ঔপাদানিক বিশ্লেষণ

আজকে আমাদের আলোচনার  বিষয়-ঔপাদানিক বিশ্লেষণ

ঔপাদানিক বিশ্লেষণ

কোন শব্দকে তার বাগধিক উপাদানে ভেঙ্গে ফেলার নাম ঔপাদানিক বিশ্লেষণ । বাগার্থিক উপাদানগুলো মৌলিক এবং সেগুলো আর ভাঙ্গা সম্ভব নয়। কাজেই সেগুলো অর্থের ক্ষুদ্রতম একক। ঔপাদানিক বিশ্লেষণ বোঝার জন্য আমরা নিম্নলিখিত শব্দগুলোর দিকে তাকাতে পারি :

(১) পুরুষ, মহিলা, শিশু

(২) বলদ, গাভী, বাহুর

 

ঔপাদানিক বিশ্লেষণ

 

উপরোক্ত (১) ও (২) -এর শব্দগুলোকে অনুপাতমূলক অভেদ সম্পর্কে স্থাপন করা যায় : পুরুষ : মহিলা : শিশু :: বলদ : গাভী : বাছুর
এখন সমীকরণটিকে এভাবে প্রকাশ করা যায় :
(পুংলিঙ্গস প্রাপ্তবয়স্কতা মানুষত্ব) : (স্ত্রীলিঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কতা মানুষত্ব) : (অপ্রাপ্তবয়স্কতা মানুষত্ব) : : (পুংলিঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কতা গরুত্ব) : (স্ত্রীলিঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কতা গরুত্ব) : (অপ্রাপ্তবয়স্কতা গরুত্ব

প্রক্রিয়াটি গণিতের উৎপাদকে বিশ্লেষণের মতো। যেমন আমরা যদি পুংলিঙ্গ & স্ত্রীলিঙ্গ = b, প্রাপ্তবয়স্কতা = = c. অপ্রাপ্তবয়স্কতা = d, মানুষত্ব = c ও গরুত্ব – f ধরি, তাহলে আমরা নিম্নরূপ সমীকরণ পাবো :

(a Xcxe) : (bxcXe) : (de) :: (a Xcxf) : (bxcxf) : (dxt)

নৃতত্ত্ববিদগণ বাগর্থিক বিশ্লেষণকে জ্ঞাতিসম্পর্কিত শব্দাবলী ব্যাখ্যায় কাজে লাগিয়েছেন। যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন, পুত্র, কন্যা, চাচা, চাচী, মামা, মামী, ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগ্নে, ভাগ্নী প্রভৃতি শব্দকে আমরা এভাবে ছকবদ্ধ করতে পারি :

 

ঔপাদানিক বিশ্লেষণ

 

এখানে দেখা যায় বাবা হলো এক প্রজন্ম পূর্ববর্তী আত্ম এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত পুংবাচক শব্দ এবং মা হলো এক প্রজন্ম পূর্ববর্তী আত্ম-এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত স্ত্রীবাচক শব্দ। পুত্র ও কন্যা যথাক্রমে আত্ম- এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত এক প্রজন্ম পরবর্তী পুংবাচক ও স্ত্রীবাচক শব্দ ।

একইভাবে চাচা ও চাচী এক প্রজন্ম পূর্ববর্তী পৈতৃক সম্পর্ক সূত্রে আবদ্ধ যথাক্রমে পুং ও স্ত্রীবাচক শব্দ এবং মামা ও মামী এক প্রজন্ম পূর্ববর্তী মাতৃ সম্পর্ক সূত্রে আবদ্ধ যথাক্রমে পুং ও স্ত্রীবাচক শব্দ । ভাতিজা, ভাতিজি এবং ভাগ্নে, ভাগ্নি এক প্রজম নীচে এবং যথাক্রমে বাবা ও মা -এর মাধ্যমে সম্পর্কিত। আত্ম -এর প্রজন্মের সবাই লিঙ্গভেদে ভাই কিংবা বোন । পার্থক্যের প্রয়োজনে আপন চাচাত মামাত প্রভৃতি বিশেষণবাচক শব্দ প্রয়োগ করা হয় ।

 

ঔপাদানিক বিশ্লেষণ

 

ইউজিন এ. লিডা (১৯৭৫ : ৫৪-৬১) বাগার্থিক বিশ্লেষণের ছয়টি প্রক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ নির্দেশ করেন । এগুলো হলোঃ

(ক) নির্দিষ্ট কোন বাগথিক এলাকা থেকে পরস্পরসম্পর্কিত কতিপয় শব্দ নির্বাচন করা ।

(খ) নির্বাচিত শব্দগুলো কর্তৃক নির্দেশিত ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাশ্রেণীর তালিকা তৈরী করা।

(গ) শব্দগুলোর অর্থ থেকে উপাদান বের করা যেগুলো সব শব্দে না হলেও কতিপয় শব্দে সাধারণভাবে বিদ্যমান ।

(ঘ) প্রতিটি শব্দকে যথার্থ উপাদানে বা উপাদানসমষ্টিতে চিহ্নিত করা ।

(ঙ) শব্দের সাথে উপাদানের সমন্বয় সঠিক হলো কিনা তা অন্য শব্দ সহযোগে যাচাই করা ।

(চ) ছকে বা অন্যবিদ উপায়ে শব্দ ও উপাদান সমূহের শৃঙ্খলাপূর্ণ বর্ণনা উপস্থাপন করা ।

আরও দেখুন:

 

Leave a Comment