পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ

উপাত্ত হিসেবে বিশ্লেষণের জন্য পারিবারিক পাওয়ার পর শ্রেণির অন্তর্গত ‘তর বিবাহ” অনুষ্ঠানের পাওয়ারপর নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে পাওয়াত পর্যটি নিয়ে উপস্থাপন করা হলো।

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ-১

 

ক. সার্নের বাকতি তত্ত্ব অনুসারে পারিবারিক নমুনা পাওয়ানের বাকতি বিশ্লেষণ
উল্লিখিত সংখ্যাকশনের বা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে মোট সাতটি অংশ রয়েছে যথা 🙂

ii iv) আমন্ত্রণ জানানো

৬) যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ

১১) vii) নামসহ দীপ।

একটি পারিবারিক সাওয়াকেশনের এই সাতটি অংশে কোন ধরনের ভাষাগত উপাদান থাকে তা নিম্নের সারণিতে উল্লেখ করা হলো।

সারণি ও পারিবারিক (শুভ বিবাহ নমুনা পাওয়ারের কাঠামোগত অংশ

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ-১

 

পাওয়ারপরের লিখিত এই অধেক উপাসনকে সার্কের (Scarle, 1969) ব্যক্তি তত্ত্ব অনুসারে বলা হয় বাস্তবে বৃষ্টি। এই প্রস্তাব কৃষির আলোচনার সাথেই পুরুষ নাই অনুসারে সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ‘মা’, ‘জানা’ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা ভাষাকে এদের কাউকে সম্বোধনের জন্য সাধারণ ” শব্দটির ব্যবহার প্রতি।

 

ফারসি ‘জনাব’ শব্দটির নারীবাচক শব্দ হিসেবে ‘জনাবা’ অনেকে ব্যবহার করেন কিন্তু বাংলা ভাষায় নিয়ম অনুসারে ‘জনাবা’ শব্দটি সঠিক নয়। আলোচ্য দাওয়াতপত্রের ডিসকোর্সের পরবর্তী অংশে রয়েছে *ধর্মীয় রীতি অনুসারে শিষ্টতা’। আমন্ত্রণকারী তাঁর ধর্মানুসারে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে দাওয়াতপত্রে সালাম বা আদাব জানিয়ে থাকেন।

এটি সামাজিক শিষ্টতারও অংশ। আলোচিত দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রণকারী মুসলিম বিধায় তিনি ‘আস্সালামু আলাইকুম’ ব্যবহার করেছেন। এ অংশে আমন্ত্রণকারী কিছু তথ্যের মাধ্যমে নিমন্ত্রিত অতিথিকে দাওয়াতপত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করতে চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, তথ্যের মধ্যে রয়েছে অনুষ্ঠানটি কবে, কোথায়, কখন অনুষ্ঠিত হবে, সর্বোপরি যাদের জন্য এ আয়োজন অর্থাৎ বর কনের পরিচিতি এ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী অংশে আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণগ্রহিতাকে বিনীতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য। আমাদের সামাজিক রীতি অনুসারে শুভ কাজে আমরা সবার ‘উপস্থিতি ও দোয়া কামনা করে থাকি।

আমন্ত্রণকারীও বর-কনের দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয় এ কারণে আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতি ও দোয়া’ কামনা করেছেন। অনুষ্ঠান সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দাওয়াতপত্রে ‘প্রয়োজনে’ লিখে কয়েকটি মোবাইল ফোন নাম্বার: উল্লেখ করা আছে। অতঃপর ‘অভ্যর্থনায়’ ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা আছে, এঁরা অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাবেন।

দাওয়াতপত্রের প্রস্তাব কৃতির সবশেষে দেখা যায়, সামাজিক রীতি অনুসারে আমন্ত্রণকারী ‘শুভেচ্ছান্তে এর মাধ্যমে আমন্ত্রণগ্রহণকারীকে শুভ কামনা জানিয়ে নিজের নাম উল্লেখ করেছেন। দাওয়াতপত্রের কাঠামোগত অংশসমূহের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনা, কেননা এর মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।

সার্লের (Searle, 1969) মতে আমরা যখন কথা বলি তা দিয়ে কাজও নির্দেশিত হয়। দাওয়াতপত্রের লিখিত ভাষার মাধ্যমেও কাজ নির্দেশিত হয়। অর্থাৎ লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে লেখকের মনোগত অভিপ্রায় প্রকাশিত হয় পাঠকের নিকট। এই অভিপ্রায়কে বলা হয় নিবেদন কৃতি (Searle, 1969)।

দাওয়াতপত্রের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারীর মনোগত অভিপ্রায় হচ্ছে আমন্ত্রণগ্রহীতাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো।
সার্লের নিবেদন কৃতির শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে ‘পরম করুণাময় ……..আয়োজন করা হয়েছে’ বিবৃতিমূলক নিবেদন কৃতি । কারণ এখানে লেখক, পাঠককে কোন একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করেছেন। তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনার পরবর্তী অংশে ‘উক্ত অনুষ্ঠানে কামনা করছি আমন্ত্রণকারীর মনোগত

ইচ্ছা বা অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে। এখানে তিনি অতিথিকে বিনীতভাবে অনুরোধ করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য। সার্লের (Searle, 1969) তত্ত্বানুসারে এটি ‘আদেশমূলক নিবেদন কৃতি। কারণ আদেশমূলক নিবেদন কৃতির মাধ্যমে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, নির্দেশ প্রভৃতি প্রকাশ করা হয়।

‘শুভেচ্ছা” প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতি, কারণ এর মাধ্যমে আমন্ত্রণকারীর মানসিক অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। এই দাওয়াতপত্রটিকে ‘আদেশমূলক নিবেদন কৃতি’ বলা যায়। কেননা আমন্ত্রণকারীর প্রস্তাব কৃতির অন্তরালে রয়েছে ‘অনুরোধ’ যা এক ধরনের আদেশমূলক নিবেদন কৃতি।

আমরা জানি, সংজ্ঞাপন বা যেকোনো ধরনের ভাষিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে লেখক-পাঠকের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা সাফল্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আমন্ত্রণকারীর প্রস্তাব কৃতির অন্তরালের নিবেদন কৃতিতে আমন্ত্রণগ্রহিতা যদি সাড়া প্রদান করেন বা আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি যদি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন বা অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে সার্লের তত্ত্বানুসারে (Searle, 1969) প্রতিক্রিয়া কৃতি সম্পন্ন হবে।

আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, আমন্ত্রণকারীর অনুরোধে আমন্ত্রিত ব্যক্তি সাধারণত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বা অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া কৃতি সম্পন্ন করেন। সার্লের মতে (Searle, 1969) এভাবেই সংজ্ঞাপন সুসম্পন্ন হয়।

খ. ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব অনুসারে পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বিনম্রতা বিশ্লেষণ
এই দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রণকারী তাঁর মেয়ের ‘শুভ বিবাহ’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে বিনীতভাবে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করে বিক্রতাসূচক কিছু শব্দ, বাক্যাংশ বা বাক্য ব্যবহার করেছেন।

দাওয়াতপত্রটিতে বিনম্রতাসূচক যেসব শব্দ বা বাক্যাংশ বা বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ‘জনাব/জনাবা’, ‘আসসালামু আলাইকুম’, ‘পরম করুণাময়’, ‘অশেষ রহমতে, “উপস্থিতি ও দোয়া, “আন্তরিকভাবে কামনা করছি’, ‘শুভেচ্ছান্তে’ ইত্যাদি।

বাঙালি সমাজে শ্রদ্ধেয় কাউকে সম্বোধনের জন্য ‘জনাব/জনাবা’ ব্যবহার করা হয়। ধর্মীয় রীতি অনুসারে সবাইকে সালাম বা আদাব জানানোও আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) অনুসারে জনাব/জনাবা’, ‘আসসালামু আলাইকুম’ ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ বা বাক্য। অপরদিকে ‘পরম করুণাময়’, ‘অশেষ রহমতে’, ‘উপস্থিতি ও দোয়া”,

আন্তরিকভাবে কামনা করছি”, “শুভেচ্ছান্তে, নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ/বাক্য (Brown and Levinson, 1987 )। ব্রাউন ও লেভিনসনের তত্ত্বমতে (1987) আমন্ত্রণকারী ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ/বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে তার নিজস্ব অভিব্যক্তি (face) ধরে রাখতে চাচ্ছেন।

এখানে উল্লেখ্য, ‘পরম করুণাময়’, ‘অশেষ রহমতে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক বাক্যাংশের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রতি বিনম্রতা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। আমন্ত্রণকারী অন্যান্য নেতিবাচক বিন্যতাসূচক শব্দ বা বাক্য, যেমন- ‘উপস্থিতি ও দোয়া’, ‘আন্তরিকভাবে কামনা করছি’, ‘শুভেচ্ছান্তে” প্রভৃতি আমঞ্জণগ্রহিতাকে উদ্দেশ্য করে প্রয়োগ করেছেন।

আমন্ত্রণগ্রহিতা যেন মনে না করেন তাকে যথেষ্ট সম্মানের সাথে দাওয়াত দেওয়া হয় নাই, এ কারণে আমন্ত্রণকারী উল্লিখিত নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যসমূহ দাওয়াতপত্রে ব্যবহার করেছেন। আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রের মাধ্যমে অতিথিকে ‘অনুরোধ’ করেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার জন্য অর্থাৎ তিনি আমন্ত্রণগ্রহিতাকে জোর করছেন না বা তার ওপর বিষয়টি চাপিয়ে দিচ্ছেন না।

লেখকের অপ্রত্যক্ষরূপ ব্যবহারের কারণে আমন্ত্রণকারীর অভিব্যক্তি ভীতিকারী কর্ম (অভীক) হ্রাস পেয়েছে। তাহলে বলা যায়, এই দাওয়াতপত্রে ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দাবলি ব্যবহারের মাধ্যমে লেখকের অভিব্যক্তি (face) যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সাথে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যের ব্যবহারে বক্তার *অভিব্যক্তি ভীতিকারী কর্ম” (অভীক) হ্রাস পেয়েছে যা ব্রাউন এবং লেভিনসনের তত্ত্বের মূলকথা।

গ. লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বিনম্রতা বিশ্লেষণ
লিচের রীতি অনুসারে নমুনা দাওয়াতপত্র দুটির বিনম্রতা একত্রিত করে বিশ্লেষিত হয়েছে। লিচ (Leech, 1983 ) ভাষিক বিনম্রতার ক্ষেত্রে ছয়টি রীতি উল্লেখ করেছেন।

উল্লিখিত রীতির প্রতিটিতে বিনম্রতা প্রকাশের জন্য বক্তা নিজের চাওয়া বা পছন্দকে সংক্ষেপিত করে শ্রোতার বা অন্যের চাওয়া বা পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

লিচকৃত ছয়টি রীতি অনুসারে পূর্বে আলোচিত পাঁচ ধরনের নমুনা দাওয়াতপত্রসমূহে অর্থাৎ পারিবারিক দাওয়াতপত্র, ধর্মীয় দাওয়াতপত্র, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দাওয়াতপত্র, দাপ্তরিক দাওয়াতপত্র ও একাডেমিক দাওয়াতপত্রের উক্তিমালা বা ডিসকোর্স পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত বিন্যতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশসমূহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই গবেষণাকর্মে। নিচে তা সবিস্তার বর্ণিত হলো।

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র-১ এর উক্তিমালা বা ডিসকোর্স বিশ্লেষণ করে ‘জনাব/জনাবা, ‘জনাব/বেগম’, ‘আসসালামু আলাইকুম’, ‘পরম করুণাময়’, ‘অশেষ রহমতে’, ‘উপস্থিতি ও দোয়া, “আন্তরিকভাবে কামনা করছি, ‘শুভেচ্ছান্তে’ প্রভৃতি বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ পাওয়া যায়।

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ-১

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্রের ডিসকোর্সে ব্যবহৃত বিদ্ৰতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশসমূহ লিচের বিনম্রতার
রীতি (Leech, 1983) অনুসারে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আমন্ত্রণকারী, আমন্ত্রণগ্রহিতাকে দাওয়াতপত্রের শুরুতেই সম্বোধনের জন্য ‘জনাব/জনাবা’, ‘জনাব/বেগম’ প্রভৃতি বিনম্রতাসূচক শব্দসমূহ ব্যবহার করেছেন।

লিচের বিনম্রতার রীতি অনুসারে এই শব্দসমূহ অনুমোদিত রীতি। কারণ আমন্ত্রণকারী সম্বোধনের ক্ষেত্রে দাওয়াতগ্রহিতার সম্মানকে গুরুত্ব প্রদান করেছেন বা তাকে সম্মানিত করেছেন। পরবর্তীতে পাওয়া যায় ধর্মীয় সৌজন্যসূচক বাক্যাংশ ‘আসসালামু আলাইকুম’।

লিচের রীতি অনুসারে ‘আসসালামু আলাইকুম’ সহানুভূতি রীতি।

পারিবারিক নমুনা পাওয়াতপত্র বিশ্লেষণের জন্য সুন্নতে খাৎনা অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে দাওয়াতপত্রটি নিচে উপস্থাপন করা হলো।

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ-2

 

ক. সার্গের বাককৃতি তত্ত্ব অনুসারে পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বাককৃতি বিশ্লেষণ
নির্বাচিত পারিবারিক (সুন্নতে খাৎনা) নমুনা দাওয়াতপত্রটির কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে মোট ছয়টি অংশ রয়েছে। যথা- i) সম্বোধন ii) ধর্মীয় রীতি অনুসারে শিষ্টাচার iii) তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনা iv) আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো v) অনুষ্ঠান সংক্রান্ত কোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ এবং vi) আমন্ত্রণকারীর নামসহ বিদায়ী শুভেচ্ছা।

এই ছয়টি অংশে যে ধরনের ভাষাগত উপাদান যা বাককৃতির তত্ত্বানুসারে প্রস্তাবকৃতির অন্তর্ভুক্ত, তা নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলো।

সারণি: ৮ পারিবারিক (সুন্নতে খাৎনা) নমুনা দাওয়াতপত্রের কাঠামোগত অংশ

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ-2

 

এই দাওয়াতপত্রে উল্লিখিত প্রস্তাব কৃতির শুরুতেই আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রণগ্রহিতাকে লিঙ্গ অনুসারে জনাব/বেগম সম্বোধন করেছেন। আমাদের সমাজে সম্মানিত নারী/পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ‘জনাব’ প্রচলিত হলেও মর্যাদাপূর্ণ নারীকে সম্বোধনে ‘বেগম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এরপর রয়েছে ধর্মীয় রীতি অনুসারে শিষ্টাচার। আমন্ত্রণকারী তাঁর ধর্মানুসারে দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রিত অতিথিকে ‘সালাম’ বা ‘আদাব’ বলে থাকেন।

এখানে আমন্ত্রণকারী মুসলিম হওয়ায় তিনি তাঁর ধর্মীয় রীতি অনুসারে ‘আসসালামু আলাইকুম’ ব্যবহার করেছেন। তৃতীয় অংশে দেখা যাচ্ছে আমন্ত্রণকারী আমন্ত্রিত অতিথিকে বেশ কিছু তথ্য প্রদান করেছেন এ অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য। তথ্যের মধ্যে রয়েছে তারিখ, সময়, কোথায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছে প্রভৃতি।

তাছাড়া যার উপলক্ষে এ আয়োজন, তার সম্পর্কে পরিচিতিমূলক কিছু তথ্য এ অংশে রয়েছে। পরবর্তী অংশে আমন্ত্রণকারী আন্তরিকতার সাথে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য।
বাংলাদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এই কারণে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ‘সুন্নতে খাৎনার’ অনুষ্ঠান অনেক পরিবার ধুমধাম করে পালন করে থাকেন।

যেকোনো শুভ অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের আত্মীয়- স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী সবার উপস্থিতি ও দোয়া কামনা করি। অতিথির মনে অনুষ্ঠান সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসা থাকলে তা যেন জানতে বা জানাতে পারেন এ কারণে দাওয়াতপত্রে প্রয়োজনে’ লিখে কয়েকটি ফোন নাম্বার দেওয়া থাকে। প্রস্তাব কৃতির শেষ অংশে সামাজিক রীতি অনুসারে আমন্ত্রিত ব্যক্তিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমন্ত্রণকারী নিজের নাম উল্লেখ করেছেন।

দাওয়াতপত্রের উল্লেখিত ছয়টি অংশের মধ্যে প্রধান অংশ তথ্য বা বিষয়ের বর্ণনা। এর মাধ্যমে আমন্ত্রণগ্রহিতা পুরো অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে জানতে পারেন। সার্লের তত্ত্বমতে (Searle, 1969 ) আমাদের কথার মধ্য দিয়েও কাজ নির্দেশিত হয়। উল্লিখিত এই দাওয়াতপত্রের লিখিত বক্তব্যের মধ্য দিয়েও কাজ নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে লেখকের মনোগত অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে পাঠকের কাছে।

সার্শ (Searle 1969 ) এই অভিপ্রায়কে বলেছেন “নিবেদন কৃতি’। মূলত ‘নিবেদন কৃতি’ প্রকাশের জন্যই প্রস্তাব কৃতির অবতারণা। দাওয়াতপত্রের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারীর মনোগত অভিপ্রায় হচ্ছে আমন্ত্রণগ্রহিতাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো।

সার্গের তত্ত্বমতে (Searle, 1969) ‘পরম করুণাময় …….. করা হয়েছে বিবৃতিমূলক নিবেদন কৃতি। কারণ এখানে আমন্ত্রণকারী, আমন্ত্রণগ্রহিতাকে অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করেছেন। পরবর্তী অংশে উক্ত অনুষ্ঠানে……. কামনা করছি। এর মাধ্যমে আমন্ত্রণকারীর মনোগত অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে।

তিনি উপরিউক্ত প্রস্তাব কৃতির মাধ্যমে অতিথিকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছেন ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য। সার্ল (Searle, 1969) একে চিহ্নিত করেন ‘আদেশমূলক নিবেদন কৃতি হিসাবে। কারণ এর মাধ্যমে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, নির্দেশ প্রভৃতি প্রকাশ পায়।

আমন্ত্রণকারী ‘অনুরোধের মাধ্যমে “আদেশমূলক নিবেদন কৃতি’ প্রকাশ করেছেন। ‘শুভেচ্ছা” প্রকাশমূলক নিবেদন কৃতি এর মাধ্যমে আমন্ত্রণকারীর মনোগত অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। যেহেতু আমন্ত্রণকারীর অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে আদেশমূলক নিবেদন কৃতির মাধ্যমে এই কারণে নাওয়াতপত্রটির কৃতিকে আদেশমূলক নিবেদন কৃতি হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

যেকোনো সংজ্ঞাপন উভয়পক্ষের অংশগ্রহণে সফলতা লাভ করে। সার্গের তত্ত্বমতে (Searle, 1969 ) আমন্ত্রণকারীর ‘অনুরোধ’ সাড়া দিয়ে আমন্ত্রণগ্রহণকারী যদি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন বা কোনো কারণে থাকতে না পারলে তা জানিয়ে দেন তাহলেই ‘প্রতিক্রিয়া কৃতি’ সম্পন্ন হবে। আমাদের সংস্কৃতিতে সাধারণত আমন্ত্রণ পাবার পর অতিথি ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বা অপারগতা প্রকাশ করে ‘প্রতিক্রিয়া কৃতি’ সম্পন্ন করেন।

এভাবেই সমস্ত সংজ্ঞাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় (Searle, 1969)। তবে কখনও কখনও প্রতিক্রিয়া কৃতি না করে আমন্ত্রণগ্রহিতা নীরবও থাকতে পারেন।

খ. ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতার তত্ত্ব অনুসারে পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্রের বিনম্রতা বিশ্লেষণ
বিনম্রতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, আমন্ত্রণকারী তাঁর ছেলের ‘সুন্নতে খাৎনা’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করে দাওয়াতপত্রে কিছু বিনম্রতাসূচক শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন।

দাওয়াতপত্রটি পর্যলোচনা করলে দেখা যায়, এখানে ‘জনাব / বেগম’, ‘আসসালামু আলাইকুম’, ‘পরম করুণাময়, ‘অশেষ রহমতে’, ‘উপস্থিতি ও দোয়া’, ‘আন্তরিকভাবে কামনা করছি’, ‘শুভেচ্ছান্তে’ ইত্যাদি বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ/বাক্য আমন্ত্রণকারী প্রয়োগ করেছেন। বাঙালি সমাজে তাদের কাউকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে *জনাব/বেগম’ লিঙ্গ অনুসারে ব্যবহার করা হয়।

আবার, ধর্মীয় এবং একইসাথে সামাজিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবে পরিচিত/অপরিচিত সবাইকে নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে সালাম বা আদাব জানানোর রীতি আমাদের সমাজে প্রচলিত। ব্রাউন ও লেভিনসনের বিনম্রতা তত্ত্ব (Brown and Levinson, 1987) অনুসারে ‘জনাব/বেগম’, ‘আসসালামু আলাইকুম’ ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্য।

আমন্ত্রণকারী নিজের অভিব্যক্তি (face) বৃদ্ধি করার জন্য ইতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দাবলি ব্যবহার করেন। অপরদিকে পরম করুণাময়’, ‘অশেষ রহমতে, ‘উপস্থিতি ও দোয়া”, “আন্তরিকভাবে কামনা করছি’, ‘শুভেচ্ছান্তে’ ব্রাউন ও লেভিনসনের মতে (Brown and Levinson, 1987) নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্য।

‘পরম করুণাময়’, ‘অশেষ রহমতে প্রভৃতি নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক বাক্যাংশসমূহ আমন্ত্রণকারী ব্যবহার করেছেন স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা/বিনম্রতা প্রদর্শনের জন্য। উপস্থিতি ও দোয়া’, ‘আন্তরিকভাবে কামনা করছি’, ‘শুভেচ্ছান্তে প্রভৃতি নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দসমূহ আমন্ত্রণকারী দাওয়াতপত্রে আমন্ত্রণগ্রহিতার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছেন।

নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশসমূহের মধ্যে ‘আন্তরিকভাবে কামনা করছি এর মাধ্যমে বক্তা অতিথিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করছেন অর্থাৎ তিনি এক্ষেত্রে অপ্রত্যক্ষরূপ ব্যবহার করেছেন। এর ফলে আমন্ত্রণকারীর ‘অভিব্যক্তি ভীতিকারী কর্ম’ (অভীক) হ্রাস পেয়েছে।

 

পারিবারিক নমুনা দাওয়াতপত্র বিশ্লেষণ-১

 

আমন্ত্রণগ্রহিতা যেন মনে না করেন তাকে আমন্ত্রণকারী যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে দাওয়াত দেন নাই, এ কারণেও দাওয়াতকারী নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশসমূহ দাওয়াতপত্রে ব্যবহার করেছেন। ব্রাউন ও লেভিনসনের তত্ত্বানুসারে (Brown and Levinson, 1987) দাওয়াতপত্রের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইতিবাচক বিনম্রতার মধ্য দিয়ে আমন্ত্রণকারীর অভিব্যক্তি (face) যেমন বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দাবলির ব্যবহারের মাধ্যমে আমন্ত্রণকারীর অভিব্যক্তির ভীতিকারী কর্ম (অভীক) হ্রাস পায়।

বিনম্রতাসূচক যোগাযোগের জন্য অভিব্যক্তি বৃদ্ধি এবং অভিব্যক্তি ভীতিকারী কর্ম (অভীক) হ্রাস দুটি বিষয়ই তাৎপর্যপূর্ণ, যা এই দাওয়াতপত্রে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।দাওয়াতপত্রটির বিবৃতিমূলক নিবেদন কৃতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। আদেশমূলক নিবেদন কৃতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে নেতিবাচক বিনম্রতাসূচক শব্দ/বাক্যাংশ।

Leave a Comment