আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ” সুমঙ্গল থের “। যা “থেরপাথা” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
সুমঙ্গল থের
সুমঙ্গল থের
সুমুত্তিকো সুমুত্তিকো সাহু সমুত্তিকোমিং তীহি খুজ্জকেহি,
অসিতাসু মযা নঙ্গলাসু মযা খুদ্দ কুদ্দালাসু মযা ।
যদিপি ইধমের ইধমের অর্থ বাপি অলমের অলমেব,
ঝায় সুমঙ্গল ঝায় সুমঙ্গল অপমত্তো বিহর সুমঙ্গলা’তি।
শব্দার্থ
সুমুত্তিকো – সুমুক্ত; সাহু – সাধু, উত্তম; তীহি – ত্রিবিধ; খুচ্ছকেহি – কুজের লক্ষণ দ্বারা; অসিতাসু – – কৃষক দ্বারা কর্তন; নঙ্গলাসু – লাঙ্গল দ্বারা কর্ষণ; কুদ্দালাসু – কোদাল দ্বারা খনন; যদিপি – যদিও; ইধমেব (ইধং + এব এখানে অর্থাৎ গ্রামে; অলমের (অলং + এব ) তবুও ভাল; ঝায ধ্যান কর; অপমত্তো অপ্রমত্ত; বিহর অবস্থান কর। – –
সারাংশ
সুমঙ্গল স্থবির নিজে বলেছেন-
সুমুক্ত হও। কৃষক কর্তনে, কোদাল খননে এবং কুজ লক্ষণে বুঝা যায়। এ ত্রিবিধ লক্ষণ থেকে আমি মুক্ত হয়েছি। কৃষিকার্যের এ ত্রিবিধ লক্ষণ দুঃখকর। আমি এ দুঃখ থেকে অব্যাহিত লাভ করেছি। যদিও আমি কৃষকদের মধ্যে অবস্থান করছি, আমার সে আকর্ষণ আর নেই। সুমঙ্গল ধ্যান কর। ধ্যানে রত হয়ে অপ্রমত্তভাবে বাস কর ।
সুমঙ্গল স্থবির
তিনি সিদ্ধার্থ বুদ্ধের সময় বৃক্ষদেবতা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। একদিন ভগবান স্নান করছিলেন। তাঁর একটি মাত্র চীবর দেখে দেবতা করতালি দিয়েছিলেন। সে কারণে তিনি গৌতম বুদ্ধের সময় শ্রাবস্তীর এক দরিদ্রকুলে জন্ম নেন। তার নাম ছিল সুমঙ্গল। সে কৃষি কার্যের দ্বারা জীবন যাপন করত।
একদিন রাজা প্রসেনজিৎ ভিক্ষুসংঘকে মহাদান দিয়েছিলেন। মজুরেরা দানীয় বস্তু বহন করে নিয়ে এসেছিল। সেও দধিভাণ্ড বহন করে এনেছিল। ভিক্ষুসংঘের সম্মান সৎকার দেখে সে ভাবল- শাক্যপুত্রীয় শ্রমণগণ সুখে ভোজন ও শয়ন করেন। নিরাপদে থাকেন। আমিও প্রব্রজ্যা গ্রহণ করলে ভাল হয়।
পরে এক মহাস্থবিরের নিকট প্রব্রজিত হয়ে অরণ্য- বিহারে কর্মস্থান ভাবনা করছিলেন। এমন সময় তিনি চীবর ত্যাগের ইচ্ছায় জ্ঞাতিকুলে যাচ্ছিলেন। পথে এক কৃষককে ছেঁড়া কাপড়ে কোমর বেঁধে ক্ষেতে কাজ করতে দেখলেন। তার শরীরে কাদা মাখা জল।
রোদে শুকিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে। তা দেখে তিনি চিন্তা করলেন— অহো, জীবন যাপনের জন্য মানুষ এত দুঃখ ভোগ করছে। এতে তাঁর ভাব উৎপন্ন হল। তখন তিনি এক বৃক্ষমূলে গিয়ে কর্মস্থানে মনেনিবেশ করলেন। অল্প সময়ে অর্থভূফল লাভে সমর্থ হলেন। দুঃখ থেকে পরিত্রাণ লাভের সফলতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি গাথাগুলো ভাষণ দিয়েছিলেন।
টীকা
থেরগাথা
থেরগাথা সুত্ত পিটকের অন্তর্গত খুদ্দক নিকায়ের অষ্টম গ্রন্থ। এ গ্রন্থে বুদ্ধের সময়কালীন ২৬৪ জন থের-র রচিত গাথা সংকলিত হয়েছে। মোট ১৩৬০টি গাথা আছে। গাথাগুলো ২১টি নিপাতে বিভক্ত। গাথার সংখ্যা অনুসারেই নিপাতগুলো ঠিক করা হয়েছে।
জ্ঞানী ও বয়োবৃদ্ধ ভিক্ষুরাই থের নামে অভিহিত। গাথাগুলোতে তাঁদের পুণ্যকর্ম ও অনাগারিক জীবনের অভিজ্ঞতা সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও তুলে ধরেছেন। বৌদ্ধযুগে রচিত কাব্যগ্রন্থসমূহের মধ্যে থেরগাথা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।
লোকোত্তর জীবনের পূর্ণতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরাই গেরাগাথার কবিতাগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য। মহাজ্ঞানী সারিপুত্র, মহাঋদ্ধিবান মৌদগল্যায়ন, ধর্মকথিক আনন্দ, বিনয়ধর উপালি প্রমূখ স্থবিরদের জীবন চরিত খেরগাথায় স্থান পেয়েছে।
আরও দেখুনঃ