Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বিনম্রতার ফলাফল পর্যালোচনা

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বিনম্রতার ফলাফল পর্যালোচনা

লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বিনম্রতার ফলাফল পর্যালোচনা

লিচ এর বিনম্রতার রীতি (Leech, 1983) অনুসারে প্রতিটি শ্রেণির দাওয়াতপত্রের ক্ষেত্রেই আমন্ত্রণকারী নিজের পছন্দকে সীমিত করে, নিজেকে তুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর করে আমন্ত্রণগ্রহিতার পছন্দকে সম্প্রসারিত করে তাকে সম্মানিত করার মাধ্যমে বিনম্রতা প্রকাশ করেছেন।

আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণগ্রহিতার মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা, বজায় রাখা তথা সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণঞ্চগ্রহণকারীকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। পূর্ববর্তী অধ্যায়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় ৫টি বর্গের দাওয়াতপত্রেই বিনম্রতা প্রকাশের জন্য আমন্ত্রণপ্রদানকারী অনুমোদিত রীতি, সহানুভূতি রীতি ও মিতচারিতা রীতি প্রয়োগ করেছেন।

 

 

প্রতিটি শ্রেণির দাওয়াতপত্রে অনুমোদিত রীতি অধিক ব্যবহৃত হয়েছে আমন্ত্রণগ্রহিতার সম্মানকে গুরুত্ব প্রদানের জন্য। আদেশমূলক নিবেদন কৃতি ও অঙ্গীকারমূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী নিজেকে তুচ্ছ করে বিনয় প্রকাশের জন্য মিতচারিতা রীতি ব্যবহার করেছেন।

আমন্ত্রণকারী ও আমন্ত্রণগ্রহিতার মধ্যকার পারস্পরিক সহানুভূতি বৃদ্ধির জন্য সহানুভূতি রীতির প্রয়োগও পরিলক্ষিত হয় দাওয়াতপত্রে। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অতিথিকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আমন্ত্রণকারী তার আন্তরিকতা, সৌজন্যবোধ প্রকাশের জন্য নিজেকে তুচ্ছ করে অতিথির মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনম্রতা প্রকাশ করেছেন।

 

 

আমন্ত্রণপ্রণয়নকারীর মূল উদ্দেশ্য অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো, এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সামাজিক রীতি অনুসারে তিনি বিদ্রতার পরিস্ফুটন ঘটিয়েছেন। লিচের বিনম্রতার অন্য ৩টি রীতির মধ্যে রয়েছে বিচক্ষণ রীতি, উদারতা রীতি ও চুক্তিবদ্ধ রীতি। এই রীতিসমূহেও আমন্ত্রণগ্রহিতার সুবিধা বৃদ্ধি করা, আমন্ত্রণকারীর সুবিধা হ্রাস করা, আমন্ত্রণকারী ও আমন্ত্রণগ্রহিতার মধ্যকার মতানৈক্য হ্রাস করা নির্দেশ করে। কিন্তু বিশ্লেষিত দাওয়াতপত্রসমূহে এ ৩টি রীতির বিনম্রতা পরিলক্ষিত হয় নাই।

বিনম্রতার মাধ্যমে আন্তঃসামাজিক মিথক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) মতে ইতিবাচক বিনম্রতার সাথে লিচের বিনম্রতা রীতির সহানুভূতি রীতি এবং নেতিবাচক বিনম্রতার সাথে অনুমোদিত রীতি ও মিতচারিতা রীতির সাদৃশ্য রয়েছে

ইতিবাচক বিনম্রতার ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারীর অভিব্যক্তি বৃদ্ধি পায়, সহানুভূতি রীতির ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহানুভূতি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমন্ত্রণকারীর ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায়। একইসাথে দেখা যায়, নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী কোন বিষয় আমন্ত্রিত অতিথির ওপর চাপিয়ে দেন না, তিনি পরোক্ষ কৌশল, যেমন- ‘অনুরোধ’ ব্যবহার করার মাধ্যমে অতিথিকে সম্মান প্রদান।

 

 

করেন। নিচের অনুমোদিত ও মিতচারিতা রীতির ক্ষেত্রেও আমন্ত্রণকারী নিজেকে তুচ্ছ করে আমন্ত্রণগ্রহিতার সম্মান বৃদ্ধি করেন। ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) এবং লিচের বিনম্রতার রীতি (Leech, 1983) উভয়ক্ষেত্রেই বিনম্রতার বিভিন্ন কৌশল বা রীতি ব্যবহার করা হয় সামাজিক জীব হিসেবে ভাষিক যোগাযোগে পারস্পরিক সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এবং একই সাথে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে মানব জীবনকে সহজ, গতিময় করার জন্য।

এই কারণে বাংলা ভাষায় লিখিত দাওয়াতপত্রের বিনম্রতার স্বরূপ নির্ণয়ের জন্য ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্বের (Brown and Levinson, 1987) সালে নিচের বিনম্রতার রীতিও (Leech, 1983) প্রয়োগ করা হয়েছে এই গবেষণাকর্মে।

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version