Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

বাগর্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-বাগর্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ

বাগর্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ

বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণে একটি শব্দকে তার পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যে ভেঙ্গে ফেলা হয় । এটি অনেকটা ঔপাদানিক বিশ্লেষণের মতোই । তবে এ দুটির মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। প্রথমত, ঔপাদানিক বিশ্লেষণে আমরা পাই অর্থের ক্ষুদ্রতম একক, আর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণে আমরা পাই ধনাত্মক বা ঋণাত্মক মূল্যযুক্ত পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য ।

 

 

দ্বিতীয়ত, ঔপাদানিক বিশ্লেষণ কোন বাগার্থিক এলাকার পরস্পরসম্পর্কিত শব্দগুচ্ছের বেলায় প্রযোজ্য, আর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ সাধারণত বাক্যে ব্যবহৃত কোন শব্দের বেলায় প্রযোজ্য। বস্তুতঃ বাগার্থিক উপাদানকে তাত্ত্বিক স্বার্থে বিশেষভাবে রূপায়ন করলে বাগধিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। আমরা দেখবো বাগর্থিক বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্ন তত্ত্ববিদগণ কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন, কিন্তু তার আগে আমরা বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণকে সামান্য ব্যাখ্যার প্রয়াস পাব। আমরা নিম্নলিখিত চারটি বাক্যের দিকে তাকাই

(১) বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও ।

(২) সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল ।

(৩) বাঘের মাসি বিড়াল কেন মিউ মিউ ডাকে ?

(৪) দুনিয়ায় সাড়ে তিন হাত লম্বা মানুষ অর্ধেক ফাড়া ।

উপরের চারটির বাক্যের নিম্নরেখা দ্বারা চিহ্নিত বিশেষ্য পদগুলো একজন বাক্যতাত্ত্বিক বা বাগর্থবিদ নিম্নরূপ বৈশিষ্ট্যসমূহ দ্বারা রূপায়িত করতে পারেন :

আশা
[+ বিশেষ্য ]
[- মূর্ত ]
[- প্রাণী ]
[- মানব ]
[ গণনা ]
[- নিৰ্দিষ্ট ]

বর

[+ বিশেষ্য ]
[+ মূৰ্ত ]
[- প্রাণী ]
[- মানব ]
[+ গণনা ]
[+ নির্দিষ্ট ]

বিড়াল

[+ বিশেষ্য ]
[+ মূৰ্ত ]
[+ প্রাণী ]
[- মানব ]
[+ গণনা ]
[- নিৰ্দিষ্ট ]

মাनूষ

[+ বিশেষ্য ]
[+ মূৰ্ত ]
[+ প্রাণী ]
[+ মানব ]
[+ গণনা ]
[- নির্দিষ্ট ]

বিভিন্ন রকম ক্রিয়াপদেরও আমরা এভাবে বাগর্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে পারি নীচে হাঁটা, দৌড়ানো, হামাগুড়ি দেয়া, জগিং করা, পাক খাওয়া এই পাঁচটি ক্রিয়ার বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য ধনাত্মক / ঋণাত্মক চিহ্নে ম্যাট্রিক্স আকারে তুলে ধরা হলো :

 

নিডা এবং অন্যান্য (১৯৭৭ : 185 ) mumble (বিড়বিড় করা), shout ( চিৎকার করা), scream (তীক্ষ্ণকণ্ঠে চিৎকার করা), whisper (ফিসফিস করা), babble (আধো আধো বোল বলা) এই পাঁচটি বাঙমূলক ক্রিয়ার বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে :

 

বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝা যায় কোন কোন বাক্য কেন আবশ্যিকভাবে সত্য, কোনটি স্ববিরোধী এবং কোনটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যেমন :

(১) বিডাল একটি প্রাণী ।

(২) আমাদের অন্তসত্তা প্রতিবেশী একজন মহিলা ।

(৩) বিড়ালটি প্রাণী নয় ।

(৪) আমাদের অন্তঃসত্বা প্রতিবেশী একজন পুরুষ ।

(৫) ঘর চিৎকার করে কথা বলে। (৬) আমাদের অজ্ঞঃসত্বা আশা একজন মানুষ ।

উপরের প্রথম দুটি বাক্যকে বলা হয় বিশ্লেষক বাক্য, কারণ এগুলো বাগৰ্থিক বৈশিষ্ট্য বিচারে আবশ্যিকভাবে সত্য । বিড়াল এর একটি বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য [+ প্রাণী ] এবং অন্তসত্তা এর একটি বাগৰ্থিক বৈশিষ্ট্য [+ মহিলা ] । ৩ ও ৪ নম্বর বাক্য দুটি স্ববিরোধী, কারণ বিড়াল এর বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য [- প্রাণী ] নয় এবং অন্তঃসত্তা-এর বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য [- মহিলা ] নয় ।

একইভাবে ৫ ও ৬ নম্বর বাক্যদুটি অসামঞ্চসাপূর্ণ, কারণ ঘরের সাথে চিৎকার করে কথা বলা খাপ খায় না এবং আশার সাথে অন্তঃসত্তা ও মানুষ খাপ খায় না । বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য- বিশ্লেষণের মাধ্যমে শব্দের অনেকার্থকতা নির্দেশ করা যায়। যেমন নীচের বাক্যে কাটা শব্দটির দ্বিবিধ প্রয়োগের পার্থক্য বোঝা যেতে পারে তাদের বাগার্থিক বৈশিষ্ট্যর তুলনার মাধ্যমে :
পন্ডিতদের বই যত না বাজারে কাটে তার চেয়ে বেশি পোকায় কাটে।

[+ ক্রিয়া ]
[- সকর্মক ]
[+ স্থানান্তর ]
[+ অর্থাগম ]
[- বিশ্লিষ্টতা ]
[+ উপযোগিতা ]
[+ পঠন ]

 

এভাবেই বাগার্থিক বৈশিষ্ট্য- বিশ্লেষণের মাধ্যমে শব্দার্থের স্বরূপ সন্ধান করা হয় । আমরা পরে দেখবো জ্ঞানাত্মক বাগর্থবিদগণ উপাদানিক বিশ্লেষণকে এবং রূপান্তরমূলক বাগর্থবিদগণ বাগৰ্থিক বৈশিষ্ট্যকে তাদের তাত্ত্বিক সংগঠনে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়েছেন ।

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version