Site icon Language Gurukul [ ভাষা গুরুকুল ] GOLN

সংকেত সংগঠন তত্ত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-সংকেত সংগঠন তত্ত্ব

সংকেত সংগঠন তত্ত্ব

মনোভাষাবিজ্ঞানী ম্যারুনীল (১৯৭৯) সংকেত সংগঠনের মাধমে ভাষা, চিন্তা ও বস্তুর সম্পর্ক নির্ণয় করেন। তার তত্ত্বের ভিত্তি হিসাবে তিনি পিয়ার্সের সংকেতের ধারণা গ্রহণ করেন এবং প্রতীক, প্রতিমূর্তি ও সূচক এই তিন ধরনের সংকেতের সাহায্যে বাগধিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের প্রয়াস পান ।

ম্যাকনীলের বাগধিক সংগঠন বোঝার জন্য পিয়ার্সের সংকেতের ধারণার সাথে আগে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন । পিয়ার্স সংকেতকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করেন। নীচে আমরা তাদের সংজ্ঞা ও উদাহরণ দিচ্ছি : প্রতীক : প্রতীক বলতে সেই সংকেতকে বুঝায় যা ব্যাখ্যাত না হলে তার চরিত্র হারায়। মানুষের ভাষা এই হিসাবে প্রতীকের পর্যায়ে পড়ে, কারণ ভাষার উপর যদি কোন অর্থ আরোপ করা না হয় তবে তার কোন গুরুত্ব
থাকে না।

 

 

প্রতিমূর্তি: প্রতিমূর্তি বলতে সেই সংকেতকে বুঝায় যার নির্দেশিত বাস্তবে অস্তিত্বশীল না হলে তা গুরুত্ব হারায় না। যেমন সংখ্যালিপি, জ্যামিতিক চিত্র, ছবি ইত্যাদি। সংখ্যা, জ্যামিতিক সংগঠন বিমূর্ত ধারণা এবং ছবি কল্পিত বন্ধুরও হতে পারে। প্রতিমূর্তিকে অর্থপূর্ণ করার জন্য এদের শশরীর উপস্থিতির প্রয়োজন নেই ।

সুচক : সূচক বলতে সেই সংকেতকে বুঝায় যা নির্দেশিতের অভাবে গুরুত্ব হারায় কিন্তু যা ব্যাখ্যাত হওয়া আবশ্যক নয় । যেমন ভাঙ্গা কাঁচের জানালা ঢিলের সূচক হতে পারে। চিলের ব্যাপারটি বাদ দিলে ভাঙ্গা কাঁচের
জানালা কোন কিছু প্রতীকায়িত করে না। এখন কেউ ব্যাখ্যা করুক আর না করুক ভাঙ্গা কাঁচের জানালার
সাথে টিলের সম্পর্ক থাকবেই ।

পিয়ার্সের মতো ম্যাকনীলও মনে করেন সংকেত তিনটি উপাদানে গঠিত : সংকেতযান, ব্যাখ্যক ও সংকেওয়ান হলো শব্দ/বাকা, চিত্র, মুষ্টিবদ্ধ হাত প্রভৃতি যা সংকেতের অর্থকে বহন করে নিয়ে যায়। ব্যাখ্যক হলো সংকেতমানকে ব্যাখ্যা করার ফলাফল যা সচরাচর চেতন মনের ক্রিয়া।

বস্তু হলো জাগতিক পদার্থ ঘটনা যার সাথে ব্যাথার সংকেতয়ানকে সম্পর্কিত করে। বন্ধ ভৌত হতে পারে, মানসিক হতে পারে, অর্থাৎ এটি মূর্ত বা বিমূর্ত যে কোন কিছু হতে পারে । কাজেই দেখা যায় সংকেতযান, ব্যাখাক ও বর মধ্যে একটি ত্রয়ী সম্পর্ক বিদ্যমান।

 

 

সংকেতয়ান ব্যাখ্যককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যাতে সংকেতয়ানের সাথে বস্তুর যে সম্পর্ক ব্যাখ্যকের সাথে বন্ধুর সেই একই সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এটিই হলো সংকেতের প্রক্রিয়া । সংকেতযান, ব্যাথ্যক ও বছর এই যন্ত্রপ্রক্রিয়াকে ম্যাকনীল নিম্নরূপ উপস্থাপন করেন :
সূচক :

O-S — I কোন বা দেখে ব্যাখ্যাকারীর মনে একটি সংবেদনের ফলাফল জন্মে প্রকৃত সংযোগ
প্রতিমূর্তি :

S+O I বস্তুসদৃশা কোন আকার গঠনের মাধ্যমে ব্যাখ্যাকারীর মনে একটি সংবেদনের ফলাফল জন্মে

প্রতীক : O-S নিয়ম -I নির্দেশিত বার একটি সংগঠন তৈরীর মাধ্যমে ব্যাখ্যাকারীর মনে একটি সংবেদনের ফলাফল

এখানে, O = ব

S = সংকেতযান

I = ব্যাখ্যক

উপরে যে যন্ত্রপ্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হয়েছে তা অনুধাবনমূলক । কিন্তু এর বিপরীতে সংকেতসংগঠনে একটি উৎপাদনমূলক প্রক্রিয়াও বর্তমান । এখানেও তিনটি উপাদান বিদ্যমান, তবে এক্ষেত্রে ব্যাখ্যকের পরিবর্তে থাকে উৎপাদক । একটি ব্যাপারে এখানে সর্তক হওয়া প্রয়োজন, তা হলো উৎপাদক বলতে উৎপাদনকারী ব্যক্তিকে বোঝাবে না বরং ব্যক্তির মনে বা মস্তিষ্কে যে মানসিক বা স্নায়ুগত প্রক্রিয়া কাজ করে তাকে বোঝাবে ।

সংকেতযান, উৎপাদক ও বস্তুর মধ্যেও একটি ত্রয়ী সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানে যে প্রক্রিয়াটি কাজ করে তা হলো বস্তু উৎপাদককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যাতে কার সাথে সংকেতযানের যে সম্পর্ক উৎপাদকের সাথে সংকেতয়ানের সেই একই সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ম্যাকনীল এই সম্পর্ককে নিম্নরূপে প্রদর্শন করেন :
সূচক :

OS কোন কিছু দেখে উৎপাদনকারীর মনে একটি প্রকাশের প্রক্রিয়া সূচিত হয় প্রকৃত সংযোগ
প্রতিমূর্তি :

OS বস্তুসদৃশ্য কোন আকার গঠনের মাধ্যমে উৎপাদনকারীর মনে একটি প্রকাশের প্রকিয়া সুচিত হয়
প্রতীক : P নিয়ম OS নির্দেশিত বস্তুর একটি সংগঠন তৈরীর মাধ্যমে উৎপাদনকারীর মনে একটি প্রকাশের প্রক্রিয়া সূচিত হয় ।

এখানে P উৎপাদক

S – সংকেত যান

ব্যাধ্যক ও উৎপাদক পরম্পরসম্পর্কিত । সংকেতের যজ্ঞপ্রক্রিয়ায় উৎপাদক ইনপুট এবং ব্যাখ্যক আউটপুট হিসাবে কাজ করে। সেই হিসাবে উৎপাদকের অবস্থান ব্যাখ্যকের পূর্বে। কাজেই এবার পুরো সংকেতসংগঠনকে সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায়
P O S I

ব্যাখ্যক ও উৎপাদক দুটি ঘনিষ্ট সম্পর্কিত প্রক্রিয়া যাদের জন্য একই মনস্তাত্ত্বিক মালমশলা ব্যবহৃত হয় । দুটি ভিন্ন প্রক্রিয়া না বলে বরং বলা যেতে পারে এরা একই প্রক্রিয়ার দুটি দিক যাদের অভিমুখ বিপরীত । তাদেরকে একরূপ কল্পনা করে যদি আমরা তার মধ্যস্থতায় সংকেত ও বস্তুর সম্পর্ক স্থাপন করি তবে তার ফলাফল হবে আমাদের পরিচিত মৌলিক ত্রিভুজ :

 

 

এভাবে দেখা যায় সংকেত সংগঠন তত্ত্ব ভাষা, চিন্তন ও জগতের মধ্যে একটি ত্রয়ী সম্পর্ক চিত্রিত করে। একে আমরা অগডেন ও রিচার্ডসের ত্রিভূজতত্ত্বের একটি উন্নত সংস্করণ বলতে পারি যাতে ত্রয়ী সম্পর্কের একটি সুষ্ঠ ব্যাখ্যা পাওয়া যায় । সর্বোপরি, সংকেত সংগঠন একটি বাগর্থিক প্রক্রিয়াকে তুলে ধরে যা নির্দেশন তত্ত্বের ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে ।

আরও দেখুন:

 

Exit mobile version