Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

ল্যাকফ রস ও অন্যান্য 

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-ল্যাকফ রস ও অন্যান্য

ল্যাকফ রস ও অন্যান্য

ননী ব্যাকরণ নিয়ে অন্যান্য যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে ল্যাকফ (১৯৬৫, ১৯৩৮), রস (১৯৬৭) এর নাম অগ্রগণ্য। ম্যাকলের মতো তারাও মনে করেন যে গভীর সংগঠন হলো বাগর্থিত উপস্থাপনা যার থেকে রূপারমূলক নিয়মে উপরি সংগঠন নিঃসৃত হবে ।

যদি গভীর সংগঠনকে বাগধিক উপস্থাপনা বলতে হয় তাহলে প্রথমে এটা প্রমান করা প্রয়োজন যে এই সংগঠন ব্যাখ্যামূলক তত্ত্বে যেরকম দেখানো হয় তার চেয়েও বিমূর্ত, বাক্যতাত্ত্বিক উপস্থাপনায় যার যথাযথ স্বরা উপঘাটিত হয় না।

ল্যাকফ (১৯৩৫) এ উদ্দেশ্য দেখান যে কোন কোন বাক্য যেমন John opened the door এর গঠন আপাতদৃষ্টিতে সরল মনে হলেও তার আভ্যন্তরীণ সংগঠন বেশ জটিল। তিনি বলেন যে আলোচ্য বাক্যটিতে দুটি অঙ্কশায়িত বাক্য রয়েছে The door opened এবং John caused the door to be open বাক্যের আভ্যন্তরীণ সংগঠনটি বৃক্ষচত্রে প্রদর্শন করা যায় :

 

 

এই আভ্যন্তরীণ সংগঠনটি বাক্যতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে ধরা পড়ে না। রজেনবৌদ্ধ (১৯৬৫) একই যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি দেখান যে seem আসলে একটি অকর্মক ক্রিয়া যার কর্তা থাকে পুরো বাক্য। যেমন James seems to know the answer এর গভীর সংগঠন বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে এরকম চিত্র :

এধরনের প্রমান সাক্ষ্য দেয় যে গভীর সংগঠন অত্যন্ত বিমূর্ত এবং বাগর্থিক উপস্থাপনাই কেবল সেই বিমূর্ততাকে ধারণ করতে পারে। রস (১৯৬৭) ও গভীর সংগঠনের বিমূর্ততার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিন বলেন গাভীর সংগঠনে বাক্যের গঠক উপাদানের বিশ্লেষণ হবে বৃক্ষচিত্রে। যেমন :

John tried to begin to solve the problem. John began to try to solve the problem.
এ দুটি বাক্যের গঠক উপাদান এক হলেও তাদের সংগঠন ভিন্ন এবং এই ভিন্নতা প্রকাশিত হবে বাগথিক উপস্থাপনায় । বাগৰ্থিক উপস্থাপনা যেহেতু বাগর্থিক ক্ষুদ্র উপাদান কাজে লাগায় কাজেই এটি প্রত্যাশিত যে এতে মোট ক্যাটিগরি বা শ্রেণীর সংখ্যা অনেক কম হবে ।

বাখ (১৯৬৮) এর স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন । তিনি দেখান যে বিশেষা, বিশেষণ ও ক্রিয়ার মধ্যে প্রথাগত ব্যাকরণগত পার্থক্যটি বিভ্রান্তিমূলক এবং এই তিনটি ক্যাটিগরি বা শ্রেণী একটিমাত্র মৌল উপাদান দ্বারাই উপস্থাপিত হতে পারে । যেমন :

1. a. The man is working.

b. The one who is working is a man,

2. a. The man is large.

b. The one who is large is a man.

এই চারটি বাক্যের আভ্যন্তরীন সংগঠন হবে এরকম :

I. a. The one who is a man is working.

b. The one who is working is a man.

. a. The one who is a man is large. 2 b. The one who is large is a man.

এখানে ক্রিয়া (working), বিশেষ্য ( man) এবং বিশেষণ (large) এর ব্যবধান লুপ্ত এই অর্থে যে এগুলো একই সাংগঠনিক কৌশলে বিশ্লেষিত । এতে এটাই প্রমানিত হয় যে বাগৰ্থিক উপস্থাপনা বাক্যতাত্ত্বিক উপস্থাপনার চেয়ে অনেক কম ক্যাটিগরি বা শ্রেণী নিয়ে কাজ করতে পারে ।

 

 

কাজেই দেখা যায় গভীর সংগঠন যে বাগধিক উপস্থাপনা হওয়া উচিত এর পিছনে অনেক যুক্তি আছে যা সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যাকে শক্ত ভিত্তি প্রদান করে । মার্গারেট কিং (১৯৭৬ : ৮৩) সন্ধাননী বাগর্থবিদ্যার চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন। যথা :

১. বাগার্থিক উপস্থাপনা রৌপিক বাক্যতাত্ত্বিক উপস্থাপনার মতো । বাগর্থিক বৃক্ষচিত্রে অপ্রান্তিক গ্রন্থির সংখ্যা উপরি সংগঠনের অনুরূপ ।

২. রূপান্তর ও বাগার্থিক ব্যাখ্যা একই নিয়ম সংশ্রয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং গভীর সংগঠন বাগার্থিক উপস্থাপনার
সাথে একীভূত হবে যাতে এটি বাক্যতাত্ত্বিক চরিত্র হারিয়ে বাগর্থিক চরিত্র অর্জন করে ।

৩.এ যে নিয়মসমষ্টি দিয়ে কোন বাক্যের অর্থ নির্ধারিত হবে, সেগুলো দিয়ে বাক্যের ব্যাকরণিকতা নির্ধারিত হবে ।

৪. ব্যাকরণের কাজ হবে একগুচ্ছ আহরণ সঞ্জনন করা এবং তার সাথে আহরণগত নিয়ন্ত্রণ নির্ধারণ করা । আহরণগত নিয়ন্ত্রণ দেখাবে বাগধিক সংগঠনে কিভাবে উপাদানসমূহের সংযুক্তি ঘটবে, কিভাবে উপরি সংগঠনে উপাদান সমূহ সম্মিলিত হবে এবং কিভাবে আহরণমূলক প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন হবে ।

এই চারটি বৈশিষ্ট্য একদিকে যেমন সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যার স্বরূপ তুলে ধরে, অন্যদিকে এগুলো ব্যাখ্যামূলক বাগর্থবিদ্যার সাথে এর পার্থক্য বয়ান করে। আমরা যেরকম উপলব্ধি করি, ব্যাখ্যামূলক বাগর্থবিদ্যা ও সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যার মূল পার্থক্য এই যে প্রথমটিতে গভীর সংগঠন বাক্যতাত্ত্বিক এবং বাক্যের অর্থ অর্জিত হয় ব্যাখ্যামূলক প্রক্রিয়ায়, এবং দ্বিতীয়টিতে গভীর সংগঠন বাগধিক এবং এর থেকে রূপান্তরমূলক নিয়মে বাক্যের উপরি সংগঠন আহরিত হয়।

 

 

অর্থাৎ প্রথম রূপায়নটি বাক্যতত্ত্বভিত্তিক এবং দ্বিতীয় রূপায়নটি বাগর্থতত্ত্বভিত্তিক । এজন্যই ওয়ালেস চাফ (১৯৭০) সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যাকে বলেন বাগধিকতাবাদ এবং ব্যাখ্যামূলক বাগর্থবিদ্যাকে বলেন বাক্যিকতাবাদ । তিনি বাক্যিকতাবাদের চেয়ে বাগবিকতাবাদকে অধিক সুষ্ঠু বলে গণ্য করেন । তিনি বাগার্থিকতাবাদের অন্ততঃ চারটি গুণ উল্লেখ করেন (Chafe 1970 65-67)

প্রথমত, বাগার্থিকতাবাদের একটি নান্দনিক গুণ রয়েছে যার ফলে এর উপস্থাপনা অধিকতর হৃদয়গ্রাহী বলে অনুভূত হয় । দ্বিতীয়ত, বাগর্থিকতার মাধ্যমে ভাষার ব্যবহার বা বাস্তব প্রয়োগ অধিকতর সহজে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।

তৃতীয়ত, ভাষার বিবর্তনমূলক ব্যাখ্যার সাথে বাগর্থিকতাবাদ অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ ।
চতুর্থত, বাগৰ্থিকতাবাদ গভীর সংগঠন ও উপরিসংগঠনের মাঝখানের দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে বাক্যতত্ত্ব ও
বাগর্থবিদ্যাকে একসূত্রে আবদ্ধ করে।

তবে সম্ভাননী বাগর্থবিদ্যা একদিকে যেমন নম্পিত হয়েছে অন্যদিকে তেমনি হয়েছে নিন্দিত । কেম্পসন (১৯৭৭ : ১৭৬-১৭৭) দেখান যে সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যা বাক্যিক সংগঠন ও বাগর্থিক সংগঠনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ প্রমান করতে পারে না। লীচ (১৯৮১ : ৩৪৭) বলেন যে কেবল গভীর সংগঠন নয়, উপরিসংগঠনের সাথেও অর্থের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং এজন্য সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যা নাবোধকতা ও পরিমাপনের পরিধি ব্যাখ্যা করতে পারে না ।

তিনি আরো বলেন যে শাব্দিক অনুপ্রবেশ রূপান্তরের ধাপে ধাপে সংঘটিত হয় বলে এটি শেষ পর্যন্ত অর্থের অপরিবর্তনীয়তা নীতি বজায় রাখতে পারে না। তবে সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যার সবচেয়ে বড় সমালোচক মনে হয় চমস্কি । তিনি বলেন যে সঞ্জননী বাগর্থবিদ্যা ভাষিক তত্ত্বে নতুন কিছু যোগ করে না। তিনি দেখান যে প্রমিত তত্ত্বের সাথে এর কোন মৌলিক পার্থক্য নেই । যেমন :

প্রমিত তত্ত্ব : 2 = (P1…., Pg… Ph S P

সাননী তত্ত্বঃ 2 = (S, …, Pr…,P)

এখানে,

Σ = বাক্যতাত্ত্বিক সংগঠন

P₁ = ভিত্তি বা যৌক্তিক রূপ

Pi = গভীর সংগঠন

Pa

উপরি সংগঠন

S = বাগার্থিক উপস্থাপনা

P = ধুনিবৈজ্ঞানিক উপস্থাপনা

সঞ্জননী তত্ত্বে P1, PS একীভূত হয়ে যায় এবং ক্রম শুরু হয় S থেকে । এদিক থেকে এটি প্রমিত তত্ত্ব থেকে ভিন্ন । কিন্তু এই ভিন্নতা কোন তাৎপর্য সৃষ্টি করে না। কারণ রৌপিক উপাদানগুলো কিরূপে বিন্যস্ত হবে বা তাদের অভিমুখ কি হবে তার কোন তাত্ত্বিক গুরুত্ব নেই (Chomsky 1972 : 85 ) ।

বিশ্লেষণ যে কোন পর্যায় থেকে শুরু হতে পারে এবং যে কোন অভিমুখে প্রবাহিত হতে পারে, তাতে একই ফলাফল অর্জিত হবে । তাই চমস্কি (১৯৭২ ১৯৭) বলেন, “In short, it seems to me that in the few areas of substantive difference, generative semantics has been taking the wrong course.”

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version