বাক্য, বচন ও উক্তি

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-বাক্য, বচন ও উক্তি

বাক্য, বচন ও উক্তি

কার্থবিদগণ বাকা, বচন ও উক্তির মধ্যে পার্থক্য করেন। বাক্য ব্যাকরণিক একক বচন,  যৌক্তিক একক এবং উক্তি প্রয়োগতাত্ত্বিক একক। ব্যাপারটিকে একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। ব্যাকরণের আলোচনায় বলা হয় থাকা হলো শব্দযোগে গঠিত বৃহত্তম একক যার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ ভাব প্রকাশিত হয়। যেমন :

আমি বই পড়ছি।
তুমি কোথায় যাচ্ছ ? আমার কথা শোন ।

Words, therefore, are, in general, convenient units about which to state meanings, and no harm is done provided it is bome in mind that words have meanings by virtue of their employment in sentences, most of which contain more than one word,

and that the meaning of a sentence is not to be thought of as a sort of summation of the meanings of its component words taken individually, R. H. Robins (1980) General Linguistics An Introductory Survey p. 17

* The meaning of an expression is function of the meaning of its parts ” Ronnie Cann (1993), Formal Semantica An introduction. p.3:

“If the word meaning is given the independent characterisation, then the sentence meaning could be given a derivative characterisation in terms of word meaning, and if sentence meaning is given the independent characterisation then the meaning of words could be explained in terms of their contribution to sentence meaning.” Kempson (1977), Semantic Theory, p. 17

এগুলো দিয়ে বক্তার মনের ভাব পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশিত হয়, কাজেই এগুলো বাক্য। কিন্তু আমি বই….. তুমি…. কিংবা আমার কথা বললে তা দ্বারা বক্তার মনের ভাব পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশিত হয় না, কাজেই এগুলো বাকা বলে গণ্য হবে না।

বাক্যকে বিশ্লেষণ করলে বিশেষ্য (শব্দগুচ্ছ), ক্রিয়া (শব্দগুচ্ছ), বিশেষণ প্রভৃতি ক্যাটিগরি বা শ্রেণীর পদ পাওয়া যায়। যেমন আমি বই পড়ছি এই বাক্যটি বিশ্লেষণ করে পাই বিশেষ্য আমি (প্রথাগতভাবে আমি সর্বনাম, সর্বনাম অবশ্য বিশেষয়শ্রেণীভুক্ত), ক্রিয়া শব্দগুচ্ছ বই পড়ছি যা গঠিত একটি ক্রিয়া পড়ছি ও একটি বিশেষ্য বই সহযোগে। কাজেই এখানে একটি স্তরকম আছে এবং স্তরক্রমটিকে এভাবে দেখানো যায়

 

বাক্য, বচন ও উক্তি

 

আমি পড়ছি বই থেকে কিভাবে আমি বই পড়ছি আসে তা রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের বিষয় এখানে তার আলোচনা আমাদের আয়ত্তের বাইরে।

বচন ভাষার যৌক্তিক সংগঠন বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এজন্য একে যুক্তিবাক্যও বলা হয়। বাক্যের মতো বচনেরও একটি আভ্যন্তরীণ সংগঠন রয়েছে। বচনকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় উদ্দেশ্য ও বিধেয়। যেমন আমি বই পড়ছি এটিকে যদি আমরা বচন ধরি তাহলে এখানে আমি হবে উদ্দেশ্য এবং বই পড়েছি হবে বিধেয় ।

এক বিশেষ ধরনের যৌক্তিক পদ্ধতি যাকে বলা হয় বিষেয় কলন (চতুর্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য), আমরা দেখবো তাতে বচনকে বিষেয়ক ও যুক্তিতে বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন, আমি বই পড়ছি এই বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করা হবে এভাবে :

 

বাক্য, বচন ও উক্তি

একই বচনের বিভিন্ন বাহ্যিক রূপ থাকতে পারে, অথবা ঘুরিয়ে বলা যায় বিভিন্ন বাক্যের অন্তর্নিহিত বাচনিক রূপ অভিন্ন হতে পারে ।

বাক্যের সাথে বচনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, বাক্য বর্ণনামূলক প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাবাচক, ইচ্ছাসূচক ইত্যাকার হতে পারে, কিন্তু বচন কেবল বর্ণনামূলক হবে । যেমন নীচের চারটি বাক্য একটি মাত্র বচনের সাথে সম্পর্কিত :

 

বাক্য, বচন ও উক্তি

 

দ্বিতীয়ত, বচনের একটি আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য হলো এটি সত্যমিথ্যা গুণবিশিষ্ট হবে, অর্থাৎ এটি হয় সত্য হবে নতুবা মিথ্যা হবে। কিন্তু বাক্যের ক্ষেত্রে এটি সর্বদা প্রযোজ্য নয়। প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাবাচক, ইচ্ছাসক প্রভৃতি প্রকারের বাক্যের সাথে সত্যমিথ্যার প্রশ্নটি সরাসরি জড়িত নয়।

উক্তিকে প্রযোগতাত্ত্বিক উপাদান বলা হয়। অর্থাৎ কোন বাকোর যখন বাস্তব প্রয়োগ ঘটে তখন তা হয় উক্তি। উক্তি ভাষার বাস্তবায়ন, বাক্য বা বচনের মতো এটি বিমূর্তায়ন নয় । উক্তিকে সাধারণত বিষয়মূল ও মন্তব্যে বিশিষ্ট করা হয়। উক্তিতে যার সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাহলো বিষয়মূল এবং বিষয় সম্পর্কে যা বলা হয় তাহলো মন্তব্য। যেমন :

বিষয়মূল

আমি

তুমি

বই পড়ছি

কোথায় যাচ্ছ

আমরা কথা

শোন

কথোপকথনে বিষয়মূলটিতে পুরনো তথ্য থাকে যা ইতোমধো আলোচিত হয়েছে বা যা বক্তাশ্রোতা উভয়েরই জানা আছে। কথোপকথনে মন্তব্য নতুন তথ্য বহন করে বা প্রকাশ করে। এজন্য সাধারণভাবে কথা বলার সময় ঝোকটি মন্তব্যের কোথাও পতিত হয়। উক্তির কয়েকটি লক্ষ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে । প্রথমত, প্রতিটি উক্তি কোন না কোন বিশেষ স্বরভঙ্গিতে উচ্চারিত হয়।

বাকা, বচন ও উক্তি

কিন্তু বাকা ও বচনের সাথে স্বরভঙ্গির সংশ্রব নেই । দ্বিতীয়ত, উক্তির মাঝে মাঝে বিরাম ও অর্থহীন ধুনি থাকতে পারে। যেমন: গতকাল আমি ইম – টাইটানিক দেখতে গিয়েছিলাম। তৃতীয়ত, উক্তিতে কিছু পৌনপুনিক ভাষিক উপাদান যেমন বুঝলে, দেখো, ঠিক কিনা ইত্যাদি থাকতে পারে যেগুলোর কোন সুস্পষ্ট অর্থ নেই। চতুর্থত, এমন অনেক উক্তি আছে যেগুলোকে কোনভাবে বাক্য বা চন বলা যায় না। যেমন :

ইয়াহু!

কি ?

. . . . আমি এখন কি

ব্যাটা ফাজিল

লটারী ।

: ও আচ্ছা !

এখানে ক ও খ-এর উক্তিগুলিকে কি বাকা বা বচন বলা যাবে ?
তবে আমরা থাকা, বচন ও উক্তির মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করতে পারি। সাধারণতঃ বাক্যের ক্রিয়াপদগুচ্ছপূর্ব বিশেষা বচনে উদ্দেশ্য এবং উক্তিতে বিষয়মূল হিসাবে দেখা দেয়।

একইভাবে বাক্যের ক্রিয়াকাণ্ডকে সাধারণত বচনের বিশেষ এবং উক্তির মন্তব্য হিসাবে প্রতিভাত হয়। আমি বই পড়েছি এটি দিয়ে বাকা, বচন ও উক্তির সম্পর্ককে স্পষ্ট করা যায় :

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment