আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
ক্রিয়াবাচক বিভিন্ন মুক্তরূপমূলের সঙ্গে একই পুরুষে একই ক্রিয়া-বিভক্তি বা বন্ধরূপমূল সংযুক্ত হয়ে সম্প্রসারিত রূপমূল গঠিত হয়।
১.ক্রিয়ার প্রতিটি কালের সম্মানার্থে মধ্যমপুরুষ এবং সম্মানার্থে নামপুরুষের ক্ষেত্রে একই বিভক্তি বা বদ্ধরূপমূল সংযোজনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত রূপমূল গঠিত হয়। যেমন :
ক্রিয়ার কাল
অতীতকাল
বর্তমানকাল
ভবিষ্যৎকাল
মধ্যম
আপনে/আমনে করেন
আপনে/আমনে করছেন
আপনে/আমনে করবেন
নামপুরুষ
উনি করেন
( koren )
উনি করছেন
(körchen)
উনি করবেন
(körben)
মধ্যম পুরুষের ক্ষেত্রে ধ্বনিগত বৈষম্য দেখা যায়। নিরক্ষরদের ভাষায় ‘আমনে’ এবং স্বল্প শিক্ষিতদের ভাষায় ‘আপনে’ উচ্চারণ লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে ‘প’ ধ্বনি ‘ম’ ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়েছে।
২.বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয়কালের সম্মানার্থে মধ্যমপুরুষের সাধারণ কাল এবং সম্মানার্থে মধ্যমপুরুষের অনুজ্ঞায় একই বদ্ধরূপমূল দ্বারা সম্প্রসারিত রূপমূল গঠিত হয়। যেমন-
বর্তমানকাল
ভবিষ্যৎকাল
সাধারণ
অনুজ্ঞা
সাধারণ
মধ্যমপুরুষ (সম্মানার্থে)
মধ্যমপুরুষ (সম্মানার্থে)
মধ্যমপুরুষ (সম্মানার্থে)
এন / en / অন / on / বদ্ধরূপমূল, বলেন, করেন, কন (বলেন)
এন / en / অন / on / বদ্ধরূপমূল
অনুজ্ঞা
মধ্যমপুরুষ (সম্মানার্থে)
ইবেন (iben) বদ্ধরূপমূল,
‘কর’ (kar), ‘বল’ (bal) ‘খা’ (kha) ইত্যাদি ক্রিয়াবাচক মুক্তরূপমূলের সঙ্গে / tachi/ যুক্ত হয়ে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষা অনেকটা সাধুভাষায় ব্যবহৃত রূপমূলের মত উচ্চারিত হয়। যেমন-খাইতাছি (khaitachi), করতাছি (kortachi), কইতাছি (koitachi), লিখতাছি (likhtachi) ইত্যাদি।
8.ক্রিয়ামূলের অন্ত্যপ্রত্যয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রমিত ও ডেমরা থানার স্থানীয় ভাষার মধ্যে পার্থক্য লক্ষণীয়। নিম্নে প্রমিত ও ডেমরার স্থানীয় ভাষার ক্রিয়ারূপের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরা হল :
ঘটমান বর্তমানকালের ক্রিয়ারূপে প্রমিতরীতিতে যেখানে ‘করছো’ ডেমরা অঞ্চলের ভাষায় ‘করতাছো’ হয়। এক্ষেত্রে ডেমরার ভাষায় অতিরিক্ত ‘তা’ / ta/ প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং ‘ও’ স্থলে “অ’ হয়। পুরাঘটিত বর্তমানকালে প্রমিতরূপে ব্যবহৃত ‘ই’ /e/ প্রত্যয় ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় বাদ যায়। যেমন : korcho kortacho, korecho korcho
৫.ক্রিয়ার রূপ বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎকাল ও পুরুষভেদে রূপান্তরিত হয়। তখন একটি সুনির্দিষ্ট
নিয়মে বা সূত্রানুসারে এর পরিবর্তন ঘটে। যেমন-
১. কর্তা অনুসারে ক্রিয়ার রূপ পরিবর্তিত হয়;
২. বহুবচনের ক্ষেত্রে ক্রিয়ার বিভক্তি পরিবর্তিত হয় না;
৩. বিভিন্ন কাল নির্দেশে বিভিন্ন ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়।
এ ক্ষেত্রে সাধারণত বর্তমানকালের উত্তমপুরুষে ই (i), ইতাছি (itachi), ইছি (ichi) অতীতকালে উত্তমপুরুষে ছি (chi), ছিলাম (chilam) ভবিষ্যতে উত্তমপুরুষে মু (mu), ইতে থাকুম (ite thakum) ইত্যাদি যোগ হয়ে থাকে।
৬.বর্তমান ও অতীতকালের রূপে ডেমরার সাথে প্রমিত বাংলার সাদৃশ্য থাকলেও ভবিষ্যৎকালের রূপে পার্থক্য লক্ষণীয়। প্রমিত বাংলার ভবিষ্যৎকালে উত্তমপুরুষে ‘বো’ /bo / ব্যবহৃত হয়, কিন্তু
ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় ‘বো’ /bo/-এর পরিবর্তে ‘মু’ / mu/ ব্যবহৃত হয়। যেমন-করবো, যাবো, বলবো স্থলে আমি করমু, আমি যামু। আমি কমু (বলবো)। প্রমিত বাংলার ভবিষ্যৎকালে নায়পুরুষে ‘বে’ /be/ বিভক্তির স্থলে ডেমরায় ‘ব’ /b/ ও ‘বো’ /bo / বিভক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন-হে (সে) যাইবো (he jaibo)। হে খাইব (he khaibo), উইয়ে শুমাইৰ (uiye ghumaibo) ইত্যাদি।
৭. গৌণকর্মে ‘রে’ /re/ বিভক্তির প্রয়োগ লক্ষণীয়, যেমন-আমারে ( amare), ওরে (ore), কারে (kare).
আমারে ডাক দেছ নাই কে ? ( amare dak dech nai ke ? ) অরে খাইতে দে (ore khaite de)। হ্যায় কারে চায় ? (he kare caê ? )
৮. বহুবচন নির্দেশক প্রত্যয় বিভক্তি ‘রা’ /ra/, ‘এরা’ / era/, ‘গুদির’ / gulir / স্থলে ‘গুলান’ / gular/, ‘গুলা’ / gula / ‘হগল’ / hagol/ বা ‘গুণ’ / gun/ প্রয়োগ হয় অনেক সময়। যেমন-পোলাপাইনগুলান (polapaingulan)। এছাড়া ডি, লি প্রত্যয় যুক্ত হয়েও বহুবচন নির্দেশ করা হয় ডেমরার ভাষায়। যেমন- সবডি (সবগুলো), যতলি (যতগুলো) ইত্যাদি।
৯.করণকারকে অনুসর্গ হিসেবে ‘সাথে’র পরিবর্তে ‘লগে’ (lage) প্রয়োগ হয়, যেমন- তোর লগে যামু ( tor lage jamu) |
১০. কর্তৃকারকে / এ/ /e/ বিভক্তির প্রয়োগ রয়েছে। যেমন- বাফে ডাহে (ডাকে) ( baphe dahe) কাউছারে গেছে (kauchare geche )।
১১. কর্তৃকারক ভিন্ন অন্য কারকে বহুবচনে ‘গো’ (go), ‘গোরে (gore)’ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন-কর্মকারক আমগোরে কাফর (কাপড়) দাও ।
১২. অধিকরণ কারকে প্রমিত রীতিতে যেখানে / এ / /e/ ব্যবহৃত হয় সেখানে ডেমরা অঞ্চলে ‘ত’ // বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। যেমন-বাইত (bait) যামু। হে বাইভ নাই। হাটুত (hatut) বেদনা। কোটাত (kotal) (ঘরের ওপরে মাচা) দান (ধান), গলাত / golat / বেদনা।
১৩. বচন নির্দেশের ক্ষেত্রে একবচনে প্রমিত রীতিতে উচ্চারিত ‘টা’ / ta/ ‘টি’ /ti/- ডেমরার আঞ্চলিক রীতিতে ‘ডা’ / qa/তে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘোষীভবন লক্ষণীয়। যেমন-গাছটি (প্রমিত) গাছড়ি (gachdi) (আঞ্চলিক) বইডা (baida), মানুড়া (manuda) (মানুষটি )
আঞ্চলিক রীতিতে ‘জীব’ এবং ‘জড়পদার্থ’ উভয় ক্ষেত্রে ‘ডা’ / da/ ‘ডি’ /di/ বদ্ধরূপমূল ব্যবহৃত হয়।
১৪. ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় সম্বোধন বাচক অব্যয় ব্যবহারের ক্ষেত্রের বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। প্রমিতরূপে ‘সে’ /jc/, ‘তিনি’ / tini/, ‘তারা’র পরিবর্তে ‘হে’ /nel, ‘হ্যায়’ /hay/, ‘উইয়ে’ /uiye/, ‘অরা’ /ora/, ‘হ্যারা’ / hera/ ইত্যাদি রূপমূল প্রচলিত। যেমন-হে (he) যায়। হ্যারা (hera) করে। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ডেমরা অঞ্চলে ‘হে’ /be/ হেয়’ /ney/ রূপমূল ব্যবহৃত হয়। তিনি, আপনি রূপমূল খুব কম প্রচলিত। তবে এ অঞ্চলের মানুষ বয়স্কদের মুরুব্বি (murubbi) বলে সম্বোধন করে। মুরুব্বি রূপমূলটি সর্বনামের পরিবর্তে বসে।
১৫.ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় সর্বনামের ক্ষেত্রে আমি, আমার, তোমার ব্যবহৃত হয়। সর্বনামমূলক রূপমূলের বহুবচনে যেখানে প্রমিত বাংলায় ব্যবহৃত হয় দের’ রূপমূল সেখানে আঞ্চলিক ভাষায় ব্যবহৃত হয় ‘গো’ / gol, ‘পর’ / gor/ রূপমূল। যেমন আমগো (amgo), আমগর (amgar) (আমাদের), তোমাগো (tomago), তোমার (tomgor) (তোমাদের), হেগো (hego) (তাদের)
অপদান কারকে ব্যবহৃত amar theke tomar theke tar theke ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় amate, tomatte, tatte রূপে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে আমার (amar), তোমার (tomar), তার (tar) রূপমূলের /r/ বিলুপ্ত হয়েছে এবং থেকে’ (theke) হলে ‘আরে’ (atte) ব্যবহৃত হয়েছে।
বাক্যতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
১. প্রমিতরীতির ন্যায় ডেমরার ভাষায়ও বাক্য সংগঠনে ক্রিয়া বাক্যের প্রথমে, মাঝে ও শেষে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
বাক্যের মাঝে
বাক্যের প্রথমে খাইয়া লইয়া কতা ক (khiya loiya kata ka) খেয়ে নিয়ে কথা বল আমি তো যামু হুনছ নাই (ami to jamu hunich nai) আমি তো যাব শুননি আমগো বাইত যাইছ (amgo bait jaich) আমাদের বাড়িতে যেয়ো শর্তমূলক বাক্যের ক্ষেত্রে ক্রিয়া প্রথমে ব্যবহৃত হয়। যেমন পরলে খালতে দিমু (parle karlte dimu )
বাক্যের শেষে
২. ডেমরার প্রচলিত ভাষায় জিয়া উহা থেকেও বাক্য তৈরি হয়। যেমন- এ বাক্যের বাইরের গঠনে কোন ক্রিয়াপদ নেই, কিন্তু অন্তভাগীয় গঠনে ক্রিয়া আছে।
হে আমার বইন (he amar boin) সে (হয়) আমার বোন।
৩. এ অঞ্চলে প্রচলিত বাক্যে আলা (ala), ওবি (obi), ভাইলে (taile), হেলিগা (heliga) ইত্যাদি ক্রিয়া সম্পৃক্ত অব্যয় ক্রিয়ার পূর্বে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
শিলু আলা যাইবো। (Filu ala jaibo ) মায় শুবি গেলগা। (may obi gelga )
৪. ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় না-বোধক বাক্যের ক্ষেত্রে ‘না’ বাক্যের প্রথমে, মাঝে ও শেষে ব্যবহৃত
হতে দেখা যায়।
৫. ডেমরা অঞ্চলের ভাষায় বা সংক্ষেপে ছোট ছোট সরল বাক্যে বক্তব্য প্রকাশ করে।
৬. এ অঞ্চলের মানুষ কথায় কথায় গালি দিয়ে থাকে। এটা যে অশ্লীল সেটা তারা উপলব্ধি করতে পারে না। এটাকে তারা প্রাত্যহিক জীবনাচরণের মার্জিত ভাষা হিসেবে মনে করে। যেমন- বিজরমায় করলো কি। (bijormay korlo ki)
হালার নানা হুইয়া রইছে (halar nana huiya roiche )
৭. প্রমিত বাংলায় অধিকরণ কারকের ক্ষেত্রে ‘ভে’ / te / যুক্ত হয়। কিন্তু ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় “তোর স্থলে / এ / /e/ ধ্বনি লোপ পেয়ে শুধু ‘ভ’ /t/ ব্যবহৃত হয়। যেমন-
মায় বাহিত (barit) মার বারিতে উল্লেখিত উদাহরণে বারিতে ব্যবহৃত / এ / ধ্বনি লোপ পেয়েছে।
৮. ডেমরা অঞ্চলের ভাষায় রূপমূলের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এখানে এমন কিছু রূপমূল ব্যবহৃত হতে দেখা যায় যা প্রমিত ভাষায় নেই। এই রূপমূলগুলো হল এ এলাকার নিজস্ব সৃষ্টি। যেমন : ‘ইটি যাওন’ যার অর্থ ‘বৌ-ভাত’।
অর্থতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
১. আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কালের প্রবাহে ভাষায় এসেছে পরিবর্তন। আধুনিক জীবন ও সংস্কৃতি, দ্রুত নগরায়ণ, তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ ও বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটছে। যেমন-কিরকেট (kirket) ক্রিকেট, টিফি ((iphi) টিভি, ছবি (chobi) সিনেমা ইত্যাদি।
২. ডেমরার ভাষায় ব্যবহৃত রূপমূল মুখ্যার্থ ও গৌণার্থ দুটি দিক প্রকাশ করে থাকে। যেমন- আত (at) হাত, মাতা (mata) মাথা। ‘মাতা’ মুখ্যার্থ হল শির, এর গৌণার্থ নানাবিধ, যেমন-মেধা, প্রধান ব্যক্তি, শুরু বা শেষ ইত্যাদি।
৩. পরিবেশগত কারণে রূপমূলে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ পায় এবং অর্থের তারতম্যের জন্য প্রকৃত অর্থ অনুধাবনে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
৪. ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় রূপমূলে অর্থ পরিবর্তনে অর্থ প্রসার, অর্থ সংকোচ ও অর্থ সংশ্লেষ এই তিনটি প্রক্রিয়াই কার্যকর। যেমন-পোশশুকা-pouka (পরশু) রূপমূলের অর্থ ডেমরা অঞ্চলে গতকালের আগের দিন এবং আগামীকালের পরের দিন উভয়ই বুঝিয়ে থাকে। কিন্তু ‘পরশু রূপমূলের আভিধানিক অর্থ আগামীকালের পরের দিন। এ ক্ষেত্রে ডেমরা ভাষায় রূপমূলের অর্থের প্রসার ঘটেছে।
৫. ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় অর্থ সংকোচ দুটি প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। এক. সাধারণ থেকে বিশেষ অর্থে, যেমন-‘কাপড়’-এর অর্থ যেকোন কাপড় বোঝায়। কিন্তু ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় ‘কাফোর’- kaphor (কাপড়) বলতে মহিলাদের পরিষের শাড়িকে বোঝায়। দুই বিশেষ অর্থ থেকে সাধারণ
অর্থ বোঝায়, যেমন—’ফকির’ অর্থ আগে ছিল সংসারত্যাগী সাধক মানুষ। বর্তমানে এর অর্থ সংকোচিত হয়ে ভিক্ষুকদের বোঝায়।
৬. অর্থসংশ্লেষ-রূপমূলের অর্থের ক্রমাগত প্রসারণ এবং সংকোচনের ফলে কখনো কোন রূপমূলের এমন অর্থ তৈরি হয়, যার সঙ্গে মূল অর্থে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। একে অর্থ সংশ্লেষ বলে। যেমন—’ছায়া’ অর্থ কোন কিছুর প্রতিবিম্ব। কিন্তু ডেমরা অঞ্চলে ‘ছায়া’ মহিলাদের পেটিকোট অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৭. রূপমূলের অর্থ পরিবর্তনে শুভাষণ, অলংকরণ বিভিন্নার্থক ব্যবহার বিপরীতার্থক ইত্যাদি কারণে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় শব্দার্থগত পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ঢাকার উপভাষা সম্পর্কে মুহম্মদ আবদুল হাই, কাজী দীন মুহম্মদ, মনিরুজ্জামানসহ আরো অনেকে আলোচনা করেছেন, কিন্তু ঢাকার অভ্যন্তরে বহিরাগতদের আগমন এবং বসবাসের ফলে স্থানীয় ভাষা ও বহিরাগত ভাষার সংমিশ্রনে স্থানীয় ভাষার যে রূপ বা কাঠামো দাঁড়িয়েছে সেই সম্পর্কে আলোচনা ইতোপূর্বে হয়নি।
ঢাকায় বসবাসরত শ্রমজীবী মানুষের মুখের ভাষা সম্পর্কেও বিশদ আলোচনা হয়নি। অন্যান্য উপভাষার সঙ্গে ডেমরার আঞ্চলিক উপভাষারও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রচুর সাদৃশ্য রয়েছে। কেননা সব উপভাষাই অভিন্ন বাংলাভাষারই আঞ্চলিক রূপ। তাই এর সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য সব উপভাষার মধ্যেই বিদ্যমান।
প্রমিতভাষার সঙ্গে ডেমরার আঞ্চলিক ভাষার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, যা ইতোপূর্বে কেউ উপস্থাপন
করেননি। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো হল-
ডেমরার ভাষায় কথোপকথনের ক্ষেত্রে স্বরের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের মানুষের কথোপকথনে সবসময় উচ্চস্বর পরিলক্ষিত হয়।
কথায় কথায় গালি দেয়া যেন এ অঞ্চলের মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এ গালি অশ্লীল অর্থে মনে হলেও তার অর্থ সবসময় অশালীন নয়। কোন কোন সময় এটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, আবার কোন কোন সময় মনের ঝাল মেটাতে তারা এসব অশ্লীল শব্দের আশ্রয় নেয়।
গ. ডেমরা থানার কোন কোন অঞ্চলে বহিরাগত ভাষার সংমিশ্রণে বাক্যে ব্যবহৃত শেষ রূপমূলে অন্ত্যস্বরধ্বনি একটু দীর্ঘায়িত করে উচ্চারণ করা হয়। আজ থেকে বছর চারেক আগেও ভাষার ক্ষেত্রে এ বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ্য করা যায়নি, বিশেষ করে বহিরাগত শ্রমিকদের ভাষার প্রভাবে ডেমরার স্থানীয় ভাষায় এই বৈশিষ্ট্যটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন- তুমি এনো কাম করতে আইছোও-ও-ও। ‘আইছো’ রূপমূলে ‘ছো-ও-ও’-এক্ষেত্রে অন্ত্যস্বরধ্বনিটি দীর্ঘ উচ্চারণ করা হয়েছে।
ঘ. ডেমরার আঞ্চলিক ভাষায় সম্বোধনের ক্ষেত্রে প্রমিতভাষায় ব্যবহৃত ‘আপনি’, ‘তিনি’, ‘সে’ রূপমূলের পরিবর্তে ‘হ্যায়’ (hey), ‘উইয়ে’ (uiye), ‘হে’ (he) রূপমূল ব্যবহৃত হয়। ছোট বড় সকলের ক্ষেত্রে এই রূপমূল প্রয়োগ হয়ে থাকে ।
আরও দেখুন: