Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

ভদ্দা কুণ্ডল কেসা থেরী

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ” ভদ্দা কুণ্ডল কেসা থেরী “। যা “থেরপাথা” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

ভদ্দা কুণ্ডল কেসা থেরী

 

ভদ্দাকুণ্ডল কেসা থেরী

১। লুনকেসী পঙ্কধরী একসাটী পুরে চরিং । 

অবঙ্গে বজ্জমতিনী বন্ধে চাবজ্জদ সিনী ।।

২। দিবাবিহারা নিম্ম গিন্ধকূটমূহি পাতে। 

অদ্দসং বিরজং বুদ্ধং ভিসতপুরকৃতং।।

৩। নিহচ্চ জানুং বন্দিতা সংমুখা পঞ্জলি অহং।। 

এহি ভদ্দেতি অবচ সা মে আসূপসম্পদা।

৪। চিন্না অঙ্গা চ মগধা বজ্জী কাসী চ কোসলা ।। 

অনণা পদ্মাসব সানি রটপিণ্ডং অভুঞ্জি হং।

৫।পুঞং চ পসবিং বহুং সপঞো বতাযমুপাসকো, 

যো ভন্দায চীবরমদাসি মুত্তাষ সগন্ধেহি।।

শব্দার্থ

লূনকেসী – কেশহীন; পঙ্কশ্বরী ধূলিতে মান; একসাটি – একটি মাত্র বরে আবৃত; চরং বিচরণ – – – করতাম; অবচ্ছে – বর্জন করতাম; বজ্জমতিনী – বর্জনীয়, চাদসিনী – গ্রহণীয়; দিবাবিহারা – দিনের – – বেলায় বিশ্রাম; নিম – নিষ্ক্রমণ; গিজ্‌ঝকুটমহি – পৃধ্রকূটে; অদ্দসং – । দেখে; ভিক্ষুসঙ্ঘ-পুরস্থতং – – ভিক্ষুসংঘপূজিত; নিহচ্চজানুং – নতজানু হয়ে; বন্দিত্বা বন্দনা করে;

সংমুখা পঞ্জলি কৃতাঞ্জলিপুটে; – – এহি ভদ্দেতি ‘ভদ্রে এস; অবচ বললেন; আসুসুপসম্পাদা – উপসম্পদা দিলেন; কোসলা কোশল – রাজ্য; অনর্ণা – অঋণী; পদ্মাসসানি – পঞ্চাশ বৎসর, রঠপিণ্ডং – রাজ্যে পিতাচরণ করে; অভুঞ্জি হং – – আমি ভোজন করতাম; সপঞঞা প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি; মুস্তায় – মুক্তচিত্ত। –

সারাংশ

ভদ্রা কুণ্ডলকেশা পূর্বে ছিন্নকেশে, ধূলিমাখা দেহে এবং একটিমাত্র বসে আবৃত হয়ে বিচরণ করতেন। যা বর্জনীয় বিষয় তা তিনি গ্রহণ করতেন। একদিন দিবা বিশ্রাম শেষে তিনি গৃধ্রকূট পর্বতে গমন করেন। সেখানে ভগবান বুদ্ধের সাক্ষাৎ পান।

ভদ্রা বুদ্ধকে নতজানু হয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে বন্দনা করলেন। বুদ্ধ ‘ভদ্রে, এস’ বলে তাঁকে উপসম্পদা দিলেন। তারপর তিনি পঞ্চাশ বৎসর যাবৎ অঙ্গ, মঞ্জু, বজ্জী, কাশী এবং কোশল রাজ্যে ভ্রমণ করেন। তিনি কারও কাছে ঋণী ছিলেন না। ভিক্ষালব্ধ অন্ন দ্বারা জীবন ধারণ করতেন। এক বিজ্ঞ উপাসক শ্রদ্ধাচিত্তে তাঁকে কঠিন চীবর দান দিয়েছিলেন। তিনিও প্রভূত পুণ্য অর্জন করেছিলেন।

 

 

ভদ্রা কুণ্ডলকেশা

তিনি বিভিন্ন জন্মে বহু পুণ্য সঞ্চয় করেছিলেন। সেই পুণ্যের ফলে গৌতম বুদ্ধের সময় রাজগৃহে রাজ- কোষাধ্যক্ষের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ভদ্রা। তিনি রূপে গুণে অতুলনীয় ছিলেন। রাজপুরোহিতের পুত্র ‘স’ দস্যুতার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল।

রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন। নগররক্ষীরা রাজার আদেশে তাকে হত্যা করার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রাসাদ থেকে সথুর দেহ- সৌন্দর্য দেখে ভদ্রা তার প্রতি প্রণয়াসক্ত হন। তিনি পিতাকে বললেন, সম্মুকে না পেলে সে বাঁচবে না।

পিতা কন্যার প্রতি অত্যন্ত স্নেহবশত নগররক্ষীদেরকে ঘুষ দিয়ে সত্তুকে মুক্ত করলেন। উভয়ের বিয়ে হল। ভদ্রার অনেক রত্নালংকার দেখে সেগুলোর প্রতি সত্তুর লোভ হল। সে স্ত্রীকে ছলনা করে বলল, সে প্রাণে রক্ষা পেলে বধ্যভূমির দেবতাকে পূজো দেওয়ার অংগীকার করেছিল। তাকে পূজো দিতে হবে।

ভদ্রা চোর স্বামীর কথায় বিশ্বাস করে পূজোর থালা সাজাল। তারপর মূল্যবান গহনা পরিধান করে স্বামীর সাথে চললেন। গভীর বনের শৃঙ্গের ওপরে অবস্থিত বধ্যভূমিতে পৌঁছলে, চোর স্বামী তাঁকে বলল, আমি পূজো দিতে আসি নি। তোমার রত্নালংকার নেওয়ার জন্যই তোমাকে এখানে এনেছি। ভদ্রা আশ্চর্য হয়ে গেল। যাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা করে স্বামী বরণ করেছি তার এ প্রতিদান। অলংকার, সম্পত্তি সবই তার।

শেষ পর্যন্ত মূল্যবান অলংকারগুলো চোর স্বামীকে খুলে দিলেন। তারপর ভদ্রা সন্মুকে বললেন- আমি তোমাকে প্রাণভরে ভালবাসি। মৃত্যুর পূর্বক্ষণে তোমাকে প্রদক্ষিণ করে প্রণাম করে আমার মনোবাসনা পূর্ণ করতে চাই।

সন্ধু অনুমতি দিল। প্রদক্ষিণ শেষে আলিংগন করতে গিয়ে ধাক্কা মেরে সম্মুকে পর্বতশৃঙ্গ থেকে গভীর নিচে বধ্যভূমিতে গর্তে ফেলে দিল। বনদেবতা তা দেখে তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন ভদ্রার প্রশংসা করলেন।

ভদ্রা লজ্জায় আর পিতৃগৃহে ফিরে গেলেন না। নিগ্রন্থ সন্ন্যাসীদের সংঘভুক্ত হলেন। তালবৃত্তের দ্বারা তাঁর মাথার সমস্ত কেশ তুলে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁর মাথায় কুণ্ডলাকারে একগুচ্ছ বেশ উঠেছিল। তাই তিনি ‘কুণ্ডলকেশা’ নামে অভিহিত হন।

তিনি নিগ্রন্থদের শিক্ষা সমাপ্ত করলেন। তাঁরা সম্যক জ্ঞান দানের অসমর্থ হওয়ায় তাঁদের দল ত্যাগ করেন। তিনি জ্ঞান আহরণে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করেন। যেখানে যেতেন সেখানেই পণ্ডিতদের সাথে তর্কে অবতীর্ণ হতেন। সবাইকে তর্কে পরাস্ত করতেন।

তাঁর হাতে একটি জম্বুবৃক্ষের শাখা থাকত। তিনি শাখাটি মাটিতে স্থাপন করে তর্কযুদ্ধের জন্য পণ্ডিতদের আহ্বান জানাতেন। একদিন জেতবন বিহার ধারে শাখাটি স্থাপন করে রাজধানীতে বিচরণ করতে লাগলেন। সারিপুত্র স্থবির তা পদদলিত করলেন।

থেরী ফিরে এসে স্থবিরের সাথে তর্কে অবতীর্ণ হন। সারিপুত্র স্থবির থেরীর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কিন্তু সারিপুত্র স্থবিরের একটি মাত্র প্রশ্ন ‘এক কি’ এটির উত্তর থেরী দিতে পারলেন না। শেষে স্থবিরের নিকট পরাজয় স্বীকার করে নেন। তিনি সারিপুত্র স্থবিরের পরামর্শ অনুযায়ী বুদ্ধের নিকট ত্রিশরণ গ্রহণ করেন। বুদ্ধ তাঁকে উপদেশ দেওয়ার সময় অর্থত্ব প্রাপ্ত হন। ভিক্ষুণীদের বাসস্থানে বাস করার সময় ‘নির্বাণ পরম শান্তি’ উপভোগ পূর্বক তিনি পরম আনন্দে গাথাগুলো গেয়েছিলেন।

টীকা

থেরীগাথা

থেরীগাথা খুদ্দক নিকায়ের নবম গ্রন্থ। এতে ৭৩ জন থেরীর জীবনকথা সংগৃহীত আছে। তাঁদের রচিত গাথার সংখ্যা ৫২২। গ্রন্থখানিতে ভিক্ষুণীদের সংসার জীবনের সুখ-দুঃখ এবং অনাগারিক জীবনের আধ্যাত্বিক সাধনার প্রতিফলন ঘটেছে। থেরীরা আত্মশক্তিতে বলীয়ান ছিলেন।

সমাজের বহু অবহেলিত নারীকে বুদ্ধ তাঁর ধর্মে স্থান দিয়েছিলেন। পুত্রহারা কৃষ্ণা গৌতমী, স্বামী কর্তৃক বিতাড়িত ইসিদাসী, স্বজনহারা পাগলিনী পটাচারা, বেশ্যা অম্রপালি প্রমুখ অনেক নারী ভিক্ষুণীসংঘে যোগদান করে আত্ম-পরহিতে বিশেষ অবদান রাখেন। প্রাচীন ভারতের নারী সমাজের স্থান নির্ণয়ের জন্য থেরীগাথা গ্রন্থটির মূল্য অপরিসীম। ভারতীয় গীতি কবিতা সাহিত্যে থেরীগাথাকে প্রথম সারিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

অনুশীলনী

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

১। উরুবেল কসপোদের’র গাথাগুলোর সারাংশ লেখ।

২। উরুবেল কসপোথের’র জীবনকাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

৩।সব্বকামী থের কে ছিলেন? তাঁর গাথাগুলোর সারাংশ লিপিবদ্ধ কর।

৪।সুমঙ্গল থের’র সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোচনা করে তাঁর রচিত গাথাটির মূল্যায়ন কর।

৫। ভদ্দা কুণ্ডল কেসা থেরী’র জীবনের বিভিন্ন পটভূমি আলোচনা কর । 

৬।ভদ্দা কুণ্ডল কেসা থেরী কে ছিলেন? তাঁর রচিত গাথাগুলোর ভাবার্থ লেখ ।

 

 

সংক্ষেপে উত্তর দাও :

১।বুদ্ধ কর্তৃক উরুবেলা কাশ্যপ স্থবিরের দীক্ষা গ্রহণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

২। উরুবেলা কাশ্যপের বাল্যজীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । 

৩। সব্বকামী থের’র অর্থত্ব লাভের ঘটনা সংক্ষেপে বিবৃত কর।

৪। কৃষিকার্যের ত্রিবিধ লক্ষণ কী কী? সুমঙ্গল থের’র জীবনী থেকে উদ্ধৃত কর।

৫।ভদ্রাকুণ্ডল কেশা কে ছিলেন? তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

৬। ভদ্রাকুণ্ডল কেশা নিজ বুদ্ধিমত্তার দ্বারা কিভাবে চোর স্বামীর চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন? অতি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

আরও দেখুনঃ

 

Exit mobile version