞ্জুতা – মাত্রাজ্ঞান; পদ্ধঞ্চ – নির্জনে; আয়াগো অনুশীলন; কহাপনবসৃসেন – স্বর্ণমুদ্রা বর্ষণের দ্বারা; তিত্তি – তৃপ্তি; অপূপসাদা – অল্প স্বাদ;
বিজ্ঞজ্ঞতায় অবগত; তগৃহারতো – তৃষ্ণাক্ষয়ে রত; সরণং যস্তি – শরণ – – – গ্রহণ করে; আরামরুখচেতিয়া – আরাম, বৃক্ষ, চৈত্য প্রভৃতি; ভয়তজ্জিতা ভয়ে অভিভূত; পমুচ্চতি – – – মুক্তি পায়; সব্বা দুক্খা – সকল দুঃখ; সপঞঞায় সম্যকরূপে দর্শন করে; দুপসমগামিনং দুঃখ – – উপশমকারী; অতিক্রমং – অতিক্রম; সরণমুত্তমং – উত্তম শরণ।
পুরিসাঞ্জঞো – উত্তম পুরুষ, পুরুষোত্তম; জাতি – জন্মগ্রহণ করে; ধীরো – পণ্ডিত, মহাপুরুষ, সামগ্গী – একতা; সমগুগানং – একতাবদ্ধ; পূজরহে পূজনীয়, পূজার্থ; পপঞ্চসমতিক্রপ্তে প্রপঞ্চ (তৃষ্ণা, মান, দৃষ্টি – ইত্যাদি) অতিক্রম; পুঞঞং পুণ্য; অকুততভয়ে নির্ভয়ে। –
সারাংশ
মানুষের জীবনকে সৎপথে নিয়ন্ত্রিত করার জন্যই বুদ্ধ বর্গের গাথাগুলো সংকলিত হয়েছে। মোহান্ধ মানুষ সর্বদা বিভ্রান্ত হয়। আলোর পথ সহজে লাভ করে না। বুদ্ধগণ সর্বজ্ঞতা জ্ঞানে মানুষকে মিথ্যা প্রলোভন থেকে উদ্ধার করেছেন।
তথাগত বুদ্ধ রাগ, দ্বেষ, মোহ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছেন। তিনি সর্বজ্ঞ, সকল প্রকার তৃষ্ণা থেকে বিমুক্ত। তাঁর সর্বজ্ঞতা জ্ঞান অনন্ত ও অসীম, কামনা বাসনাশূন্য, নিষ্কলঙ্ক, প্রলোভনের ঊর্ধ্বে। তিনি ধীর, প্রশান্ত, স্মৃতিমান ও মহাপ্রজ্ঞাবান। কলুষরাশিকে বিদূরিত করে নির্বাণ সুখে অবস্থান করেছেন। সেরূপ মহাপুরুষের নির্দেশিত পথ যাঁরা অনুসরণ করেন তাঁরা দেবগণেরও প্রিয় হন।
মানব জীবন লাভ করা দুর্লভ। জগতে বুদ্ধের উৎপত্তিও দুর্লভ। তাই সর্বপ্রকার পাপ বর্জন করতে হয়। পুণ্য অর্জন করাই উত্তম কাজ। মনকে পবিত্র করাই পণ্ডিতের লক্ষণ। এগুলোই বুদ্ধের উপদেশ। ক্ষান্তি, সহিষ্ণুতাই উত্তম তপস্যা। বুদ্ধ নির্বাণকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন। শীলাচরণ, মিতাহার, নির্জনবাস ও চিত্তের প্রশান্ত ভাবই বুদ্ধগণের উপদেশ।
কামনার শেষ নেই। ধনপ্রাপ্তিতে তৃপ্ত হয় না। মানুষ কামে রত হয়ে নির্বাণসুখের কথা ভুলে যায়। যারা নির্বাণ লাভ করতে চান তাঁরা ভোগসম্পদ ত্যাগ করেন। ভয়ার্ত মানুষের পর্বত, বৃক্ষ, চৈত্য প্রভৃতির শরণ গ্রহণ ঠিক নয়। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের শরণই শ্রেষ্ঠ শরণ।
টীকা
ধম্মপদ
ধম্মপদ গ্রন্থ খানি বুদ্ধবাণীরই সংগ্রহ। ধর্মময় জীবন গঠনের জন্য এটি অত্যন্ত উপাদেয় গ্রন্থ। গ্রন্থ খানি সর্বজনীন উপদেশে ভরপুর। মানুষের জীবনের সব সমস্যার সমাধান এতে পাওয়া যায়। আত্মশুদ্ধি ও সত্য উপলব্ধির জন্য গাথাগুলোর উপদেশ অত্যন্ত মূল্যবান। এ উপদেশগুলো মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। ধর্মপদের অপ্রমাদ বর্গের নীতিকথাই সম্রাট আশোককে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে।
ধম্মপদ সূত্রপিটকের অন্তর্গত খুদ্দক নিকায়ের দ্বিতীয় গ্রন্থ। এতে ৪২৩টি গাথা আছে। গাথাগুলোকে ২৬টি বর্গে বিভক্ত করা হয়েছে। মনের স্বভাব ও প্রকৃতি, চিত্তসংযম, অপ্রমাদ, অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা এতে রয়েছে। এছাড়া, আরও বহু উপদেশে গ্রন্থ খানি সমৃদ্ধ।
মার
মার প্রাণীগণকে কুপথে চালিত করে। অনর্থে নিয়োজিত করে মার, তাই এর নাম মার। মার সত্য উপলব্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। পাপকর্মে উৎসাহিত করাই এর কাজ। পালি সাহিত্যে মারকে কৃষ্ণ, অন্তক, নমুচি, প্রমত্তবন্ধু নামেও অভিহিত করা হয়েছে। তিনি মানুষকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখে। আলোর পথ দেখতে দেয় না। প্রমত্ত, উত্তেজিত করাই তার কাজ। রতি, প্রীতি, তৃষ্ণা তার সহোদর। প্রকৃতপক্ষে রাগ, দ্বেষ, মোহের প্রতি আকৃষ্ট করে রাখে। অকুশল বা পাপজনক মনোবৃত্তিকেও মার বলা হয় ।
আরও দেখুনঃ