সামাজিক-সাংস্কৃতিক শ্রেণির নমুনা পাওয়াতপত্র বিশ্লেষণের জন্য একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মদিন উদযাপনের (কবি শামসুর রহমানের ৯১ তম জন্মদিন উদ্যাপন) দাওয়াতপত্র নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্লেষণের জন্য দাওয়াতপত্রটি নিচে উপস্থাপন করা হলো।
ক. সালের বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বাককৃতি বিশ্লেষণ
নমুনা পাওয়াতপত্রটির জন্মদিন উদযাপন সংক্রান্ত) উক্তিমালা বা ডিসেকোর্স বিশ্লেষণ করলে দেখা যাক, দাওয়াতপত্রটিতে ৫টি অংশ রয়েছে, যথা- i) সম্বোধন ii) তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনা iii) আমন্ত্রণ জানানো iv)
আমন্ত্রণকারীদ্বয়ের নামের পূর্বে সৌজন্যসূচক শব্দের ব্যবহার এবং v) আয়োজনকারী সংগঠনসমূহের নাম। একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক দাওয়াতপত্রের এই পাঁচটি অংশে কোন ধরনের ভাষাগত উপাদান থাকে তা নিচের সারণিতে তুলে ধরা হলো।
সারণি: ১১ সামাজিক-সাংস্কৃতিক (জন্মদিন উদযাপন) নমুনা দাওয়াতপত্রের কাঠামোগত অংশ
সার্লের (Searle, 1969) তত্ত্ব অনুসারে (সারণি: ৯ এ উল্লেখিত) প্রস্তাব কৃতির প্রথমেই আমন্ত্রিত অতিথিকে সম্বোধন করে ‘সুধী’ ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সমাজে আনুষ্ঠানিক পরিবেশে অতিথিকে সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ‘সুধী’ ব্যবহার করা হয়।
পরবর্তী অংশে রয়েছে তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনা। এ অংশটিতে আমন্ত্রণকারী, আমন্ত্রণগ্রহিতাকে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বেশ কিছু তথ্য প্রদান করেছেন, যেমন- কার স্মরণে, কবে, কোথায়, কখন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে, অনুষ্ঠানমালায় কী কী বিষয় থাকবে, অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব কে করবেন প্রভৃতি।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্মদিন বা মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন। এই ধরনের কার্যক্রমে সাধারণত আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। যেহেতু বিশ্লেষিত দাওয়াতপত্রে বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন কবির জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এ কারণে কবিতা পাঠ এই অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত আছে।
উল্লিখিত প্রস্তাব কৃতির তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনায় একজন সভাপতির নাম উল্লেখ আছে, যিনি সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন। পরবর্তী অংশে আমন্ত্রণকারী অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সবশেষে আমন্ত্রণকারী শিষ্টাচার প্রকাশের জন্য সৌজন্যসূচক ‘বিনীত শব্দটির ব্যবহার করে নিজেদের নাম এবং আয়োজক সংগঠনসমূহের নাম উল্লেখ করেছেন।
দাওয়াতপত্রের কাঠামোগত অংশসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনা”। কেননা এর মাধ্যমে আমন্ত্রণগ্রহিতা সমগ্র বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। সার্লের তত্ত্বানুসারে (Searle, 1969) উক্তির মাধ্যমে আমরা মূলত কাজ করে থাকি। এই দাওয়াতপত্রের লিখিত ভাষার ক্ষেত্রেও এ তত্ত্ব প্রযোজ্য।
লিখিত বক্তব্য বা প্রস্তাব কৃতির অন্তরালে আমন্ত্রণকারী তাঁর মনোগত অভিপ্রায় নির্দেশ করেছেন সেটি হচ্ছে নিবেদন কৃতি। এখানে দাওয়াতকারীর মনোগত অভিপ্রায় হলো আমন্ত্রিত অতিধি যেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। কেননা আমন্ত্রিত সবাই উপস্থিত থাকলে অনুষ্ঠানটি আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
সার্লের নিবেদন কৃতির শ্রেণিবিভাগ অনুসারে ‘কবি শামসুর রহমানের …… . জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান’ বিবৃতিমূলক নিবেদন কৃতি। কারণ আমন্ত্রণকারী এ অংশে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। পরবর্তী অংশ ‘অনুষ্ঠানে আপনাকে আমন্ত্রণ জানাই দিয়ে আমন্ত্রণকারীর ইচ্ছা বা অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে। এখানে তিনি অতিথিকে অনুরোধ করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য।
সে বিবেচনায় সার্লের মতে (Searle, 1969) এটি “আদেশমূলক নিবেদন কৃতি। কেননা এই আদেশমূলক নিবেদন কৃতি ‘অনুরোধের’ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। যেকোনো ধরনের যোগাযোগ লেখক-পাঠক/আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণগ্রহিতার সমন্বিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়।
আমন্ত্রকারীর প্রস্তাব কৃতির অন্তরালের নিবেদন কৃতিতে সাড়া দিয়ে আমন্ত্রণগ্রহিতা যদি অনুষ্ঠানে উপস্থিন থাকেন বা অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলেই সার্লের তত্ত্ব (Searle, 1969) অনুসারে প্রতিক্রিয়া কৃতি সম্পন্ন হয়, অর্থাৎ বাককৃতিটি সফল হয়।
এই তাত্ত্বিক বর্ণনা অনুসারে বলা যায় আমন্ত্রণকারীর লিখিত আহ্বানে সাড়া প্রদান করে আমন্ত্রণগ্রহিতা যদি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তাহলে প্রতিক্রিয়া কৃতি সম্পন্ন হবে।
খ. ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব অনুসারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বিনম্রতা বিশ্লেষণ
সামাজিক-সাংস্কৃতিক দাওয়াতপত্র সাধারণত কোন একটি সামাজিক সংগঠনের বা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে করা হয়ে থাকে। এ কারণে উল্লিখিত দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রণকারী হিসেবে ঐ সংগঠনের ঊর্ধ্বতন দুই বা ততোধিক ব্যক্তির নাম দাওয়াতপত্রে উল্লেখ থাকে।
এই দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রণকারী হিসেবে দুই জনের নাম উল্লেখ আছে। আমন্ত্রণকারীদ্বয় কবি শামসুর রহমানের ৯১তম জন্মদিন উদ্যাপন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে উপস্থিত থাকার জন্য বেশ কিছু বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ দাওয়াতপত্রে ব্যবহার করেছেন। দাওয়াতপত্রটিতে কিম্ভুতাসূচক যেসব শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ‘সুধী’, ‘সাদর আমন্ত্রণ’, ‘বিনীত’ প্রভৃতি।
আমাদের সংস্কৃতিতে আনুষ্ঠানিক পরিবেশে সম্মানিত কাউকে সম্বোধনের জন্য ‘সুধী’ ব্যবহার করা হয়। ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) অনুসারে ‘সুধী’ ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ। এই ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে বক্তার অভিব্যক্তি (face) বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে, অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়ে ‘সাদর আমন্ত্রণ বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে।
সবশেষে আমন্ত্রণকারীদ্বয় নিজেদের নাম এবং সংগঠনের নাম উল্লেখের পূর্বে ‘বিনীত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন রীতি অনুসারে। এখানে ‘বিনীত’ শব্দটির দ্বারা আমন্ত্রণকারীর শিষ্টাচার প্রকাশিত হচ্ছে। ব্রাউন এবং লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) অনুসারে ‘সাদর আমন্ত্রণ’ এবং “বিনীত দুটোই নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ নির্দেশ করে।
‘সাদর আমন্ত্রণ’ নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক বাক্যাংশটি ব্যবহার করে আমন্ত্রণকারী নেতিবাচক বিনম্রতা প্রকাশের সাথে সাথে আমন্ত্রিত অতিথির ‘অভিব্যক্তি ভীতিকারী কর্ম” (অভীক) হ্রাস করেছেন। একইসাথে আমন্ত্রিত অতিথির সম্মানও বৃদ্ধি করেছেন ( Brown and Levinson, 1987)। কারণ আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে অপ্রত্যক্ষ রূপ ব্যবহার করেছেন অনুরোধের মাধ্যমে, তিনি এক্ষেত্রে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে জোর করছেন না।
গ. লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বিনম্রতা বিশ্লেষণ
সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা দাওয়াতপত্রসমূহের ডিসকোর্স বা উক্তিমালা বিশ্লেষণ করে ‘সুধী’, ‘সাদর আমন্ত্রণ’, ‘বিনীত’, ‘সম্মানিত সদস্য’, ‘অশেষ শুভেচ্ছাসহ’, ‘বিনীত অনুরোধ’ প্রভৃতি বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ পাওয়া যায়।
সামাজিক-সাংস্কৃতি নমুনা দাওয়াতপত্রে ব্যবহৃত বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিক পরিবেশে কাউকে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে সম্মানসূচক শব্দাবলি ব্যবহার করা হয়।
আমন্ত্রণকারী, আমন্ত্রণগ্রহিতাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ‘সুধী’, ‘সম্মানিত সদস্য’ প্রভৃতি বিনম্রতাসূচক শব্দসমূহ প্রয়োগ করেছেন।
‘সুধী’, ‘সম্মানিত সদস্য ইত্যাদি সম্বোধনসূচক শব্দ/বাক্যাংশের মাধ্যমে আমন্ত্রণকারী, আমন্ত্রণগ্রহিতাকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। লিচের বিদ্রতার রীতি অনুসারে ‘সুধী’ ‘সম্মানিত সদস্য’ ‘অনুমোদিত রীতির’ অন্তর্গত। অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়ে ‘সাদর আমন্ত্রণ” বাক্যাংশটি আমন্ত্রণকারী ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিকে সম্মান জানানো হয়েছে।
এটিও ‘অনুমোদিত রীতি’র অংশ। আমন্ত্রণপত্রের শেষ অংশে আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রিত অতিথির নিকট অনুরোধ জানানোর জন্য ‘বিনীত”, “বিনীত অনুরোধ’ বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন।
নিচের বিদ্রতার রীতি অনুসারে ‘বিনীত’ এবং ‘বিনীত অনুরোধ” উভয় শব্দ এবং বাক্যাংশ দিয়েই “মিতচারিতা রীতি প্রকাশ পেয়েছে। উভয়ক্ষেত্রেই আমন্ত্রণকারী নিজেকে তুচ্ছ করে বিনয় প্রকাশ করেছেন আমন্ত্রণ গ্রহণকারীর নিকট।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক শ্রেণির হয় নমুনা পাওয়াতপত্র বিশ্লেষণের জন্য “বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্লেষণের জন্য দাওয়াতপত্রটি নিচে সংযোজন করা হলো।
ক. সার্নের বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বাককৃতি বিশ্লেষণ
সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা দাওয়াতপত্রটির ডিসকোর্স বা উক্তিমালা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এখানে ৫টি কাঠামোগত অংশ রয়েছে, যথা-
1) সম্বোধন ii) তথ্য বা বিষয়বস্তু বর্ণনা iii) আমন্ত্রণ জানানো iv) শুভেচ্ছাসহ আমন্ত্রণকারীর নাম এবং ঘ) বিনীত অনুরোধ। সামাজিক-সাংস্কৃতিক পাওয়াতপত্রের এই পাঁচটি অংশে কোন ধরনের ভাষাগত উপাদান থাকে তা নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলো।
সারণি: ১৩ সামাজিক-সাংস্কৃতিক (বর্ষবরণ) নমুনা পাওয়াতপত্রের কাঠামোগত অংশ
গার্লের তত্ত্ব (Scarle, 1969) অনুসারে এই পাওয়াতপত্রের লিখিত ভাষিক উপস্থাপন ( সারণি: ১০) প্রস্তাব কৃতি। এই প্রস্তাব কৃতির শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিকে সম্বোধন করে আমন্ত্রণকারী সম্মানিত ‘সদস্য’ ব্যবহার করেছেন।
আমাদের সামাজিক রীতি অনুসারে আনুষ্ঠানিক কোন ক্ষেত্রে অতিথিকে সম্বোধন করার জন্য ‘সম্মানসূচক শব্দাবলি ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী অংশে রয়েছে তথ্য বা বিষয়বস্তুর বর্ণনা। এ অংশটি দাওয়াতপত্রের
ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই অংশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি আমন্ত্রণের বিষয়বস্তু অর্থাৎ করে, কেন, কোথায় অনুষ্ঠানটি হবে সে সম্পর্কে অবগত হন। বিশ্লেষিত দাওয়াতটিতে দেখা যায় ‘বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব এর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর আমন্ত্রণকারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অতিথিদের সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পরবর্তী অংশে আমন্ত্রণকারীদ্বয় নিজেদের নাম উল্লেখের পূর্বে অতিধিবৃন্দকে নববর্ষের শুভেচ্ছা আপন করেছেন।
আলোচ্য দাওয়াতপত্রটির প্রস্তাব কৃতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো, অন্যান্য দাওয়াতপত্রে যেখানে আমন্ত্রণকারী সাধারণত নিজের নাম উল্লেখ করে প্রস্তান কৃতি শেষ করেন, দেখানে এই দাওয়াতপত্রের উদ্যোক্তাদের সাংগঠনিক রীতি অনুসারে দাওয়াতপত্রটি আমন্ত্রিত অতিথি যেন নিজের সাথে রাখেন সে বিষয়ে নিচে ছোট হরফে নোট উল্লেখ করে প্রস্তাব কৃত্তি শেষ করা হয়েছে।
সালের শুরু অনুসারে (Searle, 1969) এই দাওয়াত পদের লিখিত বক্তব্য বা প্রস্তাব কৃতির মাধমে আমলকারী তাঁর যে মনোগত অভিপ্রায় নির্দেশ করেছেন এই অভিপ্রায়কে বলা হয়েছে “নিবেদন কৃতি। মূলত এই দাওয়াতপত্রটিতে আমন্ত্রণকারীর দুইটি মনোগত অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে।
প্রথমত, আমন্ত্রণগ্রহিতা দেন অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত থাকেন, দ্বিতীয়ত, দাওয়াতপত্রটি তিনি যেন লাগে রাখেন। প্রদত্ত নিবেদন কৃতির শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে ‘আসন্ন পহেলা বৈশাখ . . . . . . . . বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিবৃতিমূলক নিবেদন কৃতি। কারণ এ অংশে দাওয়াতকারী আমন্ত্রিত অতিথিকে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। “আপনাকে জানাচ্ছি’ এবং ‘কাজটি সঙ্গে ……. অনুরোধ করছি এ বাক্যদুটির মাধ্যমে আমন্ত্রণকারীয় না অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে।
আমাণকারী অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য এবং কাজটি সাথে রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাই এটি আদেশমূলক নিলেন কৃতি। মূলত আদেশমূলক নিবেদন কৃতির মাধ্যমে অনুরোধ প্রকাশ পেয়েছে। যেকোনো ধরনের যোগাযোগ সম্পন্ন হয় লেখক-পাঠকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
সে হিসেবে এই দাওয়াতপারে আমন্ত্রণকারীর নিবেদন কৃতিতে সাড়া দিয়ে আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে দাওয়াতপত্রটি সাথে নিয়ে উপস্থিত থাকলে বা অপারগতা প্রকাশ করলে প্রতিক্রিয়া করি সুসম্পন্ন হবে অর্থাৎ যোগাযোগ সফল হবে।
খ. ব্রাউন লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব অনুসারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক নমুনা পাওয়ারপরের বিনম্রতা বিশ্লেষণ
উক্ত আমন্ত্রণপত্রটিতে আমন্ত্রণকারীরা উল্লেখ্য অনুষ্ঠানে আমরিতাকে উপস্থিত থাকার জন্য বেশ কিছু
বিশ্বজ্ঞাসূচক শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন, যেমন- ‘সম্মানিত সদস্য’, ‘সাদর আমন্ত্রণ’, অশেষ শুভেচ্ছাসহ”, “নির্ণীত অনুরোধ প্রভৃতি। আমাদের সামাজিক রীতি অনুসারে আনুষ্ঠানিক পরিবেশে কাউকে সম্বোধন করার জন্য সম্মা। নিশ্লেষিত দাওয়াতপরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লান এর পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
ক্লানের নীতিমালা অনুসারে এর সদস্যগণই অনুমান এ সংগঠনের কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ কারণে দাওয়াতগ্রহিতা ক্লাবের সদস্যদেরকে সম্মান জানিয়ে “ानম্বাধন করা হয়েছে।
ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তন্তু (Brown and Levinson, 1987) অনুসারে ‘সম্মানিত সদস্য’ ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ। আমন্ত্রণকারী জামাহণকারীকে সম্মানসূচক শব্দ চয়নে সম্বোধন করে নিজের অভিব্যক্তি (face) বৃদ্ধি করেছেন আমন্ত্রণ গ্রহণকারীর নিকট।
পক্ষান্তরে, সাদর আমন্ত্রণ এবং “অশেষ ছড়োচ্ছাসহ’, ‘নির্ণীত অনুরোধ’ বাক্যাংশ তিনটি ব্রাউন ও দেভিনসনের তন্তু (Brown and Levinson, 1987) অনুসারে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক বাক্যাংশে আমন্ত্রণ হিতার মনে যেন নেতিবাচক ধারণা না সুন্নি হয় যে তাকে যথেষ্ট শিষ্টতার সাথে আমন্ত্রণ জানানো হয় নাই, এ কারণে আমন্ত্রণকারী নেতিবাচক বিন্যতাসূচক বাক্যাংশসমূহ আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহার করেছেন।
সাদর আমন্ত্রণ’, ‘বিনীত ‘অনুরোধ’ বাক্যাংশের মাধ্যমে বিনম্রতা প্রকাশের সাথে সাথে আমন্ত্রণকারীর অভিব্যক্তি ভীতিকারী কর্ম (অভীক) হ্রাস পেয়েছে। এই দাওয়াতপরটিতে আমন্ত্রণকারী ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের বিদ্ৰতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করে ব্রাউন লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব মতে নিজের বৃদ্ধির পাশাপাশি ‘অভীক ড্রাগ করেছেন।