আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় অমর একুশে
অমর একুশে
অমর একুশে
লেখক পরিচিতি
বাংলাদেশের কাব্যধারায় হাসান হাফিজুর রহমান প্রগতিশীল, মননধর্মী ও আধুনিক কবি। দেশ বিভাগ-পরবর্তী বাংলাদেশের তৎকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও চিন্তার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ঐতিহাসিক । তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুল রহমান, মাতা হাফিজা খাতুন, তিনি পিতামাতার প্রথম সন্তান। পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যচর্চার উপযোগী, তিনি বাল্যকালেই গ্রাম ও নগর উভয় পরিবেশের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনের শুরু। ১৯৪৬-এ তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বি.এ. অনার্সে ভর্তি হয়েও পরীক্ষা দেননি। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে পাস কোর্সে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঐ বৎসরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এম.এ. শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে পরীক্ষায় পাশ করেন।
হাসান হাফিজুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন ছিল সক্রিয় ও বর্ণাঢ্য। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমননীতি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারী। পেশাগত জীবনে হাসান হাফিজুর রহমান প্রধানত সাংবাদিক ও এক পর্যায়ে কলেজের অধ্যাপক হিসেবে পাঠদান করেছিলেন।
১৯৭৩-৭৪ খ্রিস্টাব্দে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস কাউন্সিলর পদে কাজ করেন।তাঁর ঐতিহাসিক ভূমিকা হচ্ছে তিনিই প্রথম ‘একুশে ফেব্রুয়ারী (১৯৫৩) কাব্যসংকলন সম্পাদনা করেন। তাঁর সম্পাদনায় ১৬ খন্ডে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিল পত্র’ (১৯৮২-৮৩)। বিভাগোত্তর বাংলাদেশের কাব্যাঙ্গনের তিনি একজন স্থপতি। বিশেষত, আধুনিক কবিতার প্রগতি ও মননধর্মী ধারার বিকাশক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য।
তিনি জনজীবনের প্রত্যাশা ও সংগ্রাম, ব্যক্তিমানুষের যন্ত্রণা ও কামনাবাসনা এবং বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে কাব্যবিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর রচিত কাব্যসমূহ: বিমুখ প্রান্তর [১৯৬৩], আর্ত শব্দাবলী (১৯৬৮], অন্তিম শরের মতো [১৯৬৮], যখন উদ্যত সঙ্গীন [১৯৭২], বজ্রে চেরা আঁধার আমার [১৯৭৬], শোকার্ত তরবারী [১৯৮২], আমার ভেতরের বাঘ [১৯৮৩], ভবিতব্যের বাণিজ্যতরী [১৯৮৩]।
এছাড়াও তিনি প্রবন্ধ গ্রন্থ ও গল্প সাহিত্যেরও রচয়িতা; প্রবন্ধ: আধুনিক কবি ও কবিতা (১৯৬৫), মূল্যবোধের জন্যে (১৯৭০), সাহিত্যপ্রসঙ্গ (১৯৭৩), আলোকিত গহ্বর (১৯৭৭); গল্পগ্রন্থ: আরো দুটি মৃত্যু (১৯৭০)।
হাসান হাফিজুর রহমান হার্ট, লিভার ও কিডনির ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জানুয়ারি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসার জন্য মস্কো গমন করেন। সেখানে সেন্ট্রাল ক্লিনিক হাসপাতালে ১লা এপ্রিল ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন। তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ (১৯৭১) অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে।
পাঠ পরিচিতি
হাসান হাফিজুর রহমান রচিত ‘ অমর একুশে কবিতাটি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলের সময়ে রচিত হয় এবং ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ কাব্যসংকলনে ১৯৫৩ – তে প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি পরে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিমুখ প্রান্তর’-এ অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘঠিত ভাষা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পটে লিখিত এ- জাতীয় আরও কবিতা রয়েছে।
যেমন আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি, আবু জাফর ওবায়দুলাহ রচিত ‘ মাগো ওরা বলে’ ইত্যাদি। আলোচ্য ‘অমর একুশে কবিতাটি সেক্ষেত্রে সবচেয়ে শিল্পসফল ও যুগান্তকারী রচনা।
মূলপাঠ
আম্মা তাঁর নামটি ধরে একবারও ডাকবে না তবে আর?
ঘূর্ণি ঝড়ের মতো সেই নাম উন্মথিত মনের প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে জাগবে,
ডাকবে, দুটি ঠোঁটের ভেতর থেকে মুক্তোর মতো
গড়িয়ে এসে একবারও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে না,
সারাটি জীবনেও না? তবে হার?
কি করে এই গুরুভার সইবে তুমি, কতোদিন?
আবুল বরকত নেই: সেই অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বিশাল শরীর বালক,
মধুর স্টলের ছাদ ছুঁয়ে হাঁটতো যে তাঁকে ডেকো না;
আর একবারও ডাকলে ঘৃণায় তুমি কুঁচকে উঠবে
– সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার
– কি বিষণ্ন থোকা থোকা নাম;
এই এক সারি নাম বর্ণার তীক্ষ্ণ ফলার মতো এখন হৃদয়কে হানে
আমরা ওদেরকে হারিয়েছি —
বিচ্ছেদের জন্যে তৈরি হওয়ার আগেই কেননা,
প্রতিক্রিয়ার গ্রাস জীবন ও মনুষ্যত্বকে সমীহ করে না;
ভেবে ওঠার আগেই আমরা ওদেরকে হারিয়েছি কেননা,
প্রতিক্রিয়ার কৌশল এক মৃত্যু দিয়ে হাজার মৃত্যুকে ডেকে আনে ।
আর এবার আমরা হারিয়েছি এমন কয়েকজনকে
যাঁরা কোনদিন মন থেকে মুছবে না,
কোনদিন কাকেও শান্ত হতে দেবে না;
যাঁদের হারালাম তাঁরা আমাদেরকে
বিস্তৃত করে দিয়ে গেল দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে,
কথা কণা করে ছড়িয়ে দিয়ে গেল দেশের প্রাণের
দীপ্তির ভেতরে মৃত্যুর অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে।
আবুল বরকত, সালাম, , রফিকউদ্দিন,
জব্বার কি আশ্চর্য, কি বিষণ্ণ নাম!
এক সার জ্বলন্ত নাম৷
॥২॥
কৃষাণ যেমন বর্ষার পলিসিক্ত মাঠে রোয়া ধানের
চারাগুলো রেখে আসে সোনালী শস্যের জন্মের
আকাঙ্ক্ষায় তেমনি আমার সরু সরু
অনুভূতিগুলো জনতার গভীরে বুনে এসেছি;
দেশ আমার, ইতিহাসের ধারা যে জ্ঞান
আমাকে দিয়েছে তারই পবিত্র সন্তান এ
কটি দিনে তোমার হৃদয়ের বিদীর্ণ আভাকে
দেখিয়েছ – বিদীর্ণ আভায় জ্বলেছিলে;
যে আভারই আকস্মিক স্পর্শে হয়তো কহিতুর
চূর্ণ চূর্ণ হয়ে ছড়িয়েছিল প্রাণপ্রার্থী প্রান্তরে প্রান্তরে।
দেশ আমার তোমার প্রাণের গভীর জলেশান করে এবার এলাম৷
তোমার প্রাণের গভীর জলেশান করে এবার এলাম;
শ্রমিক তার শিল্পে প্রতিভার স্বাদ মেশাতে পেরে
যে তৃপ্তিতে বিশাল হয়ে ওঠে তারই স্পর্শে পরাগ
সারা চেতনায় মেখে একবার আকাশের দিকে তাকালাম,
একবার তোমার গ্রাম যমুনার ঘোলা স্রোতে দৃষ্টিকে
ডুবিয়ে নিয়ে লক্ষ লক্ষ চারা ধানের মতো
আদিগন্ত প্রাণের সবুজ শিখাগুলো দেখি,
কি আশ্চর্য প্রাণ ছড়িয়েছে
– একটি দিন আগেও তো বুঝতে পারিনি
কি আশ্চর্য দীপ্তিতে তোমার কোটি সন্তানের প্রবাহে প্রবাহে
সংক্রমিত হয়েছ একটি দিন আগেও তো বুঝতে পারি নি, দেশ আমার।
জন্মদাতা পিতার বাস্পস্তব্ধ চোখ দুটোকে একবার মনে করো,
একটি মাত্র ভাইকে হারিয়ে বোনের অকস্মাৎ
আর্ত চিৎকারকে সময়ের নিভৃত মন্দিরে সংগোপনে
এসে যারা পরস্পরে হৃদয়ের সততার কথা বলে
গেছে তাদের একজন আজ নেই
যুগল পাখির একটি আজ নেই
করুণ আঁখি হরিণী তার কোমল শাবকটিকে হারিয়েছে
সমুদ্রের আকুল ঢেউয়ের মতো সীমাক্লান্ত কান্না,
দিকে দিকে পাবিত কান্না দৃষ্টিমান তার চক্ষুকে হারিয়েছে
হে আমার জ্ঞান একটিমাত্র উচ্চারণের
বিষ আমাকে দাও যা হৃদয় থেকে হৃদয়ে ছড়ায়
ওষধি জন্মের মতো একবার স্পন্দিত হয়ে
যে ঘৃণা আর কখনো মৃত্যুকে জানে না হে আমার জ্ঞান
আয়ুর প্রথম হৃদয়মস্থিত শব্দ,
মনুষ্যত্বের প্রথম দীক্ষা যে উচ্চারণে তারই
সম্মানের জন্যে তাঁরা যূথবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বুদ্ধ আর মোহাম্মদের দৃষ্টির মতো দীপ্তি
ফল্গুর মুখদেশের মতো উন্মথিত আবেগ,
আকাশের যে সাতটি তারা সমস্ত নীলিমার
ভেতর চিহ্নিত হয়ে আছে তাদের মতো অনন্য
– আর জীবনের শত্রু শয়তানেরা সেই পবিত্র
দেহগুলো ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আর তাদের আত্মা
এখন আমরা হৃদয়ে হৃদয়ে পোষণ করি৷ তাঁদের
একজন আজ নেই – না, তাঁরা পঞ্চাশ জন আজ নেই
– আর আমরা সেই অমর শহীদদের জন্যে,
বস্তুসংক্ষেপ
একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাসংগ্রামে শহীদ সন্তানের জন্য মাতৃহৃদয়ের বেদনার সঙ্গে মিলে আছে শৃঙ্খলিত, লুণ্ঠিত স্বদেশমাতার রূপমূর্তি। সন্তানের নাম উচ্চারণের মধুর আনন্দ থেকে মাতৃকন্ঠ বঞ্চিত। শাসকের দমন ও হত্যা তার কণ্ঠকে করেছে রুদ্ধ। শহীদ বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার — নামগুলো এখন তীক্ষ বর্শার ফলার মতো বেদনায় বিদ্ধ করেছে দেশের হৃদয়কে।
তারা অকাল বিচ্ছেদের শিকার, প্রতিক্রিয়াশীল শত্রু তাদেরকে হননের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বকে পর্যুদস্ত করেছে। কিন্তু তাদের এই মৃত্যু দেশের আত্মাকে আরও অশান্ত ও প্রদীপ্ত করে তুলেছে, দেশের মানুষকে দীক্ষা দিয়ে গেছে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য। এদের নামগুলো একই সঙ্গে বেদনা ও অগ্নিশিখার মত প্রজ্বলিত।
এই ভাষাসংগ্রাম কবিকে করেছে স্বদেশচেতন, ইতহাসলগ্ন এবং জীবনসংগ্রামী। কারণ মাতৃভাষার লড়াই থেকে তিনি দেশের মূল ও বিস্তৃত প্রাণপ্রবাহের সঙ্গে একা হওয়ার দীক্ষা গ্রহণ করেছেন। জনতার গভীর হৃদয়ে কবি তাঁর সূক্ষ্ম অনুভূতিকে চারার মত রোপন করেছেন, যা সোনালি ফসলে রূপান্তরিত হবে। দেশজ সত্তায় কবির ঘটেছে অবগাহন।
এই দেশের পটভূমিতে রয়েছে কৃষক-শ্রমিকজনতা, রয়েছে জীবনসংগ্রামের সুকঠিন ক্ষেত্র, প্রকৃতির নদী-মাঠ-ত -আকাশ। কবি একুশে ফেব্রুয়ারির মহিমায় আত্মসজাগ ও পরিশুদ্ধ হয়ে এই সুবিশাল দেশপ্রাণকে উপলব্ধি করতে পারছেন। শহীদ সন্তানের মহান আত্মত্যাগ জাতিকে মহিমান্বিত ও সচেতন করেছে, কিন্তু পরিবারের পিতা মাতা ভাইবোনের জন্য বয়ে এনেছে স্বজন হারানোর দুঃখ।
তবু এই মৃত্যু মাতৃভাষার জন্যে — মানুষ তার জন্ম ও মনুষ্যত্ব নিয়ে যে ভাষায় গৌরব ব্যক্ত করে, তারই সম্মানের জন্য এই আত্মবিসর্জন। তাঁদের মৃত্যু সমগ্র দেশকে একতাবদ্ধ করে গেছে। ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই পরবর্তী সব লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু ও উৎসে রূপান্তরিত হয়েছে, অর্থাৎ দ্রোহচেতনার উজ্জীবন ঘটেছে। এখানে একুশে ফেব্রুয়ারির রাজনৈতিক তাৎপর্যের গভীরতাই ব্যক্ত করা হচ্ছে।
মানুষ আজ একুশের শপথে উদ্দীপ্ত হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিলগ্নে, ইতিহাসের নবযুগে উপনীত। একদিকে স্বজনহারা পরিবারের বেদনা, অন্যদিকে দেশের বৃহত্তর জনজীবন – সবই একসূত্রে অবিচ্ছিন্ন হৃদয়ে পরিণত। এই দরিদ্র, লাঞ্ছিত ও শোষিত দেশের মানুষ মাতৃভাষার লড়াই থেকে অর্জন করতে পেরেছে তার দাবি ও অধিকারের পরবর্তী সংগ্রামস্পৃহা ও রচনা করেছে মুক্তির ইতিহাস ।
টীকা
একুশে – ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে। ১৯৪৭- পরবর্তী পাকিস্তানে বাঙালি জাতি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উক্ত তারিখে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক প্রমুখ শহীদ হন। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ভাষা- ঐতিহ্য রক্ষার ও সামগ্রিক মুক্তির লড়াই, যা পরবর্তীকালে অনেক লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সালাম, রফিকউদ্দিন, বরকত, জব্বার – এঁরা সবাই একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে শহীদ হন। এঁদের মধ্যে সালাম, রফিকউদ্দিন চাকরিজীবী, বরকত ছাত্র এবং জব্বার ছিলেন কৃষিজীবী। উক্ত আন্দোলনে দেশের সর্বস্তরের মানুষই আবেগাপুত ও কোন-না-কোনভাবে উদ্দীপিত হয়েছিল।
সাতটি তারা – সপ্তর্ষিএন্ডল, আকাশের ঈশান কোনে অবস্থান করে। পুরাণমতে, ব্রহ্মার মানসপুত্র সাতজন ঋষির নামে এদের নামকরণ করা হয়েছে, যারা ধর্মব্যবস্থা ও লোকরক্ষা করেছেন। নামগুলো হচ্ছে মরীচি, অত্রি, পুলহ, পুলস্তা, ক্রতু, অঙ্গিরা ও বশিষ্ঠ। অসংখ্য তারকার মধ্যে এদের চিহ্নিত করার অর্থই হল এদের মহিমাকে স্বতন্ত্র করে দেখা। ভাষা-শহীদদের স্বতন্ত্র মহিমার জন্যই সাতটি তারা হিসেবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
সখিনাহৃদয় – কারবালা যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে রচিত মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’ গ্রন্থের চরিত্র। কারবালা যুদ্ধে সদ্যবিবাহিতা সখিনা বৈধব্যবরণ করেছিলেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. ‘প্রতিক্রিয়ার গ্রাস জীবন ও মনুষ্যত্বকে সমীহ করে না’ বাক্যটির অর্থ কি?
উত্তর : একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন সালাম, বরকত, জব্বার প্রমুখ। তাদের মৃত্যুর জন্য স্বজন ও দেশবাসী প্রস্তুত ছিল না। এই মৃত্যু প্রতিক্রিয়াশীল শাসকশক্তিরপারা সংঘঠিত। জাতি ও দেশের উপরে নির্যাতন, শোষণ ও শাসনের ইতিহাস বাঙালিকে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে বারবার টেনে নিয়ে গেছে। প্রগতি ও মানবতার বিরুদ্ধ শক্তি কখনো মানুষের জীবন ও মনুষ্যত্বের মর্যাদা রক্ষা করেনা, বরং বিনষ্ট করে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সর্বদাই দলিত ও নিশ্চিহ্ন করে মানবতার বাণী।
২. জনতার গভীরে কবির অনুভূতি কেন রোপিত হয়েছে?
উত্তর : একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই হলেও এটি ছিল মূলত শোষিত, নিপীড়িত বাঙালি জাতির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রাম। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও পীড়নই মানুষকে ভাষার প্রতীকে সংঘবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করেছিল। শহরের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষ এই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে পেয়েছিল গোটা দেশের জনমানুষের সংস্পর্শ।
কবির অনুভূতি জনতার জীবনমূলে সম্প্রসারিত হয়ে অর্জন করে রাজনৈতিক মাত্রা। জনতার সঙ্গে কবির ঘটে গভীর সংযোগ । শোষণ, শাসন থেকে অস্তিত্বের মুক্তির প্রশ্নেই কবি তার হৃদয়কে রোপিত করেন জনতার জীবন ভূমিতে ।
আরও দেখুন :