আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা
শব্দার্থ পরিবর্তনের ধারা
অর্থ অত্যন্ত চঞ্চল ও অস্থির প্রকৃতির। হামেশাই এটি পরিবর্তিত হয় (যেমন বিভিন্ন প্রসঙ্গে একই শব্দ বিভিন্ন অর্থ পরিগ্রহ করে)। তবে কালিক অবস্থানে এর পরিবর্তন খুব দ্রুত নয়, বরং ধীর। অর্থের কিরকম পরিবর্তন ঘটবে তা আগে থেকে হিসাব করে বলা যায় না।
সময় থেকে ইক প্রত্যয় যোগে গঠিত সাময়িক শব্দের অর্থ হয়েছে স্বল্প সময়ের কিন্তু কাল থেকে ইক প্রত্যয় যোগে গঠিত কালিক শব্দের অর্থ স্বল্প সময়ের হয়নি । অর্থের পরিবর্তন ঘটে তার নিজস্ব নিয়মে, নিজস্ব ধারায়। আমরা শব্দার্থ পরিবর্তনের সাতটি ধারা খুঁজে পাই :
(১) সম্প্রসারণ, (২) সংকোচন, (৩) উন্নতি, (৪) অবনতি, (৫) স্পর্শদোষ, (৬) স্থানান্তর এবং (৭) আরোপন । নীচে
উদাহরণের সাহায্যে এগুলো ব্যাথা করা হলো।
সম্প্রসারণ : একটি শব্দ আদিতে যে অর্থ প্রকাশ করতো পরবর্তীতে সেটি যদি তার চেয়ে অধিক অর্থ প্রকাশ করে, তবে বুঝতে হবে সেখানে অর্থের সম্প্রসারণ ঘটেছে। নীচে অর্থ সম্প্রসারণের কতগুলি বাংলা ও ইংরেজী দৃষ্টান্ত প্রদত্ত হলো :
শব্দ
কপাল
অসুখ অমানুষ thing
lovely
পূর্বের অর্থ
মুখমন্ডলের অংশবিশেষ
মাথা বা ঘাটা
সুখের অভাব
যা মানুষ নয়
আলোচনা
ভালবাসার যোগ্য (ব্যক্তি)
পরিবর্তিত অর্থ
মুখমন্ডলের অংশবিশেষ । অদৃষ্ট
মাথা বা ঘাটা। যে অঙ্গ দিয়ে মাথা বা ঘাটা হয় / যে পাত্রে রেখে মাথা বা ঘাটা হয়
সুখের অভাব / রোগ
যা মানুষ নয় / নির্দয় ব্যক্তি
আলোচনাসহ যে কোন মূর্ত ও বিমূর্ত জিনিস
যে কোন প্রীতিকর ব্যক্তি বা বা
সংকোচন : একটি শব্দ আদিতে যে অর্থ প্রকাশ করতো পরবর্তীতে সেটি যদি তার চেয়ে কম অর্থ প্রকাশ করে, তবে বুঝতে হবে সেখানে অর্থের সংকোচন ঘটেছে। নীচে অর্থ সংকোচনের কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেয়া হলো :
শব্দ
অম্ল
শ্যাম্পুর
পইতা
meat
doctor
girl
undertaker
পূর্বের অর্থ
খাদ্য
পশু
অঙ্গসংবাহন বা গাত্রমর্দন সাবান বা অনুরূপ ধৌতিবন্ধ সহযোগে মাথা বা কেশ প্রক্ষালন
পবিত্ৰ (দ্রব্য)
খাদ্য
যে কোন শাস্ত্রের পণ্ডিত ব্যক্তি
বালক বা বালিকা
যে কোন কাজের উদ্যোগী ব্যক্তি
উন্নতি : কোন শব্দ যখন পূর্বের নিরপেক্ষ বা নেতিবাচক অর্থের বদলে নতুন ইতিবাচক অর্থ গ্রহণ করে তখন তার অর্থের উন্নতি ঘটে। যেমন :
শব্দ
সাহস
জনক
nice
pretty
fame
sturdy
knight
martyr
পূর্বের অর্থ
চুরি/ডাকাতি
জননক্রিয়ায় অংগ্রহণকার
খুঁতখুঁতে
বিরক্তিকর
বর্ণনা (ভালো বা মন্দ)
করশ
বালক
নিহত
পরিবর্তিত অর্থ
নির্ভীকতা
পিতা
সুন্দর
সুন্দর
খ্যাতি
শক্তপোক্ত
নাইট উপাবিধারী ব্যক্তি
শহীদ
অবনতি : কোন শব্দ যখন পূর্বের নিরপেক্ষ বা ইতিবাচক অর্থের বদলে নতুন নেতিবাচক অর্থ গ্রহণ করে তখন তার অর্থের অবনতি ঘটে। যেমন :
শব্দ
নাগর
প্রেত
sensual
vice
silly
knave
base
minion
পূর্বের অর্থ
নাগরিক
আত্মা
ইন্দ্ৰিয়মূলক
ত্রুটি
আশীর্বাদপ্রাপ্ত / সুখী
ছেলে
উচ্চবংশীয়
প্রেমাস্পদ
পরিবর্তিত অর্থ
লম্পট প্রেমিক
যৌনমূলক
পাপ
বোকা
দুষ্ট ছেলে
অনৈতিক
চাকর
স্পর্শদোষঃ অন্য শব্দের প্রভাবে বা উচ্চারণ দোষে শব্দ ও তার অর্থের যে অযাচিত পরিবর্তন ঘটে তাকে স্পর্শদোষ বলে । মদখোরকে মাতাল বলা হয়। সে অনুযায়ী চা-খোরকে অনেকে ঠাট্টা করে চাতাল বলে থাকেন । কাঠমিস্ত্রীরা কাঠের জোড়াকে বলে থাকেন রিপিট, অথচ শব্দটি ইংরেজী rivet সিগন্যাল ( signal) কে সিঙ্গেল (single! ) এবং রিক্সা ( rickshaw)-কে রিসকা বললেও স্পর্শদোষ ঘটে।
আমেরিকার হলিউডের নামানুসারে বম্বে, টালিগঞ্জ ও ঢাকা চিত্রজগতের নাম হয়েছে যথাক্রমে বলিউড, টালিউড ও টালিউড । ইংরেজীতে যাকে স্পুনারিজম বলা হয় তা-ও এক ধরনের স্পর্শদোষ । স্পুনারিজমের প্রভাবে এক কাপ চা হয়ে যেতে পারে এক চাপ কা
স্থানান্তর : কোনরূপ সাদৃশ্য বা সান্নিধ্যের কারণে এক শব্দে যখন আরেক শব্দের অর্থ প্রযুক্ত হয় তখন তাকে স্থানান্তর বলে । যেমন ইংরেজীতে tongue অর্থ জিহবা, কিন্তু জিহ্বা দ্বারা ভাষা উচ্চারিত হয় বলে tongue বললে এখন ভাষাও বোঝায়। বিছা এক ধরনের লম্বাটে পত্রভোজী কীট, কিছু দেখতে এর মতো বলে মেয়েদের কোমরে বাধার অলংকার বিশেষের নাম হয়েছে বিছা ।
আরোপন : একটি শব্দ যখন অন্য শব্দকে দখল করে নেয় অর্থাৎ এক শব্দের অর্থ যখন অন্য শব্দের উপর আরোপ করা হয়, তখন তাকে আরোপন বলে। যেমন মাস্তান শব্দের মূল অর্থ খোদাপ্রেমিক কিন্তু এখন তার উপর নতুন অর্থ আরোপ করা হয়েছে গুন্ডা বা সন্ত্রাসী (মাস্তানি আর কাকে বলে ! )।
বুজরুকি শব্দটি এসেছে ফারসী বুজর্গ শব্দ থেকে যার অর্থ মুরুব্বী, কিন্তু এখন বুজরুকি বললে আমরা ভণ্ডামিকে বুঝি (ঐতিহাসিক ভণ্ডামি ! ) । হঠাৎ সংস্কৃতে বুঝায় অবিমৃশ্যকারিতাবশত আর বাংলায় আমরা তাকে ব্যবহার করি অকস্মাৎ অর্থে ।
আরও দেখুন: