আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-গবেষণা পদ্ধতি
গবেষণা পদ্ধতি
গবেষণার মূল বিষয় হল ডেমরা অঞ্চলের শ্রমিকশ্রেণির ভাষা। ডেমরায় বসবাসরত শ্রমিকদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণে ব্যবহৃত ভাষাসমূহের ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ও অর্থতত্ত্ব আলোচনার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ভাষিক-উপাত্ত সংগ্রহ করে তার ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, বাক্যতাত্ত্বিক ও অর্থতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণার দুটো দিক তত্ত্ব বা theory ও বাস্তব পরিস্থিতি বা fact. বস্তুত তত্ত্ব বা বাস্তব পরিস্থিতির পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। Fact বা বাস্তব পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত উপাত্তের সুশৃঙ্খল শ্রেণিবদ্ধ রূপ হলো তত্ত্ব। তত্ত্ব ও বাস্তব পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে গবেষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ সামনে রেখে অভিসন্দর্ভের গবেষণা পদ্ধতি তিনটি ধাপে করা হয়েছে। যথা-
গবেষণা পদ্ধতির ধাপ-
১. পূর্ব-প্রস্তুতি
২. ভাষা-উপাত্ত সংগ্ৰহ
৩. উপাত্ত-বিশ্লেষণ
পূর্ব-প্রস্তুতি
গবেষণার পূর্ব-প্রস্তুতি গ্রহণের আগে কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয়, যেমন-
ক. প্রাক-ধারণা
খ. সাহিত্য-পর্যবেক্ষণ (Literature Review)
গ. নমুনা-নির্বাচন
ঘ. গবেষণার একক বা চলক নির্ধারণ
ঙ. প্রশ্নপত্র প্রণয়ন
ক. প্রাক-ধারণা
গবেষণার পূর্ব-প্রস্তুতির একটি মৌলিক ধাপ হচ্ছে প্রাক্-ধারণা। গবেষণার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য অনুযায়ী গবেষণার বিষয়ে প্রাক-ধারণা নেয়া হয়। তাই প্রাক্-ধারণাকে যেকোন গবেষণাকর্মের কেন্দ্রবিন্দু বলা
যায়। এটিই গবেষণার লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে দেয়। যেকোন গবেষণার প্রস্তুতির পর্বে প্রাক-ধারণা যত সুষ্ঠু হবে ততই সঠিক ও যথার্থ তথ্য পাওয়া সম্ভব। বর্তমান অভিসন্দর্ভের গবেষণা শুরুর আগে পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে গবেষণার বিষয়ে কিছু প্রাক্-ধারণা (hypotheses) নেয়া হয়। এই প্রাক্-ধারণা সম্পূর্ণই অনুমাননির্ভর।
প্রাক-ধারাণা হল : (ক) ডেমরা থানার স্থানীয় নিরক্ষর শ্রমিকশ্রেণির ভাষা (খ) বহিরাগত বিভিন্ন জেলার শ্রমিকশ্রেণির মানুষের ভাষা এই ‘ক’ ও ‘খ’ শ্রেণির কথোপকথনের ভাষায় পারস্পরিক সংমিশ্রণ অবশ্যম্ভাবী। উদাহরণস্বরূপ-
প্রমিতরীতি
‘ক’ শ্রেণি
“খ” শ্রেণি
আমরা অবি যামু আমগো / আগুগো গেরাম
আমরাও যাবো মোরা অবি যামু (বরিশাল) ১ নম্বর উদাহরণে ‘ক’ ভাষায় ব্যবহৃত সংযোজক অব্যয় ‘ও’ এর আঞ্চলিক রূপ ‘অবি’র প্রভাব দেখা যায়। ‘খ’ ভাষায়। ২ নম্বর উদাহরণে ‘খ’ ভাষার ‘আঙগো’ রূপমূলের প্রভাব দেখা যায় ‘ক’ ভাষা ।
আমাদের গ্রাম
আগুগো গেরাম (চাঁদপুর)
খ. সাহিত্য-পর্যবেক্ষণ (Literature review)
ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, গবেষণার বিষয় নির্বাচন করার পর ওই বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট করার লক্ষ্যে ওই সংক্রান্ত পূর্ববর্তী কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার। কোনো গবেষণা বিষয়ে পূর্ববর্তী কাজ সম্পর্কে ধারণা করাকে বলে সাহিত্য পর্যবেক্ষণ বা Literature review. (মাঠ-গবেষকের ডায়েরি, ১৫২)।
বর্তমান অভিসন্দর্ভে গবেষণার বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বই, প্রবন্ধ, গবেষণা, প্রতিবেদন ইত্যাদির তথ্য-উপাত্ত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গবেষণার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত গ্রন্থ, পূর্বতন গবেষণা কাজগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পাঠ করার পর এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে গবেষণার বিষয় সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।
গ. নমুনা নির্বাচন
ড. জিল্লুরের মতে, ‘গবেষণার বিষয়বস্তুর যেমন একটি নির্দিষ্ট পরিধি দরকার, তেমনি গবেষণা ক্ষেত্রেরও একটি পরিধি দরকার। গবেষণা কতজনকে নিয়ে বা কোন কোন জায়গায় করা হবে তা ঠিক করে নেওয়া গবেষণার পূর্ব-প্রস্তুতির আওতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গবেষণার বিষয়বস্তু ও পরিধি ঠিক করার পর কাদের নিয়ে কোথায় কাজটি করা হবে তা গবেষণাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।
গবেষণাধীন কোনো জনসংখ্যা বা বিষয়বস্তুর সম্পূর্ণ বা গোটা অংশকে বলা হয় সমগ্রক (Population বা Universe) এবং সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বশীল একটি অংশকে বলা হয় নমুনা ( Sample)। আর এই নমুনা বাছাইয়ের কাজটিকে বলা হয় Sampling বা নমুনায়ন, অর্থাৎ সমগ্রক থেকে একটি অংশ গ্রহণ করা হয়,
যার মধ্যে সমগ্রকের মোটামুটি বা সবগুলো বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা যায় (মাঠ-গবেষকের ডায়েরি, পৃ. ১৫৫)।
ডেমরা থানার সমগ্র অঞ্চলের লোকজনের একটি প্রতিনিধিত্বশীল অংশ ওই এলাকার শ্রমিকশ্রেণি। এই শ্রমিকশ্রেণির ওপর পরিচালিত হয় গবেষণাকর্ম, যাদের সঙ্গে কথা বলে তুলে আনা হয়েছে ডেমরার শ্রমজীবী মানুষের মুখের প্রকৃত ভাষা।
পুরো এলাকার ভাষার বৈচিত্র্য খোঁজার লক্ষে নমুনা নির্বাচনে ডেমরার শ্রমজীবী মানুষকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই ছয় শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে তিন শ’ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে জরিপ চালানো হয়। প্রতিটি শ্রেণিতে পঞ্চাশ জন শ্রমিক জরিপে অংশগ্রহণ করে। এই শ্রেণিগুলো হল :
১. কৃষি শ্রমিক
২. অকৃষি শ্রমিক (মাটি কাটা, পাথর ভাঙা, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি ইত্যাদি)
৩. কলকারখানার শ্রমিক ৪. পরিবহন শ্রমিক (বাস, টেম্পো, রিকশা, ভ্যান, নৌকার মাঝি ইত্যাদি)
৫. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (ফেরিওয়ালা, কাঁচা বাজারের দোকানদার, মাছ বিক্রেতা, ছোট দোকানি
৬. স্বনিয়োজিত পেশা (মুচি, নাপিত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার ইত্যাদি)
ঘ. গবেষণার চলক ও একক নির্ধারণ
গবেষণার বিষয়বস্তু ও পরিধি অনুযায়ী গবেষণার একক বা একাধিক হতে পারে। কোনো এলাকার ভাষা গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহে সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য যে এলাকার ভাষা জরিপ হবে সেই তালিকা ও এলাকার মানুষ দুই-ই একক হতে পারে। চলক বা Variable হল গবেষণার আরেকটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ।
সঠিক চলক নির্বাচন গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চলক নির্বাচন গবেষণার পূর্ব-প্রস্তুতির অন্তর্গত। যে বিষয়টি জানতে চাওয়া হচ্ছে তাই হল চলক। চলক তালিকা প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সময় করা হয়। আলোচ্য গবেষণায় ডেমরা অঞ্চলে ভাষা জরিপের কাজে প্রাসঙ্গিক চলকের তালিকা তৈরি করে সেই তালিকা অনুযায়ী উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়েছে।
ঙ।ড. প্রশ্নমালা প্রণয়ন
গবেষণার পূর্ব-প্রস্তুতির শেষ ধাপটি হল প্রশ্নমালা প্রণয়ন। গবেষণার মূল বিষয়ের সঙ্গে প্রশ্নমালায় প্রতিটি যৌক্তিকভাবে সম্পর্কিত। প্রশ্নমালার প্রথমাংশে উত্তরদাতার নাম, বয়স, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক সদস্য সংখ্যা ইত্যাদি ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপ হল, প্রশ্নমালা সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয়ত, প্রশ্নমালা এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে উত্তরদাতা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে না পড়ে। চতুর্থত, বিষয়বস্তুর সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।
ভাষার উপাত্ত সংগ্ৰহ
তথ্য বা উপাত্ত দু’ধরনের। যথা-ক. পরিমাণগত তথ্য (Quantitative Data) খ. গুণগত তথ্য
(Qualitative Data ) |
বর্তমান গবেষণায় পরিমাণগত ও গুণগত উভয় ধরনের উপাত্তই সংগ্রহ করা হয়েছে। ভাষা-উপাত্ত সংগ্রহ দুটি পদ্ধতির সাহায্যে দুটি ধাপে করা হয়। প্রথমত, ডেমরা থানার অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শ্রমিকদের পূর্বে চিহ্নিত করে শ্রমিকদের বসবাসের অবস্থান, কর্মক্ষেত্র, পেশার ধরন নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরবর্তী পর্যায়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে মাঠপর্যায়ে ভাষা -উপাত্ত সংগৃহীত করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ডেমরায় বসবাসরত বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত ভাষা-উপাত্ত সংগ্রহের পর তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকেও ভাষা-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
উপাত্ত সংগ্ৰহ-পদ্ধতি
ভাষা উপাত্ত সংগ্রহ দুটি পদ্ধতির সাহায্যে করা হয়েছে, যথা-
ক. প্রশ্নমালা প্রণয়ন পদ্ধতি (পরিমাণগত তথ্যের জন্য)
খ. সাক্ষাৎকার পদ্ধতি (গুণগত তথ্যের জন্য)
প্রশ্নমালা প্রণয়ন
গবেষণা প্রক্রিয়া
ভাষা সংগ্রহের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হল প্রশ্নমালা প্রণয়ন ও তার সাহায্যে ভাষা সংগ্রহ করা। নির্ধারিত রূপমূল তালিকা সংবলিত প্রশ্নমালা তৈরি।
রূপমূল তালিকা
১.ঘরে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, আসবাবপত্র
2. পোশাক-পরিচ্ছদ
৩.মানুষ ও জীবজন্তুর দৈহিক অংশ নির্দেশক রূপমূল
8. পেশাগত ও বৃত্তিমূলক রূপমূল
৫. সম্পর্কবাচক রূপমূল
৬. উদ্ভিদ ও প্রাণীর রূপমূল
৭.খাদ্য ও প্রস্তুত প্রণালী বিষয়ক রূপমূল
৮. রোগ ও ঔষধের রূপমূল
৯. খেলাধুলা ও অনুষ্ঠানের রূপমূল
১০. সর্বনামবাচক রূপমূল
১১. বর্ণগঠন বিষয়ক রূপমূল
গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত প্রশ্নমালা নিয়ে ডেমরা থানার অন্তর্গত সব অঞ্চলে / এলাকায় নিজে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। উপাত্ত সংগ্রহ করে তুলনামূলক পর্যালোচনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতি
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি এলাকার বিভিন্ন পেশা, বয়স, ধর্মানুযায়ী বিভিন্ন তথ্যপ্রদানকারীর সাক্ষাৎকার নেয়ার পূর্বে উপযুক্ত ও অনুকূল সময় হিসেবে বিকেলবেলাকে নির্ধারণ করে তথ্য প্রদানকারীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে গল্প, পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় সহজবোধ্য ভাষায় কৌতূহলোদ্দীপক এবং জটিলতামুক্ত ও অবিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলাপ- আলোচনা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি।
আলোচনার সময় শ্রমিক পরিবারের শিশু এবং বৃদ্ধদের কথোপকথনের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়। কারণ বৃদ্ধ ও শিশুদের মুখের ভাষায় ভাষার সঠিক রূপটি পাওয়া যায়। আঞ্চলিক ভাষায় স্বরের বৈচিত্র্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই সাক্ষাৎকারগুলো ক্যাসেটে ধারণ করা হয়।
প্রশ্নমালা পূরণ, সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে ভাষার রূপমূল সংগ্রহের এই পদ্ধতিগুলোর অন্যতম মূল লক্ষ্য হল পর্যবেক্ষণ (observation) সজাগ ও সতর্ক পর্যবেক্ষণ দ্বারাই ভাষার স্বরের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। সাক্ষাৎকার গ্রহণের শুরুতেই উত্তরদাতার নাম, বয়স, পেশা, পারিবারিক সদস্য সংখ্যা, জেলার নাম ইত্যাদি ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও প্রশ্নমালা প্রণয়নে প্রশ্ন এমনভাবে করা হয়, যাতে উত্তরদাতা ক্লান্তিবোধ না করে, অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে না পড়ে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কম স্মৃতিনির্ভর তথ্য প্রদান। স্মৃতিনির্ভর তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, ধরনের তথ্যে ভুল উত্তরের আশঙ্কা থাকে। স্মৃতিনির্ভর তথ্যে নির্ভুল উত্তর আশা করা অনুচিত। সেক্ষেত্রে একটু সতর্কতার সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে।
প্রশ্নমালা ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গৃহীত রূপমূল থেকে ধ্বনি, শব্দের বৈচিত্র্য, বাক্যের গঠন ও বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়েছে। শ্রমিক শ্রেণির ভাষার: উপাত্ত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ধ্বনিতত্ত্বে স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি চিহ্নিত করে তা উচ্চারণ স্থান ও রীতিতে উপস্থাপন করে রূপতাত্ত্বিক উপাদানসমূহ যেমন-যুক্তরূপমূল, বন্ধরূপমূল, কারক, বিভক্তি, বচন, সর্বনাম ইত্যাদির আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। বাক্যতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি অর্থতাত্ত্বিক দিক আলোচিত হয়েছে।
- কাফর
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- নিসা/বুকি/জামা
- ব্রাউজ
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- গোল টুপি
- টুপি
- ফোৱাক
- গক
- বুরকা
পোশাক অলঙ্কার ও প্রসাধনি বিষয়ক শব্দ
নারী দেহের বিভিন্ন অলঙ্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অলঙ্কার কেন্দ্রিক শব্দ।
নাকের গহনাঃফুরফুরি, নখ, নাকফুল
মাথার গহনাঃশিথিপাটি, টিকলি, টায়রা
গলার গহনাঃগলার চিক, হাসুলি, মাদুলি, কণ্ঠহার, সীতাহার
হাতের গহনাঃঅনন্ত, বাউটি, গুলায়া, বুলি
কানের গহনা;হাইরবালি (কানে ফুটো করে পরা হয়) কানবালি, কানমাকরি, কানপাশা
প্রসাধন সামগ্রি
ডেমরার আঞ্চলিক ভাষা
- পালিশ
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- নক পালিশ
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- কাহই
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- আইলাইন
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- ছেন/বাশনা
প্রমিত ভাষা
- লিপস্টিক
- নক পালিশ
- নেল পশিলচিরুনি
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- আইলাইন
- আইলাইনার
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- ছেন/বাশনা
- পারফিউম
বৈশিষ্ট্য
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
মন-মানসিকতা সংক্রান্ত
ডেমরার আঞ্চলিক ভাষা
প্রমিত ভাষা
ঝাল
- ক্রোধ
- গোশ্যা
- অভিমান
- মালোচ
- লোভ
বৈশিষ্ট্য
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
- স্বতন্ত্র রূপমূল
সামাজিক অনুষ্ঠান বিষয়ক
বিয়েকেন্দ্রিক ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার শব্দ।
পানচিনি (গায়ে হলুদের দিনের অনুষ্ঠান) চলন (বরযাত্রা), এজিন, কাবিন, ইষ্টিৰাঙন (বউভাত), বিয়ের সময় পালকির পরিবর্তে পালকির মতো একটি বহনযোগ্য ঝুড়ি ব্যবহৃত হত, তাকে বলা হত মাফা/ ডুলি যেন। বর্তমানে এ পালকির প্রচলন নেই। জরমোদিন (জন্মদিন)। কান ফুরানি (কান ফুটানো উপলক্ষে অনুষ্ঠান।)
ঘরবাড়ির প্রাসঙ্গিক শব্দ
- পালং
- উঁচু খাট
- বর আলনা
- ড্রেসিং টেবিল
- মিছচেপ
- আলমারি
- থানাডুলি
- খাবার রাখার কাঠের আলমারি
- মটকি
- বড় মাটির কলস
- চকি
- চৌকি
- মই
- ফিরি
- পিড়ি
- কোর
রান্নার কাজে ব্যবহৃত জিনিসের নাম
গ্রামীণ সমাজের দৈনন্দিন জীবনাচরণে, কথোপকথনে, খাদ্যাভ্যাসে সবসময় সম্পর্কে সামাজিক রীতিনীতি, পারস্পরিক সম্পর্ক সবক্ষেত্রে পৃথক পৃথক রূপমূলের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
ডেমরার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ভাষায় ব্যবহৃত এই বিভিন্ন রূপমূলের ধ্বনিগত পরিবর্তন, রূপমূলের অর্থগত পরিবর্তন, একই রূপমূলের ধ্বনিগত পরিবর্তন, রূপমূলের অর্থগত পরিবর্তন, একই বস্তুবাচক ভিন্নতর রূপমূল ব্যবহারের মাধ্যমে ডেমরার ভাষার ধ্বনিগত, রূপমূলগত, বাহ্যিক ও শব্দার্থগত তুলনামূলক বিচার- বিশ্লেষণে স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়।
আরও দেখুন: