আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ভাষাবিজ্ঞান ও বাগর্থ বিদ্যা
ভাষাবিজ্ঞান ও বাগর্থ বিদ্যা
ভাষাবিজ্ঞান ও বাগর্থবিদ্যা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ। অনেকেই মনে করেন বাগর্থবিদ্যা ভাষাবিজ্ঞানের একটি শাখা এবং তদনুযায়ী তারা ভাষার বর্ণনায় অর্থকে অন্তর্ভূক্ত করেন। একসময় অবশ্য অনেকে মনে করতেন ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব এই তিনটি শাখার সমবায়ে ভাষাবিজ্ঞান গঠিত এবং এতে বাগবিদ্যার কোন স্থান নেই ।
স্টিফেন উলম্যান বলেন, “ভাষা-সংস্রয়ের মধ্যে অর্থের ভূমিকা এতোই মূলগত যে অর্থের পর্যেষণাকে অবশ্যই ভাষাবিজ্ঞানের প্রধান বিভাগগুলির অন্যতম হিসাবে গ্রহণ করতে হবে । কিন্তু এই পূর্ণাঙ্গ সংহতি কখনোই আমাদের অধিগত হবে না যতোদিন আমরা ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের প্রথাগত ত্রিপাক্ষিক সঙ্কল্পনাকে আঁকড়ে থাকবো ।
”” উলম্যানের মতে, ভাষাকে তিনদিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়: শারীরবৃত্তীয় দিক থেকে, অর্থগত দিক থেকে ও সম্পর্কগত দিক থেকে । এজন্য ভাষাবিজ্ঞানের তিনটি শাখা হওয়া উচিত ধ্বনিতত্ত্ব, শব্দতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব । শব্দতত্ত্বের দুটি উপশাখা: শাব্দিক রূপতত্ত্ব ও শাসিক বাগর্থবিদ্যা এবং বাক্যতত্ত্বেরও দুটি উপশাখা বাক্যিক রূপতত্ত্ব ও বাক্যিক বাগর্থবিদ্যা। এই বিভাজনের উপর যদি আমরা কালমাত্রা প্রয়োগ করি তাহলে পুরো ভাষাবিজ্ঞানের চেহারাটি দাঁড়াবে এরকম :
উলম্যানের মডেলকে আমরা যথার্থ মনে করতে পারি না। তিনি বাগর্থবিদ্যাকে শব্দতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের অংশবিশেষ রূপে চিত্রিত করেছেন যার ফলে বাগর্থবিদ্যার স্বাতন্ত্রিক মর্যাদা অবলুপ্ত হয়েছে । এটি কাঙ্খিত নয় । আমাদের প্রস্তাবনায় ভাষা পাঁচটি স্তরে বিশ্লেষিত হতে পারে : ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, বাক্যতাত্ত্বিক, সাম্পর্ভিক ও বাগধিক।
ধ্বনিতাত্ত্বিক স্তরে আলোচিত হবে ধ্বনির ভৌত ও বৃত্তিগত দিক, রূপতাত্ত্বিক স্তরে আলোচিত হবে শব্দের গঠন প্রণালী, বাক্যতাত্ত্বিক স্তরে আলোচিত হবে বাক্যের গঠন প্রণালী সাম্পতিক ঘুরে আলোচিত হবে সম্পর্কের গঠন প্রণালী এবং বার্ষিক স্তরে আলোচিত হবে অর্থ।
বাগবিদ্যাকে অর্থ আলোচনার অন্যান্য শাখার উপর নির্ভর করতে হবে না। ভাষাবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো বাগর্থবিদ্যার রয়েছে নিজস্ব এককসমূহ যা দিয়ে তা ভাষার অর্থ বিশ্লেষণ করবে। গ্রীনবার্গ (১৯৭১ : ৫৩) এরকম নয়টি এককের কথা উল্লেখ করেন। এগুলো হলো – ১ রূপমূল অর্থ, ২ সাধিত শব্দার্থ, এ বাগধারা অর্থ ও পরিস্থিতিপ্রসঙ্গ অর্থ, ৫. ভাষাপ্রাঙ্গ অর্থ, ৬. প্রাথমিক অর্থ একক (১৩ একত্রে), ৭. শব্দগুচ্ছ অর্থ একক, ৮. বাক্যার্থ, এবং ৯ জাতিবাচক অর্থ (যেমন, ছেলে -এর অর্থ) । স্তরগত বিবেচনায় রাগর্থবিদ্যা স্বতন্ত্র ও স্বাধীন।
কালিক মাত্রাকে আপাতত বিবেচনার বাইরে রেখে আমরা আমাদের প্রস্তাবনাকে এভাবে প্রকাশ করতে পারি :
কাজেই আমাদের প্রস্তাবিত মডেলে বাগর্থবিদ্যার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিদ্যমান এবং এর কাজ শব্দতত্ত্ব বা বাকতত্ত্বের লেজুরবৃত্তি নয়। আমরা আমাদের মডেলকে নিম্নরূপ রোখচিত্রে প্রকাশ করতে পারি যা দেখতে অনেকটা মাকড়সার জালের মতো (আমরা এখানে ইংরেজী পদগুলো ব্যবহার করেছি পাঠকের সুবিধার্থে)
আরও দেখুন: