আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ভূমিকানাভিনয়, মাথা খাটানো, সমস্যা সমাধান, একক কাজ, জোড়ায় কাজ ও দলীয় কাজ – যা আরবি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষণের পাঠদান পদ্ধতি ও কলাকৌশল এর অন্তর্ভুক্ত।
ভূমিকানাভিনয়, মাথা খাটানো, সমস্যা সমাধান, একক কাজ, জোড়ায় কাজ ও দলীয় কাজ
বর্তমানে শ্রেণি শিক্ষাদানে যে সকল অংশগ্রহণমূলক আধুনিক শিক্ষণ-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয় তার মধ্যে ভূমিকাভিনয়, মাথা খাটানো, সমস্যা সমাধান পদ্ধতি এবং একক কাজ, জোড়ায় কাজ ও দলীয় কাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে কর্মতৎপর রেখে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভের অনুষঙ্গ হিসেবে এ সকল পদ্ধতি ও কৌশল বহুল প্রচলিত। এ সকল পদ্ধতির সফল প্রয়োগের ফলে পাঠ্য বিষয় সহজবোধ্য হয়। শিখন আনন্দদায়ক ও সতস্ফুর্ত হয়। তাই আরবি শিক্ষকের এ সকল পদ্ধতির প্রয়োগ সম্পর্কে সুসংহত ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন।
ভূমিকাভিনয়
শ্রেণিকক্ষে পাঠ্য বিষয়বস্তুকে আকর্ষণীয় করার জন্য অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলে তাকে ভূমিকাভিনয় বলে। পাঠ্য বিষয়কে নাটক আকারে রূপান্তরিত করে অভিনয়ের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
শ্রেণিতে পঠন-পাঠনোর একঘেয়েমি দূর করার উদ্দেশ্যেই এ পদ্ধতির উদ্ভব। ছোট শিশুরা অত্যন্ত অনুকরণ প্রিয় তারা নাটক দেখতে শুনতে ভালোবাসে। স্বতস্ফুর্তভাবেই তারা এসব করে থাকে। তাদের এ স্বতঃস্ফুর্ত আগ্রহকে শিখন-শেখানোর কাজে প্রয়োগ করলে অধিক সুফল পাওয়া যায়। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অনেক বিষয়বস্তু উপস্থাপনে বিশেষত )!ও -এর পাঠ উপস্থাপনে ভূমিকাভিনয় অধিক কার্যকর হতে পারে। এ পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপন করা হলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে উপভোগ করে ও শিক্ষা গ্রহণে আন্তরিক হয়।
ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- ভূমিকাভিনয় পদ্ধতিতে বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অভিনয়ের মাধ্যমে তা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপিত হয়।
- শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠে।
- আরবির পাশাপাশি ফিক্হ-এর বিভিন্ন মাসাইল শিক্ষাদানে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
- শিক্ষার্থী যে বিষয়ে অভিনয় করবে সে বিষয়, চরিত্র ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষক সম্যক ধারণা দিবেন।
উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যতীত আপনি নিজে ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির আর কী কী বৈশিষ্ট্য যোগ করতে পারেন?
ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির সুবিধা
- বিষয়বস্তুকে বাস্তব ও জীবন্ত করে উপস্থাপন করা হয় বলে শিখন দ্রুত, সহজ ও স্থায়ী হয়।
- শিক্ষার্থীদের বহুমূখী প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
- খুব বেশি উপকরণ প্রয়োজন হয় না বিধায় এ পদ্ধতি ব্যয় সাশ্রয়ী।
- সকল শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে।
- দলগত অভিনয়ের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে উঠে।
- শিক্ষার্থীদের ভাষার দক্ষতা (শোনা ও বলা) বৃদ্ধি পায় ।
- পাঠে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হয়। স্বল্প মেধার শিক্ষার্থীরাও সহজে বিষয়বস্তু হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।
ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির অসুবিধা
- ভূমিকাভিনয় পদ্ধতিতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় যা ৩০-৪৫ মিনিটের পিরিয়ডে প্রয়োগ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
- দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক ব্যতীত এ পদ্ধতির সফল ব্যবহার সম্ভব নয়।
- উপস্থাপনা, নির্দেশনা ও অভিনয় যথার্থ না হলে পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।
- শিক্ষণীয় বিষয়ের পরিবর্তে পাঠ অনেক সময় কেবল বিনোদনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় ফলে শিখন অর্জন ব্যাহত হয়।
- সব বিষয়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না।
মাথা খাটানো পদ্ধতি
শিক্ষার্থীদের মুক্ত চিন্তার সুযোগ দিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়াই হলো মাথা খাটানো পদ্ধতি। মাথাখাটানো পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মাথায় চিন্তার ঝড় বা আলোড়ন সৃষ্টি করা হয়। যে পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো সুনির্দিষ্ট সমস্যা উপস্থাপন করে তাদের তাৎক্ষণিক চিন্তা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তাদের চিন্তা ভাবনাকে একক, জোড়ায় বা দলগতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট করা হয় তাকে মাথা খাটানো বা ব্রেইন স্টর্মিং পদ্ধতি বলে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে চিন্তামূলক এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর
মাথা খাটানো পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- মাথা খাটানো পদ্ধতিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, সমস্যা বা ইস্যু নিয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু সময় ব্যয় করতে হয়।
- (সাধারণত ১/২ মিনিট) চিন্তা করতে বলা হয়, পরে তাদের চিন্তার ফল বলে বা লিখে প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
- শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সমাধান বের করতে পারে।
- একক, জোড়ায় ও দলগতভাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
- দলগতভাবে প্রয়োগ করলে বিশেষ নিয়মানুসারে দল গঠন করে বিষয়বস্তুকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে
- প্রত্যেক দলকে বিভাজন করে দিতে হয়।
- শিক্ষক পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বিষয় বরাদ্দ করবেন, সময় নির্ধারণ করে দিবেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন।
মাথা খাটানো পদ্ধতির সুবিধা
সমগ্র শ্রেণিতে একই সময়ে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
সকল শিক্ষার্থী সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে।
শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পায়। • জটিল সমস্যার সহজ সমাধানে শিক্ষার্থীরা উদ্বুদ্ধ হয়।
এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের চিন্তা, কল্পনা শক্তি ও সৃজনশীলতার উৎকর্ষ সাধন করে।
পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ হয়।
অল্প সময়ের মধ্যে অধিক শিখন নিশ্চিত হয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হয় ।
এই পদ্ধতি সকল বিষয়ের পাঠদানে প্রয়োগ করা যায়।
শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রাণবন্ত থাকে ও পাঠে মনোযোগী হয়।
শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি প্রবণতা জানা যায় ।
মাথা খাটানো পদ্ধতির অসুবিধা
- শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে সকল শিক্ষার্থীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না।
- মেধাবী শিক্ষার্থী বেশি সক্রিয় থাকলেও সাধরণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম।
যথাযথ তদারকির অভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। - শিক্ষকের প্রস্তুতি ও দক্ষতার অভাবে এ পদ্ধতি ব্যর্থ হতে পারে।
- সমস্যা নির্বাচন যথার্থ না হলে শিক্ষণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।
- বিষয়বস্তুর উপর প্রাথমিক ধারণা না থাকলে অনেক শিক্ষার্থী মতামত প্রদান থেকে বিরত থাকে ।
সমস্যা সমাধান পদ্ধতি
যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা সমাধানে ক্রিয়াশীল হয় তাকেই সমস্যা সমাধান পদ্ধতি বলে। এটি শিক্ষণ শিখনের একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। আরবি বিষয়ের পাঠ উপস্থাপনে সমস্যা সমাধান পদ্ধতির যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান ও ধারণার ভিত্তিতে পাঠ্য বিষয় সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যা নির্বাচন করা হয়।
পাঠ উপস্থাপনকালে শিক্ষক তাঁর বক্তৃতা ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের সামনে সমস্যাটির অবতারণা করেন। এর সমাধান শিক্ষার্থীদের আগে থেকে জানা থাকে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার সামর্থ অনুযায়ী বিভিন্ন উপায়ে সমস্যাটি অনুধাবন ও সমাধানের চেষ্টা করে। শিক্ষক একটি উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চেষ্টায় সমাধান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এবং প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নিয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে
পৌঁছতে পারে।
সমস্যা সমাধান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
- সমস্যা সমাধান পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা বা বিষয়ের সমাধান বা অনুশীলন শিক্ষার্থীদের দিয়েই করা হয়।
- এই পদ্ধতিতে পাঠ্য বিষয়বস্তুর বিশেষ ধরণের বিন্যাস প্রয়োজন হয়।
- বিষয়বস্তুকে একটি প্রকৃত সমস্যার আকারে উপস্থাপন করা হয়।
- সমস্যাটি শিক্ষার্থীদের জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে সংযুক্ত হবে।
- সমস্যাটির সমাধান শিক্ষার্থীর মানসিক স্তরে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ কোনো প্রত্যক্ষ কর্মের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয় না ।
এবার সমস্যা সমাধান পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় ধাপগুলো চিন্তা করে বলুন।
সমস্যা সমাধান পদ্ধতির সুবিধা
- সমস্যা সমাধান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে।
- শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
- স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তৈরি হয়। হাতে কলমে শেখার সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা পাঠে মনোযোগী হয়।
- বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে সমস্যার সমাধান করে বলে শিখন সহজ ও স্থায়ী হয়।
- শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা কমে যায়।
- সমস্যা সমাধানের সাথে সাথে রিপোর্ট তৈরিতে পারদর্শী হয়।
- উচ্চতর গবেষণা কর্মের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারে।
- আত্ননির্ভরশীল হতে উদ্বুদ্ধ হয়।
- ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠে
সমস্যা সমাধান পুদ্ধতির অসুবিধা
- এ পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপনে সময় বেশি লাগে, তাই পাঠ্যসূচী সময়মত শেষ করা যায় না। আমাদের পাঠ্যসূচী অধিকাংশই তত্ত্বনির্ভর ফলে পাঠ্য বিষয়ের অনেক ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়
না। - বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় না ।
- এ পদ্ধতি দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য আমাদের দেশে যোগ্য শিক্ষকের অভাব রয়েছে।
- নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এ পদ্ধতি উপযোগী নয় ।
- যথাযথ সমাধান খুঁজে বের করতে শিক্ষার্থী ব্যর্থ হলে শিখনের প্রতি তার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
একক কাজ
শিক্ষক কর্তৃক শ্রেণি পাঠদানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে চিন্তা, অনুভুতি, কথা ও কাজ করতে দেয়াকে একক কাজ বলা হয়। অপেক্ষাকৃত সহজ এবং ছোট কাজ যা সমাধান করতে কম সময়ের প্রয়োজন হয় এমন কাজকেই একক কাজের জন্য নির্বাচন করা হয়। যেমন- পঠিত কবিতা বা গদ্য থেকে অপরিচিত শব্দ বের করা, Jai বের করা, pulও Jai-এর পার্থক্য নির্ণয় করা, ১২০ পরিবর্তন করা, কোনো শব্দের এর করা ইত্যাদি।
এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্রভাবে চিন্তা করে কোনো প্রশ্নের উত্তর বের করতে বলা হয়। নির্ধারিত সময় শেষে শিক্ষক প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত একই বিষয়ের বিকল্প উত্তরগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত সঠিক উত্তরটি বাছাই করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
একক কাজের বৈশিষ্ট্য
- একক কাজ প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি সকল বিষয়ে ব্যাপকভাবে অনুসৃত একটি পদ্ধতি ।
- একক কাজ স্বশিক্ষার সোপান বিশেষ।
- একক কাজে সকল প্রকার (উচ্চ মেধা, নিম্ন মেধা) শিক্ষার্থীর শিখন কার্যকর হয়। অন্যান্য শিক্ষাদান পদ্ধতিতেও কোনো না কোনো পর্যায়ে একক কাজের উপর নির্ভর করতে হয়।
একক কাজের সুবিধা
- শিখন প্রক্রিয়ায় সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকে।
- একক কাজের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজস্ব চিন্তাশক্তি বিকাশের সুযোগ পায় ।
- শিক্ষার্থীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠে।
- শিক্ষার্থীর মনোবল দৃঢ় হয় ।
- এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বশিক্ষা গ্রহণ করে তাই শিখন আনন্দদায়ক হয়।
- শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে সক্রিয় থাকে ও পাঠে মনোযোগীহয়।
একক কাজের অসুবিধা
- এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন মেধা ও বিচিত্র পটভূমি থেকে আগত শিক্ষার্থীকে সমন্বিত শিক্ষাদান শিক্ষকের জন্য চ্যালেঞ্জ ও মানসিক চাপের কারণ হয়ে ওঠে।
- সকলের মতামত গৃহীত না হলে কোনো কোনো শিক্ষার্থী নিরুৎসাহিত হতে পারে।
- অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর শ্রেণিতে এই পদ্ধতি সর্বদা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা দুরূহ হতে পারে।
- কখনও কখনও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অলসতা দেখা দিতে পারে এবং পাঠের প্রতি অমনোযোগীহতে পারে।
- প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষককে এককভাবে নজর রাখতে হয় ও যত্ন নিতে হয়, তাই অনেক সময় শ্রেণি শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষককে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
জোড়ায় কাজ
শ্রেণি পাঠনে দুইজন শিক্ষার্থীর একত্রে কোনো একটি বিষয় নিয়ে কাজ করার প্রক্রিয়াই হলো জোড়ায় কাজ। এই পদ্ধতিতে পাশাপাশি অথবা মুখোমুখি দুইজন শিক্ষার্থী নিয়ে এক একটি জোড়া গঠন করে একটি সমস্যার সমাধানে কাজ করতে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা জোড়ায় আলোচনা করে সমাধান/উত্তর খাতায় লিখবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা একে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিবে। শিক্ষক কয়েক জোড়া শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সমাধানের/উত্তরের উত্তম বিকল্পটি বেছে নিবেন এবং প্রয়োজনীয় ফলাবর্তন দিবেন।
জোড়ায় কাজের বৈশিষ্ট্য
- শিখন-শেখানো কার্যক্রমের প্রায় সকল স্তরে জোড়ায় কাজ একটি উপযোগী পদ্ধতি বা কৌশল ।
- দুইজন সম পর্যায়ের শিক্ষার্থী একে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে।
- প্রায় সকল ধরণের বিষয়বস্তু পাঠদানে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
জোড়ায় কাজের উল্লিখিত বৈশিষ্টগুলো ছাড়া আপনি আর কী কী যোগ করতে পারেন?
জোড়ায় কাজের সুবিধা
- জোড়ায় কাজে নিবিড়, অন্তরঙ্গ ও পারস্পরিক বন্ধুত্বসুলভ মনোভাবের মাধ্যমে আনন্দের সাথে শিখন অর্জিত হয়।
- একজন যা জানেনা তা জোড়ার সঙ্গীর কাছ থেকে সহজে জেনে নিতে পারে ফলে অতি সহজেই শিখন ঘাটতি দূর করা যায়।
- পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদানের সুযোগ তৈরি হয় বলে শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় ।
- অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীর শিখনের জড়তা দূর হয়। • শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে
জোড়ায় কাজের অসুবিধা
- এ পদ্ধতিতে সময় বেশি লাগতে পারে।
- জোড়ার সদস্যের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিতে পারে, যা শিখনের অন্তরায়।
- উচ্চ মেধা ও নিম্ন মেধার শিক্ষার্থীর জোড়ার মধ্যে পরস্পরের প্রতি বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে ।
- জোড়ায় কাজে দুই জনের সমান সক্রিয়তা না থাকলে শিখন অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হতে পারে।
দলগত কাজ
শিখন-শেখানো কার্যক্রমে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দলীয় কাজ। এই পদ্ধতিতে একই পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরস্পর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করে। এক্ষেত্রে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীরাই বেশি সক্রিয় থাকে। তবে মডারেটর বা গাইড হিসেবে শিক্ষকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
দলগত কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতার পাশাপাশি কিছু মানবিক ও সামাজিক গুণাবলির ও বিকাশ ঘটে। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক কয়েকটি দলকে তাদের কাজ উপস্থাপন করতে বলবেন এবং শ্রেণির অন্য শিক্ষার্থীদের ফলাবর্তনের সুযোগ দিবেন। প্রয়োজনে শিক্ষক নিজেও ফলাবর্তন দিবেন। বর্তমানে সারা বিশ্বে শিক্ষণ শিখনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।
দলগত কাজের বৈশিষ্ট্য
- শিক্ষক পাঠ্য বিষয়বস্তু থেকে সমস্যা চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদেরকে দলে ভাগ করে প্রত্যেক দলের কাজ বুঝিয়ে দিবেন ।
- দলের একজনকে দলনেতা মনোনীত করবেন।
- শিক্ষার্থীরা দলে ভাগ হয়ে বসবে। দলের প্রত্যেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে এবং আলেচনায় অংশগ্রহণ করবে।
- প্রত্যেকে সকলের মতামতকে প্রাধান্য দিবে এবং একে অপরকে সম্মান দিবে।
- আলোচনার ফলাফল দলের সিদ্ধান্ত হিসেবে লিখতে হবে এবং সবাইকে মেনে নিতে হবে।
- দলনেতা দলের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন
- শিক্ষক ঘুরে ঘুরে কাজ পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিবেন
- দলের সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য হলে শিক্ষক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন।
দলগত কাজ-এর সফল বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষককে কোন কোন বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে?
দল গঠন প্রক্রিয়া
বিভিন্ন পদ্ধতিতে দল গঠন করা যায় যেমন:
- সম-সামর্থ্যের শিক্ষার্থীদের দল।
- মিশ্র-সামর্থ্যের শিক্ষার্থীদের দল।
- বিষয়ভিত্তিক দল ।
- অঞ্চলভিত্তিক দল ।
- চিরকুটে ফুল ফল পাখি ইত্যাদির নাম লিখে দৈবচয়নের মাধ্যমে দল গঠন।
- কবি সাহিত্যিকদের নাম দিয়ে দল গঠন ।
- দল গঠনের এসব পদ্ধতির মধ্যে মিশ্র-মেধা ও মিশ্র-জেন্ডারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দল গঠন করা অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকর। যেভাবেই দল গঠন করা হোক না কেন, প্রতিটি দলে ৪-৬ জন সদস্য হওয়া বাঞ্ছনীয় ।
দলগত কাজের সুবিধা
- শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী পাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
- শিখন কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আসে ফলে একঘেয়েমি দূর হয়, শিখন কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়।
- দলগত কাজে শিক্ষার্থীরা আনন্দ পায় এবং পাঠে মনোযোগী হয়।
- বিষয়বস্তুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়, ফলে শিখন অধিকতর স্থায়ী হয়।
- হার জিতের লজ্জা থাকে না তাই শিক্ষার্থীরা নিঃসঙ্কোচে কাজের মাধ্যমে শিখতে পারে।
- স্বল্প মেধার শিক্ষার্থীরাও সমানভাবে শিখতে পারে।
- নেতৃত্বের যোগ্যতা গড়ে ওঠে।
- আনুগত্য, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা সহ বিভিন্ন সামাজিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়।
দলগত কাজের অসুবিধা
- দলের মধ্যে কয়েকজনই অধিকাংশ কাজ করে, ফলে বাকীদের মধ্যে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে।
- অনেক সময় মত পার্থক্য দ্বন্দ্বে রূপ নিতে পারে।
- কয়েক জন কাজের সিংহ ভাগ সম্পন্ন করে বলে অন্যদের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে ।
- শিক্ষকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং না থাকলে শিক্ষণ উদ্দেশ্য অর্জন না ও হতে পারে । অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী সংবলিত শ্রেণিতে এ পদ্ধতি প্রয়োগে শ্রেণি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে ।
মূল্যায়ন
১. ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির পরিচয় দিন
২. ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির সুবিধা এবং অসুবিধা বর্ণনা করুন।
৩. মাথা খাটানো পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
৪. মাথা খাটানো পদ্ধতির সুবিধাগুলো লিখুন।
৫. সমস্যা সমাধান পদ্ধতি কী?
৬. সমস্যা সমাধান পদ্ধতির সুবিধাগুলো উল্লেখ করুন ।
৭. একক কাজের সুবিধা এবং অসুবিধা বর্ণনা করুন।
৮. জোড়ায় কাজের বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা উল্লেখ করুন।
৯. দল গঠনের প্রক্রিয়া বর্ণনা করুন।
১০. দলগত কাজের সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করুন ।
আরও দেখুনঃ