আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-আচরণবাদী তত্ত্ব
আচরণবাদী তত্ত্ব
বিংশ শতাব্দীর শুরুটা ছিল যৌক্তিক ইতিবাচকতাবাদের জয়জয়কারে মুখরিত। যৌক্তিক ইতিবাচকতাবাদের মূলকথা ছিল যা কিছু পর্যবেক্ষণসম্ভব ও অভিজ্ঞতামূলকভাবে যাচাইযোগ্য তাই বিজ্ঞান সম্মত এবং বাকি সব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সমস্ত শাস্ত্রই এর প্রভাবে কমবেশি প্রভাবিত হয়েছে এবং গবেষনার দিক নির্দেশনা প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত করেছে। প্রতিটি শাস্ত্রই বৈজ্ঞানিক মর্যদা অর্জনের জন্য উঠে পড়ে লাগে।
বিজ্ঞানভিত্তিক হয়ে উঠার অভিযাত্রায় যে সমস্ত শাস্ত্র যৌক্তিক ইতিবাচকতাবাদের দাবি পূরণ করতে পারেনি তারা স্বীকার হয়। অবিশ্বাস ও অবহেলার। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, শিল্পকলা, সাহিত্য প্রভৃতির ভাগ্যে জোটে অবমূল্যায়ন। মনোবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় অবৈজ্ঞানিক চর্চার কারণ তা মন, চিন্তা, ধারণা, ভাব প্রভৃতি পর্যবেক্ষণ-অসম্ভব মানসিক প্রপঞ্চ নিয়ে কারবার করে।
এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য কতিপয় মনোবিজ্ঞানী প্রবর্তন করেন আচরণবাদ, যা মানুষের আচরণকে একটি যান্ত্রিক কৌশলে ব্যাখ্যার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্যাভলভের প্রাণী আচরণ সংক্রান্ত পরীক্ষণ আচরণবাদের রসদ হিসাবে কাজ করে । প্যান্ডলও দেখান যে উদ্দীপক ও সাড়ার মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকে শিক্ষা হলো নতুন উদ্দীপক ও সাড়ার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন।
মনোবিজ্ঞানে আচরণবাদী তত্ত্ব নির্মানে এই ধারণাটিকে কাজে লাগান ওয়াটসন যিনি পরবর্তীকালে আচরণবাদের শুরু বলে আখ্যায়িত হন। ওয়াটসনের মতে বন্ধু যেমন প্রাণীর আচরণে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, শব্দও তেমনি প্রাণীর আচরণে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কোন শব্দ শুনলে কোন ব্যক্তির মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাই হলো ঐ শব্দটির অর্থ।
মনোবিজ্ঞান থেকে ভাষাবিজ্ঞানে এই আচরণবাদী ধারণা নিয়ে আসেন প্রখ্যাত আমেরিকান ভাষাবিজ্ঞানী লিওনার্ড ব্লুমফিল্ড। তার উদ্দেশ্য ছিল ভাষাকে তাত্ত্বিক কাঠামোর ভিতরে নিয়মবদ্ধভাবে বিশ্লেষণ করা এবং ভাষাবিজ্ঞানকে সত্যিকার অর্থে বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলারূপে প্রতিষ্ঠিত করা।
ভাষার অর্থকে ভাই তিনি চৈতনাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখা না করে যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যার প্রাণ পান । তিনি বলেন, কোন ভাষিক রূপের অর্থ হলো সেই পরিস্থিতি যাতে বক্তা তা উচ্চারণ করে এবং শ্রোতা তার প্রতিক্রিয়া অনুভব করে । তিনি অর্থকে তিনটি অংশে ভাগ করেন : (১) বক্তার পরিস্থিতি, (২) বক্তব্য এবং
(৩) শ্রোতার সাড়া। এই তিনটি অংশ কারণিক সম্পর্কে আবদ্ধ, অর্থাৎ বক্তার পরিস্থিতি বক্তব্য উৎপাদন করে এবং বক্তব্য শ্রোতার সাজ সৃষ্টি করে। এই সম্পর্কটিকে তিনি এভাবে প্রদর্শন করেন :
বক্তার প্ররিস্থিতি বক্তব্য শ্রোতার সাড়া
ব্লুমফ্রিন্ড একটি গল্পের মাধ্যমে অর্থের ধারণাটিকে ব্যাখ্যা করেন। জ্যাক (ছেলে) এবং ছিল (মেয়ে) রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। ঝিল গাছে একটি আপেল দেখতে পায় ও ক্ষুধা অনুভব করে। ফলে সে জ্যাককে আপেলটি পেড়ে আনতে বলে। জ্যাক গাছে ওঠে এবং জিলকে আপেলটি পেড়ে দেয়। ছিল তা যায়।
এই পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি হিলের আপেলটি দেখা ও ক্ষুধা অনুভব করা হলো উদ্দীপক (S stimulus) : ছিল যদি সরাসরি পাছে উঠে নিজে আপেলটি পাড়তো তবে তা হতো প্রত্যক্ষ সাড়া (R – response) কিছু তা না করে সে কিছু শব্দ উচ্চারণ করে (t), পরিনামে এটি আবার জ্যাকের জন্য উদ্দীপক হিসাবে কাজ (s) যার ফলে জ্যাক আপেলটি পেড়ে এনে দেয় (R) পুরো পরিস্থিতিটিকে এভাবে দেখাবো যায়
– R t S
ইংরেজী বড় ও ছোট হাতের অক্ষর দিয়ে এখানে উদ্দীপক ও সাড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। SR এর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নেই, এদুটি সম্পর্কিত হয়েছে মধ্যবর্তী ও ছারা । এখানে …… ও হলো বক্তব্য, S হলো বক্তার পরিস্থিতি এবং R হলো শ্রোতার সাড়া ।
ব্লুমফিণ্ডের তত্ত্ব যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকটিত করে। তিনি বলেন যে যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষার অর্থ কোন মানসিক প্রতিরূপ কিংবা নিছক অনুভূতি নয়, এটি হলো শরীরী আন্দোলন, যা ত্রিবিধ উপায়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
প্রথমত, এটি হলো বড় ধরনের প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন লোকের মধ্যে একইভাবে প্রকাশিত হয় এবং गा সমাজ নির্ধারিত প্রচলিত ভাষারূপে ব্যক্ত হয়।
দ্বিতীয়ত, এটি হলো অস্পষ্ট ও পরিবর্তনীয় ছোট মাপের পেশীগত সংকোচন ও গ্রন্থিশত নিঃসরণ যা প্রচলিত ভাষারূপে ব্যক্ত হয় না। তৃতীয়ত, এটি হলো বারপ্রত্যঙ্গের আন্দোলন যা বাচিক আন্দোলনের বিকল্প এবং যা অন্য কারো সংবেদনের
বাইরে ।
কাজেই ব্লুমফিণ্ডের মতে ভাষার অর্থের জন্য বক্তার পরিস্থিতিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তার সামগ্রীক আচরণ (অন্তর্গত ও বহির্গত) পর্যবেক্ষণ করে ভাষার অর্থ সম্পর্কে জানা যেতে পারে। তিনি বলেন :
“ভাষার প্রতিটি রূপের অর্থের বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক সংজ্ঞা দিতে হলে বক্তার পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে আমাদের বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে মানবজ্ঞানের সত্যিকার পরিধি অত্যন্ত কম।’
এজন্য ব্লুমফিল্ড মনে করেন ভাষাবিশ্লেষণে অর্থ হলো সবচেয়ে দুর্বল জায়গা এবং মানুষের জ্ঞানের সুদুরপ্রসারী অগ্রগতি ব্যতিত এ অবস্থার নিরসন হবে না। ব্লুমফিডের পর অনেকেই আচরণবাদ নিয়ে কাজ করেছেন এবং তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন স্কিনার, নোবল, সালাদ, কোয়াইন, মরিস, স্টিভেনসন প্রমুখ।
কোয়াইন উদ্দীপক সাড়া সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে তার বাগতিক তত্ত্ব নির্মান করেন এবং আচরণবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সংকেতায়ন ও প্রকাশনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন ( Lyons 1977 131 Kempson 1977:49 )। স্টিভেনসন আচরণবাদী ধারণার মাধ্যমে সংকেতের অর্থ নির্ধারণে ব্যাপৃত হন এবং বলেন যে কোন সংকেতের অর্থ হলো তার মনোবৃত্তিমূলক বৈশিষ্ট্য (দাস ১৯৯৫ : ২৩২)।
মরিসও মনোবৃত্তির ধারণার মাধ্যমে অর্থকে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি বলেন যে কোন শব্দ শ্রবন করলে শ্রোতার মধ্যে যে মনোবৃত্তির উদয় হয় তাই হলো শব্দটির অর্থ। যেমন কেউ যদি বলে এখানে আসো তাহলে শ্রোতা এর অর্থ বুঝতে পারে তার মধ্যে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সৃষ্ট মনোবৃত্তির মাধ্যমে।
এখন একটি নির্দিষ্টি অবস্থার ভিতর এখানে আসো যে কেউ উচ্চারণ করুক না কেন তার অর্থ হবে একই। কাজেই মরিসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী অর্থ হলো সেই আচরণগত দিক যা একটি শব্দ বা বাক্যের সকল প্রয়োগে সাধারণভাবে খুঁজে পাওয়া যায় (Alston: 1964:38-39)।
স্কিনার আচরণবাদের একজন বড় প্রবক্তা এবং ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বহুল আলোচিত Verbal Behaviour গ্রন্থটি। তার মতবাদ তিনটি ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত : উদ্দীপক, সাড়া ও ঋনুকরণ। উদ্দীপক ও সাড়ার মধ্যে যে আকস্মিক সম্পর্ক থাকে তা ঋজুকরণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে অনিবার্য সম্পর্কে পরিণত হয় ।
যেমন শৃগাল শব্দটি এবং তার দ্বারা নির্দেশিত জানোয়ারটির মধ্যে আমরা যে সম্পর্ক স্থাপন করি তা প্রথমে আসস্মিক থাকে কিন্তু শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় বার বার আবির্ভাবের ফলে তা ক্রমান্বয়ে একটি অনিবার্য সম্পর্কে পরিণত হয়। স্পিনারের মতে উক্তি হলো বামূলক কার্যক যা পরিবেশ বা পরিস্থিতির উপর ক্রিয়া করে থাকে।
রাজমূলক কার্যক শব্দের সাথে সাড়ামূলক আচরণ বা জাগতিক বস্তুর একটি সম্পর্ক স্থাপন করে। একটি শব্দের সাথে তার দ্বারা নির্দেশিত অর্থের সম্পর্ক স্থাপনকে থিনার বলেছেন কার্যক সাপেক্ষীকরণ। এভাবেই স্কিনার কার্যক সাপেক্ষীকরণের মাধ্যমে মানুষের ভাষিক আচরণের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
(দ্রষ্টব্য Lyons 1977 129- 133) আচরণবাদী তত্ত্বের প্রচারে ও প্রসারে ক্লাইভ নোবল (১৯৫২/৬৭ ) বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নোবলের মতে অর্থ হলো উদ্দীপনা S এবং সাড়া R এর মধ্যে সম্পর্ক যা সূচিত হয় মধ্যবর্তী অভ্যাস H দ্বারা। অর্থাৎ অর্থ হলো S-H-R যে সংশয়টি নোবল প্রকাশ করেন এভাবে: o means B নোবল লক্ষ্য করেন যে কোন শব্দ পরিস্থিতিভেদে বিভিন্ন উত্তর বা প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক করতে পারে এবং একেকটি উত্তর ব্যাক্তির একেক রকম অভ্যাস গঠনের ফল।
যেমন, রান্নাঘর শব্দটি বললে কেউ মনে করতে পারে খাবার দাবারের কথা, কেউ রান্নার কথা, কেউ চুলা ও হাড়িপাতিলের কথা, কেউ বুয়া বা বাবুটির কথা। এগুলো শুধু ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ব্যক্তিতে নয়, একইসাথে একই বাতির মধ্যে উদ্রেক হতে পারে। নোবল S-H-R সম্পর্কটি নিম্নলিখিত চিলের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন ।
উদ্দীপক, অভ্যাস ও সাড়ার সম্পর্কটি সব সময় প্রদর্শিত চিত্রের মতো হয় না, বরং প্রায়শই এটি জটিল আকার ধারণ করে। প্রাথমিকভাবে উদ্দীপক ও সাড়ার মধ্যে অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় তা পরিনামে জন্ম দিতে পারে আর একটি অনুরূপ সম্পর্কের।
এক্ষেত্রে প্রাথমিক সাফাটি উদ্দীপকে পরিণত হয় এবং ঋজুকৃত অভ্যাসের মাধ্যমে তা আরেকটি সাড়ার সাথে সম্পর্কিত হয়। যেমন, রত্নাঘরের কথা বললে কারো প্রথমে মেয়েমানুষের কথা মনে পড়তে পারে যা তাকে আবার কর্মের লৈঙ্গিক বৈষম্যের কথা মনে করিয়ে নিতে পারে (যেমন ঘরে-বাইরে তত্ত্বের কথা, যেখানে বলা হয় নারীর কর্মক্ষেত্র হবে ঘর আর পুরুষের কর্মক্ষেত্র হবে বাহির) । এরূপ জাটিল অবস্থাকে নিম্নরূপ চিত্রে প্রকাশ করা যায় :
অর্থের আচরণবাদী ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে চার্লস অসগুপ্তের ( ১৯৫২/৬৭) তত্ত্বটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অসগুড মধ্যবর্তিতা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকেতের অর্থ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন উদ্দীপক বা জীবের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা উদ্দীপক বছর সংকেত দ্বারা ও সৃষ্টি হতে পারে।
এর মধ্যে একটি মধ্যবর্তিতা প্রক্রিয়া কাজ করে। মধ্যবর্তিতা প্রক্রিয়াটি শিক্ষণের সাথে যুক্ত। প্রাথমিকভাবে উদ্দীপক বস্তু ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে তা যখন শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জীব সংকেত ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে স্থাপন করে তখন মধ্য বর্তিতা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
যেমন, তেলাপোকা নামক বাটির সাথে অস্বস্তিকর অনুভূতি, আতঙ্ক, দিনদিন ভাব প্রভৃতি প্রতিক্রিয়া যুক্ত থাকতে পারে। এখন তেলাপোকা শব্দটি শুনলেই কারো মধ্যে এরূপ প্রতিক্রিয়া (সাধারণত পূর্বের চেয়ে অল্পমাত্রায়) দেখা দিতে পারে। একইভাবে তেঁতুল দেখলে অনেকের জিবে জল আসে, এবং তেঁতুল শব্দটি শুনলেও আপত্তির একই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। অসগুড় প্রক্রিয়াটিকে নিম্নরূপ চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন :
এখানে A তে সংকেতের অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উদ্দীপক বা stimulus object) প্রকাশা আচরণ (RT = overt behaviour) এর সাথে সরলরেখায় সরাসরি সম্পর্কিত । প্রকাশ্য আচরণ পরে মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া (TM = mediating reaction) রূপে বছর সংকেত S আর সাথে যুক্ত হয়েছে ।
মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া আবার স্বতঃউদ্দীপনা (SM = self stimulation) -য় রূপান্তরিত হয়ে জটিল আচরণ ( Rx = complex behaviour) এর উন্মেষ ঘটায়। B তে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বিসংকেতের অর্থ । এখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে একাধিক মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া (TML, IM Fin) অন্য একটি জটিল মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া (Ra) -এর সাথে সম্পর্কিত হয় যে মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া যুক্ত থাকে কোন বাংরূপ (/S/) -এর সাথে ।
অর্থাৎ বাঙর (/S/) উদ্দীপক হিসাবে মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়া (FM) উৎপাদন করে যা আবার স্বতঃ উদ্দীপনা (Sea) পরিণত হয়ে নতুন জটিল অচরণ (Rxa) কে অভিব্যক্ত করে। শিশুদের শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে বিসংকেতের ধারণা নিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন শিশুরা বই-তে বাঘের বিভিন্ন ছবি দেখে তার সম্পর্কে বর্ণনা পড়ে প্রাণীটি সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া তৈরী করে।
তারপর শিক্ষক বা পিতামাতার কাছ থেকে যখন প্রাণীটির নামের উচ্চারণ শোনে ও শিখে তখন সে শব্দটির সাথে তার প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক স্থাপন করে তখন তাকে আর ছবি দেখা বা বর্ণনা পড়ার প্রয়োজন হয় না।
এভাবেই অসগুস্ত তার আচরণবাদী তত্ত্বে মধ্যবর্তী প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ভাষা সংকেতের একটি যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়াস পান ।
মূলনীতি ও সমস্যা সব আচরণবাদী তত্ত্বই সাধারণভাবে মানুষের ভাষা ব্যবহার ও অর্থের যান্ত্রিক ব্যাখ্যা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রণীত। এই তত্ত্বের একটি বড় গুণ অভিজ্ঞতামূলক যাচাইযোগ্যতা। প্রথমত, আচরণবাদ কোন রকম মানসিক প্রপক্ষ বা অন্তরীক্ষণে বিশ্বাসী নয়।
দ্বিতীয়ত, আচরণবাদ মানুষ ও অন্যান্য নিম্নতর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য করে না। তৃতীয়ত, অচরণবাদ শিক্ষণের ক্ষেত্রে মনের ভূমিকার চেয়ে পরিবেশ ও প্রক্রিয়ার উপর জোর দেয়। চতুর্থত, আচরণবাদ নিয়ন্ত্রণবাদী ভাবধারায় লালিত এতে সবকিছু কারনিক সম্পর্কে আবদ্ধ।
আচরণবাদ বৈজ্ঞানিক প্রেরণায় চালিত হলেও এর কিছু মারাত্মক ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে । প্রথমত, যদিও এটি চৈতন্যবাদকে অস্বীকার করে, তথাপি এটি অর্থের ব্যাখ্যার জন্য চৈতন্যবাদেরই শরনাপন্ন হয়
। মনোবৃত্তি প্রতিক্রিয়া এসব প্রত্যয় যত না শারীরিক বা পারিবেশিক তার চেয়ে বেশি মানসিক দ্বিতীয়ত, একটি উদ্দীপকের সাথে বহুবিচিত্র সাড়া জড়িত থাকতে পারে তাদের সব অর্থ বলে স্বীকার করতে গেলে তা হয়ে উঠে অম্প ও ব্যাখ্যাতীত।
তৃতীয়ত, আচরণবাদ অর্থের একটি দুর্বল চিত্র তুলে ধরে। আদতে এটি উদ্দীপক সাড়া দিয়ে যা ব্যাখ্যা করে তা অর্থই নয়। এটি মোটা দাগে ব্যাখ্যা করে মানুষের ভাষিক আচরণ যা ভাষার জটিল সংশয়ের ধারেকাছেও যেতে পারে না।
বন্ধুতঃ অর্থ সম্পর্কে আচরণবাদী ব্যাখ্যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।
নিজেকে যতই বিজ্ঞানসম্মত বলে দাবি করুক না কেন এটি শেষ পর্যন্ত চরম অবৈজ্ঞানিক বলে প্রতীয়মান হয়। এটি অর্থকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাগর্থবিদ্যাকে এক নিদারুণ অন্ধাকারের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে বাগবিদ্যাকে অনেকে সন্দেহ করতে শুরু করে এবং অনেকে বাগর্থবিদ্যাকে অসম্ভব বলে ঘোষণা করে। আচরণবাদের এই অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বাগর্থবিদ্যার অনেকদিন সময় লেগেছে।
আরও দেখুন: